প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
অসীম চক্রবর্তী | ৩১ মে, ২০১৬
এক সময় আমাদের দেশের শিক্ষকরা ছাত্রদের কম মার্কস দেওয়াকে নিজের ব্যক্তিত্ব ভাবতেন। তেমনি এক সময়ে আমরা পড়াশোনা করেছিলাম। সবকিছু শুদ্ধ লিখলেও হাতের লেখা খারাপ বলে শিক্ষকরা নম্বর কাটতেন।
শুধুমাত্র শিক্ষকের এই আচরণে বিদেশে পড়তে আসা অনেক ছাত্র ধরা খেয়েছে। আমিও ধরা খেয়েছিলাম শিক্ষকতা করার ইচ্ছা নিয়ে পিজিসিএ-তে ভর্তি হতে গিয়ে। ধরা খেয়েছিলাম মাস্টার্সে ৭০ শতাংশ মার্কস না পেয়ে। যার জন্য আমাকে ছয় মাসের একটা বেইজ কোর্সও করতে হয়েছিলো ব্রিটেনে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হতে।
ব্রিটেনে এসে কি হঠাত করে কি আমার মেধা বেড়ে গেছে? না হলে কিভাবে মাস্টার্সে আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করলাম? অবশ্যই মেধা যে জায়গায় ছিলো সেই জায়গায়ই আছে। হয়ত অভিজ্ঞতা বেড়েছে। এদের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং মার্কিং সিস্টেম এমন যে আপনি খাটাখাটি করলে অবশ্যই তার মূল্য পাবেন। শুধু আমি কেনো সমসাময়িক অনেক ছেলেমেয়ে দের দেখেছি। যারা সমাজবিজ্ঞান অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছে দেশে। অথচ এইখানে এসে দিব্যি একাউন্টিংয়ের মতো কঠিন বিষয়ে ভালো মার্কস পেয়ে পাশ করেছে।
মাছরাঙ্গা টিভিতে প্রতিবেদন দেখলাম। দেখে মনে হলো কোনো এক সবজান্তা সমশের একের পর এক প্রশ্নবাণে ছাত্রদের জর্জরিত করে পৈশাচিক আনন্দ লাভ করছে। অনেকটা মামাবাড়ির প্রতিবেশী দাদুর মতো। ছোটবেলায় যিনি আমাদের দেখলেই হাজারো প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে নিজেকে জাহির করতেন। কিন্তু যেদিন থেকে আমরা প্রশ্ন করা শুরু করলাম সেদিন থেকেই তিনি চুপসে গিয়েছিলেন গ্যাস বেলুনের মতো।
যাই হোক কথা হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনেক ট্রায়াল এন্ড এরা করা হচ্ছে। অনেক মিটিং সেমিনার হয়েছে। তখন তো কোনো মিডিয়াকে দেখলাম না সেসব মিটিং অথবা মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করতে। অথচ সাংবাদিকতার সব নিয়ম নীতিকে পায়ের তলায় পিষ্ট করে শুধুই সস্তা জনপ্রিয়তা কামানোর জন্য এসব কিশোরদের নিয়ে নিউজ করেছেন যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
একটি শিশু অথবা কিশোর এক তাল কাঁদা মাটির মতো। একটি শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনুসরণ করে শিক্ষকেরা সেই মাটিকে নানা ধরনের আকৃতি দান করেন। একটি ছাত্রের প্রধান লক্ষ্য পরীক্ষায় ভালো করা। এর জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষা ব্যবস্থা যেভাবে পথ প্রদর্শন করবে ছাত্রটি ঠিক সেইভাবেই অগ্রসর হবে। একটি ছাত্র জিপিএ'র মানে জানেনা সেটা তার সমস্যা নয়। সমস্যা হলো শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি মাছরাঙ্গা টিভির ওই প্রতিবেদককে জার্নালিজম শব্দের উৎপত্তি বিষয়ক প্রশ্ন করলে উনার বেলুনের গ্যাস বুড়ো দাদুর মতো হুশ করে বেরিয়ে যাবে। অথচ কি অবলীলায় তিনি এতো গুলো কিশোর কিশোরীর প্রারম্ভিক জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছেন; এর দায়িত্ব কে নেবে?
অচিরেই আইন করে সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের আশায় সাংবাদিকতার নীতি বিরোধী অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করা উচিত। না হলে "ভিডিও সহ " এসব চটুল সংবাদের দৌরাত্ম্যের কাছে হার মানবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যম এবং সাংবাদিকতা।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য