প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ১৫ মার্চ, ২০১৬
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক ইলেকট্রনিক টাকা চুরির ঘটনায় সরে যেতে হচ্ছে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমানকে। সমস্ত অভিযোগের আঙ্গুল উনার দিকে; সচরাচর শুধু বেছে বেছে প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষিত মানুষদের ক্ষেত্রে যেটা হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে একটা অলিখিত ইনডেমনিটি থাকে বোধহয়। শেয়ার বাজার বিপর্যয়, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি, হলমার্ক কেলেংকারী, ডেসটিনি কেলেংকারী, সড়ক দুর্ঘটনা, নৌ দুর্ঘটনা, নারায়ণগঞ্জের “সাত খুন মাফ”, সাগর-রুনি হত্যাকান্ড; ধারাবাহিক ব্লগার হত্যা; অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের উচ্ছেদের ঘটনা; নাহ কোথাও কাউকে পদত্যাগ করতে হয়নি। স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের দায় নিয়ে কোন মন্ত্রী সরে যাননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর হিসেবে আতিউর রহমান কাজ শুরু করার পর দেশের রিজার্ভ রেকর্ড মাত্রায় চলে যায়; বাংলাদেশের মুদ্রামান বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের আজকের এই অর্থনৈতিক সাফল্যে নীতি নির্ধারণী মহলে আতিউর রহমানের নীরবে করে যাওয়া কাজগুলো নিশ্চয়ই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্তরণের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হবে।
অর্থমন্ত্রী শ্রদ্ধাভাজন মানুষ। কিন্তু উনার বয়সের কারণে উনি বেশ চঞ্চলমতি। উনার সঙ্গে ভালো অর্থনীতিকদের কাজ করা কঠিন। আরেকজন গুণী অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতকেও সরে যেতে হয়েছে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে। জনতা ব্যাংক বারকাতের নেতৃত্বে দৃশ্যমান উন্নতি করেছিলো। কিন্তু প্রবীন অর্থমন্ত্রীর চিত্তচাঞ্চল্যের কারণে বারকাত স্যার রণেভঙ্গ দিয়ে ফিরে গেছেন শিক্ষকতায়। আতিউর রহমানও একসময় জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনিই প্রথম তথ্য প্রযুক্তির উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের জানালা খুলে দেন। বাংলাদেশ এর সুফল পেয়েছে। কাজেই আতিউর রহমানের পেশাগত দক্ষতা প্রশ্নাতীত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকাগুলো চুরি যাবার পর অর্থমন্ত্রীকে এটি অবহিত না করার কারণ; আমরা আমাদের পরিবারে যে কারণে ৮০ বয়সের বৃদ্ধদের কাছ থেকে দুর্ঘটনার কথা গোপন রাখি। পরিস্থিতি সামলে তারপর জানাই। ৮০ বছরের বৃদ্ধকে কোন দুঃসংবাদ জানানো মানেই চেঁচিয়ে পাড়া গরম করে ফেলা। সমস্যা সমাধানের চেয়েও কঠিন হয়ে যায় এই প্রবীণদের সামলানো। সে বয়স আমাদেরও আসবে। সেটা মাথায় রেখেই বাস্তবতাটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। অর্থমন্ত্রী সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু উনার সঙ্গে প্রজন্মের ব্যবধানের সমস্যায় পড়ে আবুল বারকাত এবং আতিউর রহমানের মত দুজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদের দেশসেবার কাজটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিঘ্নিত হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকে যে