প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এনামুল হক এনাম | ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫
একটি জাতির উন্নয়ন কেবল লোকবল, প্রযুক্তির ব্যবহার, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উপর নির্ভর করে না। অতি অবশ্যই সামগ্রিক উন্নয়নে জাতিগত অভ্যাস, বিশ্বাস, কুসংস্কার, মতবাদও অনেক ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরাম আয়েশের জোগাড় করতে পারে, তবে নিরাপদ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দেয় না।
একটি জাতির নিজস্ব জাতিসত্তা গঠনে ঐ জাতির নিজ ভূখণ্ডের প্রতি ভালোবাসা, দলমত নির্বিশেষে ভূখণ্ডের মানুষের প্রতি মমতা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা, ইতিহাসের প্রতি বিশ্বাস... এ সবই অতীব জরুরি।
আধুনিক, উন্নত জাতি গঠনে বিশ্বাস এবং অভ্যাস শব্দ দুটি চয়নে পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন বিধায় কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন মনে করছি। অভ্যাসকে সুঅভ্যাস এবং বদভ্যাস এই দুই ভাগে ভাগ করা গেলেও বিশ্বাসের প্রকারে ভিন্নতা আছে। ব্যক্তিগত বিশ্বাস একটি গোত্রের বিশ্বাস থেকে ভিন্ন হতে পারে, ধর্ম বিশ্বাসে যেমন ভিন্নতা থাকতে পারে তেমনি একটি ভূখণ্ডে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের দলীয় বিশ্বাসীদের বিশ্বাসে ভিন্নতা থাকতে পারে, এবং তা চরম আকার ধারণ করে কি পরিমাণে ধন্দে পুরো জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে তার অজস্র উদাহরণের চাক্ষুষ সাক্ষী আমাদের প্রজন্ম।
তেমনি অন্ধবিশ্বাস থেকে জন্ম নেয়া ধর্মান্ধতা একটি জাতির জন্য হতে পারে হুমকি এবং প্রগতির অন্তরায়। ধর্মোন্মদনায় বিধ্বস্ত জাতির উদাহরণও আমাদের সম্মুখে কম নয়। ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নেয়া মুনাফালোভীরা যখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়ায় পরিণত হয় তখন তারা শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মকে। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সহজেই অস্থির করে তোলা সম্ভব একটি ভূখণ্ডকে। তা পৃথিবীর সর্বত্র, সব ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
যে কোনো প্রকার বিশ্বাস স্থান, কাল, পাত্র ভেদে পরিবর্তন হতে পারে। দল, মত, ধর্ম সবকিছু ক্ষেত্রে বিশ্বাস প্রয়োজনীয় অঙ্গ, কিন্তু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন সময়ের প্রয়োজনে নিজ বিশ্বাসকে বিজ্ঞান এবং বাস্তবতার কষ্টিপাথরে যাচাই না করে অন্ধের মত স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা পরিচালিত হয় তখন তা কখনোই কোনো জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। আবার অভ্যাসের বশে অন্ধ বিশ্বাস আরও জটিল হয়ে একটি জাতির নিয়তি ধ্বংসের দিকেই ধাবিত হয়, অন্তত পৃথিবী হাজার বছরের ইতিহাস তাই বলে। পুরো আলোচনা হয়তো পাঠকের নিকট নিশ্চয়ই দুর্বোধ্য ঠেকছে।
গুরুগম্ভীর আলোচনায় যুগযুগের অভ্যাস কিভাবে বিশ্বাসে পরিণত হয় তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। এক্ষেত্রে আক্কেল আলীর বেআক্কেল হওয়ার অভিজ্ঞতা গল্পকারে আপনাদের কাছে পরিবেশনের মাধ্যমে কলাম শেষ করা যেতে পারে।
আক্কেল আলী আমার প্রতিবেশী। একদিন বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় জীবনের প্রথম হাতি দেখে খুবই অবাক হলেন আক্কেল আলী। আজীব কিসিমের মস্ত বড় জন্তু। বিশাল শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আরামে ধীরে সুস্থে কলাপাতা চিবুচ্ছে। আক্কাল আলীর কাছে আরও অবাক করার মতো ব্যাপার ছিলো, ঐ মস্ত হাতিটি গাছের সাথে বাঁধা ছিলো সরু একটি দড়ি দিয়ে, যা ইচ্ছে করলে ন্যূনতম চেষ্টায় হাতিটি ছিঁড়ে ফেলতে পারে।
আক্কেল আলী ভয়ে পাশ কাটিয়ে গিয়ে মাহুতকে জিজ্ঞাস করেন, এতো বড় হাতি সরু দড়ি দিয়ে বাধা কেনো ভাই?? এই দড়ি তো হাতি ইচ্ছে করলেই ছিঁড়ে ফেলতে পারবে।
মাহুত হেসে বলেছিলো, হ্যাঁ পারে, এটি সত্য। কিন্তু হাতিটি ছোটবেলা থেকে সেই সত্য শিখতে পারেনি। হাতিটি যখন ছোট ছিলো তখন তাকে বড়, শক্ত শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। হাতি শাবকটি তখন খুব চেষ্টা করতো শেকল ছেড়ার, পারতো না। সেই না পারার স্মৃতিটি তার মনে স্থায়ী বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। হাতির ক্ষমতা অনেক, ইচ্ছে করলেই দড়ি ছিঁড়তে পারে, সত্যটা আমরা জানি... হাতি জানে না। হাতি অভ্যাসে কাবু, বিশ্বাসে অন্ধ।
আক্কেল আলী বেআক্কেল হয়ে মাথা চুলকে মাহুত কি বললো তা বুঝার চেষ্টা করে বাড়ির পথে হাঁটা দেন...
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য