আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

এ আঁধার ঘুচবে কখন?

ফরিদ আহমেদ  

মৃত্যুর এক হিমপুরী এখন বাংলাদেশ নামের ব-দ্বীপ ভূখণ্ডটি। সবুজ এবং  কোমল একটা দেশ আজ পরিণত হয়েছে এক নৃশংস বধ্যভূমিতে। বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষই আজ বিপন্ন এবং অসহায়। প্রতিদিন রক্তের লাল স্রোত বয়ে চলেছে এর গা বেয়ে। খুনের নেশায় পাওয়ায় উন্মত্ত একদল লোক অপরিমেয় ঘৃণা বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এর অলিতে-গলিতে। তাদের সেই ঘৃণার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে কোমল সব দেহ, অসাধারণ সব মেধা, অনন্য সব মানুষগুলো।

একদল নরপিশাচ পৈশাচিক উল্লাসে ধারালো চাপাতির হিংস্রতা দিয়ে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে সবকিছুকে। দুর্বিষহ এবং পচা দুর্গন্ধময় এক সময় এসে পড়েছে হঠাৎ করেই আমাদের সামনে। একে মোকাবেলা করার জন্য যে প্রস্তুতি, যে শক্তিমত্তা আমাদের থাকা উচিত, তা নেই। ফলে, গভীর হতাশা এবং হাহাকারে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কিছু করারও কোনও বিকল্প কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। হিংস্র চাপাতিওয়ালাদের হাত ধরে গোটা দেশ এবং সমাজ দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে অন্তহীন এক আঁধার রাজ্যের কেন্দ্র অভিমুখে।

মাত্র তিনদিন আগে, গত পঁচিশ এপ্রিল তারিখে চাপাতির আঘাতে নিহত হয়েছেন জুলহাস মান্নান নামের একজন ভদ্রলোক। তিনি একা নন, একই আক্রমণে তাঁর সাথে নিহত হয়েছেন তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয়ও। মান্নান জুলহাস ‘রূপবান’ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। এই পত্রিকাটি বাংলাদেশের সমকামী অধিকার বিষয়ক প্রথম এবং একমাত্র পত্রিকা। তিনি এক সময় বাংলাদেশস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল অফিসার হিসাবেও কাজ করেছেন।

ঐদিন বিকাল পাঁচটার দিকে জুলহাস মান্নানের কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের বাড়িতে জোর করে ঢুকে পড়ে জনা পাঁচেক তরুণ। তাদের বাধা দিতে গেলে প্রথমেই আহত হন বাড়ির দ্বাররক্ষী পারভেজ। এসময় নিজেকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যাবার পরিবর্তে জুলহাস মান্নান এগিয়ে আসেন পারভেজের সহায়তায়। পারভেজকে বাদ দিয়ে তরুণরা জুলহাস মান্নানের উপর এলোপাথাড়ি চাপাতির কোপ দিতে থাকে। জুলহাসকে কুপিয়েই ক্ষান্ত হয় না খুনিরা, জুলহাসের বন্ধু তনয়কেও একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করে। তরুণরা শুধু চাপাতি নিয়েই আক্রমণে আসে নি, আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল তাদের সাথে। জুলহাসদের খুন করার পর তারা দ্রুত সেখান থেকে পালাতে চেষ্টা করে। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া করেন। এসময় ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশও। পুলিশের সদস্যরা তাদের ধরার চেষ্টা করেন, কিন্তু লাভ হয় না। পুলিশকেও আক্রমণ করে পালিয়ে যায় তরুণরা। এই হামলায় আহত হয়েছেন এক পুলিশকর্মীও।

খুব সম্ভবত ‘রূপবান’ পত্রিকা চালানো এবং সমকামী অধিকার আন্দোলনের সম্মুখসারির কর্মী হবার কারণেই জুলহাস মান্নানকে এরকম করুণ মৃত্যু বরণ করে নিতে হয়েছে। বাংলাদেশের মতো ধর্মীয় রক্ষণশীল সমাজে ‘রূপবান’-এর মতো পত্রিকা প্রকাশ বিশাল এক সাহসী উদ্যোগ। এরকম সাহসী উদ্যোগ বিরল ঘটনাই বলা চলে। পত্রিকা থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশে বহু দিন ধরেই এলজিবিটি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের সমানাধিকারের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন জুলহাস। ধর্মীয় মৌলবাদীরা বেশ কয়েক দিন ধরেই তাঁকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিল।

