প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
কবির য়াহমদ | ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যে বীজ বপন করেছিলেন তা মহীরুহ হয়ে তার প্রকাশ্যরূপ দেখিয়েছে ২০১৩র রাজাকারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধ না দেখা প্রজন্মের হাত ধরে যে অগ্নিশিখা জ্বলেছিল তা প্রকৃতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে উৎসারিত। দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশি জয় বাংলা স্লোগান যেখানে দলীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তরুণ প্রজন্ম সেটাকে বাইরে নিয়ে এসে আবারও দেখিয়ে গেছে সার্বজনীন রূপ।
গণজাগরণ আন্দোলন কিংবা গণজাগরণ মঞ্চের ঘোষিত ছয় দফা দাবিকে হয়তো মুক্তির সনদ বলা যাবে না কিন্তু বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে এটা কিছুটা হলেও কার্যকর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই দাবিগুলো যদি মেনে নেওয়া হতো তাহলে বাংলাদেশে জামায়াতিকরণ প্রকল্পের রাশ টেনে নেওয়া সম্ভব হতো। এই দাবিগুলোর বিপরিতে কেমন আছে বাংলাদেশ? সরকার এবং গণজাগরণ আন্দোলনের অবস্থান কোথায় সেটা নিয়ে আলোচনারও দরকার।
দাবি ১. একাত্তরের সকল ঘাতক-দালাল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অভূতপূর্ব জাগরণ যাকে সবাই গণজাগরণ বলে অভিহিত করে তার শুরু হয়েছিল রাজাকার কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায়ের মতো লজ্জা আর অপমানের কারণে। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩-তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখন কাদের মোল্লাকে গুরু পাপে লঘু দণ্ড প্রদান করেন তার পর পরই কাঠগড়ায় উপস্থিত কাদের মোল্লা ভি-সাইন প্রদর্শন করেন। প্রমাণিত এই রাজাকারের এই দণ্ডে খুশি হয়েছিল সে নিজে যার প্রকাশ করে সঙ্গে সঙ্গেই।
একাত্তরের মিরপুরের কসাই বলে পরিচিত এই রাজাকারের এই দণ্ড ব্যথায় ককিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। সঙ্গে সঙ্গে মানুষজন রাস্তায় নেমে আসে। শুরুটা শাহবাগ কেন্দ্রিক ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিস্টদের মাধ্যমে হলেও ক্রমে মানুষজন রাস্তায় বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এরপরের কাহিনী এক ইতিহাস! গণজাগরণ ওঠে পুরো বাংলাদেশে একই সঙ্গে বাংলা ভাষাভাষী সব মহলে, বিশ্বের সব প্রান্তে। কাদের মোল্লার রায়কালীন সময়ে আইসিটি আইন এমনভাবে ছিল যেখানে শুধু অপরাধি এই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করার সুযোগ পেতো। ফলে যাবজ্জীবন রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের উচ্চ আদালতে কোন ধরণের আপিলের সুযোগ ছিল। এটা ছিল একপাক্ষিক এবং সংক্ষুব্ধ পক্ষ হিসেবে কাদের মোল্লার শাস্তি কমানোর সুযোগ ছিল যা রীতিমতো হাস্যকর। গণমানুষের প্রতিবাদের জায়গাতে ছিল অবাক এক অবিশ্বাস যেখানে উচ্চস্বরে উচ্চারিত হচ্ছিল আওয়ামী লিগ সরকারের জামায়াতের সাথে আঁতাতের সন্দেহ। ফলে প্রাথমিকভাবে এই আন্দোলন এবং মানুষের রাস্তায় বেরিয়ে আসাটা ছিল সরকারের বিরুদ্ধে।
মানুষের আবেগের সবচেয়ে বড় জায়গা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা এবং গণহত্যাকারী রাজাকার কীভাবে এমন লঘু দণ্ড পায়? গণজাগরণের মাধ্যমে সৃষ্ট এই আন্দোলন মুহূর্তে গণজাগরণ মঞ্চ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। শাহবাগ চত্বরের নাম আসে প্রজন্ম চত্বর কারণ এখানে প্রজন্মের আবারও জেগে ওঠার বীজ বপন হয়। গণজাগরণে জনতার দাবির মুখে সরকার ১৭ ফেব্রুয়ারি সব পক্ষের সমান সুবিধা রেখে আইন সংশোধন করে এবং এই সংশোধনীর আওতায় ইতোপুর্বকার রায়গুলোও অন্তর্ভুক্ত হবে বলে নিশ্চিত করা হয়। ফলে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের কোন বাঁধা থাকলো না!
