আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

ধর্ষিতা তনু্র মৃতদেহ এবং দুর্গন্ধময় পিতৃতন্ত্রের দায়

ফরিদ আহমেদ  

When men discovered that they could rape, they proceeded to do it. - Susan Brownmiller

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তো মেয়েটা। বয়স মাত্র উনিশ। বাবা-মায়ের অস্বচ্ছলতার কারণে এই বয়সেই নিজেকে উপার্জন করতে হতো তাকে। বাংলাদেশের সমাজে ছাত্র বয়সে উপার্জনের একটাই মাত্র উপায় আছে। টিউশনি করা। সেটাই করতো সে।

মেয়েটার বাবা কুমিল্লা সেনানিবাস বোর্ডের একজন নিম্ন পদস্থ কর্মচারী। এই সুবাদে তাদের বসবাস সেনানিবাসের ভিতরে কর্মচারীদের কোয়ার্টারে। বিশে মার্চের এক বিকেলে সেনানিবাসের ভিতরেই অন্য এক বাসায় টিউশনিতে গিয়েছিল সে। রাতে সময়মতো না ফিরে আসায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয় তার পরিবার। তার মা খোঁজ নিতে যায় চলে যায় তার টিউশনি করা বাসায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারে, মেয়েটা চলে গিয়েছে সেখান থেকে অনেকক্ষণ আগে। দুশ্চিন্তায় আকুল মা ফিরে আসতে থাকে একই পথ দিয়ে। তার দুচোখ পথের দুপাশে। খুঁজে ফেরে হারানো সন্তানকে। ফিরে আসার পথে একটা কালভার্টের নীচে চোখ যায় তার। রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত তার মেয়ের দেহ পড়ে আছে কালভার্টের নীচে। ধর্ষিতা, নিথর এবং মৃত। একজন অথবা বহুজন মিলে মেয়েটাকে ফেরার পথে ধরে নিয়ে গিয়েছে ওখানে। জোর করে ধর্ষণ করেছে। তারপর হত্যা করে ফেলে রেখে গিয়েছে নিদারুণ অবহেলায়।

এই অভাগী মেয়েটার নাম সোহাগী জাহান তনু।

তনুর ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। নানা স্তরের মানুষ নানাভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এই পৈশাচিক ধর্ষণ এবং নির্মম হত্যাকাণ্ডের। কেউ কেউ রাস্তাতেও নেমে এসেছে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে।এটাই স্বাভাবিক। এই প্রতিবাদ জানানোটা বড় প্রয়োজন। আজ যদি তনুর জন্য প্রতিবাদ না হয়, আগামীকালই হয়তো আরেক তনু শিকার হবে এই বর্বরতার। একটা সমাজে, যেখানে নারীর কোনো নিরাপত্তা নেই, সেই সমাজে বসবাস করাটা শুধু অসহনীয় নয়, বিপদজনকও বটে। আজকে তনুর এই পরিস্থিতি হয়েছে, কাল যে আমার বা আপনার বোনের, কিংবা আমাদের মেয়ে সন্তানদের একই দশা হবে না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

এই নিশ্চয়তা যে নেই, সেটা বাংলাদেশের প্রতিদিনের সংবাদপত্রে চোখ বুলালেই চোখে পড়ে। পত্রিকার পাতা ভর্তি থাকে ধর্ষণের রগরগে খবর দিয়ে। কোথাও একা কোনো ধর্ষণকারী ধর্ষণ করেছে কাউকে, কোথাও বা কোনো নারী শিকার হয়েছে দলবদ্ধ ধর্ষণে। ঘরে-বাইরে সব জায়গাতেই নারীর জন্য অপেক্ষা করছে ধর্ষণ। এই ধর্ষক যে শুধু অপরিচিত পুরুষ হবে, তাও নয়। পরিচিত পুরুষ, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যের কেউ-কেউও ঝাপিয়ে পড়ছে একাকী কোনো নারীকে সুযোগ পেলেই। এই সব ধর্ষণের আবার বেশিরভাগই পত্রিকার পাতায় আসে না। ধর্ষিতা নারীরা সামাজিক কলংকের ভয়ে চেপে যায় তাদের নির্যাতনের কথা। এদের অনেকে পুলিশের কাছে যেতেও দ্বিধাগ্রস্ত এবং ভীত-সন্ত্রস্ত। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মতো এর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ধর্ষণপ্রবল। এদের হাত থেকেও নারীরা রক্ষা পায় না। অনেক বছর আগে একদা  দিনাজপুরে রাস্তা থেকে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তারা ইয়াসমিন নামের একটা মেয়েকে। তারপর ধর্ষণ করে চলন্ত গাড়ি থেকে অর্ধমৃত ইয়াসমিনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে গিয়েছিল পুলিশের লোকেরা। পুলিশের এই পৈশাচিক কর্মকাণ্ডে মারা গিয়েছিল ইয়াসমিন। এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল দিনাজপুর শহর। সেই বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদকে ঠেকাতে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। মারা গিয়েছিল সাতজন মানুষ।