পয়লা বৈশাখের আগে থেকেই ফেসবুকে একটি ইভেন্ট পেজ খুলে বাংলাদেশের সমস্ত এলজিবিটি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের গণধোলাইয়ের ডাক দেওয়া হয়। কুৎসিত ভাষায় চলে তাঁদের প্রতি অকথ্য গালিগালাজ, জুলহাস-সহ অন্যান্যদের খুনের হুমকিও। রিপোর্ট করার পর সেই ইভেন্ট পেজটি রিমুভ করা হয়। কিন্তু, তাদের সেই হুমকি যে কতটা ভয়ঙ্কর ছিল, জুলহাসের নৃশংস খুন তারই প্রমাণ দিল।

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে মুক্তমনা মানসিকতার এবং ভিন্ন মতের মানুষদের নিয়মিত বিরতিতে হত্যা করা হচ্ছে। এদের বেশিরভাগই আক্রান্ত হয়েছেন বাড়ির বাইরে। বাড়িতে ঢুকে হত্যাকাণ্ডের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে বাড়িতে গিয়ে চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল মুক্তমনা ব্লগের নিয়মিত লেখক নিলয় নীলকে। চার-পাঁচজনের একটা দল প্রকাশ্য দিনের বেলায় তাঁর বাসায় গিয়েছিল। তাঁর স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়েছিল বারান্দায়। শ্যালিকাকে আটকে রাখা হয়েছিল বাথরুমে। আর নীলকে আলাদা করে ভিন্ন রুমে নিয়ে 'আল্লাহ আকবর' বলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল খুনিরা।

জুলহাস মান্নানের হত্যার মাত্র দুইদিন আগে (২৩ এপ্রিল) চাপাতির আঘাতে খুব হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী। রাজশাহীর শালবাগান এলাকার বটতলা মোড়ে পিছন থেকে তাঁকে আক্রমণ করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারীরা। তাঁর ঘাড়ে কোপ বসানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, রেজাউল করিম সিদ্দিকীর ঘাড়ে তিন বার কোপ মারা হয়েছিল। মাটির দিকে মুখ গুঁজে পড়েছিল নিহত অধ্যাপকের দেহ। তাঁর ঘাড় ও গলার আশি শতাংশ অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল আঘাতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আক্রমণের পর একটি মোটরবাইকে চেপে দু’জন তরুণকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।

শুধু এই তিন খুনই নয়, এ মাসের সাত তারিখেই পুরান ঢাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় লোকজনের সামনে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে নাজিমুদ্দিন সামাদ নামের একজন ফেসবুকে সক্রিয় নাস্তিক তরুণকে।

চাপাতি দিয়ে নাস্তিক, প্রগতিশীল বা ভিন্নমতের মানুষদের হত্যাকাণ্ড নতুন কিছু নয়। গত বছর (২০১৫) মাত্র আট মাসের মধ্যে চারজন ব্লগার এবং একজন প্রকাশককে একই উপায়ে হত্যা করা হয়েছিল। ওই বছর এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার হয় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। ফেব্রুয়ারি মাসে ছাব্বিশ তারিখে বইমেলা বেরিয়ে টিএসসি মোড়ে আসতে চাপাতি হাতের ঘাতক দল অভিজিৎ রায় এবং তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই আক্রমণে অভিজিৎ রায় নিহত হন। তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদ গুরুতর আহত হন। তিনি চাপাতির আঘাতে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল হারান। মাথায়, ঘাড়ে কপালে মারাত্মক কোপ নিয়ে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

এর মাত্র এক মাস পরে, তিরিশে মার্চ দিনের বেলায় প্রকাশ্য রাজপথে চাপাতি নিয়ে হামলা চালানো হয় ওয়াশিকুর রহমান বাবুর উপরে। এই হামলায় অংশ নেয় হাটহাজারি মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র। কোপের পর কোপ দিয়ে ওই স্থানেই তাঁকে মেরে ফেলা হয়। তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন সাহসী মানুষ ধাওয়া করে খুনিদের দুজনকে ধরতে সক্ষম হয়, এবং তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

