আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

শরিফুল, না মুকুল রানা?

পুলক ঘটক  

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী নিহত ‘শরিফুল’ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য। সে সংগঠনটির স্লিপার সেলের অন্যতম কিলার। ড. অভিজিৎ রায় হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া ছাড়াও আরও ছয়টি খুনে সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিল। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সংগ্রহ করা সিসি টিভি ফুটেজেও তাকে দেখা গেছে। বিভিন্ন সময় ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজন যে ছয় জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ সম্প্রতি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল তাদের মধ্যে শরিফুল দ্বিতীয়।

পুরস্কার ঘোষণার আগে এতবড় কিলার এবং জঙ্গি গ্রুপের সমন্বয়কের ব্যাপারে প্রচুর খোঁজ খবর নেয়ার কথা। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যে মনে হচ্ছে পুলিশ বা কোনো গোয়েন্দা সংস্থা নিহত মুকুল রানার গ্রামের বাড়িতে তদন্তের জন্য কখনো যায়নি। সে যেখানে পড়াশুনা করত সেই সাতক্ষিরা সরকারী কলেজেও যায়নি। শিক্ষক বা সহপাঠীদের সাথে কথা বলেনি। তার বাবা, মা এবং স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসা করেনি। তার প্রকৃত নামটিও সংগ্রহ করার তাগিদ বোধ করেনি। তার মানে কি? জঙ্গিদের ব্যাপারে আসলেই কি কোনো তদন্ত হচ্ছে? দেশ কিন্তু সংকটে। আমরা আতংকগ্রস্থ। পুলিশের উপরই আমরা নির্ভর করতে চাই। কিন্তু অংকগুলো মিলছে না। পেশাদার পুলিশ অংকে গড়মিল রেখে বিবৃতি দিলে মানুষের মনে আস্থার সংকট তৈরি হয়।

১. পুলিশ বলেছিল “ক্রসফায়ারে” নিহত তরুণের নাম শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদি-১। লাসের সনাক্তকারী, বাবা-মা, স্ত্রী, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, স্কুলের রেকর্ড, কলেজের রেকর্ড, তার সারা জীবনের সকল রেকর্ড এবং সরকারের দেয়া ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রমাণ দিচ্ছে: সে ছিল মুকুল রানা।

২. পুলিশ হঠাৎ করে তাকে শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে হাদি-১ হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। দীর্ঘদিন তদন্ত করেছে, তাকে সনাক্ত করেছে, ছবি প্রকাশ করেছে এবং এরপর তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। অথচ পুলিশ তার নাম, গ্রাম, ঠিকানা, কিছুই জানে না।

 ৩. “শরিফুল”কে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে 'বাউন্টি' ঘোষণা করা হয় ১৯ মে। তার মানে তখন পর্যন্ত পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। এরপর গত শনিবার রাত ৩টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেড়াদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শরীফুল নিহত হওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু যশোর কোতোয়ালি থানার রেকর্ড অনুযায়ী সাদা পোশাকে মুকুলকে ধরে নিয়ে গেছে পুরস্কার ঘোষণার প্রায় তিন মাস আগে। ১৯ ফেব্রুয়ারি যশোরের বসুন্দিয়া গ্রামের মোবারক আলীর মেয়ে মহুয়া আক্তার রিয়ার সঙ্গে মুকুল রানার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই দিন পরই ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে যশোরের বসুন্দিয়া বাজার থেকে সাদা পোশাকধারী সাত-আট জনের একটি একদল একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায় মুকুলকে। সেই থেকে নিখোঁজ ছিলেন মুকুল। নিখোঁজের পর মুকুলের শ্যালক আমির হোসেন বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

 ৪. রোববার (১৯ জুন) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার আব্দুল বাতেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন শরিফুল খুলনা বিভাগের। সে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনা করত। সে একটি এনজিওতে কাজ করত বলেও দাবি করা হয়েছিল। মৃত্যুর পর প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ বলছে নিহত মুকুলের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার ধুলিহর ইউনয়িনের বালুইগাছা গ্রামে। সে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। দুই বছর ধরে পড়াশোনা বাদ দিয়েছে।

তথ্যে এমন গড়মিল কেন? “ক্রস ফায়ারে” নিহত ছেলেটির বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করেনি? তাহলে ১৯ তারিখ প্রায় এক ঘণ্টা যাবত ডিএমপি’র একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এত কথা সাংবাদিকদের বলে গেলেন সবগুলোই ছিল নিছক চাপাবাজি? ছেলেটি আসলে কে, তার নাম কি, তার বাবার নাম কি, তার বাড়ি কোথায়, কোথায় পড়ত, কি করত, তার বিয়ে হয়েছিল কিনা, পরিবারে আর কে কে আছে, কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল কিনা, কাদের সাথে চলাফেরা করত, অতীত কোনো অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা আছে কিনা - এসবের কোনো কিছুই পুলিশ খোঁজ করেনি? অথচ মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ছেলেটির প্রকৃত পরিচয়সহ তার প্রায় পুরো জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ করেছে সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব নিয়ে আমরা এখনো বিতর্ক করি। বিতর্কের অবকাশ আছে বলেই করি। কিন্তু দেশের বৃহত্তম তদন্তকারী সংস্থার একি দুরবস্থা? এই পেশাদারিত্ব? ”ক্রস ফায়ারে” দিয়ে দিল অথচ ব্যক্তিটির নামও জানতে পারল না পুলিশ? ঘটা করে মিডিয়াকে ডেকে বলা হল বিশিষ্ট লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামী “বন্দুক যুদ্ধে” নিহত হয়েছে। এটা এমন একটা মামলা যা দেশে বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী।

যে ঘটনার তদন্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ এফবিআই সরাসরি যুক্ত হয়েছে। অপরাধীদের চূড়ান্তভাবে সনাক্ত করার কাজটি ডিএনএ রেকর্ডের সাথে মিলানোর অপেক্ষায় ছিল বলে এতদিন বলা হয়েছে। সেই মামলার তদন্তে এই অবস্থা? শুধু অভিজিৎ হত্যা নয়, প্রায় সকল ব্লগার হত্যার হোতা হিসেবে নিহত ছেলেটিকে দেখিয়ে দিয়েছে পুলিশ - যে ছেলেটি কোনোদিন কোনো আদালতের সামনে, মিডিয়ার সামনে কিংবা জনগণের সামনে দাঁড়িয়ে তার কথাগুলো বলতে পারবে না।


যাকে ক্রসফায়ারে দিলেন তার নামও আপনি জানেন না! অথচ আমার জান-মালের নিরাপত্তার জন্য আপনার উপরেই আমাকে নির্ভর করতে হচ্ছে। দেশের স্বাভাবিকত্ব বজায় রাখার জন্য আপনার/আপনাদের উপরই সরকার দায়িত্ব দিয়েছে। আপনারা এই দেশেরই সন্তান। দয়া করে একটু দায়িত্বশীল হন। আপনি, আপনার পরিবার এবং আমরা সবাই জঙ্গিবাদের হাত থেকে বাঁচতে চাই। দেশটাকে বাঁচাতে চাই।

পুলক ঘটক, সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