আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

এ আঁধার ঘুচবে কখন?

ফরিদ আহমেদ  

মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে সামান্য সময়ের ব্যবধানে দু’ দুটো আক্রমন শাণিয়েছে ইসলামি মৌলবাদীরা বাংলাদেশে। প্রথম আক্রমণটা ছিলো ধানমণ্ডির শুদ্ধস্বর অফিসে। তিনজনের একটা ঘাতক দল অফিসে ঢুকে শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়েছে। আহমেদুর রশীদ টুটুলের সাথে ব্লগার ও লেখক রণদীপম বসু এবং কবি তারেক রহিম ছিলেন। ঘাতক দল তাঁদেরকে রেহাই দেয় নি। এঁদেরকে কুপিয়েছে নির্দয়ভাবে। এর মধ্যে আহমেদুর রশীদ টুটুল এবং তারেক রহিমের আঘাত গুরুতর। রণদীপম বসু কিছুটা কম আহত হয়েছেন অন্য দুজনের তুলনায়।

এরা তিনজন এখনও প্রাণে বেঁচে আছেন। মৃত্যু এদের কাউকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে কিনা, এখনও সেটা নিশ্চিত না। কিন্তু, দ্বিতীয় আঘাতে মৃত্যু এসেছে নিশ্চিতভাবেই। শাহবাগের আজিজ মার্কেটে অবস্থিত জাগৃতির অফিসে ঢুকে এর কর্ণধার ফয়সাল আরেফিন দীপনকে জবাই করে হত্যা করেছে ঘাতক দল। সামান্য কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানের এই দুই আক্রমণে, একই ঘাতক দল ব্যবহৃত হয়েছে, নাকি আলাদা আলাদা দল কাজ করেছে, সেটা জানা যায় নি এখন পর্যন্ত। তবে, দুটো হামলাই যে একই সুতোয় বাঁধা, সেটা বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না আমাদের।

আহমেদুর রশীদ টুটুল মুক্তমনার স্রষ্টা অভিজিৎ রায়ের একাধিক বইয়ের প্রকাশক। এর মধ্যে রয়েছে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ এবং ‘সমকামিতা’। অন্যদিকে, দীপনের জাগৃতি প্রকাশ করেছে অভিজিৎ রায়ের আলোচিত বই ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’।

সেক্যুলার ব্লগার, লেখক বা প্রকাশকদের কুপিয়ে হত্যা করা নতুন কিছু নয় এখন আর। এই বছরেই মাত্র আট মাসের মধ্যে পাঁচজনকে প্রায় একই ভাবে হত্যা করা হলো। এ বছর এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। ফেব্রুয়ারি মাসে ছাব্বিশ তারিখে বইমেলা থেকে বেরিয়ে টিএসসি মোড়ে আসতেই চাপাতি হাতের ঘাতক দল অভিজিৎ রায় এবং তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই আক্রমণে অভিজিৎ রায় নিহত হন। তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদ গুরুতর আহত হন। তিনি চাপাতির আঘাতে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল হারান। মাথায়, ঘাড়ে কপালে মারাত্মক কোপ নিয়ে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

অভিজিৎ হত্যার মাত্র এক মাসের মাথায়, দিনের বেলায়, প্রকাশ্য রাজপথে চাপাতি নিয়ে হামলা চালানো হয় ওয়াশিকুর রহমান বাবুর উপরে। এই হামলায় অংশ নেয় হাটহাজারি মাদ্রাসার দুই-তিনজন ছাত্র। কোপের পর কোপ দিয়ে ওই স্থানেই তাঁকে মেরে ফেলা হয়। তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন সাহসী মানুষ ধাওয়া করে খুনিদের দুজনকে ধরতে সক্ষম হয়, এবং তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
মে মাসের বারো তারিখে ঘাতকের চাপাতি থেকে রক্ষা পেতে জানবাজি রেখে ছুটতে হয়েছে অনন্ত বিজয় দাশকে। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয় নি। জলভরা দীঘি পথ আটকে দাঁড়ায় তাঁর। ঘাতকেরা দীঘির পারে একের পর এক চাপাতির আঘাত করে তাঁকে এই ধরাধাম থেকে বিদায় দিয়ে দেয়।

এর মাত্র তিন মাসের মাথায় নীলয় নীলকে তার বাসায় ঢুকে চাপাতি দিয়ে দিয়ে কুপিতে হত্যা করে খুনিরা। নিলয়ের স্ত্রীকে বারান্দায় এবং শালিকে বাথরুমে আটকে রেখেছিলো ঘাতকেরা হত্যাকাণ্ডের সময়টাতে।