মে মাসের বারো তারিখে ঘাতকের চাপাতি থেকে রক্ষা পেতে জানবাজি রেখে ছুটতে থাকে অনন্ত বিজয় দাশ। কিন্তু, শেষ রক্ষা আর হয় না। সামনে দীঘির কারণে আটকে যান তিনি। ঘাতকেরা দীঘির পারে তাঁকে একের পর এক চাপাতির আঘাত করে চিরতরে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।

অক্টোবর মাসের একই দিনে অভিজিৎ রায়ের বইয়ের দুই প্রকাশক শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশিদ টুটুল এবং ফয়সাল আরেফিন দীপনের উপর আলাদা আলাদাভাবে হামলা হয়েছে তাঁদের নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থার অফিসে। টুটুল বেঁচে গেছেন ভাগ্যক্রমে। দীপন বাঁচতে পারেন নি চাপাতির কবল থেকে।

এ যেন নিঃসীম কোনও এক আঁধারে ছেয়ে যাওয়া বাংলাদেশে। এর চারিদিকে শুধু থিক থিক অন্তহীন অন্ধকার। এর মাঝে কিলবিল করছে অসংখ্য প্রতিক্রিয়াশীল পুঁতিগন্ধময় পোকামাকড়। মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার চর্চা করা এখন প্রচণ্ড রকমের বিপদজনক বাংলাদেশে। অসহিষ্ণুতা এবং ঘৃণা এমনই সর্বব্যাপী যে বিপরীত কোনও চিন্তা-ভাবনা, বিশেষ করে ধর্ম, আরও স্পষ্ট করে বললে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে সামান্যতমও সমালোচনাও এক শ্রেণীর ইসলামি মৌলবাদী সহ্য করতে পারছে না কিছুতেই। একদল রক্তপিপাসু ধর্মান্ধ মোল্লা ছড়ি ঘোরাচ্ছে সবার মাথার উপরে।

আমাদের সমাজটাও হঠাৎ করেই যেন হয়ে উঠেছে প্রবলভাবে ধর্মাচ্ছন্ন। পত্রিকায় নির্দোষ একটা মোহাম্মদ বিড়াল নামের কৌতুকের জন্যও তরুণ কার্টুনিস্টকে জীবন নিয়ে পালাতে হয় দেশ ছেড়ে। ফেসবুকের সামান্য কোনও একটা পোস্টে লাইক দেবার অপরাধে সরকারের বীর পুঙ্গব বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তরুণদের। দিকে দিকে শুধু ধর্মানুভূতি আহত হবার আর্তনাদ আর আর্ত-চিৎকার শোনা যাচ্ছে। মানুষের আরও কতো কতো ধরনের অনুভূতি রয়েছে, সেগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হয় না, কিন্তু এই অনুভূতি এমনই নাজুক, ভঙ্গুর এবং স্পর্শকাতর যে, তা আঘাত হানে মুহূর্তের মাঝেই, এবং অতি অবশ্যভাবেই তা হয় প্রবল। এই আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি তখন মরিয়া হয়ে ঘুরে বেড়ায় রক্ত পানের নিবিড় নেশায়, প্রতিশোধের প্রত্যাশায়।

হুমায়ূন আজাদ, যিনি নিজেও এই ধর্মান্ধদের চাপাতির আঘাতে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন, এদের প্রসঙ্গেই লিখেছিলেন:

একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় আজকাল, কথাটি হচ্ছে, ‘ধর্মানুভূতি’!কথাটি সাধারণত একলা উচ্চারিত হয় না, সাথে জড়িয়ে থাকে‘আহত’ও‘আঘাত’কথা দুটি; শোনা যায় ‘ধর্মানুভূতি আহত’ হওয়ায় বা ‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত’ লাগার কথা। আজকাল নিরন্তর আহত আর আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে মানুষের একটি অসাধারণ অনুভূতি, যার নাম ধর্মানুভূতি। মানুষ খুবই কোমল স্পর্শকাতর জীব, তার রয়েছে ফুলের পাপড়ির মতো অজস্র অনুভূতি; স্বর্গচ্যুত মানুষেরা বাস করছে নরকের থেকেও নির্মম পৃথিবীতে, যেখানে নিষ্ঠুরতা আর অপবিত্রতা সীমাহীন; তাই তার বিচিত্র ধরনের কোমল অনুভূতি যে প্রতি মুহূর্তে আহত রক্তাক্ত হচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যখন সুদিন আসবে, সে আবার স্বর্গে ফিরে যাবে, তখন ওই বিশুদ্ধ জগতে সে পাবে বিশুদ্ধ শান্তি; সেখানে তার কোনও অনুভূতি আহত হবে না, ফুলের টোকাটিও লাগবে না তার কোনও শুদ্ধ অনুভূতির গায়ে। অনন্ত শান্তির মধ্যে সেখানে সে বিলাস করতে থাকবে। কিন্তু, পৃথিবী অশুদ্ধ এলাকা, এখানে আহত হচ্ছে, আঘাত পাচ্ছে, রক্তাক্ত হচ্ছে তার নানা অনুভূতি –এটা খুবই বেদনার কথা এবং সবচেয়ে আহত হচ্ছে একটি অনুভূতি, যেটি পুরোপুরি পৌরাণিক উপকথার মতো, তার নাম ধর্মানুভূতি। মানুষ বিশ্বকে অনুভব করে পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে; ইন্দ্রিয়গুলো মানুষকে দেয় রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শ্রুতির অনুভূতি; কিন্তু মানুষ একমাত্র প্রতিভাবান প্রাণী মহাবিশ্বে, শুধু এ পাঁচটি ইন্দ্রিয়েই সীমাবদ্ধ নয়, তার আছে অজস্র ইন্দ্রিয়াতীত ইন্দ্রিয়। তার আছে একটি ইন্দ্রিয়, যার নাম দিতে পারি সৌন্দর্যেন্দ্রিয়, যা দিয়ে সে অনুভব করে সৌন্দর্য; আছে একটি ইন্দ্রিয়, নাম দিতে পারি শিল্পেন্দ্রিয়, যা দিয়ে সে উপভোগ করে শিল্পকলা; এমন অনেক ইন্দ্রিয় রয়েছে তার, সেগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে প্রখর প্রবল প্রচণ্ড হয়ে উঠেছে তার ধর্মেন্দ্রিয়, যা দিয়ে সে অনুভব করে ধর্ম, তার ভেতরে বিকশিত হয় ধর্মানুভূতি, এবং আজকের অধার্মিক বিশ্বে তার স্পর্শকাতর ধর্মানুভূতি আহত হয়, আঘাতপ্রাপ্ত হয় ভোরবেলা থেকে ভোরবেলা। অন্য ইন্দ্রিয়গুলোকে পরাভূত করে এখন এটি হয়ে উঠেছে মানুষের প্রধান ইন্দ্রিয়; ধর্মেন্দ্রিয় সারাক্ষণ জেগে থাকে, তার চোখে ঘুম নেই; জেগে জেগে সে পাহারা দেয় ধর্মানুভূতিকে, মাঝে মাঝেই আহত হয়ে চিৎকার করে ওঠে এবং বোধ করে প্রচণ্ড উত্তেজনা। এটা শিল্পানুভূতির মতো দুর্বল অনুভূতি নয় যে আহত হওয়ার যন্ত্রণা একলাই সহ্য করবে। এটা আহত হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ধর্মানুভূতির উত্তেজনা ও ক্ষিপ্ততায় এখন বিশ্ব কাঁপছে।

সেই উত্তেজনা এবং ক্ষিপ্ততায় এখন বাংলাদেশও কাঁপছে।  তীব্র ভূমিকম্পে যেমন ভূমি কাঁপে, ঠিক সেরকমভাবে কাঁপছে। বাংলাদেশের পুরো সীমানা জুড়ে চলছে সেই কম্পনের ধ্বংসলীলা। বাংলাদেশে সু-বুদ্ধিসম্পন্ন মুক্তচিন্তার লেখকদের এখন জান হাতে রেখে লেখালেখি করতে হচ্ছে। নিজস্ব মত প্রকাশে সকলেই দ্বিধাগ্রস্ত এখন, কেউ কেউ প্রবলভাবে আতংকিতও। আতংকিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কখন কার ঘাড়ে চাপাতির কোপ এসে পড়বে কেউ যে তা জানে না। কেউ জানে না কখন কার জন্য মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির হচ্ছে কদাকার ইসলামি জঙ্গি সেনারা। এর থেকে বাঁচতে বহু লেখক, ব্লগার এবং মুক্তচিন্তক পালিয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে। অবরুদ্ধ সমাজে দম আটকে কিংবা চাপাতির আঘাতে মরার চেয়ে, পালিয়ে যাওয়াটাই শ্রেয়।