প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সমাজ এমন ধর্ষণপ্রবল কেন? কেন দুই লিঙ্গের মধ্যে একটা এমন আক্রমণাত্মক, আর অন্যটাকে তার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত? ধর্ষণের ভয় মনের মাঝে নিয়ে প্রতিমুহুর্তে চলতে হয় দ্বিতীয় লিঙ্গকে। রাত তো বাদই দিলাম, দিনের আলোও নিরাপদ নয় তার জন্য। তার গতিবিধি সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় প্রবল ভয়ে। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকারটুকু পর্যন্ত তার নেই। হিংস্র পশুর কারণে এরকম নিরন্তর ভয়ে একমাত্র বনের নিরীহ পশু-পাখিরাই বসবাস করে। আমাদের সমাজে হিংস্র পশু নেই, সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে একদল হিংস্র মানুষ। আর এদের ভয়ে নারী সর্বদা আতঙ্কিত, জড়োসড় এবং পাখির মতো খাঁচাবন্দি। নিরন্তর ধর্ষণ ভীতির মধ্যে বসবাস করতে হয় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা নারীকেই। বাইরে বের হতে গেলে তাকে নানা-কিছু ভাবতে হয়, অপরিচিত জায়গায় যেতে গেলে পরিচিত কোনো পুরুষের পাহারার প্রয়োজন হয়। তাতেও যে নারীরা নিরাপত্তা পায়, তা নয়। বাবা-ভাই বা স্বামীর সামন্‌ কিংবা তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েও নারীকে ধর্ষণের নজির বাংলাদেশের সমাজে রয়েছে।

ধর্ষণ আসলে কমবেশি সব সমাজেই বিদ্যমান। এর নষ্ট জন্ম সেই অনাদিকালে। যার রূপ আমরা দেখি পৌরানিক কাহিনির মধ্যেও। গ্রিক পুরান থেকে শুরু করে ভারতীয় পুরান, সব জায়গাতেই ধর্ষক দেবতাদের জয়জয়কার। পরাশর, জিউস, এরা সব একেকজন ধর্ষণে পটু দেবতা। আজকের দিনে এই ধর্ষক দেবতাদের জায়গা নিয়ে নিয়েছে বীরপুঙ্গক পুরুষেরা। আমেরিকা বলেন, ইউরোপ বলেন, কিংবা আমাদের বাংলাদেশ বলেন, কোথাও নারী মুক্তি পাচ্ছে না ধর্ষণের হাত থেকে। তবে, এর মাঝেও কোনো কোনো সমাজ আছে, যেখানে ধর্ষণের মাত্রা কম। কোনো কোনো সমাজ আছে যেখানে ধর্ষণের পরিমাণ প্রবল। বাংলাদেশ এই দ্বিতীয় গোত্রের মাঝে পড়ে। ধর্ষণের মাত্রার এই কম-বেশি হওয়াটা নির্ভর করে সংস্কৃতির উপর। কোনো কোনো সমাজের সংস্কৃতি ধর্ষণকে নিরুৎসাহিত করে, আবার কিছু কিছু সমাজের সংস্কৃতি একে অনুপ্রাণিত করে, উৎসাহিত করে। হুমায়ুন আজাদ তাঁর‘ধর্ষণ’প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘পশ্চিম সুমাত্রা প্রায় ধর্ষণমুক্ত; সেখানে ধর্ষণকারী নিজেকে ছোটো করে, ছোটো করে তার আত্মীয়পরিজনকে। সেখানে সবাই পরিহাস করে তার পৌরুষকে; তার ভাগ্যে জোটে পীড়ন, কখনো মৃত্যু; অনেক সময় সে নির্বাসিত হয় গ্রাম থেকে, সেখানে সে আর ফিরে আসতে পারে না। কিছু সমাজধর্ষণপ্রবন, যেমন বাঙলাদেশ।’