শাহবাগ গণজাগরণের পক্ষ থেকে যে ছয়টি দাবি জানানো হয় তার মধ্যে ছিল সব রাজাকারের ফাঁসি। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির উত্তুঙ্গু সময়ে ফাঁসি ছাড়া আর কোন দাবি ছিল না অনুমিতভাবেই। কারণ এই প্রজন্ম বিশ্বাস করে শাস্তি হিসেবে একমাত্র ফাঁসিই হতে পারে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি। কারণ একাত্তরের বাংলাদেশ যে গণহত্যার সম্মুখিন হয়েছিল তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল কাদের মোল্লা, সাইদি, নিজামী, মুজাহিদ, গোলাম আযম গং। এক দুইটা খুন করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি তারা জড়িত ছিল গণহত্যার পরিকল্পনায় এবং তাদের মাধ্যমেই হত্যাকাণ্ড সংঘটন হয়েছিল। গণহত্যার প্রমাণিত অভিযোগের পরেও যদি লঘু দণ্ডের মাধ্যমে তাদের প্রতি মহত্ব দেখানো হয় তবে তা ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মার প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। তাছাড়া এই সব রাজাকারেরা রাজনীতির সুবাদে বিভিন্ন সময়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ‘গণ্ডগোল’ বলে অভিহিত করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা তাদের যুদ্ধাপরাধের দলিল হয়ে আছে।
গণজাগরণের ছয় দফা দাবির প্রথম দাবিতে সব রাজাকারের ফাঁসি চাওয়ার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ট্রাইব্যুনালকে স্থায়ীরূপ দেওয়া হয়নি। ফলে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে এই আদালতকে ভেঙে দেওয়ার পাঁয়তারা কেউ করলে সাংবিধানিকভাবে তার মোকাবেলা কীভাবে করা হতে পারে সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।
গণজাগরণের প্রথম দাবি আদতে পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বাংলাদেশে বসবাসের কোন অধিকার থাকতে পারেনা একই সঙ্গে তাদের প্রায়শ্চিত্ত করাটাই অবশ্যম্ভাবী।
দাবি ২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষের মতো বাদীপক্ষেরও আপিলের সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং আপিল বিভাগে সর্বোচ্চ ৩ মাসের মাথায় আপিল নিষ্পত্তির আইনি বিধান রেখে আইন সংশোধন করতে হবে ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমার অধিকার এই আইনের ক্ষেত্রে রহিত করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আপিলের সমান সুবিধা রেখে আইনের সংশোধন হয়েছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি কানাকড়িও। কারণ আইনের সংশোধনীতে যেখানে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ঠিক বিপরিতে দেখা যায় আপীলের জন্যে মাসের পর মাস এমনকি বছর পার হয়ে গেলেও আপীলের নিষ্পত্তি হয়নি। এক্ষেত্রে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো যায়, বিবাদিপক্ষের সময়ক্ষেপণের বিষয়টি। আদালত নিজেই অনুধাবন করছেন বিবাদিপক্ষ ইচ্ছে করেই সময়ক্ষেপণ করছে এবং সেক্ষেত্রে তাদের অসন্তুষ্টির কথাও প্রকাশ করেছেন। তবু মামলা তড়িৎ গতিতে এগোয়নি। আইনের সংশোধনীতে নির্দিষ্ট সময় সীমার কথা বলা হয়েছে এবং এও জানা কথা, আদালত এই সময়সীমা মেনে চলতে বাধ্যও নন কিন্তু জাতির কলংকমুক্তির প্রয়োজনে অতিরিক্তভাবে কিছু করার প্রত্যাশা নিশ্চয়ই অমূলক নয়। তাছাড়া আপিল বিভাগ কেবল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর আপীল শুনানি করছে না। এক্ষেত্রে কী সরকার দায় এড়াতে পারে প্রয়োজনীয় লোকবলের ব্যাপারে?
