আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

জঙ্গিবাদের পুরষ্কার

জহিরুল হক বাপি  

দীর্ঘ একমাস রোযা, তারাবী ও অন্যান্য ধর্মীয় আচার শেষে আল্লাহর কাছ থেকে উপহার স্বরূপ ঈদ। রোযা মুসলমানদের জন্য আসলে প্রশিক্ষণের মাস। এ মাসে সংযম প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য স্বামী স্ত্রীর বৈধ শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ মাসের মূল কারণ আত্মাকে নম্র করা। কিন্তু আমরা এ বছর রোযার মাসে কি দেখছি? হঠাৎ গজিয়ে উঠা কালো পোশাক, কালো মুখোশে ঢাকা ইসলামিস্টরা (?!) কি করছে? তিউনেশিয়া, কুয়েত, সিরিয়ার কথা বাদ দিলাম, নিজ দেশের কথাই বলি। গুলশানে নৃশংসভাবে খুন করা হলো বাইশজন মানুষকে ইসলামের নামে। তারা সাধারণ মানুষ।

ঈদের দিনেও বোমা হামলা হলো। সেখানেও মারা গেল চারজন। অনেক মুসলমান বুঝে না বুঝে এটাকে মৌন সম্মতি, অন্তরের ভিতর থেকে কিছু সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এ সমর্থকরা জঙ্গি না কিন্তু বেহেশতের লোভে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ভাবছে এরাতো ইসলামের সেবক, জঙ্গিদের সমর্থন দিলে হয়ত বেহেশত কিছুটা সাবলীল হবে।

আসলেই কি তা? ধর্ম মর্মের বিষয়। ইসলামেও বলা হয়েছে নিয়তেই নাস্তি। নিয়তই সব। কারো মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে নামায পড়ালাম, ধর্ম করতে বাধ্য করলাম এতে কি ধর্ম হবে? ইসলাম তো বলে হবে না। বিশ্বাসটা বাহ্যিক না, অন্তরের। খুব স্থূল একটা উদাহরণ দেই। ঘরের বৌ প্রতিদিন সেজে গুজে স্বামীর সামনে দাঁড়ায় না। কারণ স্ত্রী নিজেও জানেন তার অবস্থান মর্মে। সে মর্ম থেকেই তিনি গৃহিণী। কিন্তু একজন যৌন কর্মীর প্রতিদিনই সেজে-গুজে দাড়াতে হয় কারণ কারো মর্মে তার জায়গায় নেই, পুরাটাই মর্মহীন কর্ম। বর্তমান আইএস (?!) সবাইকে যৌন কর্মী বানাতে ব্যস্ত। আমাদের দেশের কিছু মুসলমানও নিজেকে নিজের অজান্তেই যৌন কর্মী বানিয়ে ফেলছে। অদ্ভুত। হুজুরের পিছে “আমিন” আর অন্যর ধর্মীয় দোষত্রুটি ধরাতেই এদের মুসলমানিত্ব। টকটকে লাল লিপস্টিক পরা হেজাবী, মসজিদে দান করা চোরাকারবারি, ইয়াবা ব্যবসায়ীও এদের কাছে বেশ বড় ধার্মিক। হয়ত দেখা যাবে তার পুত্রও যে ইয়াবাখোর এটা তিনি বেশ ভালো জানেন। তারপরও ইয়াবা ব্যবসায়ী যেহেতু মসজিদে দান করে তবু সে ধার্মিক। এমন স্বমেহন আর কোথাও কি দেখা যায়?