বাংলাদেশেও যে ধর্ষককে ভালো চোখে দেখে হয়, তা নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে ধর্ষকের সাথে সাথে ধর্ষিতাকেও সেই অপরাধ করার উস্কানিদাতা হিসাবে অনেক সময় চিহ্নিত করা হয়।ধর্ষণের জন্য কখনো দায়ী করা হয় তার পোশাককে, কখনো না বা দায়ী করা হয় তার চালচলনক, কখনো বা দায়ী করা হয় তার অসময়ে ঘরের বাইরে আসাকে। বিচার-সালিশ বসলে, ধর্ষকের সাথে সাথে ধর্ষিতারও বিচার হয়ে যায় প্রায়শই। বিচার পাবার পরিবর্তে তাকেও শাস্তি মাথা পেতে নিতে হয় ধর্ষকের মতোই। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, কখনো কখনো সেই শাস্তি ধর্ষকের শাস্তির চেয়েও পরিমাণে বেশি হয়ে যায়। ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে দিয়ে দেওয়া তো গ্রাম্য সালিশের একটা বহুল প্রচলিত নিয়মই বলা চলে। ধর্ষিতা নারীকে আর কেউ বিয়ে করতে আসবে না, ফলে তাকে বাঁচানোর জন্য গ্রাম্য সালিশের বিচারকেরা এই রকম অদ্ভুত রায় দিয়ে থাকে।

পুরুষ কেন নারীকে ধর্ষণ করে, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন পণ্ডিত ব্যক্তিরা বহু আগে থেকেই। সামাজিক বিজ্ঞানের বহু শাখার বহু বিদগ্ধ ব্যক্তি এ নিয়ে নানা গবেষণা করেছেন এবং শেষমেষ এটাই বলেছেন যে, ধর্ষণের জন্য একক কোনো কারণ দায়ী নয়, বরং অনেকগুলো কারণ একত্রিত হয়েই ধর্ষণের মতো নোংরা অপরাধটা সংঘটিত হয়ে থাকে।

এর মধ্যে নারীবাদী লেখকরা ধর্ষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ধর্ষণ পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা থেকে উদ্ভুত।‘নারীবাদীরা নারীর অস্তিত্বকে দেখেন পিতৃতান্ত্রিক পীড়ন ও আধিপত্যের কাঠামোতে; তাঁরা মনে করেন পিতৃতন্ত্রের উদ্ভবই নারীর দূরাবস্থার মূলে। কেউ কেউ পিতৃতন্ত্র ও পীড়নকে একার্থক ব’লেই মনে করেন। যেমন, মেরি ড্যালি পিতৃতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবেঃ ‘পিতৃতন্ত্র, ধর্ষণবাদের ধর্ম’। ব্রাউনমিলার ধর্ষণের স্বরূপ দেখাতে গিয়ে দাবি করেন যে প্রকৃত ধর্ষণকারী কোনো ব্যক্তি নয়, প্রকৃত ধর্ষক হচ্ছে পিতৃতন্ত্র। তাঁর মতে ধর্ষণ পিতৃতন্ত্রের জন্যে দরকার; কেননা ধর্ষণ পিতৃতন্ত্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ নয়, ধর্ষণ পিতৃতন্ত্রকে বিপন্ন করে না; বরং কাজ করে পিতৃতন্ত্রের সেনাবাহিনীর মতো। পিতৃতন্ত্র‘পৌরুষ’কে দেখে যে মুগ্ধ চোখে, আর পোষণ করে যে নারীবিদ্বেষ, তাতে গ’ড়ে ওঠে গণমনস্তত্ত্ব, যা উৎসাহিত করে ধর্ষককে। পুরুষের মধ্যে কেউ কেউ ধর্ষকের কাজ করে, সবাই করে না; তবে সব পুরুষই সম্ভাব্য ধর্ষণকারী। সুযোগ পেলে, যেমন যুদ্ধের সময় অবরোধকারী সেনাবাহিনী উল্লাসের সাথে করে (স্মরণীয়ঃ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় কোরিয়ায় জাপানি বাহিনী; ১৯৭১-এ বাঙলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী) সব পুরুষই ধর্ষণের কাজটি করতে পারে; আর বহু স্বামী বাসর ঘরে ও অন্যান সময় যে-যৌন আচরণ করে, তা ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে। বহু স্বামী নিয়মিতভাবে ধর্ষণ করে স্ত্রীদের। ইতিহাস ভ’রেই ধর্ষণ চ’লে আসছে, যদিও তা স্বীকার করা হয় নি। ব্রাউনমিলারের মতে ধর্ষণ বৈধতা দেয় পিতৃতন্ত্রকে। কর্ম হিশেবে ধর্ষণ বর্বরভাবে নারীকে করে পুরুষের ইচ্ছার অধীন; আর ভীতি হিশেবে ধর্ষণ সব সময় খবরদারি করে নারীর আচরণের ওপর।ধর্ষণ সীমিত করে নারীর স্বাধীনতা, প্রচার করে পিতৃতন্ত্রের ভাবাদর্শ যে পুরুষের রক্ষণাবেক্ষণ নারীর সব সময়ই দরকার।’ (ধর্ষণ - হুমায়ুন আজাদ)

