প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
গোঁসাই পাহ্লভী | ০৮ জুন, ২০১৬
‘অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি/ বিচার দিনের স্বামী’ বিচারক যদি বিচারকালে প্রেমময় হয় তাহলে বিচার কি নিরপেক্ষ হবে? এটাই হচ্ছে শিশুসাহিত্যিকের শিশুবাক্য, এবং সেই শিশু যখন ‘স্বামী’ শব্দের ব্যবহার করে তখন বুঝতে হবে সে না বুঝেই এখানে ‘স্বামী’ শব্দের ব্যবহার করেছে, এই ব্যবহারের ভেতর রাজনীতি আছে, আছে নিজেকে রক্ষা করার কূট-কৌশল, কিন্তু এইটুকু তিনি বুঝেছেন বলে চিন্তা হচ্ছে না!
মাইকেল পরবর্তী বাঙলা সাহিত্যের অধিকাংশ সাহিত্যিকই হচ্ছে শিশু সাহিত্যিক। এঁরা শিশু বিষয়ক সাহিত্য করছে এমন নয়, এঁরা নিজেরাও শিশু, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এঁদেরকে ‘বিরাট শিশু’ও বলা হয়েছে। এই বিরাট শিশুরা তরুণ, যুবক, কিংবা বৃদ্ধ হবেন কিনা জানি না তবে শিশু সাহিত্যিকেরা হয়তো বড় হবেন, যুবক হবেন। এরা পৃথিবী, বিশ্বসভ্যতা কিংবা নিজের ভূখণ্ড কিংবা নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে যে পাঠ সৃষ্টি করে সেই পাঠ শিশুসুলভ পাঠ, শিশুসুলভ পাঠে শিশুসুলভ সহজ ক্রিয়া থাকে, শিশু যেমন আগুন ধরার সময় সচেতন থাকে না, দার্শনিক কায়দায় বললে বস্তু সম্পর্কিত যথার্থ চেতন বা চৈতন্য থাকে না, তেমনি এখানকার শিশু সাহিত্যিকদেরও একই অবস্থা।
তবে এ নিয়ে আশংকার কিছু নেই। একটা সংস্কৃতি, নৃবিজ্ঞান মানুষ বা জনগোষ্ঠী থাকলে তাদের সাহিত্যিকও থাকবে, সুতরাং সাহিত্যের পূর্বে খেয়াল করতে হবে যে জনগোষ্ঠী টিকছে কিনা! যদি দেখা যায় জনগোষ্ঠী ধ্বংসের মুখে, সেই ধ্বংসের গীত গাওয়া, বিবরণ লিপিবদ্ধ করা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধ্বংসকে রুখে দেওয়াও শিশুসুলভ। কেন টিকছে না, এর কারণ খুঁজে বের না করে যে কোনও প্রতিকারও শিশুসুলভ হয়।
এই যে বাঙলা সাহিত্যের শিশুসুলভ ধারাবাহিকতা, মধুসূদন পরবর্তী আজকের ইতিহাস সেখানে কি শিশুসুলভতা কাটিয়ে উঠে প্রাপ্তবয়স্কতার নমুনা নাই? অবশ্যই আছে, তবে সেটা প্রাপ্তবয়স্কতার নমুনা নয়, আছে যথার্থ অর্থেই নবীন।
নবুয়াত খতম হওয়ায় এখন কেবল নবীনের আগমন। তবে, এই নবীনদের ভেতর কিছু তরুণ সাহিত্যিকদের নাম আপনাদের বলতে পারি, যেমন অমিতাভ গুপ্ত, সুনীল নাথ, জীবনানন্দ দাশ, কলিম খান, রবি চক্রবর্তী, এঁদের লেখায় সার্বিকতা নেই বটে, তবে সার্বিকতায় ইন্ডিকেটেড, রবীন্দ্রনাথে যেমন ‘ক্ষণিক আলোকে আঁখিরও পলকে’র এই যে অভিজ্ঞতা এটা সাহিত্যের পাঠ দিয়ে বুঝতে চাইলে রোমান্টিকতা ধরা দেবে, যোগ দিয়ে বুঝতে চাইলে রবীন্দ্রনাথের ক্ষণিক আলোর মতোই অর্থ চমকে দেবে।
ফকির লালন সাঁইজী’র বা ঝড়ু শাহের যে কোনও একটি পদে রয়েছে ইনফিনিট সাজেশন। সার্বিকতায় ইন্ডিকেটেড করার মধ্যে এক্সট্রিম পোলার অপজিট থাকে, থাকতে পারে, বা অনেক কিছুই থাকে, যেমন থাকে দ্বন্দ্ব আবার মিলনও। ইনফিনিট সাজেশন সকল মামলার ভেতর সকল ঘটনা অতিরিক্ত বা সকল ঘটনারই ইনফিনিট সার্বিকতার ইনফিনিট সাজেশন। যেমন, ‘মন আমার দেহঘড়ি’ এই পদের মধ্যে মানবজ্ঞানের সকল কাণ্ড হাজির। সকল হাজিরার মধ্যেও একটি বাড়তি বিষয় রয়েছে যেখানে আপনাকে ঠেলে পাঠাতে চাচ্ছে, এই যে বোধ তৈরি হয় এটাই আপনাকে অনন্তের নির্দেশনা দেয়।
বাঙলা সাহিত্যের শিশুসুলভ আচরণ কেটে যেতে পারে তার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নত রাষ্ট্র দর্শনের উপর। এখানকার সাহিত্যিকদের থেকে গত ৪০ বছরে ওরকম কোনো দিকনির্দেশনা আসে নাই, তবে যে দুয়েকজনের নাম উল্লেখ করলাম যেমন ধরেন কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী এদের একখানা বই আছে, নাম ‘অবিকল্প সন্ধান, বাংলা থেকে বিশ্বে’, এই সংবিধান বাঙলায় যেমন খাটবে, বিশ্বেও।
সুনীল নাথের কথা শুরুতেই বলেছি, বলো বিমল আমরা কোন দিকে যাবো?/ যেদিকে যাবো সেদিকে/ সমুদ্র না উঁচু সমতল? উঁচু সমতল মানে স্টেজ, যেখানে নেতারা বক্তৃতা দেয়, সমুদ্র মানে হচ্ছে অগণিত মানুষ, যেমন গণসমুদ্র, গণ শব্দের মিশেল দেয়ার দরকার নাই, সমুদ্র নিজেই গণ চরিত্র ধারণ করে আছে, তো সুনীল নাথ এই বিবেচনা করেছিলেন, তিনি জনগণের দিকে যাবেন না নেতৃত্বের দিকে যাবেন!
সুনীল নাথের পরে যারা জনগণের দিকে গেলো, যারা নেতৃত্বের দিকে গেলো উভয়ের পরিণতি নিয়ে আপনারা লিখবেন আশা করি।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য