ধর্ম এখন টুপি দাড়িতে আর মুখে মুখে, সুখে সুখে। যারা ধর্মের নামে একটু হলেও জঙ্গিদের প্রতি সহমর্মি তারা যদি পড়তে পারেন তবে একটু কোরান পড়ে দেখুন না। হুজুর, ধর্ম ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের কারণে মুখে খেজুর দিয়ে আর কত কাল ? পোশাকে অন্যের চোখের সামনে থেকে শরীর ঢাকা গেলেও আল্লাহর দৃষ্টি থেকে কিছুই আড়াল করা যায় না। তিনি যে কোন অবস্থায় সর্ব কিছু দেখতে পান। হুজুরেরা সব ভুলিয়ে দিয়েছে, ধর্ম ব্যবসায়ীরা সব ভুলিয়ে দিয়েছে। আপনি মানেন কোরান পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। আপনি অন্য ভাষায় কোরান পড়েন। এক বিন্দু না বুঝেও। তাহলে বিধানটা আপনি জানলেন কিভাবে? কোনটা পাপ আর কোনটা পুণ্য, কোন পথে চলতে হবে সেটাই তো জানলেন না, বুঝলেন না।

আপনাদের অবস্থা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের শিশু শিল্পী প্রতিযোগীদের চেয়ে খারাপ- ৮ বছরের শিশু নেচে নেচে গায় “ কালিয়া সোনারে গত নিশি কোথায় ছিলে”। তাদের বাবা-মা এডাল্ট গান মুখস্থ করিয়ে দিয়েছে পুরস্কারের লোভে, আর হুজুরেরা, ধর্ম ব্যবসায়ীরা আপনার মুখে খেজুর ভরে দিয়েছে তাদের ব্যক্তি স্বার্থে। কোরাকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান মানেন অথচ বিধানটা জানার জন্য কোরানের বঙ্গানুবাদ পড়েন না। বাহ! বাহ!!

আসেন তো দেখি কোরানে এ সম্বদ্ধে কি বলা আছে- বল অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক ও অভিন্ন হতে পারে? - সুরা রায়াদ :১৬

একজন অন্ধ অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটে। আল্লাহ আপনাকে চক্ষু, জ্ঞান দেওয়ার পরও আপনি অন্যের কাঁধে ভর দিয়েই হাঁটছেন।

মুমিনগণ! যদি কোন ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে যাতে অজ্ঞতাবশত: তোমরা কারো ক্ষতির কারণ না হও। -সূরা হূজরাত: ৭

উপরের আয়াত থেকে কি স্পষ্ট বোঝা যায় না আল্লাহ জেনে বুঝে বিশ্বাস করতে বলেছেন? আপনি কি তা করছেন? করেন নাই। এতে কি আল্লাহর আদেশ স্পষ্টত লঙ্ঘন করেন নাই?

গুলশান, শোলাকিয়া ঘটনার পর কেউ কেউ জেহাদি মুডে আছেন। কেউ কেউ মনে মনেই জেহাদি হয়ে যুদ্ধ করছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, ২০১৬-তে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে ইসলামি জঙ্গি কর্তৃক ১২১০-এর অধিক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে প্রায় ১১২৩০ জনকে মেরে ফেলা হয়েছে আর আহত হয়েছে প্রায় ১৫০০ জন মানুষ। এদের বেশিরভাগই মুসলমান। অনেকে নামাজরত অবস্থায় ছিলেন। ধরেন শোলাকিয়া ঈদ জামাতে যদি একটা বোমা ফাটাতে পারতো জঙ্গিরা তবে কি হতো? একটার বেশি বোমা মারতে হতো না। নামায পড়তে আসা মুসল্লিরা ভয়ে আতঙ্কে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে দৌড় শুরু করতো এতে পদদলিত হয়ে মারা যেত কয়েকশ মানুষ। এরা নাস্তিক? এরা ইসলাম বিরোধী? এরা কাফের? এরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী?