বাংলাদেশে লেখালেখির ‘অপরাধে’ একের পর এক বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটছে, কিন্তু এর কোনটারই সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না, কাউকে ধরা হচ্ছে না, কোনও হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না। একমাত্র ব্যতিক্রম রাজীব হায়দারের হত্যাকাণ্ড। এই হত্যা মামলায় দুজনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, একজনের জেলদণ্ড হয়েছে। এটাই হত্যাকারীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে চলেছে অবিরাম। আমরা দেখেছি, হুমায়ূন আজাদ হত্যার কোনও বিচার হয় নি, বিচার হয় নি অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু কিংবা অনন্ত বিজয় দাশদের হত্যাকাণ্ডের। শুধু যে বিচার হচ্ছে না, তাই নয়, সরকারের দায়িত্বশীল মহলের  অ-দায়িত্বশীল কিছু মন্তব্যও পরিস্থিতিকে আরও নাজুক এবং বিপদজনক করে তুলেছে।

বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, যে কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে নোংরা কিছু লিখে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে সেই দায় তিনি বা তাঁর সরকার নেবেন না। তাঁর বক্তব্য থেকে, “আমার ধর্ম সম্পর্কে কেউ যদি নোংরা কথা লেখে, সেটা কেন আমরা বরদাশত করবো? ফ্যাশন দাঁড়িয়ে গেছে ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই তারা মুক্তচিন্তার ধারক! কিন্তু আমি এখানে কোনও মুক্ত চিন্তা দেখি না। আমি দেখি নোংরামি। এত নোংরা নোংরা কথা কেন লিখবে? আমি আমার ধর্ম মানি, যাকে আমি নবি মানি তার সম্পর্কে নোংরা কথা কেউ যদি লেখে সেটা কখনোই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ঠিক তেমনি অন্য ধর্মের যারা তাদের সম্পর্কে কেউ কিছু লিখলে তাও কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। যারা এগুলো করে তা তাদের সম্পূর্ণ নোংরা মনের পরিচয়, বিকৃত মনের পরিচয়। এটা পুরোপুরিই তাদের চরিত্রের দোষ এবং তারা বিকৃত মানসিকতার। একজন মুসলমান হিসেবে আমি প্রতিনিয়ত আমার ধর্মকে অনুসরণ করে চলি। কাজেই সে ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ লিখলে আমি কষ্ট পাই। এসব লেখার জন্য কোনও অঘটন ঘটলে তার দায় সরকার নেবে না। সবাইকেই সংযম নিয়ে চলতে হবে, শালীনতা বজায় রেখে চলতে হবে। অসভ্যতা কেউ করতে পারবে না। আর তা করলে তার দায়িত্ব আমরা নেবো না”।

যদিও তিনি এর জন্য একজন আরেকজনকে খুন করবে, এই ধারণার বিপক্ষে গিয়ে বলেছেন যে, আবার একজন লিখলে আরেকজন খুন করে প্রতিশোধ নিবে এটা তো ইসলাম ধর্ম বলেনি, তারপরেও তাঁর দায় না নেবার ঘোষণাটা খুনিদের জন্য সবুজ সংকেত হিসাবে চলে গিয়েছে। রাষ্ট্র তাঁর সকল নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে দায়বদ্ধ। একজন মানুষ যদি কোনও অপরাধ করে, তবে রাষ্ট্র তাঁর বিচার করতে পারে, এর বাইরে অন্য কারো অধিকার নেই বিচারের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেবার। একজন মানুষ কী ‘অপরাধে’ খুন হয়েছে, সেটা রাষ্ট্রের বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। খুনের অপরাধে অপরাধী যারা, তাদেরকে আইনের আওতায় আনাটাই রাষ্ট্রের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কাজ।

