প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ১৫ মার্চ, ২০১৬
হলমার্ক, শেয়ার বাজার, কুইক রেন্টাল, শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেল। হরহামেশাই সিঁধেল চোর, ছোট চাঁদাবাজ চোর, পকেট চোরদের যখন তখন জনগণ পিটুনি দিচ্ছে- জেল জরিমানা হচ্ছে, কিন্তু বড় চোরদের কিছু হয় না বলে এখন ঘরে ঢুকে চুরি করা শুরু করেছে। বড় চোর কাউকে নিয়ে যদি র্যাব টাকা উদ্ধারে যেত, জনগণ হয়ত পিটুনি দেওয়ার সুযোগ পেত, কঠিন সাজা পেত, টাকা উদ্ধার করা যেত; তাহলে এ ঘটনা বার বার ঘটা বন্ধ হতো। টাকা উদ্ধারে গেলে স্বাভাবিক ভাবে টাকার পাহারায় থাকা সন্ত্রাসীরা গুলি করতো তখন স্বাভাবিকভাবে আগে গুলি খেত বড় চোর, কারণ তার হাতে হ্যান্ডকাপ পরানো থাকতো সেই জন্য হঠাৎ গুলিতে সেইফ সাইডে যেতে পারতো না।
কিছু হলে আমরা সবাই মিলে অর্থমন্ত্রীরে গাল দেই। কেন? নিজের মাসের হিসাব চালাতে জীবন শেষ, বুঝেন দেশ চালাতে কি হয়? এই যে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু, নতুন নতুন ইকোনমিক জোন, ফোর লেন, এক্সপ্রেসওয়ে, কমিউনিটি হেলথ, নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রেল উন্নয়ন, চিকিৎসা সেবা, উপচে পড়া রিজার্ভ এগুলোতে বর্ষীয়ান অর্থমন্ত্রীর অবদান একটু ভাববেন। তিনি হয়তো অপ্রিয় উক্তি করে ফেলেন কখনও কখনও , কিন্তু তার কথার তুলনায় তার অবদান তো ভাববেন! মানুষ রোবট না- ভাবতে হবে।
পদ্মা সেতুতে চুরি হাজার হাজার কোটি টাকা – আমরা সবাই স্বাভাবিক ভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু এখনো বুঝছেন চুরি হয় নাই। কি কঠিন ষড়যন্ত্র। এমন ষড়যন্ত্র হয়ে ছিল ‘৭৪ সালে । খাদ্যের টাকা নিয়েও আমেরিকা আমাদের খাদ্য দেয়নি। ফলস্বরূপ দুর্ভিক্ষে প্রাণহানি। পদ্মা সেতু না হলে সূক্ষ্ম ক্ষতি হতো অনেক বড় কিন্তু সাধারণ চোখে দেখা ক্ষতি হতো- কয়েক কোটি জনগোষ্ঠী আরও বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে পড়তো অর্থে, মননে, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে। এমনিতেও আমরা পিছিয়ে আছি অনেক অনেক বছর। আমাদের নাম করা জাতীয় দৈনিকগুলোতে পানি পড়া, জীন বোতল বন্দীর বিজ্ঞাপন এখনও মহাসমারোহে চলছে। টিভি চ্যানেলে চলছে আলোকিত পাথরে সব বালা-মুসিবত বাতাসের মালা হয়ে আমাজন নদীতে পড়ার প্ররোচনা।
যাই হোক মূল প্রসঙ্গে আসি। এরপর ভাবেন পেট্রোল বোমার বছরগুলোতে কি অবস্থা ছিল? চারপাশ এতই অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল যে ক্ষত এখনও শুকায় নি। ঐ সময়ে জন্ম হওয়া ব্যবসা বাণিজ্যের স্থবিরতা এখন কাটে নি। জেএসপি সুবিধা বন্ধ করার জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যে আমেরিকাকে অনুরোধ করেছিলেন তা আজ প্রমাণিত। এত সকল সমস্যার ভিতরও আমরা দুর্ভিক্ষে পড়িনি, গুড়ো গুড়ো হয়ে যাইনি, আমেরিকা-ইউরোপের থাবার ভেতর যাই নি বরং বিশ্বের দরবারে রয়েল বেঙ্গল টাইগার যে আমাদের শক্তি তার প্রমাণ দিচ্ছি এত বছর পর। অর্থনীতি সবল বলে এত কিছু সম্ভব হয়েছে। না হলে ড. ইউনুস সাহেবের মেইলের খেলে আর জামাতি টাকার খালে বাংলাদেশ এখন আই.এস এর শক্তিশালী ঘাটি হতো। এদেশে পত পত করে উড়তো জেহাদি, যৌন জেহাদি, শরীয়া আইন এর বান্না, মওদুদীদের উগ্র ইসলাম। কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লারা গোল্লা গোল্লা চোখে আবার গনিমতে মাল খুঁজত। না পেলে যারে তারে নাস্তিক বানিয়ে গনিমতের মাল বানিয়ে ফেলতো।