বাংলাদেশ এখন পরিণত হয়েছে নৃশংস এক বধ্যভূমিতে। প্রতিনিয়ত রক্তের লাল স্রোত বয়ে চলেছে এর গা বেয়ে, খুনের নেশায় পাওয়ায় উন্মত্ত চাপাতির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে কোমল সব দেহ, অসাধারণ সব মেধা, অনন্য সব মানুষরা। একদল নিশিতে পাওয়া নরপিশাচ ধর্মের নামে চাপাতির হিংস্রতা দিয়ে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে আমাদের সবকিছু। দুর্বিষহ এবং পচা দুর্গন্ধময় এক দুরাশয় সময়কে ধারণ করে চলেছি আমরা, চলেছি অন্তহীন এক আঁধার রাজ্যের অন্তিম সীমানার দিকে।

লেখালেখির ‘অপরাধে’ একের পর এক বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটছে, রক্তপাত হচ্ছে অনাবশ্যক এবং অবাঞ্চিতভাবে। কিন্তু এর কোনটারই সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না, কাউকে ধরা হচ্ছে না সেভাবে, কোনও হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না গ্রহনযোগ্যভাবে। এটাই হত্যাকারীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে চলেছে অবিরাম। আমরা দেখেছি, হুমায়ূন আজাদ হত্যার কোনও বিচার হয় নি, রাজীব হায়দারের হত্যার কোনও বিচার হয় নি, বিচার হয় নি অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু কিংবা অনন্ত বিজয় দাশদের হত্যাকাণ্ডের।

এই বিচার না হবার যে ইতিহাস গড়ে উঠছে বাংলাদেশে, সেটা এবং সেই সাথে সরকারের এইসব হত্যাকাণ্ডকে গুরুত্ব না দেবার অদ্ভুত এবং বিপদজনক প্রবণতা, এই দুইয়ে মিলে, একদিন আমাদেরকে জাতি হিসাবে বিকলাঙ্গ করে দেবে। এই জিনিসটা বুঝতে পারাটা আমাদের জন্য জরুরী যে, অসংখ্য মৌলবাদী মানসিকতার জঙ্গী দেশের জন্য কোনো কাজ আসবে না। এরা সমাজের জন্য, দেশের জন্য বিশাল বোঝা, সভ্যতার জন্য ক্যান্সারস্বরূপ। কিন্তু যে মানুষগুলোকে এরা মুরগি কাটার মতো করে কেটে চলেছে অবিরাম নিত্য দিন, তাঁরা সবাই একেকজন প্রাজ্ঞ, প্রতিভাবান এবং অসীম সম্ভাবনাময় মানুষ। অকাল এবং অপঘাত মৃত্যুর কারণে শুধুমাত্র এরাই যে হারিয়ে যাবে এই পৃথিবী থেকে তাই নয়, মুক্ত-চিন্তার আলোকিত জায়গাটাতে ভবিষ্যতে আর কেউ আসতেই সাহস করবে না এদের এই করুণ পরিণতি দেখে। এঁদের বিদায়ের সাথে সাথে আলোর ঝর্ণাধারার শেষ স্রোতটা বন্ধ হয়ে যাবে, বর্ণ এবং গন্ধ হারাবে ফুল, সবুজ বিদায় নেবে গাছ থেকে সকরুণ নেত্রে, অন্তহীন এক অন্ধকারের মাঝে পতিত হবে দেশ এবং জাতি। সেই অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে আমাদের হয়তো অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে কয়েক যুগ, কয়েক শতাব্দী কিংবা কয়েক সহস্র বছর। মৌলবাদী জঙ্গিরা ঠিক এই কাজটাই করতে চাইছে আমাদের সমাজটাকে নিয়ে। আলোর থেকে বহু দূরে সরিয়ে নিয়ে, পিছন দিকে হাঁটিয়ে, নিয়ে যেতে চাইছে তমস্যাপূর্ণ এক সময়ে, আলোহীন এক জগতে। যেখানে নেই কোনো জ্ঞান চর্চা, নেই কোনো বিজ্ঞান-ভাবনা, নেই কোনো যুক্তিবুদ্ধির পরিচর্চা। একদল ধর্মান্ধ মাতাল শুধু রক্তপায়ী ড্রাকুলার মতো অশ্লীল উল্লাস করবে সেই আদিম অন্ধকারে।

একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর বলতে দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশে সু-বুদ্ধিসম্পন্ন মুক্তচিন্তার লেখকদের এখন জান হাতে রেখে লেখালেখি করতে হচ্ছে। কারো কোনো নিরাপত্তা নেই এখন। নিজস্ব মত প্রকাশে সকলেই এখন সংকুচিত, সংশয়াপন্ন এবং দ্বিধাগ্রস্ত। কেউ কেউ প্রবলভাবে আতঙ্কিতও। আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক, না হওয়াটা মূর্খতার লক্ষণ। কখন কার ঘাড়ে চাপাতির ধারলো কোপ এসে পড়বে, কেউ যে তার হদিস জানে না। কেউ জানে না, কখন কার জন্য মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে নিয়ে হাজির হচ্ছে কালো পোশাক পরা ইসলামি জঙ্গী সেনারা।