নারীবাদীদের এই বক্তব্য অনুযায়ী ধর্ষণ হচ্ছে কিছু সুনির্দিষ্ট সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি, যা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উৎসাহ প্রদান করে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতাত্ত্বিক পেগি রীভস স্যানডে তাঁর‘দ্য সোশিও কালচারাল কন্টেক্স অব রেপঃ এ ক্রস কালচারাল স্টাডি’গবেষণাগ্রন্থে এই দৃষ্টিভঙ্গির একটা পরীক্ষা চালান। পেগি ১৫৬টা ট্রাইবাল সমাজের উপর গবেষণা চালান এবং আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করেন যে, এ সমাজগুলোতে ধর্ষণ নেই, বা থাকলেও তা একেবারেই সামান্য, বিরলই বলা চলে। পেগির মতে ধর্ষণমুক্ত সমাজগুলো যে সমাজগুলোতে ধর্ষণ রয়েছে তার থেকে পুরোপুরিই আলাদা ধরনের। যে সমাজগুলোতে ধর্ষণ বিদ্যমান, সেগুলো মূলত পুরুষ আধিপত্যবাদী সমাজ এবং চরম বিশৃঙ্খলাময় সন্ত্রাসমৃদ্ধ সমাজ। অন্যদিকে ধর্ষণমুক্ত সমাজগুলোতে নারী-পুরুষের সমতা অনেক বেশি এবং নারী এবং তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি অধিক শ্রদ্ধা বিরাজমান সেখানে। পেগি এই উপসংহারে পৌঁছান যে, পুরুষ প্রকৃতিগতভাবেই আক্রমণাত্মক, কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু কিছু সমাজের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য পুরুষের এই আক্রমণাত্মক রূপকে আরো বিকশিত হতে অনুপ্রেরণা জোগায়।

ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন গবেষক, ডায়ানা স্কালি এবং জোসেফ ম্যারোলাও পেগি এবং অন্য নারীবাদীদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা দুজন ধর্ষণের দায়ে কারাবন্দি বেশ কয়েকজন অপরাধীর সাক্ষাৎকার নেন। তাঁরা দেখেন যে, এই আসামীদের অনেকেই ধর্ষণকে ফলপ্রসু এবং বেশ লাভজনক কাজ বলে মনে করে। তা্রা বিশ্বাস করে না যে তাদের এই কাজের জন্য শাস্তি পাওয়াটা উচিত। কেউ কেউ একজন নির্দিষ্ট নারীকে শাস্তি দেবার জন্য বা বলা যায় এর মাধ্যমে সব নারীকে শিক্ষা দেবার জন্য ধর্ষণ করেছে। অন্যেরা মনে করে যে, ধর্ষণ হচ্ছে তাদের অধিকার। এই অস্ত্র ব্যবহার করে তারা সুখ এবং আনন্দ পেয়েছে। ডায়ানা এবং জোসেফের বক্তব্য হচ্ছে যে, এই লোকগুলো কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ নয়, যদিও তাদের কথা শুনে সেরকমটাই মনে হতে পারে। এরা আসলে নারীর প্রতি সমাজের যে বৈষম্য এবং বিদ্বেষ, সেটাকেই শুধু চরমভাবে ব্যক্ত করেছে তাদের কথার মাধ্যমে।