গত ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে আলোকসজ্জা করা হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর লাইটিং প্রতিকৃতি ছিল। প্রথম আলো এডিট করে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে সেই আলোকসজ্জা প্রকাশ করে। সেই প্রথম আলোর মানুষ কি ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আই.টির মতো একটা সেনসিটিভ জায়গায় উচ্চপদস্থ পদে চাকরী করে দেশের উপর কঠিন কালো ষড়যন্ত্রের কালে? বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর কিংবা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন এ দিকে নজর দিল না? বলছি না তিনি অপরাধী। কিন্তু অতি ঘরের মানুষও যখন বিপরীত চেহারা দেখাচ্ছে কোন এক যাদুতে তখন এ স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে নজর না দেওয়া অপরাধ নয় কি? বহু মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার হয়েছে কিন্তু একজন রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা হয়নি। বহু জ্ঞানী, মান্য, বরেণ্য প্রথম আলো, সুশীল হয়ে গেছে-যাচ্ছে কিন্তু কোন প্রথম আলো বা সুশীল বাঙালি হয়নি! মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হলে এ চুরি বহু আগে তো ফাঁস হতোই হয়ত ঐ পদেই যেতে পারতো না। সচিবের লাথি এবং ঘাড় ধাক্কার কারণে অপমানিত মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করার পর ঐ সচিবের কোন শাস্তি হয়েছে? সম্ভবত শাস্তি নামের এক এসি রুম থেকে আরেক এসি রুমে বদলি।
৮০০ কোটি টাকা ৮০ হাজার কোটি টাকা হতে পারতো বা হয়ে যেত। ফিলিপাইনের পত্রিকায় এ খবর ছাপা না হলে হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন তদন্ত আজীবন চলতো মরু নদীর মতো।
এর আগে যে সব চুরি হয়েছে সেগুলোর তুলনায় টাকার অংকে এটা ছোট। কিন্তু আশংকার অংকে এটা সবগুলোর যোগ ফলের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিপদ বার্তা। একেবারে ঘরের ভিতর ঢুকে চুরি। খুবই সিস্টেমেটিক চুরি। সিসি ক্যাম অফ, কম্পিউটার এমন কি প্রিন্টার পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার জন্য অকেজো। অদ্ভুত। বড় চুরিগুলো হলে চোরদের তেমন একটা অসুবিধা হয় না। চুরির সাথে যে কর্মকর্তারা জড়িত তাদের নিয়ে টানা হেছড়া হলেও তা মোলায়েম।