১৯৩৬ সাল থেকে আত্মঘাতী হামলা শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের মাধ্যমে। ফিলিস্তিনিদেরকে রক্ষা করতে তারা প্রথম আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। ফল হয় হিতে-বিপরীত। শত্রুরা যুক্তি ও সমর্থন পেয়ে যায় আরও সশস্ত্র হামলা চালাতে। ফিলিস্তিনিদের আন্দোলন গণ-আন্দোলন না হয়ে হয়ে উঠে অসম যুদ্ধ। যার ফলশ্রুতিতে এখনও ফিলিস্তিনে শান্তি নেই। ফিলিস্তিনি নেতা আল-হুসাইনী কোরান থেকে জেহাদের আয়াত খুঁজে খুঁজে তার অপব্যাখ্যা করে তরুণদের স্যুইসাইডাল পথে টানতো। এর ফলে দেশপ্রেম, স্বাধীনতা, অন্যায়ের প্রতিবাদ অন্তর থেকে মুছে গিয়ে বেহেশতের লোভ জায়গা করে নেয়। একটা ইহুদী মেরে মরতে পারলে ৭০ হুরপরী পাওয়া যাবে। ঠুসকা-ঠাসকা আক্রমণের বিপরীতে যুক্তি দেখিয়ে ইহুদীদের গোছালো আক্রমণ। ফিলিস্তিন আজও অশান্ত। ক্রমে এ আত্মঘাতী হামলা ডালপালা মেলতে মেলতে আজকের অবস্থা। এসব কারণে ইসলামবিরোধীদের সুবিধা হয়েছে যত,তত বিপদে পড়েছে মুসলমানরা।

আজকের অবস্থা দেখেন, মুসলমানরাই মুসলমানদের মারছে। মাঝখান দিয়ে জাগতিক ফায়দা লুটছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকান। মুসলমানদেরই সহযোগিতায় আমেরিকা,ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্য পুড়িয়ে কাবাব বানিয়ে আয়েশ করে কাবাব খাচ্ছে। প্রায় শেষ হতে বসেছে সৌদি আরবের সকল সম্পদ। খুব বেশিদিন দূরে নয় যেদিন সৌদি আরবকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরতে হবে। সৌদি রাজনীতি বিশ্লেষণ করবো না। কথার প্রসঙ্গে এসে গেল। একটা জিনিস খেয়াল করলে অবাক লাগে আমরা কেমন অন্ধ হয়ে গেছি। ক্রমাগত ধর্ষণ করে চলছি নিজেদের। আমাদের ধর্ম বিশ্বাস আল্লাহতে নাই। জী, আসলেই নাই। বাংলাদেশের মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাস এখন ভ্রান্ত রাজনীতি এবং সৌদি আরবে। আবার সৌদি আরবের প্রকাশ্য নিয়ন্ত্রণ আমেরিকা আর ইহুদীদের কাছে। সৌদিদের সাথে আমেরিকা, ইসরাইলের সম্পর্ক তারা প্রকাশ্য স্বীকার করার পরও, কাজে প্রমাণ পাওয়ার পরও এদেশের মুসলমানদের বড় একটা অংশ সেটা বিশ্বাস করে না। অদ্ভুত স্ববিরোধীতা। পতিতাপল্লী এবং মদের লাইসেন্স দেওয়া জেনারেল জিয়া এদেশের মানুষের কাছে ধর্মের কাণ্ডারি, ইহুদীদের সাথে সখ্যতাকারী বেগম জিয়া ইসলামের রক্ষক। বারবার বলছেন, শুনছেন হাসিনার নাস্তিক সরকার ইসলামকে শেষ করে দিচ্ছে। হিন্দুয়ানী কালচার এদেশে প্রতিষ্ঠিত করছে। অথচ ভারতেই প্রায় বাংলাদেশের দ্বিগুণ হিন্দুর বসবাস। আপনাকে আপনার বক্তব্যের কারণ জিজ্ঞাসা করলে আপনি কোন কারণ দেখাতে পারবেন না। অবশ্যই পারবেন না। এর মূল কারণ আপনার অসততা, রাজনৈতিক মূর্খতা এবং নিজের অজান্তে ধর্মকে ব্যবহার। ধর্মে আসলে কি বলা আছে, কোরানে কি বলা আছে আপনি জানেন না, বুঝেন না। হুজুরদের কথা, রাজনৈতিক নেতার কথাই সাচ্চা। আপনি সোয়াবের লোভে আরবি ভাষায় কোরান পড়েন। কিন্তু আসল সোয়াবের দিকে আপনার মতি নাই। আপনি জোর গলায় ঘোষণা করেন কোরান সুস্পষ্ট এবং সর্বোচ্চ সুন্দর জীবন বিধান। আপনাকে যদি বলি এর প্রমাণ দেন, আপনি পারবেন না নিশ্চিত। কারণ আপনি এটি বোঝার জন্য কখনও কিছুই করেন নি। ফ্রি খাওয়া, আত্নসম্মানবোধহীন হুজুর আরবি পড়ছে আর আপনি আমিন-আমিন বলা মুসলিম। সবচেয়ে সহজ পথে আপনি। আপনি নিজে ঘুষ খেলে তার পিছনে যথেষ্ট কারণ খুঁজে পান কিন্তু অন্য কেউ একই কাজ করলে আপনি তাকে ঘৃণা করেন। অদ্ভুত আপনার ধর্মবিশ্বাস। , টুপি, দাড়ি আপনার কাছে সততার মূর্তি। আপনি নিজেও ঘুষের টাকা পকেটে নিয়ে নামাযে দাঁড়ান, ঘুষখোর অবৈধ টাকার মালিককে তোষামোদ করেন নিজ স্বার্থে। আর পরকালের দায় মেটাতে ক্ষুধার্তকে খাবার দেবার বদলে মসজিদে এসি লাগান, অশিক্ষিত মাওলানাকে ওস্তাদ মানেন। মানুষই যদি না বাঁচে তবে মসজিদে এসি খেতে খেতে নামায পড়বে কে? আপনি আল্লাহর সাথে এক ধরনের ভণ্ডামি খেলা খেলেন।

