আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

ইতিহাস পাঠের সমস্যা

গোঁসাই পাহ্‌লভী  

বাংলাদেশের আজকের যে সমস্যা, সেটা ইতিহাস পাঠের সমস্যা বলেই আমাদের কাছে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ তার জন্মলগ্নের যে শ্লোগান অর্থাৎ ছয় দফা, এই ছয় দফা কতগুলো ‘সমস্যা’র চিহ্নিত করণ, ছয় দফায় সমাধান ভাবা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে, আজকে যে জায়গাটায় এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ, এখানে জাতীয়তাবাদী ধারণার সাথে সাথে ইসলাম বা প্যান ইসলামী রাজনীতি, বিবিধ প্রকারের বামপন্থী চিন্তাভাবনা,সামগ্রিকভাবে নৃতত্ত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। বাম রাজনীতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগের সাথে জোট বাঁধতে হয়েছে।

এই সরকার রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে ইসলামকে বহাল রাখলো, এর সুফল-কুফল বামপন্থী  রাজনীতিবিদদের হিসাবের মধ্যে নিয়ে আসলো। মূলকথা, বাংলাদেশে রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রায় সকল মতাদর্শই বিপদে পড়েছে এ কথা বলা যায়।সেটা যেমন প্রাকটিসের ক্ষেত্রে তেমনি তত্ত্বের দিক থেকেও। তাহলে এখন উপায় কি? নগরে আগুন লাগলে দেবালয়ও পোড়ে, ফলে দেবালয়কেও নড়ে চড়ে বসতে হচ্ছে। যতদূর মনে পড়ে, এখানকার রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ বলেছিলেন যে, ক্লাসিক্যাল স্টাডিজ প্রয়োজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই ডিপার্টমেন্ট খুলেছে বেশি দিন হয়নি। আমরা অধ্যক্ষ মহোদয়ের সাথে একমত। অধ্যক্ষ মহোদয় ক্লাসিক্যাল স্টাডিজ বলতে কি বুঝিয়েছেন সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।

ক্লাসিক্যাল স্টাডিজের এখানকার একটি ধারাবাহিক পর্ব আছে, যেমন আবুল ফজলের মাধ্যমে আকবরের বেদ পুরাণ উপনিষদ পাঠ, ব্রিটিশ-ভারতের এশিয়াটিক সোসাইটি, উইলিয়াম জোন্স, রাখাল দাস বা হর প্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়দের ক্লাসিক্যাল স্টাডিজ, বঙ্কিম হয়ে ক্লাসিক্যাল স্টাডিজের একটি ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্লাসিক্যাল স্টাডিজের যে ফলাফল, সময়সীমা,মাহাত্ম, যেমন ‘হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতি’, এই পাঠ মূলত কোন প্রকারের ম্যাসেজ দিলো!সমগ্র বঙ্গের রাষ্ট্রব্যবস্থা কি হবে? এর আইন,সংবিধান, আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি, সমগ্র বঙ্গ নিয়ে এরকম  ভাবনার ইশতেহার কোথায়? 
এর পরে আমরা আগাবো কি করে!
তাহলে কি ক্লাসিক্যাল স্টাডিজ আমাদের কোনও ফল দেবে না?

হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে আমরা তাত্ত্বিকভাবে যতটা পাই, রাখাল দাস অনেকটাই উপাদান কেন্দ্রিক। দু’জনেই এশিয়াটিকের সভ্য, কাজ করেছেন। ফলে এশিয়াটিকের ক্লাসিক্যাল স্টাডিজ দিয়ে ব্রিটিশরা ভারত বর্ষকে দু’শ বছর শাসন করে গেলো। এখনও সেই ধারাটা বহমান আছে। অর্থাৎ ক্লাসিক্যাল স্টাডিজের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো: ‘শাসন করার অধিকার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরা’ উপাদান বিশেষ। ইসলাম বা মার্কসবাদ যে রাজনৈতিক দর্শনেই প্রবেশ করেন না কেন, আপনি দেখতে পাবেন দর্শনটি ঠিক তত দূর গিয়েছে যতদূর শাসন সম্পৃক্ত তথ্য উপাদান পাওয়া যাচ্ছে। রাষ্ট্রের উপাদান না পেলে,সভ্যতার উপাদান না পেলে শাসনের উপাদান পাওয়া যায় না, ফলে ক্ষমতায়নের জন্যে হাঁসফাঁস হচ্ছে শাসন ক্ষমতার কেন্দ্র আবিষ্কার করা।

বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের যে ভাষণ দিয়েছেন, সেখানে তিনি বাঙালীর ইতিহাস বলতে যা বুঝিয়েছেন, শাসনতান্ত্রিকতার ইতিহাসের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। অথচ শাসন-সংক্রান্ত ইতিহাসের ক্ষেত্রে সার্বজনীন কোনও নির্দেশনা বাঙালী চিন্তকদের মধ্যে পাওয়া যায় না। এটা ঠিক যে বাঙালীর কিছুটা নিকট অতীতের ক্যামিস্ট্রি দিয়ে বাঙালী জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি, কিন্তু এই জাতীয়তাবাদ,মুক্ত দুর্নীতির বাজার, অর্থনীতি, ভূমি-দস্যু, রেমিটেন্স নির্ভরতা ইত্যাদির ভেতর দিয়ে আজ আর স্বাতন্ত্রীকতায় নেই। যে দেশ স্বৈরাচারী আইয়ুব খান বিরোধী মুভমেন্টের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে, সেই দেশ প্রথম সংবিধান প্রণয়ন করেন বিরোধী দলহীন। বহুদলীয় গণতন্ত্র থেকে একদলীয় শাসনব্যবস্থায়,মার্শাল ল’ সরকার, স্বৈরাচার, সেই পুরনো ইতিহাস। ফলে জাতীয়তাবাদের ক্লাসিক্যাল স্টাডিজ, স্বৈরাচারের ক্লাসিক্যাল স্টাডিজ, ইসলামী রাজনীতির ক্লাসিক্যাল স্টাডিজ দেখার সুযোগ পেয়েছে এখানকার জনগণ। সুতরাং, নতুন কোনও মিথের অবতারণা সকলের ক্ষেত্রেই জটিলতর। এ ক্ষেত্রে শক্তির প্রসঙ্গ হাজির হবে।


কিন্তু, তার পূর্বেই আমাদেরকে কিছু বিষয় বুঝে আগাতে হবে। যেমন ধরেন, বঙ্গের ইসলামকে জামাতে ইসলাম কীভাবে বুঝে? এখানকার আলেম ওলামারা কীভাবে বোঝে? কিংবা ইসলামিক স্কলাররা? অন্যদিকে একই প্রশ্ন বামপন্থী কিংবা জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলো বঙ্গের ইসলামকে কীভাবে বোঝে, আরবের ইসলামটা কেমন? একইভাবে এখানকার ইসলাম ধনতন্ত্র সম্পর্কে কি ধারনা রাখে , বা বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রত্যেকের অবস্থান কোথায়? এগুলো, এই প্রশ্নগুলো শুরুতেই করতে হয়, যেমন ধরেন, এখানকার মানুষের ইসলাম ভাবনা, তার জীবন-যাপনের সাথে জামাতে ইসলাম যেভাবে ভেবেছে, বা অন্যরা যেভাবে ভাবে সেটার সাথে বাস্তবিকভাবে মিলছে কিনা, এই মিল-অমিল,বর্তমান থেকে অতীত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

মোটকথা, এখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর ক্লাসিক্যাল স্টাডিজ পাঠের যে সমস্যা, অর্থাৎ ইতিহাস থেকে শাসনসংক্রান্ত বিষয়াবলী টুকলিফাই করতে গিয়ে অন্যদিকগুলোতে আর নজর দেয়া হয়নি। অর্থাৎ নৃ-তত্ত্বের পর্বে পর্বে মানুষের সামগ্রিকতার পাঠ নেয়া হয়নি। মানুষকে একটা গড় সম্পৃক্ত ভাবনায় ফেলে, শাসনসংক্রান্ত হয়ে রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ায় ভিত তৈরি করলো। ‘মান’ ধারণার অতীত কিছু থাকতে পারে এটা ধরে নিতে মানুষের অনেক কষ্ট হয়। যদিও মানুষ তার সমস্ত জীবনটা পালন করে  এই ‘ধরে নেয়া’র মধ্যে দিয়েই। এখন যথার্থভাবে ধরে নিতে না পারলে ছুটে  যাবে, আবার ধরবে,আবার ছুটে যাবে, শাসনসংক্রান্ত বিধির এই লীলা, ধরা এবং ছুটে যাওয়া।এই লীলা ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকবে যতক্ষণ না ধরা যথার্থভাবে হয়। সাদার সাথে সাদা মিশে গেলে সেখানে আর দুই রঙ পাওয়া যায় না। এভাবেই রাজা ও প্রজা লুপ্ত হয় অর্গানিক সম্পর্ক চর্চার মধ্যে দিয়ে, রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে। অথচ বাংলাদেশ সরকার তার জনগণকে গণপ্রজা বানিয়ে রেখেছে!

