আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

স্বপ্ন যাহা শুনিলাম রাজযোগ্য বটে...

হাসান গোর্কি  

নিন্দুকেরা বলে থাকে একটি বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের বুদ্ধি নাকি থাকে তাদের জানুসন্ধিতে। কর্নেল অলি আহমেদের ক্ষেত্রে এই কথাটি প্রয়োগযোগ্য বলে আমার মনে হয় না। কারণ তিনি শুধু সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণকারী বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধাই নন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা লগ্নের ওপর অভিসন্দর্ভ রচনা করে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জনকারী প্রথম ব্যক্তি। তিনি সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করে গতবছর লন্ডনের এক বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রকাশিত মৃতপ্রায় রাজ-স্বপ্নকে প্রাণ দিয়েছেন। তিনি কি ভুল করছেন নাকি বুদ্ধিতে খাটো বলে অন্যরা এই স্বপ্নের মর্মার্থ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হচ্ছে?

আসুন দেখা যাক নথিপত্র কী বলে।

৭১-র ১৪ই এপ্রিলের আগে কোন আইনগত বা এমনকি কোন আইন বহির্ভূত কর্তৃপক্ষের দ্বারা কোন সরকার গঠিত হয়নি বা সরকার গঠনের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়নি। অতএব তখন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা কোন মন্ত্রীর পদ থাকার প্রশ্নও ছিল না। ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে যখন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে তার থেকেও ৭ দিন পর ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে। এসময় মুজিবনগর সরকার মুজিব কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণাকে এবং নবগঠিত সরকারকে ভূতাপেক্ষতা দান করে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “... এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন…।”

আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১-এ বলা হয়েছে, “…এই আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে।” অর্থাৎ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী শেখ মুজিব রাষ্ট্রপতি পদে বহাল হয়েছেন ২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখে। অতএব ঐ সময় জিয়াউর রহমান বা অন্য কারো রাষ্ট্রপতি পদে থাকার প্রশ্ন অবান্তর। ঘোষণা দিয়ে কোন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হবার সুযোগ নেই। এর জন্য-প্রয়োজন গণপ্রতিনিধিত্বের আইনগত অধিকার। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ রেডিওতে ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। লক্ষ করে দেখুন আদালত এই দুজনের শাসনামলকেই অবৈধ ঘোষণা করেছে। কর্নেল অলি আহমেদ ঐ সাক্ষাৎকারে বলেছেন জিয়াউর রহমান একদিনের জন্য হলেও রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং ক্ষমতার লোভ ছিলনা বলে তিনি সেটি ছেড়ে দিয়েছেন। কর্নেল অলি আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া উচিত জিয়াউর রহমান তার রাষ্ট্রপতি পদ কত তারিখে সৈয়দ নজরুল ইসলামের (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) অনুকূলে ছেড়ে দিয়েছিলেন? তার কি কোন নথি আছে নাকি এটা মনে মনে কলা খাওয়া?

আমাদের বুদ্ধিজীবীদের এক অংশের দাবি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। পৃথিবীর প্রায় দুই তৃতীয়াংশের বেশি রাষ্ট্র কোন না কোন সময় পরাধীন ছিল। একসময় তাদের প্রায় সবগুলো স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এরকম কোন রাষ্ট্রের কথা কি আমরা জানি যেখানে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ নামে একটা পদ আছে? ভারতের স্বাধীনতার ঘোষক কে? পাকিস্তানে কে এই পদটি অলংকৃত করেন? যুক্তরাষ্ট্র কাকে এই পদে বসিয়েছে? সম্প্রতি স্বাধীনতা প্রাপ্ত পূর্ব তিমুর বা বসনিয়া কাকে তাদের স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেছে? পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব, এরকম কোন পদের অস্তিত্ব কোথাও নাই। প্রশ্ন হতেপারে কোথাও না থাকলেই যে আমাদেরও থাকবে না সেটা কেন? ধরে নেওয়া যাক যে তাদের স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষাপট থেকে আমাদেরটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ইতিহাসের বিশুদ্ধতা রক্ষার খাতিরে এরকম একটা পদসৃষ্টির অনন্য প্রয়োজনীয়তা (ইউনিক নেসেসিটি)আমাদের আছে। তাহলে সেই পদে আমরা কাকে বসাব?

নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের দারা গঠিত প্রবাসী মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১০ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে গৃহীত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “... সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারষ্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্ণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি …” । সেখানে আরও বলা হচ্ছে “…বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন…”।

গণপরিষদ সদস্যদের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্তের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষর করলে ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধু যে ঢাকা থেকে এবং ২৬ মার্চ তারিখেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন সেটা মুজিবনগর সরকার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন। ২৬ মার্চ ওয়াশিংটন থেকে এবিসি নিউজের সকালের খবরে যা বলা হয় তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, “ পূর্ব পাকিস্তানে এক ধরনের গণযুদ্ধ শুরু হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান অঞ্চলটিকে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন।” আগ্রহীরা এই লিঙ্ক থেকে ভিডিওটি দেখতে পারেন: https://www.youtube.com/watch?v=zSO5m-zTLbE । ২৬ এবং ২৭ মার্চ বিশ্বের কমপক্ষে বারোটি শীর্ষ দৈনিকে মুজিব কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার খবর ছাপা হয়েছে।


১১ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ তার বেতার ভাষণের শুরুতে বলেছিলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশের বীর ভাই-বোনেরা, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মুক্তিপাগল গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদেরকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি।...২৫ শে মার্চ মাঝরাতে ইয়াহিয়া খান তার রক্তলোলুপ সাঁজোয়া বাহিনীকে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর লেলিয়ে দিয়ে যে নরহত্যাযজ্ঞের শুরু করেন তা প্রতিরোধ করবার আহবান জানিয়ে আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন... (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা -৭)”। কেবলমাত্র ব্যক্তি মুজিব এবং/অথবা ৭০-র গণপরিষদ সদস্যরা সম্মিলিতভাবে এই দাবিটিকে মিথ্যা বলে দাবি করার অধিকার রাখেন। অন্য কেউ নয়। পাকিস্তান থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধু যদি বলতেন যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি অথবা গণপরিষদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যদি পরবর্তী কোন অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতেন যে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি তাহলে বিতর্কের সুযোগ ছিল।

এবার জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করা প্রসঙ্গে আসা যাক। আমরা লক্ষ করলে দেখব স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হচ্ছে, “... বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ তারিখে ঢাকায় ‘যথাযথভাবে’ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন... "। অর্থাৎ শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণার একটা প্রমাণিত আইনগত কর্তৃত্ব বা এখতিয়ার সংরক্ষণ করেন (পাঠক, এখানে ‘যথাযথ’ শব্দের প্রয়োগ লক্ষ করুন) এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি সেটি প্রয়োগ করেছেন। পাকিস্তানী শাসকরা কীভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গণহত্যা শুরুর মাধ্যমে এই ঘোষণার প্রেক্ষাপট তৈরি করেন এই ঘোষণাপত্রের শুরুতেই তা উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর জনপ্রতিনিধিত্বের এখতিয়ার, ঘোষণা প্রদানের কর্তৃত্ব, নৈতিক ভিত্তি, আইনানুগতা- সবকিছুই একে একে ব্যাখ্যা করা হয়। একটি স্বীকৃত স্বাধীনতার ঘোষণার মৌলিক বিষয়টি হচ্ছে এর ঘোষকের এ কাজের কর্তৃত্ব। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কসোভো স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালত যে পর্যবেক্ষণ দেয় সেখানেও এ কাজে স্বাধীনতা ঘোষণাকারী গণপরিষদের কর্তৃত্বের বিষয়টিকে প্রধান বিবেচ্য বলে উল্লেখ করা হয়। আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হান্নান (ঘোষণা: ২৬ মার্চ দুপুর ২টা), ফটিকছড়ি কলেজের তৎকালীন ভাইস প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম সন্দীপ (ঘোষণা: ২৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা)এবং মেজর জিয়া (ঘোষণা: ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ৭ঃ৪৫ মিনিট)-এদের কেউই স্বাধীনতা ঘোষণার এই এখতিয়ার বা কর্তৃত্ব সংরক্ষণ করেন না বলে মুজিবনগর সরকার তাদের ঘোষণাকে আমলে নেওয়া বা ঘোষণার বিষয়টি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করেননি। আমরা লক্ষ করলে দেখব, বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাটিও অনুমোদিত হবার জন্য গণপরিষদের সম্মতির প্রয়োজন হয়েছে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে,“...এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্ণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি”। তাই স্বাধীনতার ঘোষক বলে যদি কাউকে অভিহিত করতেই হয় তাহলে শেখ মুজিবকেই করতে হবে।