দাবি ৩. যেসব রাজনৈতিক দল,শক্তি,ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করছে এবং তাদের সঙ্গে আঁতাত করছে,তাদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
গণজাগরণ আন্দোলন তার ছয় দফা দাবির তৃতীয় দফাতে যুদ্ধাপরাধী দল ও দোসরদের আইনের মুখোমুখি করার কথা বলেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতে ইসলামি, নেজামে ইসলামি এবং মুসলিম লীগ সহ বেশ কয়েকটি দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার সঙ্গে সঙ্গে গণহত্যায় জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামি বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনীতি করছে এবং অন্যান্য দলগুলো নামসর্বস্ব হলেও রাজনীতি করছে এবং বিভিন্ন জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার চেষ্টায় আছে। বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ছাতার নীচে তারা আশ্রিত হয়ে আছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে জোটভুক্ত হয়ে আছে জামায়াতে ইসলামি। এবং এই দলটির সাথে বর্তমান সরকারি দলের যোগাযোগ যে নেই তা হলফ করে বলতে পারবে না কেউ। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে চট্টগ্রামের নদভী সংসদ সদস্য হয়েছে, পাবনায় দলে দলে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছে, দেশের অন্যান্য জায়গায়ও যোগ দিচ্ছে। এর সবকিছুর সাথে হয়তো দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জড়িত না থাকলেও সবকিছু যে অপ্রকাশ্য এবং গোপনীয়ভাবে হচ্ছে সেটা বলা যাবে না। কারণ যখন কোন জামায়াতের রোকন দলের মনোনয়ন পায় তখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তার সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল বলে মনে করা হয়। তাছাড়া জামায়াতে ইসলামির প্রধান অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান ইসলামি ব্যাংকের কাছ থেকে সরকার অনুদান গ্রহণ করছে, মন্ত্রীরা ইসলামি ব্যাংকের পক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে সাফাই গাচ্ছেন- এটা নিশ্চয়ই বাজে লক্ষণ। গণজাগরণের দাবি অনুযায়ি দল, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যারাই যুদ্ধাপরাধীদের সাথে আঁতাত কিংবা সম্পর্ক গড়ছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করলে বাংলাদেশ থেকে খুব সহজেই জামায়াত-শিবির বর্জন প্রক্রিয়া সম্ভব। এই দাবি জামায়াতমুক্ত বাংলাদেশের একটা অভিনব অথচ বাস্তব প্রক্রিয়া হতে পারে যদি সরকার এই দাবি মেনে নেয় সার্বিক ক্ষেত্রে।
দাবি ৪. ধর্মকে ঢাল হিসেবে সামনে রেখে ঘাতক-দালালরা দেশ-ধ্বংসের যে রাজনীতি করে সেই রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশে গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ করা এসব কুলাঙ্গারদের গ্রেফতার করে অবিলম্বে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের জন্ম এবং অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধর্মের অতি ব্যবহার। একাত্তরে অনেকেই ধর্ম বাঁচাতে পাকিস্তান নামক সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তখন ‘কাফের’ ‘ধর্মদ্রোহী’ আখ্যা পেয়েছিল। তবু বাংলাদেশ দৃঢ়চেতা বাঙালীর কারণে স্বাধীন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সব ধর্মের মানুষদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে সংযোজন করা হয়। কিন্তু পঁচাত্তরের বিগোয়ান্ত ঘটনার পর রাষ্ট্রের পরিচয়ের সাথে ধর্মের টুপি পরিয়ে দেওয়া হয় জোর করে। ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্য ধর্মের লোকগুলো মুহূর্তেই হয়ে যায় ধর্মের পরিচয়ে দেশের দ্বিতীয় সারির নাগরিক। যা আমাদের মূল সংবিধান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আদর্শিক দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক, যদিও এক পর্যবেক্ষণে আদালত সাংঘর্ষিক ব্যাপারটিকে গ্রহণ করেন নি। কিন্তু নৈতিক দিক থেকে এবং বাস্তবতার দিকে তাকালে কি সাংঘর্ষিক মনে হয় না?