এক কথায়, এদেশের রাজনৈতিক তত্ত্বায়ন ,এদেশের জনসংস্কৃতি জাত নয়। ফলে জাতীয়তাবাদের নামে হোক, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র কিংবা ইসলামাবাদের নামে হোক সকলের সাথেই আখেরে এদেশের মানুষের সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য, সংঘর্ষ আজ যে মানুষের কাছে সংবাদ, কাল সেই মানুষটিই খোদ সংবাদে পরিণত হয়। এই হচ্ছে ক্লাসিক্যাল পাঠের বর্তমান হাল।

এবার আমরা জং বাহাদুরের একটি কালাম দিয়ে শেষ করবো। এই কালামে post  nationalism  একটা আভাস আছে।একটা রূপ,আছে ধর্ম, রাষ্ট্র, ইসলাম চর্চার ,শক্তি,ধারা,তন্ত্র আরো কতকিছু। এই থাকা আপনাকে কিছুই নিশ্চিত করে নাই, কেবল বয়ান করেছে, এই বয়ানের নানাবিধ ক্রিয়া আছে, আপনি এখনও এই জ্ঞানকে মোকাবেলা করেন নাই, মোলাকাতও নয়।

আসেন পাঠ করি,‘মুতলেকে ইশারা আছে/দেখ না ত্যাগ কোরানে/মাটির দেহ খাঁটি করো জীবের জীবনে।মনরে,/নানা রঙ্গে প্রেম তরঙ্গে /থাকিয়া সাধুরও সঙ্গে/মায়া নদীর ঘোর তরঙ্গে /থাকতে হবে সাবধানে।।/জিজ্ঞাস করো সাধুর কাছে/কোন নদীর জল জোয়ার আসে/কোন নদীর জল মাসে মাসে/পৃথিবী যায় উজানে।।/তিন দিবসে তিনজন/অপূর্ব এই কয়জন/সঙ্গী করে আরো দুই জন/মিলন করে পাঞ্জাতন।।/তাতে রং মাখিয়া সঙ সাজিয়া /তিনরঙ্গের পাঞ্জাতন নিয়া/দেহতরী কালি দিয়া বেয়ে চলো উজানে।।/লা শব্দের পাল্লা দিয়া/হু শব্দ সমান করিয়া /হে শব্দে মাল টানিয়া/হা শব্দ রাখো কুরানে।।/ধনেতে ভরিবে গোলা/কিনবেনে সে রাসুলুল্লাহ/মা খাতুনের কদম তলা/ঘাট রাখিও যত্নে।।/সেই ঘাটে অপূর্ব লীলা/আল্লাহ রাসুলের খেলা/আলেফ লাম মীম হেয়ের মেলা/যে পাহিলো সন্ধানে /এই তরঙ্গে পরিপাটি /তবে হবে দেহ খাঁটি/মুর্শিদ নামের নিয়ত চিঠি/জং বাহাদুর কয় এই গানে’।

এই কালাম পাঠ করলে দেখা যায়, ধর্মতত্ত্বের সঙ্গ-অনুষঙ্গকে কীভাবে পাঠ করা হয়েছে, এই পাঠ পদ্ধতির নিজস্ব শৃঙ্খলা আছে। এখানে আল্লাহ-রসুল,পাঁকপাঞ্জাতনতত্ত্ব সম্পর্কে যা বয়ান করা হয়েছে এর রসায়ন,করণ কারণ আলাদা। সুন্নি মতবাদ,কতেক ক্ষেত্রে শিয়া মতবাদ থেকে এপিসটমলোজিক্যালি ধরনটা আলাদা। জ্ঞানতত্ত্বের এই ধারাটিকে কি সুন্নিরা সংখ্যালঘু তত্ত্ব দিয়ে বিচার করবেন? বিশ্লেষণ করবেন, কিংবা কতল করার জন্যে উদগ্রীব হবেন? এখন জং বাহাদুরের এই এপিসটমলজি, এই জ্ঞানতত্ত্বের ভেতর যেমন  চিহ্নতত্ত্ব আছে, তেমনি পাওয়া যাবে গল্প, সম্পর্ক চর্চার ডকুমেন্ট এবং মেটাফর।

