প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জুয়েল রাজ | ০৫ জুলাই, ২০১৬
৭/১ এক বিভীষিকার কালরাত অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। প্রবাসে বসে টিভির পর্দায় চোখ রাখা আর ফেইসবুকের সবুজ চিহ্ন দেখে দেখে খোঁজ নেয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না। বাংলাদেশ এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য আদৌ প্রস্তুত ছিল না।
আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুতই ছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ব্লগে এই সমস্যার কথাগুলো লিখছিলাম তাঁরা অনেকেই এই ভয়টা করছিলেন। এই লেখালেখির বিনিময়ে যা হলো এদের কি ইসলামবিরোধী, নাস্তিক আখ্যা দিয়ে খুন করা হলো । কেউ কেউ জীবন নিয়ে পালিয়ে এসে দেশান্তরী হলেন। নিয়ম করে প্রতিদিন খুন হচ্ছ মানুষ। আমরা নীরব থেকেছি, প্রতি খুনকে ধর্মের মোড়কে মুড়িয়ে দিয়েছেন দেশের প্রশাসন থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিটি পর্যন্ত।
শুরু হলো ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিধন আমরা শুধু পত্রিকায় টেলিভিশনে সংবাদ দেখি আর বলি হত্যা কোন ধর্মই সমর্থন করেনা। অথচ ধর্মের নামেই সবকিছু হচ্ছে। চাইলেই এখন আর ধর্মীয় উন্মাদনার শিকড় উপড়ে ফেলতে পারবেনা না। একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে এই শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। বীভৎস ২২ হত্যাকাণ্ডের পরও যদি একটা দেশের মানুষ হত্যাকারীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে যায়। কিশোরী কিংবা কোন তরুণী হত্যাকারীর প্রেমে পড়ে গেছে বলে প্রকাশ্যে বলতে পারে, সেখানে সমস্যা সমাধান খুব সহজ নয়।
দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের উচ্চা-বিলাস জঙ্গিবাদের প্রধান কারণ। ব্যবসা বাণিজ্য, প্রতিপত্তি নিশ্চিত করতে রাজপথের রাজনীতিবিদদের পিছনে ফেলে আদর্শিক রাজনীতি নয় পেশাদার রাজনীতিবিদ ‘রা জায়গা করে নিয়েছেন সব জায়গায়। নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতেই কোন ধরনের বাছবিচার ছাড়া দল ভারী করতে কাছে টেনে নিচ্ছেন ভিন্ন আদর্শের লোকজনকে। সেই সুযোগকে কাছে লাগাচ্ছে উগ্রমতবাদের কুশীলবরা।
একটা সংবাদে দেখলাম দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় চারশত তরুণ নিখোঁজ হয়েছে বিগত এক বছর বা তাঁরও কম সময়ে। অনেকের নামেই থানায় রিপোর্ট আছে। এই ছেলে গুলো দীর্ঘদিন নিখোঁজ তাঁদের ক্ষেত্রে আমাদের প্রশাসনের ভূমিকা কি?
আমার তো মনে হয় ইতোমধ্যে প্রত্যেকের অভিভাবক জেনে গেছে তাঁদের সন্তান কোথায় আছে, কি করছে। যার জন্য পরিস্থিতি বুঝতে পেরে এরা নীরব হয়ে গেছে। যাদের নামে রিপোর্ট করা আছে এদের মা বাবাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিৎ। এদের ফোনকল কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটু যাচাই বাছাই করলেই অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। ব্রিটেনে যে সব যুবক যুবতি আইএস-এ যোগ দিয়েছে তাঁরা কোন না কোন ভাবে একবার হলে ও তাঁদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছি …লোকজন রে-রে করে তেড়ে আসছে ধর্ম নিয়ে কেন কথা হবে। এখন জাস্টিফাই করা হচ্ছে এরা আধুনিক অভিজাত পরিবারের সন্তান, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখা করা ছেলে। তাই আমরা ভুল বলছি মাদ্রাসা নিয়ে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নামে বিভিন্ন কল্পকাহিনী ছাপিয়ে খুনিদের প্রতি সাধারণ মানুষের এক ধরনের দুঃখবোধ বা সহানুভূতি আদায় করার প্রতিযোগিতা চলছে যেন।
বেশ কয়েকটা সংবাদ দেখলাম, যেখানে ইনিয়েবিনিয়ে লেখা, হামলাকারীরা সেহেরি খেয়েছে, নামাজ পড়েছে, সবাইকে নামাজ পড়িয়েছে, তারা বেহেস্তে চলে যাচ্ছে সেখানে জিম্মিদের সাথে দেখা হবে। এইসব সংবাদ প্রচার করে আসলে পরোক্ষভাবে এক ধরণের সহানুভূতি তৈরি করারই প্রয়াস।
১৬ কোটি মানুষ জাস্ট সার্কাস দেখার মতো করে কখনো পুলকিত হচ্ছি, কখনো আতঙ্কিত হচ্ছি, কখনো বাহবা দিচ্ছি। যারা খুন করছে ইনিয়েবিনিয়ে বলছি এরা সহি মুসলমান না। এরা ব্রেইনওয়াশড। ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে। এসব আমেরিকা পশ্চিমাদের কাজ। দিন শেষে হাসনাতের মতো চিংড়ি মাছ খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ঘুমাতে চলে গেছি। হত্যাকারীরা কোরআনের আয়াত সূরা জানাদের সম্মান দেখিয়েছে। হত্যা করেনি। অতএব আমি নিরাপদ!
