প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ফজলুল বারী | ২৫ জুন, ২০১৬
পুলিশ অফিসার বাবুল আক্তারকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাবার বিষয়টি আমার নজরে আনেন বাংলানিউজের এক জুনিয়র সাংবাদিক। সূত্র হিসাবে তিনি বিডিনিউজের একটি রিপোর্টের লিংক পাঠান। এরপর বিভিন্ন অনলাইন ঘেঁটে এ বিষয়ে ধারণা নেবার চেষ্টা করি। ফোনে কথা বলি শেষে আমার একটি বিশ্বস্ত সূত্রের সঙ্গে। এরপর একটা পোষ্ট দেই ফেসবুকে।
আমার পোষ্টটি ছিল এ রকম:
"রাষ্ট্রের মাথা কী পুরোটাই আউলাইয়া গেছে! পুলিশের এসপি বাবুল আখতারের স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের পর সারাদেশে কম্বিং অপারেশন চালানো হলো! এত লোক গ্রেফতার করা হলো! আর এখন স্ত্রী হত্যার দায়ে সন্দেহভাজন হিসাবে আটক করা হয়েছে বাবুল আখতারকে!
একজন এসপিকে আটক করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের অনুমতি লাগে। সেটি দেয়া হয়েছে বলে তাকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু খেলাটা কোথাকার দেখতে জানতে হবে। চট্টগ্রামের বাবুলের ডায়নামিক কাজকর্মে সেখানকার পুলিশ সহ কোন মহলই স্বস্তিতে ছিলোনা। তাঁরাই এখন বাবুলকে ফাঁসাচ্ছে কীনা জানতে হবে।
এই ছবিটি দেখুন। নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে কেউ এভাবে শিশুর মতো কাঁদতে পারে? আর নিজের সোর্স দিয়ে বাবুল নিজের স্ত্রীকে খুন করাবেন! এতোই কী কাঁচা বুদ্ধির লোক ছিলেন আমাদের বাবুল আখতার? আর তিনিতো পালিয়ে ছিলেন না। পুলিশ যখন ডেকেছে তখনই তদন্ত সংশ্লিষ্টদের তিনি কথা বলতে গেছেন। এমন একজনকে পুলিশ দিয়ে নাটক করে তুলে নিয়ে যেতে হবে কেনো?
শুধু পুলিশের ভাষ্য নয়, আশা করছি আমার প্রিয় প্রজন্ম কোন একজন অনুসন্ধানী রিপোর্টার পুরো বিষয়টির সত্য বিশ্বস্ততার সংগে তুলে আনবেন।"
স্ত্রী হত্যার খবর পেয়ে ক্রন্দনরত এসপি বাবুল ছবি কৃতজ্ঞতা: বিডিনিউউজ
আমার পোষ্টটি তুমুল ভাইরাল হয়। এক ঘণ্টার মধ্যে সহস্রাধিক লাইক পড়ে। শতাধিক মন্তব্য, শেয়ার হয়। এরমাঝে দম বন্ধ হবার মতো খবর আসছিল! একাধিক ব্যক্তি আমার ইনবক্সে বাংলানিউজ টুয়েনটিফোরডটকম আর বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইনের রিপোর্টের লিংক পাঠান। রিপোর্ট দুটিতে বলা ছিল, স্ত্রীর পরকীয়া নিশ্চিত হয়ে নিজের সোর্সদের মাধ্যমে স্ত্রীকে খুন করিয়েছেন এসপি বাবুল আক্তার! পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব স্বীকার করেছেন!
বাংলানিউজ একটি জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল। আলমগীর হোসেনের মতো একজন সিনিয়র সাংবাদিক এর নেতৃত্বে আছেন। আমার পছন্দের বেশ কিছু অভিজ্ঞ সাংবাদিক সেখানে কাজ করেন। একই হাউসের দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনও তুমুল পাঠক প্রিয়।
যেভাবে এসপি বাবুলকে বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য আসার আগ পর্যন্ত পুলিশ অফিসাররা এ নিয়ে যেভাবে লুকোচুরি খেলেছেন, ঘটনাটি এ লাইনের রিপোর্ট সৃষ্টির খোরাক যুগিয়েছে। আমার সঙ্গে যারা কথা বলেছেন তাদের একজন খুবই সমৃদ্ধ রিপোর্টার। কিন্তু পেশাদারী সততার কারণে তিনি এ নিয়ে রিপোর্ট লেখেননি। কিন্তু অনলাইন দুটি কীভাবে সূত্রবিহীন বাবুল আক্তারের নিহত স্ত্রীর ললাটে পরকীয়ার অপবাদ জুড়ে দিলো তা আমার মাথায় কুলোয়নি!