দেশে যে বোমা হামলা হয়েছে, হচ্ছে এটাতে মৌন সম্মতির একটা কারণ রাজনীতি। বাংলাদেশের ইসলামি শিক্ষার প্রসারে বড় অবদান রয়েছে সৌদি আরব তথা সৌদ পরিবারের। আর বিএনপি বাংলাদেশের জামাত-ই-ইসলামের বীজ বপনকারী, রক্ষক। সৌদ পরিবারের সাথে জামাতি সখ্য বেশ পুরানো।পৃষ্ঠপোষকতার কারণে তাই মাওলানারা, কাঠমোল্লারা সচেতন, অবচেতনভাবেই জামায়াত, বিএনপি, সৌদী ভক্ত। তারা সচেতনভাবেই ক্ষমতার জন্য ধর্মের সূক্ষ্ম ব্যবহারে নিজেদের সুবিধার জন্যে ইসলামকে নিজ মতো ব্যাখ্যা করছে। যেহেতু আপনার দায় নেই তাই আপনি কোরান পাশে ঠেলে রেখেছেন অন্ধ বিশ্বাসে। আপনার বাসার কোরান শরীফে ধুলো জমে কিন্তু ঝকঝকে তকতকে থাকে ড্রইং রুমে সাজানো দামী ফ্রেমের মক্কা শরীফের ছবি ।

ইসলাম কখন,পলেটিক্যাল ইসলাম হয়ে গেছে আপনি বুঝেন নি। আপনি ধর্মের বিষয়ে হয়ে আছেন তাদের হাতের পুতুল। আপনার মনে একবারও প্রশ্ন আসে না মাদ্রাসা মাদ্রাসা বলে চেঁচানো জামাতি নেতাদের সন্তানেরা কেন কেউ মাদ্রাসায় পড়ে নাই? আপনার মনে একবারও প্রশ্ন আসে নাই নেটের শাড়ী পরা, উগ্রসাজে সজ্জিত বেগম জিয়ার সত্য ধর্মবিশ্বাস নিয়ে। আপনি আজও বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়াতে ইসলামের ক্ষতি হয়েছে। অথচ আজ এই ২০১৬ সালেও পাকিস্তানে মসজিদে নামায পড়া নিরাপদ না। কিন্তু আপনি মানসিক প্রতিবন্ধী বলে এ নিয়ে কোন প্রশ্ন আপনার মনে আসে না। এর কারণ আপনার মগজ নিয়ন্ত্রণ করে অন্য কেউ,অন্য কিছু।

