আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

বাংলা একাডেমি ডিজির ঔদ্ধত্য ও জঙ্গি উৎসাহ দানে আমি বেরাইজ্জা

জহিরুল হক বাপি  

ঢাকার উপর দিয়ে চলবে অত্যাধুনিক মেট্রোরেল। মাটি থেকে ত্রিশ ফুট উপর দিয়ে চলা এ ট্রেন বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে ত্রিশ ফুট উপর দিয়ে চলা কোন রেল যাত্রী বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বট গাছ দেখে যদি প্রশ্ন তোলে এখানে কাঁঠালের পরিবর্তে বট কেন? এখানে কি হয়েছে? এরা কি করেছিল? বটের মতো বড় একটা বৃক্ষ এখানে থাকলে বটের অপমান হয়।

মেলা শুরু হলো। মহান একুশের স্মরণে এ বই মেলা দিনকে দিন বাঙালির, বাঙালিত্বের মিলন মেলা হয়ে উঠছে। কিন্তু দৃশ্যমান দিনকে দিন অমর একুশে বই মেলা কাচের শো দালান হয়ে যাচ্ছে। হয়ে যাবে। বাংলা একাডেমি সৃষ্টি হয়ে ছিল কেন? বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের জন্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৫ সালের ডিসেম্বর মাসের তিন তারিখ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি । রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন-পরবর্তী কালের প্রেক্ষাপটে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি উঠে। বাংলা একাডেমির চিন্তা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রথম করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩১ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে ভাষা সংক্রান্ত একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবী করেন। এছাড়া দৈনিক আজাদ পত্রিকা বাংলা একাডেমি গঠনে জনমত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ১৯৫২সালের ২৯ এপ্রিল পত্রিকাটি 'বাংলা একাডেমি' প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে এ প্রসঙ্গে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। নেয়। ১৯৫৪ সালে এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অর্থাভাবে প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হয়নি।

অবশেষে ১৯৫৫ সালে ৩ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার উদ্বোধন করেন 'বাংলা একাডেমি'র। বাংলা একাডেমির প্রথম সচিব মুহম্মদ বরকতুল্লাহ । তার পদবী ছিল 'স্পেশাল অফিসার'। ১৯৫৬ সালে একাডেমির প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন অধ্যাপক মুহম্মদ এনামুল হক। বাংলা একাডেমির প্রথম প্রকাশিত বই আহমদ শরীফ সম্পাদিত দৌলত উজির বাহরাম খান রচিত 'লাইলী মজনু'।কথাসাহিত্যিক ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীন আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে ১৯৭২ সালে ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। সেই থেকেই বাংলা একাডেমিতে বইমেলার সূচনা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে কোনো বইমেলা হয়নি। তবে বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর কিছু বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। তাঁর দেখাদেখি মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা এবং বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলামও  ঐ ভাবে তাঁদের বই নিয়ে বসেন। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বড় আকারের জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মেলার উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে নিজামী, চিত্তবাবু এবং বর্ণমিছিলসহ সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়ালঘেঁষে বই সাজিয়ে বসার জায়গা পান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বইয়ের বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে  স্টলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলাকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামকরণ করা হয়।বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৬০ সালে প্রথম দেওয়া হয়।  ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় বছরে ৯ জনকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৮৬  থেকে বছরে ২ জনকে এই পুরস্কার প্রদানের নিয়ম করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে চারটি শাখায় পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। একটা দেশের সংস্কৃতির আর্কাইভ, বেইজমেন্ট বলতে বোঝায় আসলে কবিতা, সাহিত্যকে। এর সাথে জড়িয়ে থাকে অন্যান্য সব। বাঙালির ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ, জাতীয়তাবাদকে সুশৃঙ্খল ভাবে ধারণ, উৎসাহ প্রদান এবং প্রচার বাংলা একাডেমির কাজ ।