ঘটনাটি ঘটেছে; সেই বিভাগটির দায়িত্বে নিয়োজিতদের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি হবার কথা। গভর্ণরকে কেন এর জন্য দায়ী করা হবে। বিএনপির মীর্জা ফখরুল আর আওয়ামী লীগের নুহ আলম লেনিনের কন্ঠ মিলে যায় অর্থনীতিবিদ আতিউরের পদত্যাগের দাবী ও অনাহুত ডিফেমেশানের ভাটিয়ালী ঐক্যে। দূর থেকে কবে কবে সুশিক্ষিত সফল মানুষদের প্রতি ঈর্ষা জমিয়েছেন তারা জানিনা। তবে ইতিহাস বলে পৃথিবী থেকে ফখরুল-নুহের স্বাভাবিক বিদায়ে বিস্মৃত হবেন তারা; আর আতিউর বেঁচে থাকবেন তার গবেষণা কাজে-সৃজনশীলতায়, তার প্রণোদনায় প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তাদের স্মৃতিতে, তার ছাত্রদের কাজের ধারাবাহিকতায়।
আতিউর রহমানের জীবনযাত্রার মানে কোন পরিবর্তন কখনো দেখিনি। অথচ ফখরুল-নুহদের কখনো মালিন্য কখনো চেকনাই দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ফলে নিজেদের চিন্তার গজফিতায় তারা আতিউরকে মাপতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হবেন সেটাই স্বাভাবিক।
একটা দেশে নানারকম বিরুপ পরিস্থিতির মাঝে যে অল্পকিছু গুণী মানুষ জন্মেছেন তাদের এভাবে একে একে মানসিকভাবে হত্যা করে করে কোন উন্নয়নের নুহের প্লাবন আনতে যাচ্ছি আমরা!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান ও আবুল বারকাতের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত। উনাকে কেবল উনার মন্ত্রীসভার ৮০ বছরের মানুষটিকে বোঝাতে হবে যে তাকে তার পরের প্রজন্মের সঙ্গে প্রজন্ম ব্যবধান কমাতে হবে।
অর্থনীতিবিদ বারকাত এবং আতিউর ভুল আর অর্থমন্ত্রী একাই ঠিক; এটা খুব যৌক্তিক অনুসিদ্ধান্ত নয়। অর্থমন্ত্রীর মতো একজন ভালো মানুষ কেন আমাদের স্মৃতিতে এতো তিক্ততা রেখে যাবেন। এটা ভাবতে আমাদেরও ভালো লাগে না।
আর রাজনৈতিক দলের নুহের প্লাবন ঠেকাতে হবে। অর্ধেক বুদ্ধিজীবী-অর্ধেক রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত; যুগটা জেনারালাইজেশানের নয়; স্পেশালাইজেশানের বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনাটি পেশাদার ব্যক্তিরা তদন্ত করে ঠিকই উদঘাটন করতে পারবেন।
ডিজিটাল প্যারাডাইম শিফটের যুগে সাইবার ক্রাইম নতুন উপসর্গ। এর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে কিছু সময় তো লাগবেই।
আশা করছি ভুভুজেলার মতো বিকট চিতকারে অযথা কলপাড়ের কাদা ছোড়াছুড়ি না করে একটি অত্যন্ত নৈর্ব্যক্তিক এবং পেশাদার তদন্ত হবে। সত্য উদঘাটিত হবে।
আতিউর রহমানের প্রতি ভালোবাসার চিরকূট
ছাত্রজীবন থেকে কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার যে স্নেহ, প্রণোদনা পেয়েছি; তারজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আরো কৃতজ্ঞ যে, প্রতিটি দেখাতেই আপনি বলেছেন, “তোমাকে সিভিল সার্ভিসের শেকলে বাঁধা দেখতে চাইনা। মুক্ত দেখতে চাই। লেখালেখি করো, সাংবাদিকতা করো, কোথাও পড়াও।” আমি অবনত মস্তকে আপনার কথা অনুসরণ করেছি প্রিয় শিক্ষক।
এবার আমার আপনার কাছে অনুরোধ, আপনার মত একজন লেখক, গবেষক, শিক্ষককে আমি সরকারী প্রতিষ্ঠানের কন্টক আসনে দেখতে চাইনা। আপনাকে আমি মুক্ত দেখতে চাই। ফিরে আসুন লেখায়, গবেষণায় এবং ক্লাস রুমে; আপনার উপস্থিতিতে যেটা প্রাণদায়ী অক্সিজেন চেম্বারে পরিণত হয়।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য