অদ্ভুত এক আঁধার ছুঁয়ে গিয়েছে আজ বাংলাদেশকে। এর চারিদিকে এখন শুধু থিক থিক অন্ধকার। এই অন্ধকারের মাঝে কিলবিল করছে অসংখ্য প্রতিক্রিয়াশীল পুঁতিগন্ধময় পোকামাকড়। মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার চর্চা করা এখন প্রচণ্ড রকমের বিপদজনক বাংলাদেশে। অসহিষ্ণুতা এবং ঘৃণা এমনই সর্বব্যাপী যে, বিপরীত কোনও চিন্তা-ভাবনা, বিশেষ করে ধর্ম, আরও স্পষ্ট করে বললে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে সামান্যতমও সমালোচনাও এক শ্রেণীর ইসলামি মৌলবাদী সহ্য করতে পারছে না কিছুতেই। প্রবলভাবে অসহিষ্ণু এবং ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে তারা। আজ একদল রক্তপিপাসু ধর্মান্ধ মোল্লা ছড়ি ঘোরাচ্ছে আমাদের সবার মাথার উপরে। সমাজটাও হয়ে উঠেছে প্রবলভাবে ধর্মাচ্ছন্ন। পত্রিকায় নির্দোষ একটা মোহাম্মদ বিড়াল নামের কৌতুকের জন্যও তরুণ কার্টুনিস্টকে জীবন নিয়ে পালাতে হয় দেশ ছেড়ে। ফেসবুকের সামান্য কো্নো একটা পোস্টে লাইক দেবার অপরাধে সরকারের বীর পুঙ্গব বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায় অল্পবয়েসী তরুণদের। সামান্য দুই লাইনের স্ট্যাটাসের জন্য বন্দি হতে হয় সাতান্ন ধারায়। দিকে দিকে শুধু ধর্মানুভুতি আহত হবার জিগির উঠেছে যেনো। মানুষের আরও কতো কতো ধরনের অনুভূতি রয়েছে, সেগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হয় না। কিন্তু এই অনুভূতি এমনই নাজুক, ভঙ্গুর এবং স্পর্শকাতর যে, সেখানে আঘাত পাচ্ছে তারা মুহুর্মুহু।

প্রতিটা যুগে, প্রতিটা সমাজে, মুক্তচিন্তা যাঁরা করেছেন, মুক্তবুদ্ধিকে যাঁরা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, সমাজকে হাত ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছেন সামনের দিকে, গাঢ় অন্ধকারকে দূর করতে চেয়েছেন গভীর ভালবেসে দীপ জ্বেলে, প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থপর গোষ্ঠী তাঁদেরকে সহ্য করতে পারে নি। নৃশংসভাবে হামলে পড়েছে তারা মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা, এবং প্রগতিশীলতাকে রুদ্ধ করতে। ভয়ানক আক্রোশে ঘৃণার বিষ-বাষ্প নিয়ে ঝাঁপিয়েছে আলোর মশালকে নিভিয়ে দিতে, আলোময় আনন্দ যাত্রাকে থামিয়ে দিতে। ঝলমলে আলোর চেয়ে গাঢ় অন্ধকার এদের অনেক বেশি পছন্দ, অনেক বেশি ভালবাসার এবং ভালো লাগার। মুক্ত বাতাসের চেয়ে দমবন্ধকরা গুমোট পরিবেশই এদের বেশি কাম্য। তাঁদের এই আক্রোশে, নৃশংস হামলায় রক্ত ঝরেছে মুক্তচিন্তকদের। তাঁদের শরীর থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়েছে রুক্ষ কঠিন মাটিতে। বন্ধ্যা মাটি সেই রক্তে হয়ে উঠেছে উর্বর, সুজলা-সুফলা। সেই উর্বর মাটিতে ঘন সবুজ শস্য ফলেছে, প্রজাপতি উড়েছে, এসেছে পাখির গান। মুক্তচিন্তকদের ঝরে পড়া রক্ত থেকে বের হয়ে এসেছে আরও অসংখ্য মুক্ত চিন্তার মানুষ।