প্রধানমন্ত্রীর এই অ-প্রধানমন্ত্রীসূলভ বক্তব্যের বাইরে, যার বক্তব্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এই ভদ্রলোক প্রতিটা খুনের পর মৃত ব্যক্তিরা কী লিখেছে তা খতিয়ে দেখার কথা বলছেন, কিংবা কার আচরণ সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল কী ছিল না, সেই গবেষণাতেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন। অথচ রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে প্রতিটা খুনের খুনিরা যাতে ধরা পড়ে সেই চেষ্টাটাই তার কাছ থেকে সকলের কাম্য ছিল। কিন্তু, তিনি তা করতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। জুলহাস মান্নান হত্যাকাণ্ডের শিকার হবার পরে তিনি বলেছেন, “আমরা যতটুকু জেনেছি জুলহাস রূপবান নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। আর তিনি সমকামীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতেন। এটা আমাদের সমাজের সঙ্গে মানানসই না।”

কোনটা মানানসই কাজ সমাজের জন্য আর কোনটা মানানসই নয়, এটা দেখার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নয়। আমাদের সমাজে বিবেকের কিংবা বিচারকের চরিত্রে তাঁকে কেউ বসায় নি। তাঁর কাজ হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা, অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা। এর বাইরে অন্য কিছু বলাটা তাঁর অধিকারের আওতায় পড়ে না।

মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যাকাণ্ডের বিচার না হবার যে নজির গড়ে উঠছে বাংলাদেশে, সেটা সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের এইসব হত্যাকাণ্ডকে গুরুত্ব না দেবার বিপদজনক প্রবণতা, এই দুইয়ে মিলে, একদিন আমাদেরকে জাতি হিসাবে বিকলাঙ্গ করে দেবে। আমাদের বুঝতে হবে যে, অসংখ্য মৌলবাদী জঙ্গি দেশের কোনও কাজেই আসবে না। এরা সমাজের জন্য, দেশের জন্য ক্যান্সারস্বরূপও। কিন্তু যে মানুষগুলোকে এরা মুরগি কাটার মতো করে কেটে ফেলছে, তারা সবাই একেকজন সোনার টুকরো মানুষ। অকাল এবং অপঘাত মৃত্যুর কারণে শুধুমাত্র এরাই যে হারিয়ে যাবে এই পৃথিবী থেকে তাই নয়, মুক্ত-চিন্তার আলোকিত জায়গাটাতে ভবিষ্যতে আর কেউ আসতেই সাহস করবে না। আলোর ঝরনাধারার শেষ স্রোতটা বন্ধ হয়ে যাবে, অন্তহীন এক অন্ধকার জগতে পতিত হবে দেশ এবং জাতি। সেই অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে আমাদের হয়তো অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে কয়েক যুগ, কয়েক শতাব্দী কিংবা সহস্র বছর। মৌলবাদী জঙ্গিরা ঠিক এই কাজটাই করতে চাইছে আমাদের সমাজটাকে নিয়ে। আলোর থেকে বহু দূরে সরিয়ে নিয়ে, পিছন দিয়ে হাঁটিয়ে, নিয়ে যেতে চাইছে তমস্যাপূর্ণ এক সময়ে, এক জগতে।

প্রতিটা যুগেই, প্রতিটা সমাজে, মুক্তচিন্তা যাঁরা করেছেন, সমাজকে হাত ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছেন সামনের দিকে, গাঢ় অন্ধকারকে দূর করতে চেয়েছেন ভালবেসে প্রদীপ জ্বেলে, প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থপর গোষ্ঠী তাঁদের সহ্য করতে পারে নি। নৃশংসভাবে হামলে পড়েছে তারা মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তাকে রুদ্ধ করতে। ভয়ানক আক্রোশে ঘৃণার বিষ-বাষ্প নিয়ে ঝাঁপিয়েছে আলোর মশালকে নিভিয়ে দিতে, আলোময় যাত্রাকে থামিয়ে দিতে। ঝলমলে আলোর চেয়ে গাঢ় অন্ধকার এদের বেশি পছন্দ, বেশি ভালবাসার। মুক্ত বাতাসের চেয়ে দমবন্ধ করা গুমোট পরিবেশই এদের বেশি কাম্য। তাঁদের এই আক্রোশে, নৃশংস হামলায় রক্ত ঝরেছে মুক্তচিন্তকদের। তাঁদের শরীর থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়েছে রুক্ষ মাটিতে। বন্ধ্যা মাটি সেই রক্তে হয়ে উঠেছে উর্বর। সেই উর্বর মাটিতে ঘন সবুজ শস্য ফলেছে। মুক্তচিন্তকদের ঝরে পড়া রক্ত থেকে বের হয়ে এসেছে আরও অসংখ্য মুক্ত চিন্তার মানুষ।

