প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আমিনা আইরিন | ১৮ মে, ২০১৬
আমার উপলব্ধি করার ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে ক্রমাগত। আমি আর বেশি কিছু ভাবতে পারছি না। শ্যামল কান্তি স্যারের মুখটা ভাসছে বার বার। তিনিই হয়ত একসময় অনেক কিছু হতে চাইতেন। সেই অনেক কিছুর ভিড়ে হয়ত তার নিয়তি ছিল এই শিক্ষকতা পেশাটা। জীবনের হয়ত অনেক কিছু করতে পারতেন। তবু পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়কে ভালোবেসে একটা জীবন কাটিয়ে দিলেন ।
এই শিক্ষকতা করে হয়ত অনেক স্বপ্নই পূরণ করা সম্ভব হয় নি নিজের আর নিজের স্ত্রী সন্তানের। কিন্তু অনেকের স্বপ্ন পূরণের পথপ্রদর্শক হয়ে ছিলেন। টিন শেডের ঘর থেকে পাকা দালান হয়েছে, ১৭ বছরের শিক্ষকতায় ১৭০০ না হোক হাজারখানেক শিক্ষার্থী পাশ করেছে তার হাত ধরেই। এদের হয়ত অনেকই আজ প্রতিষ্ঠিত নিজ নিজ ক্ষেত্রে। শ্যামল কান্তি স্যারকে আমি চিনি না, তবে তিনি যে তার শিক্ষার্থী আর স্কুলকে ভালোবাসতেন তা আমি হলফ করে বলতে পারি। কারণ আমি আমার শিক্ষকদের দেখেছি। হাতে গোনা কিছু শিক্ষক ছাড়া হয়ত পৃথিবীর সব শিক্ষকদের কাছেই তার শিক্ষার্থীরা সন্তান তুল্য। বাবা- মা যেমন সন্তানদের শাসন করেন ভালোর জন্য শিক্ষকরাও কিন্তু শাসন করেন ভালোর জন্য।
একজন শিক্ষকের সারা জীবনের অর্জন হল তার সম্মান। শ্যামল কান্তি স্যারও কিন্তু এই এত বছর ধরে শুধু সম্মানটাই সঞ্চয় করে আসছেন।আর আজ যখন তিল তিল করে গড়ে তোলা বিদ্যালয়ে দাড়িয়ে শ্যামল স্যারকে শুধু ক্ষমতার জোড়ে মার-ধর করা হল, কান ধরে উঠবস করানো হল তাতে কিন্তু স্যারের সম্মান একটুও কমলো না। বরং একজন শিক্ষক কানে ধরলেন আর একটা জাতির কান কাটা গেলো।
নিউজ ফিডে যখন প্রথম এই খবরটা পড়ি স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। কতটা নির্লজ্জ হয়ে গেছি আমরা! একজন জাতি গড়ার কারিগরকে নুন্যতম সম্মান দিতে পারছি না। মাইকে ঘোষণা দিয়ে একজন শিক্ষককে এভাবে হেয় করার দুঃসাহস কেউ কিভাবে করতে পারে?পিয়ার সাত্তার স্কুলের শিক্ষার্থীরা কেন সবাই চুপ করে ছিল? কেন সবাই এখনো চুপ করে আছে? এরা কি আসলেই শিক্ষিত হচ্ছে? এমন শিক্ষা দিয়ে কি হবে যে শিক্ষা একজন শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করতে ব্যর্থ। এই জাতির ধ্বংস ত নিশ্চিত।
গতকাল দেখলাম, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি তাকে বরখাস্ত করেছে। খবরটা দেখে রাগে গা জ্বলছিল। তাকে যদি বরখাস্তই করা হবে তবে কেনো এই অপমান করা।ম্যানেজিং কমিটি যখন আছে তখন স্যারের কোন ভুল যদি থেকেই থাকে তবে সেটা কমিটি সমাধান না করে এভাবে উদ্দেশ্যমুলক ভাবে তাকে হেনস্তা করে কেনো হল।ম্যানেজিং কমিটি কি তবে শুধুই কারো হাতের খেলার পুতুল। ব্যাপারটা কি ঝিকে মেরে বৌ কে শেখানো?যাতে আর কেউ কখন প্রতিবাদ করতে না পারে রাজার। সত্যিই, ক্ষমতার রাজ্যে ন্যায় বড় অসহায়।
স্যারও হয়ত ন্যায় পাবেন না। আরো হাজারটা ইস্যুর মত স্যারো হয়ত একদিন হারিয়ে যাবেন। কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে হয়ত দেখব নতুন একটা ইস্যু হাজির।আমি আপনি সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ব সেই ইস্যু নিয়ে। শুধু শ্যমল স্যার! শ্যামল স্যার যতদিন বেঁচে থাকবেন প্রত্যেকটা মুহূর্ত মনে আর মগজে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন।উত্তর খুঁজবেন শূন্যে তাকিয়ে। আমি আপনি যখন ভুলে যাব শ্যামল কান্তি নামটা, তিনি হয়ত তখন মাঝ রাতে জেগে উঠে দুঃস্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে পার্থক্য করার চেষ্টা করবেন।
আমি এই তরুণ প্রজন্মের একজন। এই কথাটা মনে হলে লজ্জা হয়ে খুব। ফেইসবুকে স্ট্যাটাস আর ইভেন্ট করে প্রতিবাদ করা ছাড়া আমরা কোন অন্যায় বন্ধ করতে পারছি না। এই অক্ষমতা আমাকে গলা টিপে ধরছে। আমার পূর্বপুরুষেরা যারা আমাদের এই দেশ উপহার দিয়ে গেলেন আমরা কখনো তাদের চোখের দিকে তাকাতে পারব না।আমাদের আগামী প্রজন্ম আমাদের নিয়ে কখনো গর্ব করতে পারবে না।
যদি মাঝ রাতে হটাত শ্যামল স্যারের চেহারাটা ভেসে উঠে সেই ভয়ে আমি এখনি কুঁকড়ে যাচ্ছি অপরাধবোধে।আমরা এত নির্লজ্জ কিভাবে হলাম, এত বেহায়া,এত স্বার্থপর, এত না, আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না, কিচ্ছু না, কিচ্ছুটি না
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য