আমরা একটা দর্শনগত যুদ্ধের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। ৭৫ পরবর্তী সময় থেকে প্রতিটি সেক্টরেই ইচ্ছাকৃত ভাবে সাম্প্রদায়িকতা, বাঙালি বিরোধী তত্ব, আলসেমি, কুশিক্ষা, স্ববিরোধীতা ঢুকানো হয়েছে। এর আক্রমণ থেকে বাংলা একাডেমিও বাদ যায়নি। বলা যায় বর্তমানে এ যুদ্ধের শেষ ফ্রন্ট লাইনে আছি আমরা। আমাদের সচেতনতা বাড়ছে, আমাদের পরিচয় প্রীতি বাড়ছে। সাথে সাথে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রকাশ্য বাঙালি প্রীতি, শিকড় প্রীতি একটু একটু করে বাড়ছে। কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে আসছে।

এ সবের শুরু হওয়া উচিত ছিল বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু বেরাইজ্জার মতো দেখছি সব জায়গায় পরিবর্তনের হাওয়া লাগলেও বাংলা একাডেমি রয়ে গেছে বিএনপি-জামাতি হাওয়ায়। বাংলা একাডেমি অমর একুশে বই মেলার চরিত্র করে ফেলছে কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের চরিত্রের মতো। বর্তমান কর্ণধার ও প্রশাসন স্যুট কোট টাই পরে বসে আছেন ২০০৯ থেকে। প্রায় ছয় বছর। এ ছয় বছরে দেশ ডুবতে ডুবতে আবার সমারোহে রঙিনভাবে অসাধারণ সঙ্গীতের সুরে জেগে উঠছে। যদিও কালো জাদুকরেরা হেরে যায়নি পুরোপুরি। কালো যাদুও চলমান। এ মুহূর্তে সাহস করে দাঁড়ানোর কথা। প্রথম ও প্রধান আঘাত সাহিত্য সংস্কৃতির উপর।

আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির দৃশ্যমান কর্ণধার কে? বাংলা একাডেমি। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনের ন্যাক্কার, নির্লজ্জ অবস্থা দেখে আমি পুরাই বেরাইজ্জা হয়ে গেছি। নোয়াখালীর ভাষায় বেরাইজ্জা মানে বেকুব। ছয় বছরের পুরানো প্রশাসনে যেন বাতাস জাতীয় কিছু বসে আছে। কিছুতেই কিছু আসে যায় না এদের। সরকার যেখানে প্রায় প্রতিটি জায়গায় সচেতন হচ্ছে, সংস্কার করছে সেখানে বাংলা একাডেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এমন উদাসীন থাকার কারণ কি? বাংলা একাডেমি এফ.ডি.সির মতো মরতে কতো দেরি?

গত দুই তিন বছরের বাংলা একাডেমির আচরণে বড় নির্লজ্জেরও লজ্জা হবে। অতি প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ দেশে এসেছিলেন মেলা ও বই প্রকাশ উপলক্ষে। খুন হলেন মেলার  সামনেই। এরপর একে একে লেখকদের খুনের হুমকি, খুনের সারি বেড়েছে। সর্বশেষ খুন হলেন প্রতিথযশা, প্রথম শ্রেণীর প্রকাশক জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সল আরেফিন দীপন। খুন হতে হতে বেঁচে গেলেন আরও একজন প্রকাশক শুদ্ধস্বরের প্রকাশনীর আহমেদুর রশিদ টুটুল, আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন কবি, সাহিত্যিক। এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় এদের প্রত্যেকেই জামাত-শিবির বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরব। এত লেখক, প্রকাশক খুন, আহত, হত্যা আতংকে থাকার পরও বাংলা একাডেমির বর্তমান ডিজি বা কোন কর্মকর্তা এ নিয়ে একটা শব্দ করেননি। আহত নিহত কারো প্রতিই কোন সমবেদনা জানাতে যাননি, জানাননি। ভদ্রতা করেও একটা শোক বার্তা পাঠাননি।