আরবান ইনস্টিটিউটের সমাজ মনোবিজ্ঞানী মার্থা বার্ট তাঁর প্রবন্ধ‘রেপ মিথস’এ দেখানোর চেষ্টা করেছেন কীভাবে সহায়ক সাংস্কৃতিক আচরণ যৌন জবরদস্তিমূলক সামাজিক আচরণ তৈরি করতে পারে। ধর্ষণ বিষয়ে সমাজে যে সব মিথ প্রচলিত থাকে সেগুলোতে  এক ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস থাকে। এর কারণে ধর্ষক, সে যে কোনো নিন্দনীয় আচরণ করেছে, এই চাপ থেকে মুক্তি পায়, এবং এই সব প্রচলিত মিথ উল্টো ধর্ষিতাই ধর্ষণের জন্য দায়ী, এই দোষারোপের ধারণা ধর্ষিতার মধ্যে প্রবলভাবে প্রোথিত করে দেয়। মার্থা তাঁর গবেষণায় দেখেন যে, যারা এইসব মিথে বিশ্বাস করে, তা্রাই স্বাধারণত যৌন নির্যাতনকারী হয়ে থাকে। নারী-পুরুষ এই দুই পক্ষের যারাই এই মিথে বিশ্বাসী তারা, তুলনামূলকভাবে যারা এগুলোতে বিশ্বাস করে না, তাদের চেয়ে ধর্ষকের প্রতি অধিকতর সহানুভূতিশীল হয়। এই মিথগুলো ধর্ষিতাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব না হয়ে নীরবে চেপে যেতে বাধ্য করে। শুধু তাই নাই, এই মিথগুলো অন্য নারীদেরকেও ধর্ষিত হবার বিষয়ে সর্বক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে রাখে। কারণ এগুলোর কারণেই সমাজে ধর্ষণ চলতে থাকে অবিরত।

নারীবাদী, সমাজবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীদের বাইরে, ধর্ষণের বিষয়ে জীববিজ্ঞানীদেরও একটা তত্ত্ব রয়েছে। তাঁদের তত্ত্বের সারকথা হচ্ছে, বিবর্তনের ফলেই পুরুষের কামতৃপ্তির একটি প্রক্রিয়ারূপে উদ্ভুত হয়েছে ধর্ষণ। যদিও এটা বিবর্তনতত্ত্বেরই বিরোধী। এ মত অনুসারে ধর্ষণে লিপ্ত হয় অক্ষম পুরুষেরা। এরা শারীরিকভাবে যোগ্য নয়, এদের প্রয়োজনীয় সম্পদ নেই এবং পর্যাপ্ত মর্যাদার অধিকারী নয় তারা সমাজে। ফলে, কাঙ্ক্ষিত নারী সঙ্গিনী পেতে ব্যর্থ হয় এরা। আর এ কারণেই এরা তাদের প্রয়োজনীয় কাম চরিতার্থ করতে অগ্রসর হয় অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারীর উপর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে।

‘থর্ন ও অন্যান্য (১৯৮৬) সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে বিবর্তনের একটি পরিণতিরূপেই বিকাশ ঘটেছে ধর্ষণের। তাঁরা নারীবাদীদের ধর্ষণতত্ত্বকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন না। তাঁদের মতে পুরুষাধিপত্যই যদি থাকতো ধর্ষণের মূলে, তাহলে পুরুষ ক্ষমতাশালী বয়ষ্ক নারীদের ধর্ষণ করতো; কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ধর্ষণকারীদের লক্ষ্য সাধারণত যুবতী ও দরিদ্র নারী। তাঁদের মতে নারীবাদীদের তত্ত্ব জ্ঞাপন করে যে সব শ্রেণী ও বয়সের পুরুষেরাই ধর্ষণকারী; তাও সত্য নয়; ধর্ষণকারীরা সাধারণত তরুণ ও দরিদ্র।’ (ধর্ষণ - হুমায়ুন আজাদ)

ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ডেভিড লিসাক সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে একত্রিত করে একটা তত্ত্ব দিয়েছেন। তাঁর প্রবন্ধের শিরোনাম হচ্ছে, ‘সেক্সুয়াল এগ্রেশন, মাসকুলিনিটি এন্ড ফাদারস’। তিনি বলেন যে, সংস্কৃতি এবং ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর, এই দুইয়ের সংমিশ্রণই ধর্ষণের মুল কারণ হিসাবে কাজ করে। লিসাক একদল কলেজ ছাত্রের উপর এই গবেষণা চালান এবং পরিষ্কারভাবে দেখেন যে ধর্ষক এবং অধর্ষক এই দুই গ্রুপের মধ্যে পিতা-মাতা, বিশেষ করে পিতার সাথে তাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। যারা ধর্ষণ করেছে, তাদের পিতার সাথে সম্পর্ক খুবই দুর্বল ধরনের। এদের বাবারা হয় তাদের কাছে থাকে না, বা বাবার আদরস্নেহ থেকে বঞ্চিত তারা কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাবারা তাদের প্রতি নিষ্ঠুর অত্যাচারী হয়ে থাকে। অন্যদিকে, অধর্ষক দলের সদস্যদের পিতার সাথে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘন, উষ্ণ এবং আবেগময়। লিসাক বলেন যে, বাবার সংস্পর্শ বঞ্চিতভাবে সন্তান লালন-পালন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য। এটা ক্ষতিকর মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতি তৈরি করে পুরুষদের জন্য। কারণ, এর মাধ্যমে নারীর প্রতি আগ্রাসী এবং বৈরিতার মানসিকতা সঞ্চার করা হয় পুরুষদের মধ্যে। সমাজ থেকে ধর্ষণ সমস্যা উচ্ছেদ করার জন্য সমাজের সন্তান লালন-পালনের প্রচলিত প্রথাকে পরিবর্তন করার জন্য লিসাক উপদেশ দেন। সন্তান লালল-পালনের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশে বাবা-মা দুজনেরই সমান ভূমিকা থাকা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

ধর্ষণের কারণ যাই হোক না কেন, এর ফলাফল বড় ভয়াবহ এবং ভয়ংকর হয় নারীদের জন্য। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ধর্ষিত হওয়াটা নারীর কাছে মৃত্যুর চেয়েও মারাত্মক কিছু। ধর্ষিত হবার গভীর বেদনা এবং অনন্ত অপমানে অন্তহীন এক অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় একজন নারী। এই চরম তিক্ত অভিজ্ঞতা এক লহমায় তাকে ছুড়ে ফেলে দেয় তার পরিচিত সমাজের বৃত্তের একেবারে বাইরে। সে যেন তার এই চিরচেনা সমাজের আর কেউ নয়। তার পরিবার আর তার পরিবার থাকে না। বাবা-মা, ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন সবাই পর হয়ে যায় ধর্ষিতা নারীর কাছে। সমাজ আর কিছু বুঝুক বা না বুঝুক, নারীর ইজ্জত ঠিকই বোঝে। ধর্ষিতা নারীটি তাদের চোখে ইজ্জত হারানো এক নারী। ইজ্জত হারনো নারী সমাজের ইজ্জতের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাকে দেখা হয় তখন ভিন্ন চোখে। সেটা অবশ্যই মমতা মাখানো কোনো চোখ নয়। তাকে দেখা হয় অশ্রদ্ধার চোখে। হীনদৃষ্টি লেগে থাকে সর্বক্ষণ তার শরীরে। সুব্যবহারটাও জোটে না তার কপালে, বিচার তো অনেক দূরের ব্যাপার। এ যেন আরেক ধর্ষণ। ধর্ষিতা নারী মমতা পাবার পরিবর্তে, করুণা পাবার পরিবর্তে সমাজের হাতে বারবার ধর্ষিত হয়। এই ধর্ষণ চলে সারাজীবনব্যাপী। একারণেই আমাদের সমাজে বহু ধর্ষিতা নারী চেপে যায় তাদের ধর্ষণের কথা। সংগোপনে লুকিয়ে রাখে তার প্রতি হওয়া ভয়ানক অন্যায়টাকে। যদি বা কখনো জানাজানি হয়ে যায়, খুব একটা সুখকর হয় না তা তার জন্য। বিচার পাবার পরিবর্তে যে পরিমান অপমান এবং নিগৃহ তার জন্য বরাদ্দ থাকে, সেটাকে  হজম করা সম্ভব হয় না সবার জন্য। ফলে, এর থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে অনেক মেয়েই আত্মহত্যার মতো চরমপন্থা বেছে নিতে বাধ্য হয়।