রাষ্ট্রধর্ম দেশের পরিচয়ের সঙ্গে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যসহ একই ঘরানার দেশগুলো থেকে প্রচুর পেট্টোডলারের মাধ্যমে দেশের মধ্যে আমদানি হয় মৌলবাদের বিষবাষ্প। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে পুনর্বাসিত হয় জামায়াতে ইসলামি, ফিরে পায় রাজনীতির অধিকার। আবারও ফিরে আসে পাকিস্তানি ভাবধারা এবং মৌলবাদের বিষবৃক্ষ ক্রমে মহীরুহ আকার ধারণ করে। রাজাকার সাইদিসহ অন্য অনেক রাজাকার মুহূর্তে দেশব্যাপি পরিচিতি পায় ইসলামি চিন্তাবিদ কিংবা বক্তা হিসেবে। এই সব চিহ্নিত রাজাকারেরা ইসলামি ব্যাখ্যা কিংবা তাফসীরের আড়ালে দেশব্যাপি প্রচার করে ভ্রান্ত মওদুদি ভাবাদর্শ।
ইসলামি চিন্তাবিদ পরিচয়ের আড়ালে মওদুদিবাদের প্রচারকারীরা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে সারাদেশকে বিভক্ত করার মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষকে ধর্মান্ধ করে তুলে। ফলে ইসলামি আদর্শের বিপরিতে জামায়াত-শিবির এবং একই আদর্শের কাছাকাছিরা জোর করে তাদের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে ওঠেপড়ে লাগে। রগকাটা থেকে শুরু করে মানুষ হত্যা সবকিছু জায়েজ হয়ে যায় ধর্মের নামে। ইসলামি বিপ্লবের আখ্যা দিয়ে ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মতিঝিলের শাপলা চত্বরে দাঁড়িয়ে জামায়াত-শিবির নেতারা দেশে 'গৃহযুদ্ধ' বাঁধিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এমন অবাঞ্ছিত ঘোষণার পরও তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি, হুমকি দিয়েও নির্বিঘ্নে থেকেছে তারা।
এছাড়াও ট্রাইব্যুনাল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে রায় আসার পর সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা চরম অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। প্রকাশ্য মানুষ খুন করে, আগুনে পুড়িয়ে দেয় রাষ্ট্রীয় সম্পদ। জামায়াতকে বাঁচাবার মিশন নিয়ে নামা হেফাজতে ইসলাম সাধারণ ব্লগারদের 'নাস্তিক' আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে নামে। রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবাকে হত্যা করে প্রকাশ্যে সে হত্যার দায়ও তারা নেয়। এরপর একে একে খুন হন অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নিলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিল, ফায়সাল আরেফিন দীপন। আহত হন আহমেদুর রশীদ টুটুল, রণদীপম বসু, তারেক রহিম, কিন্তু এখানেও রাষ্ট্রযন্ত্র নির্বিকার।
গণজাগরণের চতুর্থ দাবি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা এত সহজে পার পেতো না এবং নতুন কোন ষড়যন্ত্রকারীদের জন্ম হতো না।
দাবি ৫. পঁচাত্তর-পরবর্তীতে যে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের প্রত্যেককে আবার গ্রেফতার করে বিচার করতে হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি দেশদ্রোহী রাজাকারদের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর পরই ঘাতক-দালালেরা বিচারের সম্মুখিন হয়েছিল কিন্তু পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর রাজাকারেরা নির্বিঘ্নে বেরিয়ে গেছে, রাজনীতির অধিকার ফিরে পেয়েছে, মন্ত্রী-এমপি হয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রেসকোর্সের বক্তৃতায় দালাল রাজাকারদের বিচারের ঘোষণা দেন। একই কথা আবারও ব্যক্ত করেন ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরও। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের পক্ষে বিবৃতিদাতা পাকিস্তান সরকারে যোগদানকারী ও আত্মসমর্পণকারী ২৩ জন আওয়ামীলীগ দলীয় গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যকে তিনি আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার করেন।
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি জারি হয় 'বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭২। ১৯৭৩ সালের ২৩ জুলাই জারি হয় ‘দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এক্ট-১৯৭৩’। বায়াত্তরের দালাল আইনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সহযোগিদের বিচারের জন্যে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর দালাল আইন বাতিল করেন। ছেড়ে দেওয়া হয় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চিকন আলী রাজাকারসহ ১১ হাজারেরও বেশি অভিযুক্ত রাজাকারকে। ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাতিল হয় রাজাকারদের বিচারের জন্যে গঠিত দালাল আইন, বন্ধ হয়ে যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম।