অনেকের দাবি জিয়াউর রহমানের ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে জনগণকে বিপুলভাবে উৎসাহিত করেছে। কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, দিক নির্দেশনাহীন জাতিকে পথের নিশানা দিয়েছে। যারা এটা বলেন তারা আসলে অর্বাচীন। ৭১-এ যারা কমপক্ষে কিশোর ছিলেন তারাও জানেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর কয়েকটি ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের নাম নিশানা সারা বাংলাদেশের কোথাও ছিলনা। সিভিল প্রশাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কোন ক্রিয়াকর্মেই পাকিস্তান সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। খোদ ঢাকা শহরে পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতখানি ছিল? এই ছবিটা দেখুন।

 

এরা তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী। ৩ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত এরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল(যেখানে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক চলছিল)থেকে ২০০ মিটার দূরে শাহবাগ-টি এস সি-র রাস্তায় রাইফেল কাঁধে যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছে। এরকম একটা ঘটনা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল? সম্ভব হয়েছিল এ কারণে যে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব তখন কার্যত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যারা জিয়াউর রহমানের ঘোষণাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তাদের বুঝতে হবে যে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মধ্যে সাড়ে সত্তর জন মানুষও তখন তাকে চিনত না। আজই যদি বগুড়া শহরে চৌমাথায় দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীর কোন মেজর উত্তরবঙ্গের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তাহলে জনগণ হয় তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে, না হয় পাগল বলে মাফ করে দেবে। হুইসেল বাজিয়ে যদি স্বাধীনতা অর্জন করা যায় তাহলে কাশ্মীর বা প্যালেস্টাইনের জনগণ স্বাধীনতার জন্য এত কষ্ট করছে কেন? তারা একজন মেজর ভাড়া করলেই তো পারে!

যারা দাবি করছেন মেজর জিয়ার ডাকে সেনাবাহিনীতে যুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহ তৈরি হয়েছিল তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, সারাদেশে সেনাবাহিনী, ই পি আর বা পুলিশের এমন একজন সদস্যের কথা কি আমরা জানি যিনি বিদ্রোহ করার জন্য ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ৭ঃ৪৫ মিনিট (মেজর জিয়ার ঘোষণা) পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছিলেন? অন্য চার প্রতিরোধ যোদ্ধা মেজর ওসমান (যশোর-কুষ্টিয়া), মেজর আহমেদ (রাজশাহী) এবং মেজর নজরুল ও মেজর নওয়াজেস (রংপুর) তো নিজ নিজ এলাকায় প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ২৬ মার্চ সকাল থেকেই।একই দিন যুদ্ধ শুরু করেন মেজর খালেদ মোশাররফ এবং মেজর শফিউল্লাহ। মেজর জলিল যশোরে বাঙালি সৈন্যদের নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসেন ২৩ মার্চ তারিখে। মেজর রফিক (তখন ক্যাপ্টেন ছিলেন) ২৫শে মার্চ তারিখেই সক্রিয় বিদ্রোহ শুরু করেন এবং ইপিআরের অবাঙালি সৈন্য ও অফিসারদের জীবিত অবস্থায় বন্দী করে রেলওয়ে হিলে তাঁর হেডকোয়ার্টার স্থাপন করেন। তাঁর অধীনে ন্যস্ত সৈনিকরা এম. ভি. সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মেজর জিয়া যখন অস্ত্র খালাস করতে যান ততক্ষণে পুরো চট্টগ্রাম শহর বাঙালি সৈনিক ও জনতার দখলে ছিল। প্রতিরোধের মুখে না পরলে জিয়া পক্ষ ত্যাগ করতেন কিনা তা নিয়েই বরং সন্দেহ পোষণ করার সুযোগ আছে। পাকিস্তানীরা তাকেই অস্ত্র খালাস করতে পাঠিয়েছিল যার প্রতি তাদের আস্থা ছিল।