যদি ধরি বাংলাদেশে কোন প্রকাশক লেখক নাই তাহলে বাংলা একাডেমির কাজ কি হবে? বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী জঙ্গিবাদের চাষ হচ্ছে। আর আমাদের একাত্তর থেকেই চলছে বর্তমানের আন্তর্জাতিক জঙ্গি সম্প্রদায়ের মতো আরও সংগঠিত ধর্মব্যবসায়ী মৌলবাদের ষড়যন্ত্র। সুক্ষকৌশলে তারা সব জায়গায় বহু বছর ধরে আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা জেনেটিক্যাল, সামাজিক স্বভাবে বিভ্রান্ত দর্শন ঢুকিয়েছে। ছোট উদাহরণ দেই । বিএনপি আমলের শেষ দুই বছরের পহেলা বৈশাখের কথা মনে করি। পহেলা বৈশাখে কয়েক লক্ষ লোকের সমাগম হয় শাহবাগ, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘিরে। ঐ দিন ঐ এলাকায় হাঁটা চলাও দায় হয়ে উঠে। বিএনপি ঐ বছরগুলোতে মঙ্গল শোভা যাত্রা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ঐ পথগুলো দিয়ে গাড়ি চলাচল খুলে দিত। বাংলামটর, পরীবাগ মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ উৎসাহ নিয়ে গাড়ীর চালকদের শাহবাগ দিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিত। একে মানুষের ভিড়ে হাঁটা দায় তার সাথে গাড়ী চললে কি অবস্থা হয়? ত্যক্ত বিরক্ত মানুষ স্বাভাবিক ভাবে পরের বৈশাখী উৎসবে আসার আগে ভাববে, অনেকেই আর আসবে না। কি সূক্ষ্ম, দারুণ, কার্যকরী বুদ্ধি।

এ ধরনের ষড়যন্ত্র এখন অপ্রকাশ্য নাই। অনেকাংশে প্রকাশ্য এবং নৃশংস হয়ে উঠেছে। কোন একটি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে হলে প্রথম আঘাত হানতে হয় তার ভাষা, সংস্কৃতি, শিকড়ের উপর। ষড়যন্ত্রীরা তাই করে যাচ্ছে। এবং অনেকাংশে তারা সফল। এ আঘাতের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রচার, প্রচারণা, লেখক, প্রকাশকদের সংগঠিত করা বা তাদের সাহস দেওয়ার দায়িত্ব ছিল বাংলা একাডেমির। কিন্তু আমরা কি দেখে আসছি? কিন্তু আমরা কি দেখছি? বাংলা একাডেমি সরাসরি সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। গত মেলায় রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ করে দেওয়া একটি অনুবাদ বই প্রকাশের জন্য। মৌলবাদীদের দাবীর কারণে বাংলা একাডেমির বর্তমান ডিজি এ ব্যবস্থা নেন। যতদূর জানা যায় ডিজি শামসুজ্জামান বা বাংলা একাডেমির দায়িত্বশীল কেউ ঐ বইটি পড়েননি, পড়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি। হেফাজত-জামাত চাহিবা মাত্র তারা শুধু বইটি মেলায় নিষিদ্ধ করেনি প্রকাশনীও নিষিদ্ধ করে।

রোদেলা প্রকাশনীর লেখক নিশ্চয় একজন নয়। একটি বইর কারণে কতজন লেখক, কবি শাস্তি পেল? কতজন তাদের বই পৌছাতে পারে নাই মানুষের কাছে? কত জন লেখক, কবি হায় হায় করতে করতে শুকনো মুখে ঘুরে বেড়িয়েছে মেলায়? বাংলা একাডেমি সে খোঁজ রাখে নাই, চিন্তাও করে নাই। রোদেলার অন্যান্য লেখকদের বই বিকল্প ব্যবস্থায় বিক্রির ব্যবস্থাও করে নাই। সেই শামসুজ্জামান খান, গ্রামের মানুষের ভাষায় 'শামসু মিয়া' এবারও আবার নতুন ভাবে ধরাধামে নাযিল হয়েছেন। মেলা শুরু আগেই তিনি প্রকাশক তথা লেখকদের হুশিয়ার করে দেন!

