প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আবু এম ইউসুফ | ০২ জুলাই, ২০১৬
গত সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে আজ সকালে শেষ হওয়া গুলশানের স্প্যানিশ বেকারি ও রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও জিম্মিদের মধ্যে যারা নিহত অথবা আহত হয়েছেন তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে জানাই আন্তরিক সমবেদনা।
যদিও এধরণের অথবা এর থেকেও ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা পৃথিবীর দেশে দেশে ঘটে চলেছে কিন্তু বাংলাদেশে এটা প্রথম ঘটনা। খারাপ লাগে এটা দেখে যে, যদিও গত দুই বছরে জঙ্গিরা টার্গেট কিলিঙের মহড়া ঘটিয়ে ক্রমে ক্রমে এই ধরণের বড় ঘটনা ঘটানোরই যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেই ব্যাপারে বিভিন্ন মহল এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াও আশঙ্কা প্রকাশ করে চলেছিল।
জানা যায় যে কিছু সতর্ক বার্তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দাদের হাতেও পৌঁছেছিল। কিন্তু তথাপি, বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই পরিস্থিতির জন্য যে মোটেও প্রস্তুত ছিল না সেটা প্রথম উদ্ধার অভিযানের ব্যর্থ চেষ্টায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিহত ও আহত হওয়ার সংখ্যা থেকেই প্রতীয়মান হয়। এটা খুবই দুঃখজনক।
নিঃসন্দেহে আমাদের পুলিশ, র্যাব, বর্ডার গার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এই ধরণের জঙ্গি হামলা অথবা জিম্মি পরিস্থিতি মোকাবেলা করার দক্ষতা আছে। কিন্তু, এই ধরণের ঘটনা নিবারণ তথা নিরোধের জন্য আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া যে কোন দেশের জন্য আজকের বিশ্বপরিস্থিতিতে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং আমাদের ক্ষেত্রে যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেসব সীমাবদ্ধতা বজায় রেখে প্রয়োজনীয় আগাম পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টা কিন্তু খুবই জটিল এবং কঠিন।
চলমান জটিলতা নিরসনের প্রথম ধাপে সরকার ও প্রশাসনের মনস্তত্বে পরিবর্তন আনাটাই প্রাথমিক ভাবে জরুরী। কেননা মনে রাখতে হবে এসব জঙ্গিরা এমন এক ধর্মীয় উগ্রবাদী মতবাদে বিশ্বাসী যে উগ্র মৌলবাদী মতবাদ নির্দেশ দেয়- যে কোন আধুনিক প্রগতিশীল, গনতন্ত্রমনা, ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িক অথবা ভিন্নমনা ইসলামী দর্শন অথবা ভিন্নধর্মে বিশ্বাসী মানুষই তাদের শত্রু এবং সেসব শত্রুদের হত্যা করে তাদের নিজস্ব মতবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তাদের একমাত্র লক্ষ্য ও কর্তব্য এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রাণ দেয়াও তাদের পবিত্র দায়িত্বের মাঝেই পড়ে।
জঙ্গিদের এসব মতাদর্শের প্রতি নানা অজুহাতে যেমন- অমুক নাস্তিক, অমুক মারফতি, তমুক সুফি, তমুক এলজিবিটি অথবা বাউল, ধর্ম মানে-না অতি-আধুনিক অথবা স্বভাব-চরিত্র ঠিক-না অথবা বিশ্বাসের ভিন্নমতের অবান্তর প্রশ্ন নিয়ে যারা এসব উগ্র মৌলবাদী জঙ্গিদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতিশীলতা দেখাবে সেসব মনোভাবের ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে এসব ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতা নিবারণের পদক্ষেপ নিতে যাওয়ার যে কোন চেষ্টাই হবে আত্মঘাতি।
দেশে মৌলবাদী ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়াতে হবে। জঙ্গিদের বসবাস, অস্ত্রের ঘাঁটি, অর্থের উৎস ও ট্রেনিং গ্রাউন্ড খুঁজে বের করার জন্য ব্যাপক গোয়েন্দা প্রস্তুতি নিতে হবে। এবং এই কাজ তাদেরকে সাথে নিয়েই করতে হবে যারা মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং শারীরিক দিক দিয়ে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দক্ষ।
অতি দ্রুত যে অন্যান্য বস্তুগত উপকরণ ও যথাযথ গোয়েন্দা এবং কমান্ডো ট্রেনিঙের ব্যবস্থা যে বাড়াতে হবে সেটা বলাই বাহুল্য। কেননা বিশ্বাস করি ইতিমধ্যেই সরকার সেটা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।
শুনতে পাচ্ছি- গতরাতের জিম্মিদের মাঝে যারা কোরানের আয়াত বলতে পেরেছে বা পড়তে পেরেছে তাদের উপর জঙ্গিরা বেশী অত্যাচার করেনি। এসব বিশ্বাস করে যদি কেউ আশ্বস্ত হতে চান, তারা ভুল করবেন। এসব অন্ধ উগ্রবাদী ধর্মীয় জঙ্গিরা তাদের অপারেশন পরিকল্পনার সময় মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-আস্তিক-নাস্তিক-এলজিবিটি-জাত-ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদি বাছ-বিচার করে না। কেননা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য যুদ্ধের কৌশল হিসাবে তারা "সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ"কেই তাদের মতবাদ হিসেবে গ্রহণ করেছে। সমাজে সন্ত্রাস ও ভীতি সৃষ্টি করে রাজনৈতিক মাঠে উত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করাই তাদের লক্ষ্য। তাঁরা মাটি দখল করতে চায় - মানুষ না।
এটা স্পষ্ট বুঝে নেয়া দরকার যে- দেশের মানসিকভাবে সুস্থ কোন মানুষই চায় না এসব উগ্রপন্থী মৌলবাদীদের হাতে যে কোন অজুহাতে, যে কোন পরিচয়ের আর একটিও নাগরিকের প্রাণহানী ঘটুক।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য