প্রহসনের এক বিচারের মাধ্যমে সক্রেটিসকে হেমলক পান করে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়েছিলো প্রাচীন গ্রীসে, হাইপেশিয়াকে আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তায় হায়েনার হিংস্রতায় ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে, ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে জ্বলন্ত আগুনে, গ্যালিলিওকে বন্দি করে রাখা হয়ে অন্ধকার কারাকক্ষে, অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে, হুমায়ূন আজাদকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কুপিয়ে কুপিয়ে। কিন্তু, তারপরেও মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, প্রগতিশীল আন্দোলনকে থামানো যায় নি কখনো, যাবেও না।

মানব সমাজের নিয়মই এমন যে, এটি সামনের দিকেই এগোবে। পিছন থেকে একে যতই টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন, এর অগ্রযাত্রাকে কখনোই থামানো যাবে না। রাশ টেনে ধরে এর সম্মুখ সাময়িকভাবে হয়তো ব্যাহত করা সম্ভব, সম্ভব স্বল্প সময়ের জন্য পিছনের দিকেও নিয়ে যাওয়া, কিন্তু দীর্ঘ সময় পরিভ্রমণে এর অগ্রযাত্রা অনিবার্য। প্রতিক্রিয়াশীলরা এটা খুব ভালো করেই জানে। তাই, সবসময়ই তারা থাকে মরিয়া। যতোখানি সম্ভব অঙ্গহানি ঘটিয়ে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করে সমাজের চাকাকে। প্রতিক্রিয়াশীল আর প্রগতিশীলের এই দ্বন্দ্ব তাই সবসময়ই সুতীব্র, সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী এবং সর্বনাশা। এই সর্বনাশা লড়াইটা সবসময়ই রক্তক্ষয়ী। তবে, এই রক্ত ক্ষয় হয় শুধুমাত্র এক তরফ থেকেই। প্রগতিশীলদের দেহ থেকেই রক্ত ঝরে চুইয়ে চুইয়ে, কখনো বা ফিনকি দিয়ে। প্রতিক্রিয়াশীলদের মতো খুন, জখম, মারামারি-কাটাকাটি করার মতো মানসিকতা প্রগতিশীলদের নেই। অস্ত্রের চেয়ে কলমের শক্তিতেই বেশি বিশ্বাস তাঁদের। প্রতিটা আন্দোলনে তাই এক তরফাভাবে রক্ত দিতে হয় তাঁদের।

অভিজিৎ, অনন্ত, রাজীব, বাবু, নীল, দীপন, জুলহাসদের মতো তরুণ-যুবকরা যে অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে আসে আমাদের জন্য, আমাদের সমাজের জন্য, এই পৃথিবীর জন্য, সেটাকে পরম মমতা এবং গভীর ভালবাসায় কাজে লাগানো উচিত আমাদের। আমাদের উচিত তাদেরকে এমন একটা নির্ভাবনাময় পরিবেশ দেওয়া, নিশ্চিন্ত একটা বাগিচা দেওয়া, যেখানে তারা ফাগুনের ফুল হয়ে ফুটতে পারবে। তার বদলে যদি এদেরকে আমরা কিছু মূর্খ, ধর্মান্ধদের হাতে নিশ্চিহ্ন করে দেবার সুযোগ দেই, তবে অকালেই আমরা হারাবো তাদের সুগন্ধ। ফলে, একদিন অনন্ত আক্ষেপ করা আর হতাশায় পোড়া ছাড়া আর কোনও গতি থাকবে না আমাদের।

আজ চাপাতির আঘাতে জুলহাস মান্নান, মাহবুব তনয়, রেজাউল করিম সিদ্দিকীরা গেছেন। কাল অন্য একজন বিদায় নেবেন। তার পরের দিন সময় আসবে আবার আরেকজনের। এভাবেই হারিয়ে যাবে একে একে সবাই। পড়ে থাকবে শুধু জীর্ণ সময়, ঝরাপাতা আর বুক চিরে বেরিয়ে আসা এক টুকরো দীর্ঘশ্বাস। আর যারা গেছে, নিরাশ্বাস সময়ে নিরভ্র আকাশে অন্তহীন বেদনার কাব্য হয়ে থাকবে তারা।

ফরিদ আহমেদ, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