প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মোছাদ্দিক উজ্জ্বল | ১৫ মার্চ, ২০১৬
রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটতরাজের বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই সরকার বিরোধিতা নয়। দেশ পরিচালনা করবে সরকার আর সরকারকে সহযোগিতা করবে বিরোধী দল। একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকারের সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করে বিরোধী দল।
‘জনগণের জন্যই সরকার’ তবে যখন ‘সরকারের জন্য জনগণ’ এই নীতি ভর করে বসে সরকারের প্রশাসন যন্ত্রে, তখন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সরকার এবং আম জনতা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে পড়ে; যেটা রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। একটি শক্তিশালী বিরোধী দল সব সময় জনগণের পক্ষে থাকবে। বিরোধী দল যেমন সরকারের ভালো কাজের ভূয়সী প্রশংসা করবে আবার অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে ন্যায্য সমালোচনাতে অংশ নেবে। সুস্থ রাজনীতির চর্চা সেই সাথে শান্তিপূর্ণ একটি পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সরকার এবং বিরোধী দল দেশ ও দশের জন্য কাজ করবে এমনটাই স্বাভাবিক।
স্বাধীনতা পরবর্তী কাল থেক আজ পর্যন্ত সরকার এবং বিরোধী দল কখনো এক কাতারে দাঁড়াতে পেরেছে- এমন নজির নেই। সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে বিভাজন কখনো কখনো কল্পনার বাইরেও ছড়িয়ে গেছে । এমনকি যে সমস্ত বিষয় দেশকে একত্রিত করে যেমন স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, খেলাধুলা সহ অসংখ্য ইস্যুতেই তারা এখানে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের জন্য ব্যবহার করেছে। অথচ এইসব ব্যাপারে তাদের একই অবস্থানে থাকার কথা ছিলো। একে অপরের প্রতি দোষারোপ, অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং শ্রদ্ধাহীনতা ছাড়া আমরা তো কিছুই দেখতে পাইনি। একদিকে যেমন ভালো কাজের জন্য মূল্যায়ন নেই আবার সব কাজের মধ্যেই বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা। অন্যদিকে সরকারের সকল ব্যর্থতায় বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের কথা স্বীকার করে এক ধরনের দ্বায় চাপানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দশম জাতীয় নির্বাচনের পর আমরা বিচিত্র এক বিরোধী দল পেয়েছি, যাদের চিড়িয়াখানাতে রাখাও যায়! এরা একদিকে যেমন সরকারে আছে অন্যদিকে আছে বিরোধী দলে। সহজ ভাষায়, গাছের ডগা এবং মূল দুটোই তারা খেতে ভালোবাসে। এদেরকে ডোমেস্টিক বিরোধী দল বললেও খুব একটা ভুল হয়না হয়তো। মাঝে মাঝে এই বিরোধী দলের কর্তা ব্যক্তিদের আচরণ ভানুর কৌতুককেও হার মানায়। আদর্শিক দিক থেকে এদের সংগঠন এতটাই নড়বড়ে ভীতের উপর দাড়িয়ে, যেখানে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল মেটাতে অন্য রাজনৈতিক দলের সভানেত্রীর দ্বারস্থ হতে হয়! সেই রাজনৈতিক দল যখন বিরোধী শিবিরের দায়িত্ব পালন করতে চায় তখন সঙ্গত কারণেই তাদের গৃহপালিত বিরোধী দল বলা চলে।
সরকারের টানা দুই শাসন আমলে আছে সফলতার রেকর্ড অন্যদিকে ব্যর্থতার পাল্লাও ভারি হয়েছে নানা ইস্যুতে। বিশ্ব মোড়লদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রদের বিচার তো একটি ইতিহাস। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সেই সাথে দেশীয় কুচক্রীদের সব ধরনের লবিং এর মুখে থুথু দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের পক্ষেই কেবল সম্ভব। বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যবস্থা সহ অসংখ্য সেক্টরের অর্জন আমাদের গর্বিত করে। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি বান্ধব বাজেট, রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার সহ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি ও দারিদ্র হ্রাসে অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা প্রশংসার দাবী রাখে।
এতো উন্নয়নের পরেও তাহলে কেন আমরা হতাশ হই?
এইভাবে আরও অসংখ্য ব্যর্থতার ফিরিস্তি দিয়ে সাজানো যায়। সফলতা আর ব্যর্থতা নিয়েই একটি সরকার। একদিকে সফলতা থাকলে অন্যদিকে ব্যর্থতা থাকবেই। কিছু ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যায় তবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যখন লুটপাটকে জায়েজ করা হয় তখন সেইসব কিছুতেই মেনে নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যারা সব কিছু বিবেচনা করতে চায় তারা বিবেক বর্গা দিয়ে আসে। মস্তিষ্ক আর বিবেক বর্গা দিলে আর যাই হোক না কেন, একজন মানুষের পক্ষে সাদা আর কালোর নির্মম পার্থক্য বোঝা সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে দেশে কোনো বিরোধী দল নেই। উন্নয়নের আলোতে কালো দিক যেন ঢেকে না যায় সেইদিকে আজ দৃষ্টি রাখবে কারা?
সরকার দেশ পরিচালনা করুক, আমরা আম জনতা বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করব! আমরা একদিকে রাজাকার বিরোধী আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারের সহযোগী হই অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় লুটপাটের বিরুদ্ধে সরকারের বিপক্ষে দাঁড়াই! বাজার ব্যবস্থায় দ্রব্যমূল্যের স্বাভাবিক অবস্থা দেখে সন্তুষ্ট হয়ে সরকারের সাফাই গাইবো, অন্যদিকে পচা গমের বস্তা দেখে ক্ষোভে প্রতীবাদ করব। আপাতত এর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই কেননা বিরোধী দল বলতে এখন কেবল আমরাই। আমরাই হয়ে যাই সরকারের স্বপক্ষ এবং প্রতিপক্ষ উভয়ই। জানি, সরকার স্বপক্ষদের লালন করবে আর প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে দমননীতি গ্রহণ করবে।
তবু এই দেশে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করা ছাড়া আপাতত আর কোন বিকল্প যে হাতে নেই!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য