প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মারজিয়া প্রভা | ১৬ নভেম্বর, ২০১৫
প্যারিসে হামলার খবর শেয়ার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর ফাঁকে অনেক পুরাতন অনেক খবরের পাশাপাশি নতুন করে এক খবরে চোখ আটকে গেল। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন বলেছেন, “শেখ হাসিনার বাংলাদেশ অচিরেই জঙ্গিবাদে পরিণত হবে”। মনে পড়ছে হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শফীর সেই খোলা সমাবেশের খবর “নাস্তিক কতল ওয়াজিব” বিষয়ক খবর।
এটা দুই বছর আগের খবর হলেও সাম্প্রতিক বাংলাদেশের যেন এক চিত্র! অবাক করা বিষয় খোলা ময়দানে দেশের একাংশ জনগোষ্ঠীকে খুন করার হুমকি দিলেও সরকার নির্বিকার ছিল, আছে।
আল্লামা শফি আরও বলেছেন যে আল্লাহর দেশে থেকে 'আল্লাহকে বিশ্বাস করতে হবে, নাইলে থাকা যাবে না।' আর সরকার যদি সাচ্চা মুসলমান হয় তাহলে তাদের দেওয়া ১৩ দফা দাবি মেনে নিবে। প্রথম কথা, সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস না করা বা করা, একজন মানুষের পূর্ণ অধিকার আছে। ব্যক্তিগত বিশ্বাসে কারও হাত নেই। আর “আল্লাহর এই দেশে” গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে, তাই ১০০ জনের মধ্যে ১ জন নাস্তিক থাকলেও তার সমানভাবে থাকার অধিকার আছে এই দেশে, কথা বলারও অধিকার আছে। ভলতেয়ারের ভাষায় বলতে হয় “হতে পারে তোমার মতের সাথে আমার মত মিলছে না, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আমি আজীবন লড়ে যাব”।
এবার একটু চোখ ফেরাই, হেফাজতের ১৩ দফার দিকে। প্রথম হচ্ছে ইসলামবিরোধী কোন কথা এই দেশে বলা যাবে না। হলে হয় শাস্তি না হয় কতল। নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ, ব্যভিচার (পড়ুন বিবাহপূর্ব প্রেমের সম্পর্ক) বন্ধ করতে হবে। অপরাজেয় বাংলাদেশের মত ঐতিহ্যবাহী মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে (অন্য ধর্মের বেলায় কিছু বলে নি), নারীনিতি বাতিল করতে হবে, খ্রিস্টান মিশন বন্ধ করে দিতে হবে এবং বোমা বানাচ্ছে যে মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের ব্যাপারে ছাড় দিতে হবে (সব মাদ্রাসার ছাত্রই বোমা বানায় না, মাদ্রাসা পড়েছে এমন বন্ধুও আমার আছে, যে এখন সম্পূর্ণ সেক্যুলার)।
আচ্ছা ভাবছেন কি? ছি ছি! হেফাজত কি বলছে, ওরা ধর্মটাকে শেষ করে দিচ্ছে? নাহ! সব দোষ ওদের না। কিছু যোগ করেছে তারা। কিন্তু সবটা না! ব্যাপার হল ইসলাম গান বাজনা, মূর্তি বানানো নিষেধ করে দিয়েছে, নারী-পুরুষ অবাধ বিচরণ, সে ভার্সিটি তে পড়া হোক আর চাকরি করা হোক নিষেধ করে দিয়েছে, বিয়ের আগে প্রেম হারাম করে দিয়েছে, কাফিরের (পড়ুন নাস্তিক)বিরুদ্ধে আঘাত হানার নির্দেশও দিয়েছে। হেফাজত নিজেদের পছন্দমত টুকলি করে, ১৩ দফা সাজিয়েছে, আর কিছু না!