বঙ্গের জ্ঞানতত্ত্বের দিকে যদি আপনারা তাকান, দেখবেন যে, এখানকার বাউল,ফকির, সহজিয়া,গৌড়ীও,তন্ত্র কিংবা শাক্ত, প্রায় সকল ক্ষেত্রেই যে সমস্ত এপিসটমলজি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে, সকলের থেকেই আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হাজির, যে দৃষ্টিভঙ্গিকে অর্গানিক বলা যায়। মাটি,পানি আবহাওয়ামণ্ডলী অর্থাৎ যে পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে একটি বীজ অঙ্কুরোদগম হয়, বৃক্ষ হয়ে ওঠে, এখানকার এই জং বাহাদুরের এপিসটোমলজিও সেরকম। সম্পর্ক চর্চার মধ্যে দিয়ে সত্য হয়ে ওঠে।এই যে সম্পর্ক চর্চা, এটাকে যতই বেঁধে ফেলার চেষ্টা করা হোক, এর নিজস্ব  একটা সাংগঠনিক প্যাটার্ন আছে। গ্রেগরি ব্যাটসন জ্ঞানতত্ত্বে সংযুক্তির প্রকরণের আভাস দিয়েছেন, উল্লেখ করেছেন প্যাটার্নের কথা। এবং, অবশ্যই প্রাচ্যের সংযোগের ধরণ বর্ণিত হয়েছে রূপকের মাধ্যমে। যেমন লালন ফকিরের কালাম, আপনি এই কালাম ব্যাখ্যা করতে হলে, আপনি সেটাকে কমন কানেকটিং ল্যাঙ্গুয়েজে বোধগম্য করে তুলতে পারবেন না, আপনাকে মেটাফর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মেটাফরের আশ্রয় নিতে হবে শেষ পর্যন্ত। এভাবেই সম্পর্ক চর্চার একটা মেটাফরিক প্যাটার্ন তৈরি হয়।রাষ্ট্র,বিজ্ঞান,কিংবা প্রতিষ্ঠান এই মেটাফরিক প্যাটার্নকে বুঝে উঠেতে পারেনি, ইতালিয় রেনেসাঁসেও নয়, বঙ্গীয় রেনেসাঁসেও নয়।


ব্যক্তির নিজস্ব শৃঙ্খলা পদ্ধতি রয়েছে, রয়েছে সাংগঠনিকতা। সমাজ-শৃঙ্খলা, বা রাষ্ট্রীয় ডিসিপ্লিনের ভেতর ব্যক্তি খুব কম সময়ই অবস্থান করে, ব্যক্তি মূলত যতটুকু ব্যক্ত করে, এই ব্যক্তের রসায়নে এক দিকে রয়েছে সমাজ,রাষ্ট্র অপরদিকে ভারী অংশই ব্যক্তি তার নিজস্ব শৃঙ্খলায় রাখে, ধারণ করে, এবং অবস্থানগত নির্দেশনায় প্রকৃতিমূখী। এই যে,ব্যক্তির বাহির আর ভেতর, উভয়ের সাংগঠনিকতায় মাঝে মাঝে বিপর্যয় নামে, প্যাটার্নের ঐক্য রেখায় ভাঙ্গন ধরলে,ব্যক্তির নিজস্ব সাংগঠনিক কার্যক্রমেও আঘাত লাগে, ক্রমাগত এই আঘাত, ব্যক্তির নিজস্ব সাংগঠনিক ব্যাকরণকে বিলুপ্ত করে কতিপয় উৎপাদন ব্যবস্থার সংগঠন রাষ্ট্র হাইজ্যাক করে নিয়েছে।