জিয়াউর রহমান নামে একজন মেজর যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন সেটা যুদ্ধ চলাকালীন এদেশের শতকরা কতজন মানুষ জানত? আমার ধারনা সংখ্যাটা দশ হাজারে একজন হতে পারে। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের ক্ষমতা ছিল ১০ কিলোওয়াট এবং সম্প্রচার সীমা যে বৃত্তাকার এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল তার ব্যাস ছিল সর্বোচ্চ কুড়ি কিলোমিটার। পুরো চট্টগ্রাম শহরের মানুষ এই ঘোষণা শুনতে পায়নি। আর যদি আমরা ধরেও নেই যে কোন গায়েবি ক্ষমতা বলে দেশের মানুষ সে ঘোষণা শুনেছে এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছে তাহলে প্রশ্ন দেখা দেয় জিয়াউর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে(কেউ কি তারিখটি বলতে পারবেন?) সাড়ে সাত জন বাঙালি কেন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে গেল না, যেখানে স্বেচ্ছা কারা বরণকারী মুজিবকে অভ্যর্থনা জানাতে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি ঘরের বাইরে এসেছিল? মেজর জিয়ার ঘোষণা এত গুরুত্বপূর্ণ হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরা নয় মাসে (বা পরবর্তী কোন সময়) এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের কোন গণমাধ্যমে কেন একটা কথাও বলা হল না বা কয়েক হাজার নিবন্ধ-প্রবন্ধে জিয়ার নামে একটা বর্ণও লেখা হলনা?মেজর জিয়ার কাছে তার জীবদ্দশায় দেশি- বিদেশি সাংবাদিকদের কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে কিছু জানতে চাইলেন না কেন? “একটি জাতির জন্ম” আর্টিকেলে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে একটা চরণও লিখলেন না কেন? আমাদের স্বাধীনতা দিবস ২৭ মার্চ না হয়ে ২৬ মার্চ হল কেন? আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে বড় অবদান আছে যে দুই বিশ্ব ব্যক্তিত্বের তারা হলেন প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী এবং তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ব্রেঝনেভ। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এ দুজনের কেউ কি জিয়াউর রহমানের নাম শুনেছিলেন বলে মনে হয়?

বিতর্ক শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়েও। বলা হচ্ছে ঐদিন তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা না করে ভুল করেছেন। যারা এটা দাবি করছেন তাদের কাছে জানতে চাওয়া উচিত অবিভক্ত পাকিস্তানের জনগণ যাকে সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছে তিনি কোন দুঃখে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে যাবেন? বিচ্ছিন্নতাবাদের ডাক যদি দিতেই হয় সেটা তো দেবে পশ্চিম পাকিস্তানীরা। শেখ মুজিব তো চেষ্টা করবেন পশ্চিম পাকিস্তানীরা ২৪ বছর আমাদের যেভাবে শোষণ করেছে আমরাও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে পরবর্তী ২৪ বছর তাদের শোষণের প্রতিশোধ নেবো। বিনা যুদ্ধে একটা উপনিবেশ পাওয়া গেলে ক্ষতি কী ছিল? তাই তিনি ২৩ মার্চ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে গেছেন যাতে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে পারে। বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ দাবি করছেন বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের বক্তৃতা শেষ করেছিলেন‘জয় পাকিস্তান’ বলে। ধরে নেওয়া যাক তথ্যটি ঠিক। আমি জানতে চাই তাতে সমস্যা কোথায়? পুরো বক্তৃতাটা কি এই বার্তা(জয় পাকিস্তান) বহন করে? সেখানে তো বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে পাকিস্তান ভেঙে ফেলার স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমি বরং অবাক হই, একটা চলমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অধীনে থেকে লক্ষ লক্ষ লোকের সামনে তিনি কীভাবে ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করলেন! শুধু এই শ্লোগানটি দেওয়ার জন্যই তো রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে তার ফাঁসি হতে পারত।