পরম প্রহসনের এক বিচারের মাধ্যমে সক্রেটিসকে হেমলক পান করে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়েছিলো প্রাচীন গ্রীসে। হাইপেশিয়াকে আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তায় হায়েনার হিংস্রতায় ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে, ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে জ্বলন্ত আগুনে, গ্যালিলিওকে বন্দি করে রাখা হয়েছে অন্ধকার কারাকক্ষে, অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে, হুমায়ূন আজাদকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কোপের পর কোপ। কিন্তু, তারপরেও মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, প্রগতিশীল আন্দোলনকে থামানো যায় নি কখনো, যাবেও না।

মানব সমাজের নিয়মবদ্ধ নিয়মই এমন যে, এটি সামনের দিকেই শুধু এগোবে। পিছন থেকে একে যতই টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেনো, এর অগ্রযাত্রাকে কখনোই থামানো যাবে না। রাশ টেনে ধরে এর সম্মুখ সাময়িকভাবে হয়তো ব্যাহত করা সম্ভব, সম্ভব স্বল্প সময়ের জন্য পিছনের দিকেও কিছুটা নিয়ে যাওয়া, কিন্তু দীর্ঘ সময় পরিভ্রমণে এর অগ্রযাত্রা অনিবার্য। নিশ্চিত পদক্ষেপে এটি এগিয়ে যায় পূর্ব দিগন্তের দিকে। প্রতিক্রিয়াশীলরা এটা খুব ভালো করেই জানে। তাই, সবসময়ই তারা থাকে মরিয়া। যতোখানি সম্ভব অঙ্গহানি ঘটিয়ে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করে সমাজের চাকাকে। প্রতিক্রিয়াশীল আর প্রগতিশীলের এই দ্বন্দ্ব তাই সবসময়ই সুতীব্র, সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী এবং সর্বনাশা। এই সর্বনাশা লড়াইটা সবসময়ই হয় রক্তক্ষয়ী। লড়াইটা রক্তক্ষয়ী হয়, তবে এই রক্ত ক্ষয় হয় শুধুমাত্র একটা তরফ থেকেই। প্রগতিশীলদের দেহ থেকেই রক্ত ঝরে চুইয়ে চুইয়ে, কখনো বা ফিনকি দিয়ে, কখনো বা লাভা স্রোতের মতো তীব্র বেগে। প্রতিক্রিয়াশীলদের মতো খুন, জখম, মারামারি-কাটাকাটি করার মতো মানসিকতা, ইচ্ছা, আগ্রহ, এর কোনোটা প্রগতিশীলদের নেই। অস্ত্রের চেয়ে কলমের শক্তিতেই বেশি বিশ্বাস তাঁদের। মারামারি হানাহানির চেয়ে যুক্তির লড়াইয়ে সামিল হতেই বেশি আগ্রহ তাঁদের। প্রতিটা অনাহুত লড়াইয়ে তাই এক তরফাভাবে রক্ত দিতে হয় তাঁদেরই।

অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, রাজীব হায়দার থাবাবাবা, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নীল, ফয়সাল আরেফিন দীপনদের মতো তরুণ-যুবকরা যে অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে আসে আমাদের জন্য, আমাদের সমাজের জন্য, এই ধরিত্রীর জন্য, সেটাকে পরম মমতা এবং গভীর ভালবাসায় কাজে লাগানো উচিত আমাদের। আমাদের উচিত তাদেরকে এমন একটা নির্ভাবনাময় পরিবেশ দেওয়া, নিশ্চিন্ত একটা বাগিচা দেওয়া, যেখানে তারা ফাগুনের ফুল হয়ে ফুটতে পারবে। তার বদলে যদি এদেরকে আমরা কিছু মূর্খ এবং ধর্মান্ধদের হাতে নিশ্চিহ্ন করে দেবার সুযোগ দেই, তবে অকালেই আমরা হারাবো তাদের সুগন্ধ। ফলে, একদিন আফসোস আর আক্ষেপ করা ছাড়া আমাদের আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না, থাকবে না আর হতাশায় পোড়া ছাড়া আর কোনো গতি।

পরিস্থিতি এই রকম খারাপের পর্যায়েই চলে গিয়েছে। খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছি আমরা এখন। যে কোনো মুহুর্তেই ঘটবে চুড়ান্ত পতন। আমাদের হাতে সময় খুব অল্প। সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের সবাইকে এখন একাট্টা হয়ে থামাতে হবে এই পতন। সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে আন্তরিকতা নিয়ে। সবকিছু ধ্বসে যাবার পরে আফসোসে পোড়ার চেয়ে, আসুন সবাই মিলে শেষ চেষ্টাটা করে দেখি। দেশ বাঁচুক, দেশের মানুষ বাঁচুক, অনাগত সময়ের আমাদের যে সমস্ত সন্তানেরা জন্ম নেবে এই দেশে, তারা একটা আলো ঝলমল, অপার সুগন্ধময় স্বদেশ পাক।

ফরিদ আহমেদ, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