আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ক্রসফায়ার নয়, আন্তরিকভাবে সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিন

মো. সাখাওয়াত হোসেন  

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সাথে (ক্রসফায়ার, জেলে হত্যা, গুম, অপহরণ করে হত্যা) নিরাপত্তা এবং বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতার বিষয়টি একই সূত্রে গাঁথা। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব এবং আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটলেই এ রকম হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়ে যায়। আর বাস্তবতা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে খবরের কাগজে হত্যাকাণ্ডের নিউজ পড়লে নিজেদের কাছে খুব বেশি খারাপ মনে হয় না বিষয়গুলোকে। কেননা, প্রতিনিয়ত আমরা এ সকল খবরে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। আর জাতি হিসেবে আমরা কেমন যেন অসাড় হয়ে পড়েছি, কোন ঘটনারই প্রতিবাদ জোরালোভাবে করতে পারি না।

দিন দিন আমরা অপরাধে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির দিকে যাচ্ছি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সরকারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, আর যাদের বেতনের টাকা আসে আমাদের মত আপামর জনসাধারণের কাছ থেকেই। সব থেকে বেদনাদায়ক যে, আর সেই পুলিশের হাতেই বিনা বিচারে ক্রসফায়ার নামক রহস্যময় ইস্যুতে একের পর এক খুন হচ্ছে এ দেশের নাগরিক। সম্প্রতি ফয়জুল্লাহ নামক এক জঙ্গিকে ক্রসফায়ারে বিনাবিচারে মেরে ফেলা হল। অথচ এই ফয়জুল্লাই হত জঙ্গি নিধনের ট্রাম্পকার্ড। তার হাত ধরেই বের হয়ে আসত জঙ্গি নেটওয়ার্কের প্রকৃত খবর।

কোন ধরনের ছেলেরা এ ধরনের কাজে আসক্ত হয়, কিভাবে তাদের মোটিভেট করে থাকেন। কারাই বা তাদের এ ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তাদের কাজের জন্য আর্থিক সাহায্য কোথা থেকে পেয়ে থাকেন ইত্যাদি। বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দল তাদেরকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে। তাদের কাজের জন্য কোন ধরনের পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সব বিষয়গুলোও সহজেই ফয়জুল্লাহর কাছ থেকে নেওয়া যেত। তাকে দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডের সব তথ্য তুলে আনা যেত।

বহির্বিশ্বে থেকে পাওয়া অর্থের বিষয়টি বাংলাদেশে কার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষিত হত সে সব সূক্ষ্ম বিষয়গুলোও বের করে নিয়ে আসা যেত। বাংলাদেশের কোন কোন প্রতিষ্ঠান জঙ্গিদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকে সেটিও উঠে আসত। কেনই বা তারা সংখ্যালঘুর উপর হামলা করে রাজনৈতিকভাবে কাদেরকে ঘায়েল করে কাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে আসতে চায় এ বিষয়গুলোই বিবেচ্য বিষয়।

সুতরাং এ ধরনের হত্যাকে কখনোই বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে নেওয়া ঠিক হবে না। যথেষ্ট উপাদান, তথ্য প্রাপ্তিতে ফয়জুল্লাহরা গুরুত্বপূর্ণ থাকত যদি সেভাবে চিন্তায় নেওয়া যেত। এরশাদ শিকদারের ফাঁসিতে তার একান্ত সহযোগী রাজসাক্ষী হয়ে ঘটনার সুরাহা উদঘাটনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিল।তাই এ হত্যার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। রাষ্ট্রকেই এর দায়ভার নিতে হবে। কার কূটকৌশলে বারংবার এ ধরনের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটছে সেগুলো দ্রুত উদঘাটনে আনা উচিত।কাদেরকে রক্ষা করবার জন্য এ ধরনের রণকৌশল সেটিও দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য বের করতে হবে। সরকারের এ ব্যাপারে আরো উদ্যমী, প্রত্যয়ী এবং সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে জঙ্গিবাদ নির্মূলে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় এনালাইসিস করলে দেখা যায়, অধিকারের রিপোর্টে উল্লেখিত ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালে মোট ৭৬৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সহিত রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, যৌথ বাহিনী, জেল কর্তৃপক্ষ, কোস্ট গার্ড, বনবিভাগের গার্ডের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয় এ দেশের মানুষ। এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ক্রসফায়ার অন্যতম। মানুষের কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট সাজানো নাটকের মত দুপক্ষের গোলাগুলিতে জঙ্গি নিহত। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না, একজন মানুষ অপরাধী হতে পারে, তার মানে এই নয় যে, তাকে বিনা বিচারে মেরে ফেলতে হবে। প্রচলিত আইনের কাঠামো অনুযায়ী তাকে শাস্তির ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের নৈতিক ও পরম দায়িত্ব।