তারেক জিয়ার দাবি শেখ মুজিব স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ভারতে আশ্রয় নিলে তারেক জিয়া এখন বলতেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে অস্ত্রের মুখে ঠেলে দিয়ে ভীরু মুজিব নিজের জীবন বাঁচাতে রাতের অন্ধকারে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আমার প্রশ্ন হলো তিনি পালাবেন কেন? পালাবেন তো ভুট্টো–ইয়াহিয়ারা। এবং তারা তা-ই করেছেন। রাতের অন্ধকারে ঢাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। আমারা কি লক্ষ করেছি, পাকিস্তানের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কিন্তু শেখ মুজিবকে ইসলামাবাদে ডেকে পাঠানোর পরিবর্তে নিজেই মুজিবের সাথে আলোচনা করতে ঢাকা এসেছেন! ভুট্টকেও আসতে হয়েছে। কারণ তখন কার্যত শেখ মুজিবই হয়ে উঠেছিলেন পুরো পাকিস্তানে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। পৃথিবীতে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত কোন সরকার প্রধানের পালিয়ে যাবার ইতিহাস আছে? পাকিস্তানের গণপরিষদের নির্বাচিত নেতা, পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য জনগণ যাকে ভোট দিয়েছে, তিনি পালিয়ে গেছেন-এই খবরটি বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হবার পর আমাদের স্বাধীনতা বা স্বাধিকার আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি কি বিশ্ববাসীর কাছে দুর্বল হয়ে পরত না? বঙ্গবন্ধু জানতেন পাকিস্তানীরা তাকে যে কোন সময় সরাসরি হত্যা করতে পারে বা প্রহসনের বিচার করে ফাঁসি দিতে পারে।(৭ মার্চের বক্তৃতায় বলেছিলেন, “... আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি...।”) সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মধ্যে এই একজন মানুষই ছিলেন যিনি এই চরম মুহূর্তেও অবিচল থাকতে পারেন; নেতা হিসেবে নিজের মর্যাদা ও আভিজাত্য রক্ষার জন্য মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে পারেন। সে কারণেই তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।

বলা হচ্ছে আওয়ামীলীগ নেতেরা ভারতে বসে লাল পানি পান করে ফুর্তি করেছেন আর সাধানর মানুষ বাঙালি সৈন্যদের সাথে নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এটা সত্যের অপলাপ। আমারা কেউ মঙ্গলগ্রহ থেকে আসিনি। যা ঘটেছে তা আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে। যে জনগণ প্রতিরোধ করেছিল তারা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ বা ছাত্র ইউনিয়নের নেতা, কর্মী বা সমর্থক ছিল। তারা নৌকা মার্কা ভোট দিয়েছিল এবং ১২০০ মাইল দূরবর্তী কোন এক নির্জন কারা প্রকোষ্ঠে বন্দী নেতার নামে যুদ্ধ করেছিল। পলায়নকারী নেতারাই আত্মসমর্পণকারী নেতাকে প্রধান করে প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরাশক্তির সরাসরি ও তিন পরাশক্তির পরোক্ষ বিরোধিতাকে মোকাবিলা করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। তারাই ভারতে পলায়নকারী সেনাসদস্যদের মধ্যে থেকে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করে মাস মাস ৪০০ টাকা বেতন দিয়েছিলেন। সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে যুদ্ধ বিরতির পক্ষে বা পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে ভোট পড়েছিল ১০৪ টি। বিপক্ষে ভারত এবং রাশিয়া সহ মাত্র ১০ টি রাষ্ট্র ভোট দিয়েছিল। এইসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেছিলেন ভারতে পলায়নকারী নেতারাই। মনে রাখতে হবে কোন অলৌকিক হুইসেল শুনে সোভিয়েত নৌবহর ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরে ব্রিটিশ সাবমেরিন এবং সপ্তম নৌবহরকে মোকাবিলা করতে আসেনি।

আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয় স্নায়ুযুদ্ধের সবচেয়ে বৈরি সময়ে। ভিয়েতনাম এবং কোরিয়া যুদ্ধে নাস্তানাবুদ দিশাহারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সেসময় তার অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে রীতিমত চিন্তিত হয়ে পরেছিল। সিয়াটো ও সেন্টো সামরিক জোটের সদস্য এবং পরম মিত্র পাকিস্তানের পতন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র এমনকি যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের কঠোর অবস্থানের কারণে তারা পিছু হটে যায়। ভারতের ওপর সম্ভাব্য চীনা আক্রমণও ঠেকিয়ে রাখে সোভিয়েত ইউনিয়ন। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ায় এই সংস্থার প্রায় সব সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন লাভ করেছিল পাকিস্তান। ২৬ মার্চ থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব রণাঙ্গন মিলিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মোট ১১২৩ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছিল। পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সমরশক্তি ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত প্রায় অটুট ছিল। সোভিয়েত সমর্থনে ভারত অভিযান না চালালে আমাদের স্বাধীনতা অনেক বিলম্বিত হতে পারত; এমনকি কাশ্মীর বা প্যালেস্টাইনের মত অনিশ্চিত সময়ের জন্য ঝুলে যেতে পারত। পরিস্থিতির সার্বিক বিচারে এর বাইরে কিছু অনুমান করা চলেনা। কর্নেল অলি আহমেদের কথা শুনে মনে হল তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের এই বৃহত্তর প্রেক্ষাপটটি বুঝতে পারেননি। অথবা বয়সের কারণে ভুলে গেছেন।

স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে নতুন করে শুরু হওয়া বিতর্ক দেখে মনে হচ্ছে জাতি হিসেবে আমরা মেধাহীন নাকি কুচুটে (ইন্ট্রিগুইং) তা নিয়ে বড় পরিসরে একটা গবেষণা চলতে পারে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বয়স ৪৪ বছর। সে সময় যারা কিশোর ছিলেন তাদের বয়স এখন ৫৫। হিসেব অনুযায়ী দেশে পঞ্চান্ন-ঊর্ধ্ব বয়সের মানুষের সংখ্যা বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ১১%। অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধ কমপক্ষে কিশোর বয়সে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে এমন জীবিত মানুষের সংখ্যা মোটামুটি দেড় কোটি।

স্বাধীনতা যুদ্ধ সাড়ে সাত কোটি বাঙালি এবং বিশ্ববাসীর সামনে ঘটে যাওয়া একটা উন্মুক্ত ঘটনা। এর পরও তার ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে কেন? উত্তরটি সহজ। যে দেশে আল্লামা সাঈদীর মুখাবয়ব চাঁদে দেখে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দেওয়ার জন্য মাঠে নামে, যারা সাতক্ষীরায় ভারতীয় বাহিনীর অভিযানের কাহিনী মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, যে দেশের শিক্ষিত মানুষ ফটোশপে তৈরি করা কাবা শরিফের ওপর ফেরেশতার ছবি দেখে ফেসবুকে এক লক্ষ লাইক দেয়, সে দেশে তারেক জিয়ার খোয়াব বিশ্বাস করার লোকের অভাব হবেনা এটাই স্বাভাবিক। তাই তিনি এবং তার মতাদর্শের বুদ্ধিজীবীরা যে কল্পকাহিনী প্রচার করছেন তা সহজেই গণ-বিশ্বাসে রূপ নিচ্ছে।

হাসান গোর্কি, কানাডা প্রবাসী লেখক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