আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

মানুষ মূলত শব্দের সন্তান!

গোঁসাই পাহ্‌লভী  

রাজা আর নেই, সুতরাং রাজনীতি শব্দটা কেন উচ্চারণ করছেন? ‘ রজ: উন্নয়ন নীত’ এই অর্থে যদি রাজনীতিকে বিবেচনা করেন, তাহলে আগে সত্ত্ব: বুঝতে হবে এবং অন্তে তম: শব্দটি।

আজকে রাষ্ট্রে যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে, যে লড়াই, সেটা কৃত্রিম হোক আর রসায়নকৃত হোক, এই লড়াই কি সত্যকে নিয়ে হচ্ছে, বা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে হচ্ছে? তাহলে আপনারা সত্যের ব্যাখ্যা দিন। সত্ত্ব: বলতে কে কি বোঝেন, এই বুঝাবুঝি দিয়ে রাষ্ট্র গঠনের দিকে অগ্রসর হোন। আপনারা কি সত্যিই সত্ত্ব: নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে আগ্রহী? যদি আপনাদের লড়াইয়ের চরিত্র তামসিক হয়, যদি আপনারা মূল্যবান সময়টাকে তামাসায় কাটিয়ে দিতে চান, তবে আজকের লড়াই কি তমের বা তামসার লড়াই?

খেয়াল করে দেখবেন, বর্তমানের লড়াই হত্যাকে কবুল করে নিয়েছে। আর হত্যার পেছনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে মতাদর্শ, অর্থাৎ মৃত্যুর প্রকৃত কারণ মতাদার্শিক সংঘাত। এখানে মতাদর্শ নিজেই অস্ত্র হিসাবে দেখা দিচ্ছে কিনা? মতাদর্শের সাথে সত: রজ: তমের সম্পর্ক কি? এই প্রশ্নগুলো উপস্থিত হয়ে যাচ্ছে।

মতাদর্শের কারণে পৃথিবীব্যাপী হত্যার পরিসংখ্যান বের করা জরুরি। আধুনিকতার সব থেকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে এই ‘মতাদর্শ’ শব্দটি। শিক্ষার সাথে,খাদ্যের সাথে,ব্যবসার সাথে অর্থাৎ মানব জীবনের এমন কিছু নেই যার সাথে ‘মতাদর্শ’ শব্দটি জড়িত নয়! এই মতাদর্শ মানুষের আচরণ থেকে জাত, ফলে মতাদর্শই আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে, অর্থাৎ সৃষ্টিই স্রষ্টাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, এই নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া- চাওয়ি দীর্ঘ দিনের ফলত লড়াইটাও দীর্ঘ এবং বিস্তৃত।

একটা পর্যায়ে এসে পূর্বোক্ত দুই পক্ষের বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ হলো, যে পক্ষ লড়াইয়ের ভেতর থেকে ছিটকে পড়াদেরকে লড়াই করবার জন্যে যুক্তি দিয়েছে, মতাদর্শ দিয়েছে। খোলা চোখে শ্রীচৈতন্যের ভক্তি আন্দোলন মানুষের চিন্তার তৃতীয় মাত্রা হিসাবে দেখা যেতে পারে।

চতুর্থ মাত্রাটি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। সন্ত্রাসবাদ মতাদর্শকে কৌমের জায়গা থেকে সরিয়ে এনে অর্থাৎ জাতি থেকে বহুজাতিকতায় রূপান্তরিত হয়েছে।মতাদর্শের আন্তর্জাতিকতার দুটো রূপ আমরা দেখছি, একটা ধর্মীয় রূপ, আবার ধর্মের ভেতর থেকেই গড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদ আন্তর্জাতিক, এবং সন্ত্রাসবাদেরও ভিত্তি হচ্ছে ধর্মের আন্তর্জাতিক অবস্থান।

সে যা হোক, সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে মতাদার্শিক লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া মানুষগুলোকে সন্ত্রাসবাদ একটি মতাদার্শিক আশ্রয় দিয়েছে, লড়াই করবার একটি নতুন পাটাতন সৃষ্টি করে দিয়েছে। এভাবেই চৈতন্যের গৌড়িয়ে বৈষ্ণব বা এই আন্দোলন অমন ছিটকে পড়াদের নিয়ে। কিংবা, কার্ল মার্ক্সয়ের চিন্তা যতটাই বৈজ্ঞানিক হোক না কেন, উক্ত জ্ঞানকাণ্ডগুলোকে ছিটকে পড়ারাই আঁকড়ে ধরেছে, গৌতমের অনুসারী বৃদ্ধি হয়েছিল এই ছিটকে পড়াদের নিয়েই। এভাবেই মানুষের অস্তিত্ব এবং যাপনের সাথে মতাদর্শের বহুমাত্রিক সম্পর্ক আছে।

মানুষ মানেই হচ্ছে মতাদার্শিক, মতাদার্শিকতার সাথে সৎ অসতের ধারণা আছে, এই ধারণা কীভাবে সৃষ্টি হলো এটাও গবেষণার বিষয়। কিন্তু বর্তমানে এই যে মতাদর্শকেন্দ্রিক লড়াই, এই লড়াই মানব সম্প্রদায়কে বিপর্যস্ত করেছে, মানুষের নিজের তৈরি জ্ঞান এবং নিজের তৈরি অস্ত্র নিয়ে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে মানুষ তার নিজের বিপক্ষেই লড়ছে, প্রতি মূহুর্তের যে সমস্ত কর্মতৎপরতা, এই কর্মযোগ দৈহিক হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষ তার নিজের কাছে ফিরে গিয়ে খেদ প্রকাশ করতে থাকে!

‘যত মত তত পথ’ এই বাক্যের মধ্যে ‘যত তত’ থাকলেও একটা ঐক্যের সুর বহমান। কি সেই সুর? সত্যে পৌঁছানোর ইঙ্গিত? ফলে, মানুষের করণের মধ্যেই রয়েছে ক্রিয়াশীলতা, মানুষ বিশেষ্যের মধ্যে আটকে থাকবে না, সে ক্রিয়াপদ উৎপন্নকারী, ক্রিয়াশীল জীব। এই মানুষেরও বহু ক্যাটাগরি আছে, ক্যাটাগরি মেনে নেওয়াটা যেমন প্রাকৃতিক, না মেনে নেওয়াটাও। এই যে নেতিইতির সমাহার, এটা একটা ইউনিটি,

ভাষায় যতদিন ‘খারাপভালো’ থাকবে, শব্দে যতদিন আস্তিকতা-নাস্তিকতা থাকবে, মানুষের আচরণেও সেটা চলে আসবে। ফলে আপনাকে যদি এ বিষয়ে ভাবতেই হয়, তাহলে শব্দের দিকে নজর দিতে হবে, ডিকশনারি থেকে কতগুলো শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে, বঙ্গোপসাগরে জলাঞ্জলি দিতে হবে কিছু শব্দ। এইভাবে, যদি বিচার করতে হয়, শব্দের হওয়া উচিৎ, শাস্তিটাও শব্দের ঘাড়ে চাপবে।

ডিকশনারিতে কিছু শব্দ নিষিদ্ধ করে দিলেও মানুষের চিন্তনপ্রণালীতে বেশ কিছু সময় কিংবা অনন্তকাল শব্দগুলি সক্রিয় থাকতে পারে। কারণ, মানুষ মূলত শব্দের সন্তান! ফলে শবাবস্থা তার এক্সট্রিম পোলার অপজিট!

গোঁসাই পাহ্‌লভী, ভাস্কর, লেখক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