সরকারের মহৎ কার্যের মধ্যে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, শালবন সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের গ্রহণীয় পদক্ষেপ “কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কার” এর মাধ্যমে সমন্বিত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।এর প্রাথমিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বনের আশেপাশে বসবাসকারী আগ্রহী তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষিত করে ঐতিহ্যের মধুপুর বনকে রক্ষা করতে হবে।পূর্বানুমতি ব্যতীত তারা মধুপুর বনের কোন গাছ কাটতে পারবে না এবং অন্যরা যেন কাটতে না পারে সে বিষয়েও ভূমিকা রাখতে হবে।তাদের গ্রহণীয় উদ্যোগের ফলে বনের ভিতরে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় পরিবেশগত অপরাধ ক্রমাগত হারে কমেই যাচ্ছে।এ বিষয়টি নি:সন্দেহে প্রশংসার যোগ্য এবং বন্য এলাকাকে সংরক্ষণের জন্য খুবই উপযোগী এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।

২০১১-২০১৪ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চারটি রেঞ্জের কোথাও কোন অপরাধের ঘটনা দেখা যায়নি। অথচ, ২০১০-১১ সালের প্রতিবেদন চারটি রেঞ্জে মোট ২৩টি অপরাধের ঘটনা চিহ্নিত হয়েছিল। সুতরাং এ উদ্যোগের ভূমিকা অবশ্যম্ভাবী এবং এটিকে আরো বাস্তবধর্মী করা উচিত। এ প্রকল্পের আওতায় ১৫৩০ হেক্টর জমিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে যেন বনের উপযুক্ততা রক্ষিত হয়।তাছাড়া এ প্রকল্পের অধীন ৫৭টি গ্রামের ৫০০০ টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়।  

এখন দেখা যাক, কমিউনিটি ওয়ার্কারদের সরকার কিভাবে ব্যবহার করছেন এবং তাদের নিয়োগ কিভাবে হয়েছে। সরকার এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ যে সব ছেলেরা পরিবেশগত অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন বা ছিল তাদেরকেই বন রক্ষার কাজের দায়দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারাই ভালভাবে জানেন কোন গ্যাং গ্রুপ অপরাধের সাথে জড়িত। আর তারা চাইলেই সহজেই অপরাধ দমন এবং প্রতিরোধ সম্ভব হবে। তারই নিমিত্তে এ প্রজেক্ট শুরুর দিকে সরকার কমিউনিটি ওয়ার্কারদের নিয়মিত ১২০০ টাকা হারে বেতন পরিশোধ করতেন। এবং ২০১৬ সালের শুরু থেকে বেতন বৃদ্ধি করে ২০০০ টাকা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বেতন বৃদ্ধি তো দূরের কথা বিগত ১ বছর ধরে ওয়ার্কারদের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না।এ প্রকল্প তথা প্রজেক্টের কারণেই বনের ভিতরে সংঘটিত অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভবপর হয়েছিল।  

এর অনুরূপকল্পে যদি জঙ্গিদমনে জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে, খুব সহজেই দেশ থেকে জঙ্গিবাদের থ্রেট দূর করা সম্ভব হবে। ধরুন-গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে বাকি জঙ্গিদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে পারে সরকার। তবে সাথে সাথে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যেন কোনভাবেই সাধারণ জনগণ হয়রানির শিকার না হয়। তাতে জনরোষের আশংকা থাকতে পারে। অভিযান ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে, সে বিষয়গুলোকে তীক্ষ্ণদৃষ্টি দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে।

চৌকস পুলিশ অফিসারদের বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূলে প্রত্যক্ষভাবে একটিভ করতে হবে। আশার কথা সরকার সম্প্রতি বিশেষ ব্যুরো হিসেবে সিটিটিসি (কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) ইউনিট চালু করেছেন সন্ত্রাসবাদ দমন ও নির্মূলের জন্য। এখন এ ইউনিটটি যদি সততা এবং নিষ্ঠার সহিত কোন রকম প্রেসার ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে পারে তাহলে দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ও থ্রেট অনেকাংশে কমে আসবে বলেই বিশ্বাস। পাশাপাশি জনগণকে আরো সোচ্চার হতে হবে, যেমনটি আমরা দেখেছি মাদারিপুরবাসীদের মধ্যে।

বিশেষভাবে বলতে হয়, জঙ্গিবাদ তখনই বিলুপ্ত ঘটবে যখন সমাজের মানুষজন উচ্চ নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান হয়ে দেশমাতার জন্য কাজ করবে।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