খুব স্বাভাবিক ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এর সম্ভাব্য রিয়েকশনস আঁচ করতে পারে সরকার পক্ষ। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়। বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাবার প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা পর বাসায় ফিরে আসেন বাবুল আখতার। রাষ্ট্র তার সিদ্ধান্ত আপাতত পাল্টেছে! এরপর পরপর দুটি পোষ্ট দেই আমি।
পোষ্ট দুটি ছিল এ রকম:
"সবাই সজাগ হাওয়ায় কাজ হয়েছে। পুলিশ হেফাজত থেকে বাসায় ফিরেছেন বাবুল আখতার! সবাইকে ধন্যবাদ।"
আমার পরের পোষ্টটি ছিলো:
"যারা সূত্রবিহীন অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আখতারের নিহত স্ত্রীর কল্পিত পরকীয়ার গল্প অনলাইনে ছেড়েছিল তাদের কী হবে এখন? অস্ট্রেলিয়া হলে এতক্ষণে মিলিয়ন ডলারের মামলা হয়ে যেত!
মৃত মানুষেরও রেহাই নেই বাংলাদেশে! আসলেই আমাদের বেশিরভাগ মিডিয়াও পুরোপুরি পুরুষবাদী! জীবিত মৃত কোন নারীরই মান-ইজ্জতের কানাকড়ির মূল্যও এদের কাছে নেই!"
এমন অপরাধ বাংলাদেশের মিডিয়ায় এই প্রথম না। এমনটি কেন হয় বাংলাদেশে? এর উত্তর আমি পেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ায় সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনার সময়ে! এদেশে সাংবাদিকতার ক্লাসে সবচেয়ে বেশি শেখানো হয় আইন। একজন সাংবাদিক কী করতে পারেন কী করতে পারেন না তা বেশি করে শেখানো হয়। ক্রস চেক ছাড়াতো একজন রিপোর্টার কোন রিপোর্ট লিখতেই পারবেন না। বা তা কোন পত্রিকা ছাপবেওনা। কারণ এদেশে মানুষের অধিকার প্রাইভেসি এসবের গুরুত্ব মূল্য অনেক। কোন ক্ষেত্রে এসব ক্ষতিগ্রস্ত হলে মামলা হয়ে যায়!
আর মিডিয়ার বিরুদ্ধ মামলা মানে মিলিয়ন ডলারের বিষয়। কোন মিডিয়া সেই ঝুঁকিতে যেতে নারাজ। এর কারণে এদেশের সাংবাদিকতার ক্লাসে বসে মনে মনে অপরাধসহ ভাবতাম, বাংলাদেশে থাকতেতো সাংবাদিকতা করতাম না। বেত নিয়ে দৌড়াতাম! লোকজন করাপ্ট বেশি। ভয়ে কিছু বলতে পারতোনা। সাংবাদিকতায় পড়াশুনা ছাড়া এদেশে কেউ সাংবাদিকতা করতে পারেন না। চুল কাটতেও এদেশে হেয়ার ড্রেসিং'এ ডিপ্লোমা লাগে। একজন জুনিয়র রিপোর্টারকে সপ্তাহে সাড়ে সাতশ ডলারের নিচে বেতন দেয়া যায়না। সপ্তাহে সাড়ে সাতশ ডলার আয়ের ব্যবস্থা না দেখলে এদেশে জার্নালিজমে পড়াশুনা করা যে কেউ প্রয়োজনে দারোয়ানের কাজ করবেন। কিন্তু পত্রিকা অফিসের দিকে যাবেন না। সে কারণে এদেশে শতশত পত্রিকা মিডিয়া এবং সাংবাদিক নেই।
এসব দিক থেকে বাংলাদেশের মিডিয়া মালিকরা ভাবতে পারেন তারা ভালো আছেন। সাংবাদিকের বেতন নিয়ে যা খুশি করতে পারেন। কিন্তু তারা সৎ নেই। অসৎ থাকাকে ভালো থাকা বলেনা।
বাবুল আক্তারের নিহত স্ত্রী মিতু আজ বাংলাদেশের কতিপয় মিডিয়ার হাতে মরণোত্তর নিগৃহীত হলেন! তার চরিত্রে কলঙ্ক দেয়া হয়েছে। নিহত মায়ের সন্তানেরা এই কলঙ্কের ইমেজ নিয়ে বড় হবে! এর সামাজিক ক্ষতি কুফল হবে সুদূরপ্রসারী! পুরুষ শাসিত বাংলাদেশের মিডিয়াও পুরুষ শাসিত। এ সমাজ দেশ এবং মিডিয়ার সবচেয়ে সহজ কাজটি হলো নারীর চরিত্রে কলঙ্কলেপন!
বাংলানিউজ, বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের রিপোর্টের জন্যে ভুল স্বীকার কী করেছে? করলে তাদের অপরাধের মাত্রাটি কিছুটা কমে আসবে। নজির হবে। কারণ বাংলাদেশে থাকায় তো তারা বেঁচে গেছেন। মামলায় এখনো পড়েননি। তবে এটি সাংবাদিকতার ক্লাসে পড়ানোর একটি বিষয় হয়ে গেছে।
এমন অপরাধ যেন আর কোনদিন মিডিয়ার মাধ্যমে না হয়। কারণ মিডিয়াই তো মানুষকে সোচ্চার করবে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য