ধর্ষণ ধর্ষিতা নারীর উপর ফেলে যায় দীর্ঘপ্রসারী প্রভাব। নষ্ট হয়ে যায় অনেকেরই পুরুষদের প্রতি সমস্ত বিশ্বাস। এরা আর কখনোই পুরুষের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। প্রতি মুহুর্তে এরা থাকে শঙ্কিত, ভীত এবং সন্দেহপ্রবন। তাদের দিকে যে কোনো পুরুষের সামান্যতম অগ্রসর আচরণকে তারা দেখে ভয় এবং আশংকার  চোখে। পুরুষের প্রতিটি পদক্ষেপই তাদের কাছে পুনরায় তাদের ধর্ষণ করার প্রাথমিক স্তর বলে মনে হয়। প্রতিটি পুরুষই তাদের কাছে তখন সম্ভাব্য ধর্ষণকারী।

বাংলাদেশের সমাজে ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতন অত্যন্ত সুলভ ঘটনা। ধর্ষিতা না হলেও, প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো নারীকে হতে হয় নারী নির্যাতন বা ইভ টিজিং এর শিকার। একা একটা মেয়ের পক্ষে রাস্তায় বের হওয়া সম্ভব নয় আমাদের সমাজে। চারিদিক থেকে ছুটে আসে তার উপর যৌন নির্যাতনের কদর্য ঢিল। দল বেঁধে চললেও যে নিস্তার আছে, তাও নয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বাসে, ট্রেনে, ভীড়ের মধ্যে অসংখ্য হায়েনার হাত এগিয়ে আসে নারীকে উত্যক্ত করত্‌ অপমান করতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রগতিশীল জায়গা্তেও বর্ষবরণেও নারী নির্যাতনের ভয়ানক চিত্র আমরা দেখেছি। গ্রামে গঞ্জে স্কুলে-কলেজে যেতে গিয়ে নারীরা শিকার হচ্ছে যৌন আক্রমণের। শহরের মেয়েরাও যে এর হাত থেকে মুক্ত, তা নয়। নানা অফিসে নারীকে হতে হচ্ছে লালসার শিকার। এ যেন নারীর প্রতি শত্রুভাবাপন্ন বিরূপ এক ভূমি। প্রতি পদে পদে তাকে পা রাখতে হবে সন্ত্রস্তভাবে, চারিদিকে ভয়ার্ত চোখ রেখে। শ্বাপদসংকুল এক অনিরাপদ জঙ্গলের চিত্রা হরিণ সে। সব শ্বাপদের সমুৎফুল্ল চোখ সমুদ্যত থাকে তার চিত্রপটময় সৌন্দর্যের প্রতি।

নারীর প্রতি পুরুষের এই লোলুপ দৃষ্টির, এই হীন ধারণার শিকড় রয়ে গিয়েছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার ভিতরেই। পিতৃতন্ত্রে নারীকে মানুষ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। নারী হচ্ছে পুরুষের কাছে বিলাসের সামগ্রী, ভোগের বস্তু কিংবা সন্তান জন্ম দেওয়ার যন্ত্র মাত্র। পুরুষের কাছে নারী ঘর সংসার সামলে রাখার  জন্য একজন দাসি মাত্র। এরকম একজনকে সম্মানপ্রদর্শন করার জন্য অহংকারী পুরুষেরা প্রস্তুত থাকে না। পিতৃতন্ত্র তাকে শেখায় নারীকে অবমাননা করতে, তাকে পদদলিত করে রাখতে, তাকে তার ভোগের সামগ্রী হিসাবে বিবেচনা করতে। পিতৃতন্ত্রের পুরুষ  অবশ্য নিজের ঘরের নারীর সম্মানের জন্য  বিচলিত থাকে, কিন্তু সেটি সেই নারীদের জন্য নয়। ওই নারীদের সাথে তার সম্মান জড়িত বলেই, সে তাদের সম্মান নিয়ে বিচলিত থাকে, সেটিকে টিকিয়ে রাখতে চা্‌ চায় সমুন্নত রাখতে। কিন্তু, ঘরের বাইরের নারীদের প্রতি তার আচরণ হয় ঘৃণা আর অবজ্ঞার। এদের প্রতি এক ধরনের বিচিত্র আক্রোশ অনুভব করে সে। অসম্মানিত করে, লাঞ্ছিত করে, অপমানিত করে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করে সে অন্তরে। নারী তার কাছে যৌনলালসার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। যখন সে  একা থাকে, তখন প্রতিটি নারীরই কাপড় খোলে সে মনে মনে।  যখন সে দলবদ্ধ হয় তার মতো আরো অনেকের সাথে, তখন সে সত্যি সত্যিই কাপড় খোলার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে অসহায় নারীদের উপর। প্রবল উন্মাদনায় ধর্ষণে উদ্যত হয়। কেউ বাধা দেবার না থাকলে সত্যি সত্যিই ধর্ষণ করে ফেলে। বিচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য অতঃপর হত্যা করে ধর্ষিতা নারীটিকে বেশিরভাগ সময়েই।