আমরা যদি বেঙ্গল স্টাডিজের দিকে তাকাই, দেখতে পাবো, প্রতিষ্ঠান, কিংবা মেকলের ছাত্র হিসাবে অনেকেই মেটাফোরিক প্যাটার্নকে লজিক দিয়ে বুঝতে চেয়েছেন। বর্তমান সময়ে লজিকের সাংগঠনিক কাঠামোকে এমন জায়গায় এনে খাঁড়া করা হয়েছে, কিংবা ধরুন, যুক্তি শব্দটির কথাই, শব্দ দুটি অর্থ পাল্টে, এর মেটাফরিক প্যাটার্নকে চুলোয় ঢুকিয়েছে,(যখন আমরা মানুষের ঘর পোড়ার গন্ধ পাই,তখন মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার প্যাটার্ন পোড়ানোরই গন্ধ পাই, যখন আমরা কাউকে ভাত ফুটাতে দেখি, তখন কতগুলো ক্রিয়াপদকে আমরা ক্রিয়াশীল হতেই দেখি।) সার্বিক করে তোলা হয়েছে। যেমন যুক্তি শব্দটি দিয়ে আপনি যুক্ত থাকা থেকে বিযুক্তির সংগঠন করে তুললেন। ধর্ষণকারীও বিচার চলাকালীন যুক্তি প্রদর্শন করবেন, এই যুক্তি, বিযুক্তের দাবীদার। বাংলাদেশের মতো কৌমতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতার পাশাপাশি যুক্তি-বিযুক্তির প্রদর্শন রয়েছে।রাষ্ট্র সংগঠন কীভাবে কৌমসংগঠন কিংবা ব্যক্তি সংগঠনের অধীন হয় সে ইতিহাস তো  আমাদের নাক বরাবর ঝুলছে!

লজিক বিষয়ে কাপরার একটি আলাপ আছে গ্রেগরি ব্যাটসনের সাথে। চলুন পাঠ করা যাক,কাপরা লিখেছেন,

‘One day we were sitting on the deck outside the Esalen Lodge and Bateson was talking about Logic. `Logic is a very elegant tool; he said, `and we’ve got a lot of mileage out of it for two  thousand years or so. The trouble is, you know when you apply it to carbs and porpoises, and butterflies and habit formation’-his voice trailed off, and he added after a pause, looking  out over the ocean-`you know , to all those pretty things’- and now, looking straight at me-`logic won’t quite do.’

`No?’
`It won’t do,’ he continued animatedly, `because that whole fabric of livings is not put together by Logic. You see, when you get circular trains of causation, as you always do in the living world, the use of Logic will make you walk into paradoxes. Just take the thermostats , a simple sense organ, yes?’

He looked at me, questioning whether I followed and, seeing that I did, he continued.

`If it’s on, it’s off; if it’s off, it’s on. If yes, then no; if no, then yes.’
With that he stopped to let me puzzle about what he had said. His last sentence reminded me of the classical paradoxes of Aristotelian logic, which was, of course, intended. So I risked a jump.

`you mean, do thermostats lie?’
Bateson’s eyes lit up `Yes-no-yes-no-yes-no. You see, the cybernetic equivalent of logic is oscillation.’(Page 78, the pattern which connects, uncommon wisdom, Fritjof Capra).

 

মানুষ কী রাষ্ট্র,সমাজ কিংবা এক্সটার্নাল সংগঠনের থেকে বিযুক্ত হয়ে নিজ সাংগঠনিক শক্তিতে বাঁচতে পারবে? এক কথায় উত্তর: অসম্ভব, কেন অসম্ভব,মৌলিক অধিকারের নামে রাষ্ট্র ব্যক্তির নিজস্ব সাংগঠনিক ক্ষমতা থেকে জীবন-যাপনের জৈব ভিত্তিগুলোকে শর্তাধীন করেছে, আইন নামক প্যাটার্নের মধ্যে দিয়ে জবর-দখল করেছে। ফলে, ব্যক্তিকে তার হারানো সংগঠনকে ফিরে পেতে লড়াই করতে হচ্ছে একদিকে, অন্যদিকে নিত্যনতুন সংগঠনের আঘাতে,নিজস্ব সাংগঠনিক প্রক্রিয়া থেকে প্রায় বিয়োগের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। তাহলে উপায় কি?উপায় হচ্ছে সেল্ফ অর্গানিজিংয়ের স্বীকৃতি।

ফ্রিতজপ কাপরার মন্তব্য হচ্ছে,

‘A living organism is a self-organizing system, which means that its order is not imposed by the environment but is established by the system itself. In other words, self –organizing systems exhibit a certain degree of autonomy. This does not mean that they are isolated from their environment; on the contrary, they interact with it continually, but this interaction does not determine their organization; they are self –organizing(page 87, the pattern which connects, uncommon wisdom, Fritjof Capra).



 

গোঁসাই পাহ্‌লভী, ভাস্কর, লেখক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