“অমর একুশের গ্রন্থমেলা’র” হেফাজত-জামাতের মুখপাত্রের কাজ করছে বাংলা একাডেমি। আমি ক্ষুব্ধ, ব্যথিত, হতভম্ব। এক ব্যক্তির উদ্ধতপনা, উন্নাসিকতা কত বেশি হলে নির্লজ্জের মতো লেখকের স্বাধীনতা, লেখক কি লিখবে, প্রকাশক কি ছাপবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়?! বাংলা একাডেমির বর্তমান ডিজি কোন মাত্রার বেয়াদব? কোন মাত্রার? ডিজির এক্তিয়ার বহির্ভূত এহেন নির্দেশনার পর নিঃসন্দেহে বলা যায় “অমর একুশে গ্রন্থমেলায়” বইয়ের দোকান, মেলা থাকলে একুশের চেতনা শতভাগ নিশ্চিহ্ন। সালাম, রফিক, জব্বার, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনারা কি এ বাংলাদেশের জন্য নিজেকে নিঃশেষ করেছে। একজন কেরানী নিয়ন্ত্রণ করতে চান লেখকের মগজ এ জন্য কি ভাষা আন্দোলন, এ জন্য কি একাত্তর, এ জন্য গণজাগরণ?

মেলায় স্টল বন্ধ করে দেওয়ার ভয়ে অনেক প্রকাশক অনেক বই প্রকাশ করবেন না।  করতে পারবেন না। কিন্তু আমি নিশ্চিত মওদুদীবাদী, হেফাজতবাদী, পরোক্ষ জেহাদে উৎসাহদান কারী, স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ রাখার নিয়ম, নারীর বোরকা হেজাবের প্রয়োজনীয়তা, চার বিবাহের অধিকার , বিধর্মীরা কাফের ইত্যাদি বিষয়ের প্রচুর বই অমর একুশের বই মেলায় পাওয়া যাবে। অদূর ভবিষ্যতে এই সময়ে মেলা হয়ে উঠবে ইসলাম ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য।বেয়াদব ডিজি সেই পথের কার্পেটিং করছে। বর্তমান ডিজির বক্তব্যের পরপরই ওলামা লীগ দাবী করেছে মেলায় হিন্দু লেখকদের বই প্রকাশ না করতে। ডিজি এখন কি করবে? মেলায় হিন্দু, মালাউন লেখকদের বই ব্যান করে দিবে? ৯০% মুসলিমের দেশের ডিজি কি করে হিন্দু লেখকদের বই মেলা থেকে উঠিয়ে দেয় তা দেখার বিষয়। এবার না পারলেও ডিজি শামসু মিয়া ভবিষ্যতে এ কাজ করবে তার আগের ধারাবাহিকতায় ।

মেলার স্টল নিয়েও কথা উঠেছে। শুনলাম মেলার নকশানুযায়ী কিছু প্রকাশনী নাকি তাদের স্টল রাখেনি। তারা তাদের নিজেদের খেয়াল খুশি মতো স্টল দিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে বাংলা একাডেমি কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি, নিতে পারেনি। কেন? বিএনপি আমলের বৈশাখী উৎসবের সূক্ষ্ম বর্তমান ডিজি কি সূক্ষ্ম কোন খেলা খেলছেন? এত বড় মেলা। প্রতিদিনই লক্ষ লোক সমাগম হয়, বন্ধের দিনতো কথাই নেই। সেই মেলায় বাথরুম কয়টি। সোহরওয়ার্দী অংশের মেলার বাথরুম খুঁজতে মানুষের একদিন লাগবে। শিশু কর্নারে গেলে শিশুদের জন্য বই স্টল ছাড়া আর কিছু দেখতে পাওয়া যায় না। মেলার কোন অংশেই নেই বিশ্রামের ব্যবস্থা।