হলমার্ক এর তানভীর আর তার স্ত্রী কি সব টাকা একা নিয়েছে? বড় বড় কর্মকর্তা, বোয়াল, রুই, কালা-বাউসেরা কি নেয়নি? হয়ত ৫০০০ এর মধ্যে তানভীরের পকেটে এসেছে ২৫০০ কোটি। বাকী ২৫০০ কোটি যারা ভাগ নিয়েছে তারা তানভীরের চেয়ে অনেক বড় চোর। তানভীরদের ধরার জন্যই ঐ রাঘব, বোয়াল, রুইদের জনগণের টাকায় বেতন দেওয়া হয়। তাহলে তাদের শাস্তি তো তানভীরের চারগুণ হওয়া উচিত। কিন্তু মধ্যম মানের কিছু কর্মকর্তাকে নিয়ে টানাটানি হয় এরা সিলভার-কাপ, বড় তেলাপিয়া। তানভীররা চুরি করে এক সিজনে কিন্তু এরা চুরি করে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
সরকার পরিবর্তন হয় এ রুই-বোয়ালদের রাজনৈতিক অংশ কিছুটা পরিবর্তন হয় কিন্তু আমলাতান্ত্রিক অংশে তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। রুই-বোয়ালদের পুকুর পরিবর্তন হয় খাবার এবং পানির স্বাদ একই থাকে। সরকার পরিবর্তন হলে- একটা কিনলে তিনটা ফ্রি-দামে রাজনৈতিক নেতাদের নামে দুর্নীতি, ক্ষমতা অপব্যবহারের মামলা হয়। মামলা করে প্রতিপক্ষ সদ্য ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু কখনও শুনেছেন সরকারি সাহেবদের বেলায় এমন ঘটেছে। ক্ষমতার বেলায় সব সমতল ভূমী এই সাহেবদের কাছে। অথবা তারা সকলেই অবতার। তাদের দামী দামী ফ্ল্যাট, খরুচে ইশকুলে ছেলেমেয়েদের পালন- এসব কি কোহেকাপ নগরের জীনেরা দিয়া যায় মহব্বত থেকে।
যুগের পর যুগ চলছে এমন ব্রিটিশ কেরানি শিক্ষার বিষ ফল। এর পরিবর্তন না করতে পারলে আদৌ “উন্নয়ন” সম্ভব? উন্নয়ন বলতে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না মূল উন্নয়ন আত্মিক উন্নয়ন। হলমার্ক চুরি, কুইক রেন্টাল বা সদ্য আই.টি চুরির কথা মনেও না আসাটাই আত্মিক উন্নয়ন। আত্মিক তো দূরে থাক এখনও সরকারি কর্মকর্তারা ভাবেন তারা জনগণের প্রভু। এ ভাবনা একজন দুইজনের না। সকল সরকারে চাকুরের। তাই সহজেই বোঝা যায় গলদটা প্রশিক্ষণ এবং প্রদক্ষিণে। জুনিয়ার সিনিয়রকে দেখেই শিখতে থাকে তার সাথে আছে একাডেমিক শিক্ষা।
সরকার জনগণের সেবক- এটা আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত ভাবেন। কিন্তু নিশ্চিত যে পুলিশের সব চেয়ে নিরীহ হাবিলদারটা নিজের জনগণের প্রভু ভাবে।
সরকারি আমলা, সচিবদের বড় একটা অংশের সন্তানেরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে! এর চেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে। যারা এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চালায় তারাই সন্তানদের ভিনদেশি শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন। তাদের নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ আছে বলেই কি তারা নিজ সন্তানকে ভিন পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন? তাদের কিছুই হয় না ৮০০ কোটি টাকা বা ৮০০০ কোটি টাকা চুরিতে- বস্ত্রবালিকারা ২ টাকা বাচানোর আশায় ১৬ ঘণ্টার কাজের শেষে হেঁটে যায় ৩ মাইল।
আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো এখন পত্রিকা পড়ে যতটুক বুঝি। আশেপাশেও দেখি সাধারণ কিছু অভিযোগ ছাড়া যে যার মতো সুখী না হোক অসুখী না। উন্নয়ন, বিত্ত আরও বাড়ছে, বাড়বে। এর সাথে আমাদের আত্মিক উন্নয়ন না হলে অবস্থা হবে হয় মধ্যপ্রাচ্যের মতো অথবা ইউরোপের মতো।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য