গণজাগরণের ছয় দফা দাবির পঞ্চম দাবিতে ছিল পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর যেসব যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাদেরকে আবারও বিচারের মুখোমুখি করা। এই সময়ে অভিযুক্ত অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে, বাকি যারা বেঁচে আছে তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু অদ্যাবধি দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় নি। তবে এ দাবি যে একেবারেই বাস্তবায়িত হয় নি তা ঠিকও না, কারণ এ সম্পর্কিত অনেক উদ্যোগ চলমান।
দাবি ৬. যুদ্ধাপরাধীদের বিভিন্ন ব্যবসায়ী,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন দাখিল করেছে যেখানে জামায়াতের সহযোগী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১২৭ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশি-বিদেশি এনজিও ৪৩, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২২ এবং হাসপাতাল-ক্লিনিক ১০টি। গত ২৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে ৩৭৩ পৃষ্ঠার এ তদন্ত প্রতিবেদন ও ৯ হাজার ৫৫৭ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের কাছে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান। একই প্রতিবেদনে জামায়াত ও তার সহযোগী সংগঠন আলবদর, আলশামস, রাজাকারসহ তাদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামকে বিচারের মুখোমুখি করতে আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখার জন্যও প্রস্তাব করা হয়।
ট্রাইবুন্যালস আইনের ৪(১) ও (২) ধারা অনুসারে জামায়াতের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি অর্থাৎ সব অপরাধের দায় সংগঠন বা দলটির উল্লেখ করে বিচারের জন্য বলা হয়েছে।তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, ফারইস্ট ইসলামি ব্যাংক, ফয়সাল ইনভেস্টমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইসলামি ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, তাকাফুল ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স, ইসলামি ইনস্যুরেন্স লিমিটেড। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ইবনে সিনা ট্রাস্ট, বাংলাদেশ মসজিদ মিশন, দারুল ইহসান ট্রাস্ট, আল ইনসান ফাউন্ডেশন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিডি ফুডস, টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ইবনে সিনা ফার্মাসিটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইয়ুথ গ্রুপ, কেয়ারি গ্রুপ, মিশন গ্রুপ, মেট্রো গ্রুপ এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দিগন্ত টেলিভিশন, নয়াদিগন্ত, সংগ্রাম, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন, আল মানার অডিও ভিউসাল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল, আইবি মেডিকেল কলেজ, আইবি কমিউনিটি হসপিটাল, আইবি ফিজিওগ্রাফি অ্যান্ড ডিজ্যাবল রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, আইএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, আল মাগরিব চক্ষু হসপিটাল, ফুয়াদ আল খতিব মেডিকেল ট্রাস্ট ও সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ।
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কেয়ারি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত পিংক সিটি, মিশন ডেভেলপারস, কেয়ারি হোল্ডিং, কোরাল রিফ, ইনটিমেট হাউজিং, সোনারগাঁ হাউজিং, আল-হামরা শপিং সেন্টার (সিলেট), মেট্রো শপিংমল, মনোরম আইবি ক্রাফট অ্যান্ড ফ্যাশন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত আইবি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, আইবি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগাং, কিং ফয়সাল ইনস্টিটিউট, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লার আল-আমিন একাডেমী, ইসলামি প্রি-ক্যাডেট স্কুল, লাইসিয়াম কিন্ডারগার্টেন, আল হেরা কিন্ডারগার্টেন।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর তালিকাভুক্ত দেশি-বিদেশি ৪৩ এনজিওর কর্মকাণ্ডে জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশন, জাস্টিস কনসার্ন, ইসরা ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইসহারুল মুসলিমিন, রাবিতা আল আলম আল ইসলামি, আল হারামেইন ইসলামি ফাউন্ডেশন, আল ফোরকান ফাউন্ডেশন, ফুয়াদ আল খতিব ফাউন্ডেশন, সার্ভেন্টস অব সাফারিং হিউমিনিটি ইন্টারন্যাশনাল, ইসলাহুল মুসলিমিন, রিভাইভল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি, আহলে হাদিস লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার, রাবেতা তৌহিদ ট্রাস্ট, বেনোভোলেন্ট ট্রাস্ট, আল হারমেইন, কুয়েত চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, ইসলামিক রিলিফ এজেন্সি, মুসলিম এইড বাংলাদেশ, ইসলামিক এইড সমিতি, অ্যাসোসিয়েট অব মুসলিম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, আদর্শ শিক্ষা পরিষদ, আদর্শ কুটির, এগ্রো-ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্ট, আল ফারুক সোসাইটি, আল আমিন, আল মুদারাবা ফাউন্ডেশন লিমিটেড, আল মজিদ সোসাইটি, আল ইনসান-সুনিসি সমিতি, আঞ্জুমান ইতিহাদ বাংলাদেশ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ওয়েলফেয়ার অব হিউম্যান সার্ভিসেস, অ্যাসোসিয়েশন অব মুসলিম ওয়েলফেয়ার এজেন্সি ইন বাংলাদেশ, বায়তুস সার্ফ ফাউন্ডেশন লিমিটেড, সাথিয়া-বাংলা পরিষদ, বাংলাদেশ কৃষি কল্যাণ সমিতি, ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মসজিদ সমাজ, দারুল ইফতা, দারুস সালাম সোসাইটি, ধলেশ্বরী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, আল ফারুক ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মানারাত ট্রাস্ট।