কোন এক যাদু মন্ত্রে এ শামসুজ্জামান তিন প্রতিষ্ঠানের ডিজি ছিলেন। সর্বশেষ তার আছর পড়েছে বাংলা একাডেমির উপর। তার একক প্রচেষ্টায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার এখন বিতর্কিত। নিজের প্রবাসী বন্ধু বান্ধবদের পুরস্কার দিচ্ছেন প্রবাসী লেখক পুরস্কার নাম দিয়ে। ডিজির মেয়েকে লন্ডনে নিজ বাসায় থাকতে দেওয়ার বিনিময়ে সালেহা চৌধুরী নামক তার বন্ধু পত্নীকে প্রবাসী লেখক পুরস্কার দেওয়া হয়। এ সালেহা চৌধুরীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বহু আগেই। গত পঞ্চাশ বছরে তার বই এর সংখ্যা দুই বা তিনটি। শুনা যায় যে বইয়ের জন্য সালেহা চৌধুরী পুরস্কার পেয়েছে সেটা ডিজি সাহেবের তত্বাবধানে লিখা হয়। সালেহা চৌধুরীকে পুরস্কৃত করার পর প্রবাসী লেখক পুরস্কার বিতর্কের সম্মুখীন হয়। পরে সেটার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য’ পুরস্কার। তিনি ছেকে ছেকে বের করে আনবেন প্রবাসী সব লেখক। ভবিষ্যতে এ পুরস্কার নিশ্চয় ছাগুদের মুখপাত্র, প্রবাসী মিনা ফারাহ বা মীনা রাণী দাসীকে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ বিরোধী জামাত-বিএনপির পক্ষে লিখতে লিখতে এ মহিলা জীবন , যৌবন সবই বিলীন করছে। প্রবাসী লেখক খোঁজে, এ দেশে বসবাস করা লেখকদের নিয়ে তার কোন ভাবনাই নেই। বর্তমান মৌলবাদীদের বিরুদ্ধের যুদ্ধে তরুণদের উৎসাহ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল শামসুজ্জামানের। কিন্তু তিনি কঠিন ভাবে মাদ্রাসার ছোট হুজুরের দায়িত্ব পালন করছেন। একদিন হয়তো ডিজি আমাদের ইসলামি সাহিত্য, গনিমত সাহিত্য, মালাউন নিধনের একশ একটি উপায় ইত্যাদি বিষয়ে লেখার জন্য লেখকদের উৎসাহ দেবেন। ২০১৩ তে বই মেলায় আগুন দেওয়া হয়। ১৫ এর মেলায় লেখক খুন হয় এরপর খুনের রাস্তা স্পষ্ট। কিন্তু বাংলা একাডেমির ডিজি সরাসরি এ খুনিদের পক্ষ নেন, নিচ্ছেন, তাদের সুবিধা করে দিচ্ছেন।

সামনে ডিজি সাহেব কি করবেন? মেলায় ব্লগার, যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবীতে সক্রিয় কর্মী লেখকদের মেলায় প্রকাশ্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেন? করলেও করতে পারেন। ডিজি গতবারের চেয়ে এবার বেশি সাহসী। এ লেখা লেখার জন্য আমাকে কি শাস্তি দিবে শামসু মিয়া? বই নিষিদ্ধ? আমার প্রকাশককে নাজেহাল নাকি জঙ্গিদের কাছে পাঠাবেন আমার ঠিকুজী?

বাংলা একাডেমির কাজ আমাদের ঐহিত্য রক্ষা, উন্নয়ন, সংরক্ষণ, প্রকাশ ও প্রসার। কিন্তু নপুংসক দিয়ে বংশ, ঐতিহ্য রক্ষা বা সংরক্ষণ কি সম্ভব?

জহিরুল হক বাপি, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