এইবার বলুন তো, আমাদের চারপাশে এইসব নীতি মেনে নেবার মত মুসলিম কতজন আছেন? নেই! শিক্ষিত মুসলিম আজ মডারেটেড মুসলিম। দাঁড়ি, রোজা, নামাজ, হিজাবের মাঝেই সীমাবদ্ধ তাদের ধর্ম! হিজাব পড়ে তারা জেমসের কন্সার্ট দেখতে যায়, দাঁড়ি রেখে তারা তুলিতে মানুষের মুখ রাঙায়, গান গায়, আমার অনেক ছেলে বন্ধু আছে, যাদের সঙ্গে আমার ক্যাফে তে রোজ আড্ডা হয়, তাদের প্রায় সবারই দাঁড়ি, নিয়মিত নামাজ রোজা ঠিক রাখে, কিন্তু নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশায় তারা জড়পদার্থ হয় না। ইচ্ছেমত আড্ডা দেই একসঙ্গে, চলে যায় না তারা, গলায় গলা মিলে চিৎকার, তামাশা করি।
এভাবে বিচার্য করলে দেখা যায় কেউই আর শতভাগ মুসলিম নেই। ১৫০০ বছর আগে কট্টর নীতি মানার মত অধিকাংশ ব্যক্তি নেই। কিন্তু যখনই ইসলামের ভুলত্রুটি নিয়ে কথা উঠে, এদের মাথা গরম হয়ে যায়, অথচ এরাই জীবন থেকে ইসলামের অনেক অংশ বাদ দিয়েছে। এরা হয়ত জানে না, কোন অংশ বাদ দিলেই ইসলাম আর ইসলাম থাকে না।
সেইজন্যই, গত এপ্রিলের ২৯ তারিখে আবুধাবিতে ইসলাম স্কলারদের মিলিত সভায় শেখ আবদুল্লাহ বিন বায়াহ বলেছেন
“আউটডেটেড ইসলামিক ল পরিবর্তন করা সময়ের দাবি, আজকের সমাজ ব্যবস্থায় যার কোন বৈধতা নেই।“
তিনি সাহাবি ইবনে মাসাউদের বক্তব্য “One who wants religion shall revolutionise the Quran” তুলে ধরে বলেন “ ইসলামের মৌলিকতা হচ্ছে রিনোভেশন”। সুত্রঃ http://www.thenational.ae/uae/outdated-religious-laws-must-be-changed-uae-forum-hears।
ইসলামিক স্কলাররাই মেনে নিয়েছে ইসলামের ১৫০০ বছর আগের সংস্কার কিংবা আইন, আজকের সমাজব্যবস্থায় উপযুক্ত না। নারী পুরুষের মেলামেশা বা নারীকে সম্পত্তি দেওয়ার আইন কোনটাই, আজ ২০১৫ তে এসে মিলবে না! এটাই স্বাভাবিক! এই কথাটা এই দেশেও বলা হয়, এবং তাদেরকেই ইসলামবিরোধী বলে কতল করার হুমকি দেওয়া হয়। যেটা ইসলামিক স্কলার বললে ধর্মানুভুতিতে লাগে না, লাগে সাধারণ মানুষ বললে? এটা কি আমাদের জ্ঞানের অভাব না?
খুব সোজাসাপ্টা বিষয়, জ্ঞানী মুসলিমরা ইসলাম সংস্কার করতে চান, কারণ যে ইসলাম প্রচলিত, যে শরিয়া আইন নিয়ে লোকে কথা বলে, তা এই দুনিয়ায় বৈধ না। এর আগে ফজলুর রহমান মালিক ইসলাম রিফরমেশন করতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানে, আইয়ুব খান শাসনামলে, তাঁকে মূর্খ জাতি “মুরতাদ” বলে দেশ থেকেই বের করে দিয়েছে। লাভ কিছুই হয়নি, জঙ্গি শেষ করে দিয়েছে পাকিস্তানকে।
আইএস, হেফাজতিরা ১৫০০ বছর আগের কিছু নীতি মানবে,অন্ধ বিশ্বাস করবে। এসবে যারা “সহি ইসলাম” না বলে তাস পেটাচ্ছেন আনন্দে, প্যারিসের হামলা নিয়ে “জঙ্গি মদদ দাতা পশ্চিমাকে গালাগাল করেই দায় সারছেন, হেফাজতকে আমলে নিচ্ছেন না, তারা মনে রাখবেন আপনিও জঙ্গিদের পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন এবং শুধুই নাস্তিক না, কোপটা একদিন আপনার ঘাড়েও পড়তে পারে।
হেফাজত সম্মেলনে নারী সাংবাদিককে খোলা চুলে, জিন্স পরে সংবাদ কভার করতে গিয়েছিল বলে পিটিয়ে মারার কথা আশা করি ভুলে যান নি!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য