হাজার বছর ধরে চলে আসা পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা রাতারাতি অদৃশ্য হয়ে যাবে বা বদলে যাবে, এটা আশা করা যায় না। তবে, এটাও ঠিক যে এর পতন শুরু হয়ে গিয়েছে। যতদিন পিতৃতন্ত্র পুরোপুরি উচ্ছেদ না হয়, ততোদিন পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নারী-পুরুষ সবাইকেই এক সাথে কাজ করতে হবে। তবে, সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আসতে হবে নারীদেরই। প্রতিদিনে, প্রতি মাসে, প্রতি বছরে আক্রান্ত হচ্ছে তারাই। পিতৃতন্ত্র যে লজ্জাশীলা নারী, যে কোমল এবং মমতাময়ী নারীর আদর্শ চিত্ররূপ তাকে দেখায়, সেই চিত্রকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে তাদের। পুরুষ কাপড় খুলে নিলে, কিংবা যে কোনো ভাবে অসম্মান করার চেষ্টা করলে, কিংবা ধর্ষণ করলে, বিব্রত এবং লজ্জিত হয়ে লজ্জাবতী লতার মতো নুয়ে পড়ার কিছু নেই। বরং বিপুল বিক্রমে বেতের ডাল হয়ে পালটা আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে হবে আক্রমণকারীদের। সংঘবদ্ধদের সাথে হয়তো পারা যাবে না এটা করে। কিন্তু, প্রতিটা ছোটখাটো আক্রমণেই যদি এরকম করে পালটা আঘাত হানা যায়, প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়, এই সমস্ত আক্রমণকারীরা আর সংঘবদ্ধ হবার সাহস দেখাবে না। এদের শক্তি আমাদের প্রতিরোধহীনতা আর ওদের সংঘবদ্ধতার থেকেই উদ্ভুত।

পুরুষের মধ্যে ধর্ষণের প্রবনতা বিদ্যমান আদিকাল থেকেই। এটা অস্বীকার করার বিষয় নয়। সারা পৃথিবী জুড়ে যুগে যুগে নারীদের ধর্ষণ করেছে পুরুষেরা। আর পিতৃতান্ত্রিক সমাজ তাদের উৎসাহ দিয়েছে অবিরাম এই কাজে। এই সমাজ কাঠামোকে পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই পুরুষের ধর্ষকামী, ধর্ষণাকাঙ্ক্ষী ইচ্ছাকে সংযত রাখা সম্ভব। সমাজে নারীর প্রতিষ্ঠা শক্তভাবে হলে, সব জায়গায় নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত হলে, ধর্ষণ হয়তো একেবারে উচ্ছেদ হবে না, তবে কমে যাবে বিপুল পরিমাণে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

আসুন, নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক একটা সমাজ গড়ে তোলার জন্য সবাই মিলে কাজ করি। আগে ইয়াসমিন ধর্ষিত হয়েছে, আজ তনু, এর আগে  পরে অসংখ্য নাম জানা এবং অজানা ইয়াসমিন এবং তনুরা। আগামীকাল হয়তো ধর্ষিত হবার অপেক্ষায় অপেক্ষমান রয়েছে আমার বা আপনারই আদরের ছোট বোন কিংবা প্রানপ্রিয় দুহিতা। এই সমাজটাকে না পাল্টালে ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধটাকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না আমাদের সমাজ থেকে।

শুনছি পিছে উগ্র আমি,  বেশ্যাপাড়ার মেয়ে,
এই শরীরটা চাই তোমার, আসছো কেমন ধেয়ে।
আমার কি আর জোটে গো ভাই অন্ন সহজে?
এমন পথে আনছে কারা, আনছে এমন কাজে?
সব মেয়েই কি তোমার কাছে বেশ্যা এবং বাজে?
তুমিই বলো, তোমায় কি আর মানুষ বলা সাজে?

ফরিদ আহমেদ, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