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র, সাইমুম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক হাইয়ার লার্নিং সোসাইটি, আল মারকাজুল ইসলামি ও অ্যাসোসিয়েশন অব মুসলিম ওয়েলফেয়ার এজেন্সিস অব বাংলাদেশ। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনাবিল, আবাবিল, ছালছাবিল,সৌদিয়া,পাঞ্জেরী,বোরাক,কেয়ারী সিন্দাবাদ (সেন্টমার্টিন) [ তথ্যসূত্র- সমকাল এপ্রিল ১৬, ২০১৪]
গণজাগরণের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের সব ধরণের সহযোগি প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তাদের সামগ্রিক ব্যাপ্তি হিসেব করলে এক কথায় এসব প্রতিষ্ঠানকে হয়তো নিষিদ্ধকরণ সম্ভব হবে না কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানকে জামায়াতমুক্ত করলে জামায়াত আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে। ফলে তারা আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাবে। জামায়াতে ইসলামির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা উঠেছে কিন্তু আর্থিক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ঘোষণা আসেনি। ফলে আদালতের রায়ে জামায়াতে ইসলামি যদি নিষিদ্ধ হয়। তবু আশংকার ব্যাপারটি থেকেই যায় কারণ অন্য নামে, নতুন মোড়কে তারা যে আসবে না সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেনা। নতুন নামে যদি জামায়াতে ইসলামি আবারও রাজনীতির মাঠে নামে তাহলে এই সব প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়েই যাবে। তাই একমাত্র উপায় সহযোগি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষিদ্ধ না হলেও নিদেনপক্ষে জাতীয়করণ। তবেই হয়তো তাদেরকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করা সম্ভব।
গণজাগরণের মুল ছয় দফা দাবির বাইরে আরো ছয়টি দাবি সম্বলিত একটি আল্টিমেটামের ঘোষণা দেওয়া হয় ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে এবং ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
১. ঘাতক জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শহীদ রাজীব হায়দার,জাফর মুন্সী,বাহাদুর মিয়া এবং কিশোর রাসেল মাহমুদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আগামী সাত দিনের মধ্যে গ্রেফতার
২. ২৬ মার্চের আগে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক সন্ত্রাসী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী জামায়াতে ইসলামির বিরুদ্ধে সংশোধিত আইনের অধীনে অভিযোগ গঠন এবং নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে
৩. অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলোর আর্থিক উৎস, যেসব উৎস থেকে সব ধরনের জঙ্গিবাদী এবং দেশবিরোধী তৎপরতার আর্থিক জোগান দেওয়া হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে
৪. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া গতিশীল ও অব্যাহত রাখতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে স্থায়ী রূপ দিতে হবে
৫. গণমানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও তাণ্ডব বন্ধে অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ গোপন আস্তানাগুলো উৎখাত করতে হবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এদের ভয়ঙ্কর চেহারা প্রকাশ করতে হবে
৬. যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষক এবং হত্যা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর ৩ বছর হয়ে গেছে। এই সময়ে দাবিগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু চলমান, আবার কিছু বাস্তবায়ন হয় নি। আন্দোলনের মাঠ থেকে উত্থাপিত হওয়া দাবিগুলো হুবহু বাস্তবায়ন হয়ে যাবে এমন হয়ত কেউ আশা করে না। তবে এ সম্পর্কিত কার্যকর কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে কিংবা হবে সেটা আলোচনার দাবি রাখে। এ হিসেবে বলা যায়, এখানে আছে মিশ্র অনুভব; আশাবাদী এবং হতাশ হওয়ার মত।
তবে এর বাইরে বলা যায়, বাংলাদেশকে জামায়াতিকরণ প্রকল্প থেকে মুক্ত করতে গণজাগরণের ছয় দফা দাবি গুরুত্বের দাবি রাখে!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য