কিন্তু সহি মতবাদ এর চেয়ে যখন ভুল মতবাদ প্রাধান্য পেয়ে যায় তখন কি উচিৎ নয় এই ভুল মতবাদকে থামানো। কারা প্রচার করছে এই ভুল মতবাদ। এলিয়েন না নিশ্চয়? রক্তে মাংসের মানুষ, আমাদের মাঝেই যাদের বসবাস। সরকার যখন কয়েকদিন আগে জঙ্গিদমন কর্মসূচী হিসাবে কয়েক হাজার লোক গ্রেফতার করল আমরা মায়াকান্না শুরু করলাম! সরকার সব ইসলামী মতাদর্শের মানুষকে গ্রেফতার করছে। ইসলাম ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র সব মাতম উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এতো ধার্মিকের ভিড়ে মানুষ কই? আসুন সহি পথের সন্ধানে। শান্তির বাণী নিয়ে। ধর্ম হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না। ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে লাখ মানুষের মিছিল দেখেছি। ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙা পরবর্তী মিছিল আন্দোলন দেখেছি। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মিছিল দেখেছি। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর জন্য আন্দোলন দেখেছি। যারা ইসলামকে ধংস করে দিচ্ছে । মানুষ খুন করছে। ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে- এদের বিরুদ্ধে একবার রুখে দাঁড়ান। নীরবতা কিন্তু সম্মতির অংশ।
গুলশানের এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জানান দিল শুধু। সামনে এই ধরনের আরও ভয়ঙ্কর দিন হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সেদিন আপনি আমি কেউ আর নিরাপদ না। এমন দিন আশার আগে অনুভূতি একটু ভোতা করে একবার ঘুরে দাঁড়ান..
কোথাও হাত দিলেই যেন ধর্ম চলে না যায়। শুধু মুখে বলবেন এরা সহি মুসলিম না, বলেই দায়িত্ব শেষ করে বসে থাকবেন।
সরকারের দোষ খুঁজবেন সমালোচনা করবেন, ভালো কথা। তার আগে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করুন। একবার সবাই মিলে প্রতিবাদ করুন। রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্য না হোক মানুষের ঐক্য হতে বাধা কোথায়। একবার আওয়াজ তুলুন.... মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করুন। ওয়াজ মাহফিল মনিটরিং করুন। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন। পিস টিভি মতো টিভির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করুন।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রত্যেক ছাত্রের ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই করা দরকার
ইউরোপ আমেরিকা থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন মাদ্রাসার নামে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড চাঁদা তুলে দেশে নিচ্ছে। এইগুলো কই খরচ হয় সেটা মনিটরিং করুন ।
সমস্যার মূল জায়গায় হাত দিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণ খুব বেশি আশার আলো দেখায় নি। ঘুরে ফিরে সেই ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা আর পারিবারিক শিক্ষার কথাই উঠে এসেছে। বাংলাদেশ এখন আর নীতিবাক্য শোনার অবস্থায় নাই। সংস্কার খুব জরুরি। এইসব খুন, হত্যা, জিম্মি, ধর্মীয় উন্মাদনার লক্ষ্যবস্তু কিন্তু গণভবন। আর আমাদের ভয়ের জায়গাটা সেখানেই। আইএস অস্বীকার করে জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, হিজবুত তাহরির, আনসারুল্লা যাই বলেন বাংলাদেশে তাদের প্রধান শত্রু মনে করে শেখ হাসিনাকে।
ইসলাম যুগে যুগে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। আল্লাহ্ আকবর ধ্বনি যেন আতংকের নাম না হয়। আযানের মধুর সুর, গির্জার ঘণ্টা আর শাঁখের আওয়াজে যেন বাংলাদেশে ভোর আসে।
আপনার সন্তানকে যখন সহি শিক্ষা দিতে পারেন নাই তার কাফফারা তো অবশ্যই দিতে হবে। গুলশানের রেস্টুরেন্টের ভিতর লাশের মিছিলের ভয়ংকর ছবি দেখার পর ও যারা নানাভাবে ঘটনাকে হালাল করার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য শুধুই করুণা।
৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের বাংলাদেশ যেন না হয়!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য