আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

এক মুঠো ভাত ও মসজিদের মাইক

ড. শাখাওয়াৎ নয়ন  

বান্দরবনের থানচি উপজেলায় প্রচণ্ড খাদ্য সংকটে আছে, বেশ কিছু পাহাড়ি হত-দরিদ্র মানুষ;অনেকেই ঘাস-লতা-পাতা কিংবা কলাগাছের ভিতরের নরম অংশ খেয়ে কোনো মতে জীবন ধারণ করছেন; তাদের অনেকেই বলেছেন, ‘মরার আগে শুধু একবেলা ভাত খেয়ে মরতে চাই’।

কী নিদারুণ ক্ষুধার কষ্টে একজন মানুষ এমন কথা বলতে পারে!

ইতোমধ্যে, সরকার চাল বরাদ্দ করেছে; নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হয়েছে; জানি না তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কি না?

অনিন্দ্য নামে আমার এক চাকমা বন্ধু আছে; সে জানালো-থানচি উপজেলার লোকসংখ্যা ৫০ হাজারের মতো হতে পারে। কিন্তু খুবই দুর্গম এলাকা; সেখানে খাবার পৌঁছানো বেশ দুরূহ কাজ; এ কাজে সেনাবাহিনী এবং এনজিওদের সাহায্য নেয়া উচিৎ; নয়তো স্থানীয় প্রশাসনের লোকেরা কতখানি খাবার তাদেরকে পৌঁছে দিবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমরা জানি, পাহাড়ের স্থানীয় প্রশাসন গাছ-পালাসহ দিনে দিনে পাহাড়ও খেয়ে ফেলতেছে।

আরেক একটি ব্যাপার না বললেই নয়, এই পাহাড়ি মানুষগুলো এতো কষ্টে না খেয়ে দিনাতিপাত করতেছেন, ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছেন; সংবাদ মাধ্যমগুলো আমাদেরকে খবর দিচ্ছে; সাধারণ মানুষ যাদের সাহায্য করার সামর্থ্য নেই; তারা সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন; কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো মৌলভী, মাওলানা, হেফাজতী, জামায়াতী, ওলামালীগ, চরমোনাই, দেওয়ানবাগী, আটরশি-ফরিদপুরী, শাহজালালী, এনায়েতপুরী, বায়জীদ বোস্তামী এমন কত কত পীরের মাজারের লাখো লাখো ভক্ত-আশেকানরা একটা কথাও বলেননি; বায়তুল মোকাররমের খতীবসহ বাংলাদেশের কোনো মসজিদের কোনো ইমাম ওয়াক্ত নামাজ কিংবা জুমার নামাজের শেষে এসব বিপন্ন মানুষের জন্য কোনো প্রকার সাহায্যের ডাক দেন নি; এরা না হয় পাহাড়ি মানুষ, কিন্তু মানুষ তো?

কেউ কেউ হয়তো বলবেনে- 'পাহাড়িরা তো মুসলিম না; তাই হুজুররা কিছু করেন না।' আমি তাদেরকে বলতে চাই- 'রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়েছিল, বারোশো মানুষ মারা গিয়েছিল,কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছিল; তখন কি তারা কিছু বলেছিল? কিছু করেছিল?

১৯৯৮ সালে বন্যায় সারা বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল; তখন কি তারা কিছু করেছিল? কিছু বলেছিল? ১৯৯১ সালে চিটাগাঙে ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় এক লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল; তখন কি তারা মানুষের সাহায্যে কিছু করেছিল? কিছুই করেনি।

এমন হাজার হাজার উদাহরণ দেয়া যাবে। প্রতিদিন আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি; তারা নিজেদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা হাসিল করার জন্য 'ইসলাম গেল’, 'ইসলাম গেল'’নাস্তিক’ ‘নাস্তিক’ 'বিসমিল্লাহ থাকলো না'; বলে বলে চাপাতি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। রাজনৈতিক আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে; রাজপথ গরম করছে; কিন্তু তারা মানুষের হেফাজত করছে না। দেশের মানুষকে ভালোবাসে না; মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে না।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে- তারা কি আসলেই ধার্মিক? তারা কি সত্যি আল্লাহ-রাসুলে বিশ্বাসী? তারা কি সত্যিই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা:) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করেন? তাদের মধ্যে তো মানবিক বোধ বলে কিছু দেখছি না;অথচ বাংলাদেশে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে জনকল্যাণমূলক কাজ করার এক বিরল সুযোগ; বিরাট সুযোগ। তারা তা কাজে লাগাচ্ছে না; মানুষের পাশে দাঁড়ানোর; মানুষকে উপকার করার; এমন সহজ সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যাবে?

ভালো কিছু না করে, মসজিদকে রাজনৈতিক অফিস বানাচ্ছে; মাদ্রাসাকে বানাচ্ছে ব্যারাক, মাজারগুলোকে টাকা কামাইয়ের মোকাম বানিয়েছে। তারা নিজেদের মনমতো বানানো তরীকা (যা প্রকৃত অর্থে ধর্ম বলেনি) মোতাবেক শুধু মাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য পাগল হয়ে গেছে; তারা রেললাইন উপড়ে ফেলতে পারে, বাসে-ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে, গাছ কেটে ফেলতে পারে, পবিত্র কোরান শরীফে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে, চাপাতি দিয়ে খুন-খারাবি করতে পারে, মসজিদের মাইকে মানুষ হত্যার ডাক দিতে পারে কিন্তু একজন বিপন্ন-ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে এক মুঠো ভাত নিয়ে যেতে পারে না, ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মসজিদের মাইকে সাহায্যের ডাক দিতে পারে না।

ড. শাখাওয়াৎ নয়ন, কথাসাহিত্যিক; একাডেমিক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