স্বাভাবিকভাবে আপনার সন্তান হবে আপনার থেকে সরেস। আপনি ইসলামের নামে মন্দির ভাঙ্গা সমর্থন করেছেন, আপনার পুতে আল্লাহ সৃষ্টি পৃথিবীকেই ভেঙ্গে ফেলছে। অথচ পৃথিবীর সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি। আপনার পুত যে যুগের কারণে আপনার কাছ থেকে অন্ধত্বে সরেস তার প্রমাণ তো হচ্ছে। অতি ধনীর সন্তান ছাড়া কেউই নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে না। আপনার সন্তান সেখানে গিয়ে জঙ্গি। আপনি নিজেই কানা, আপনি কিভাবে সন্তানকে পথ দেখাবেন। আপনাকে পথ দেখাতো অন্ধ মোল্লা। আপনার সন্তানকেও তা। আপনার সন্তান যেমন আপনার তুলনায় আপডেট তেমনি আপনার সন্তানের মোল্লাও আপনার মোল্লার চেয়ে আপডেট, মূর্খ, অন্ধ। আপনি ষড়যন্ত্র না খুঁজে কোরান এর বঙ্গানুবাদ পড়লে, বুঝলে জীবনের বিধান পেতেন। কিন্তু পরিবর্তে আপনি মোল্লাবিধানে, অন্যের মুখে ঘি খেয়েছেন, অন্যের চোখে বেহেশতের পথ চেয়েছেন। ভাবেন জঙ্গিরা ইসলামের জন্য কাজ করছে। ইসলাম কায়েম করছে। আপনার চোখে পড়ে না জঙ্গিরা ইসলামের বারোটা বাজাচ্ছে। আপনাকে দেখিয়ে দেওয়ার পরও আপনি দেখেন না। ফলস্বরূপ আপনারা ইহকাল পরকাল দু’টোই হারাচ্ছেন। অথচ কোরানে স্পষ্টই বিধান দেওয়া জেনে বুঝে বিশ্বাস তারপর বিশ্বাস করার কথা। এ প্রসঙ্গে সূরা হুজরাতের আয়াত তো আগেই দিলাম।

এবার আসেন বর্তমানে। মনগড়া দর্শন বা আলোচনা না। আপনি একবিন্দুও না বুঝে যে কোরান বিশ্বাস করেন আমি সেই কোরান থেকে আপনাকে বলবো। হাদিস থেকে বলবো। হুজুরেরা আপনাকে এসব বলে নাই। বললে তার ব্যবসা শেষ। বরং আপনাকে বুঝিয়েছে তার বিপরীত। আপনি যেমন আল্লাহর সাথে ছলচাতুরী করছেন তারাও তেমনি আপনার সাথে ছলচাতুরী করেছে।

“যে কিনা একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করলো সে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করলো, যে একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো সে যেন পুরো মানবজাতির প্রাণরক্ষা করলো। - সূরা আল মায়েদা

গত কয়েক দিনে এদেশেই অনেক নিরীহ মানুষ খুন করলো ইসলামের ধ্বজাধারী কিছু পশু। আপনি মনে মনে ইসলামের নামেই তাকে সমর্থন করলেন। এবার বলেন কোরানের বাণী অনুযায়ী জঙ্গিরা কি করলো? আর সমর্থন দেওয়ার কারণে আপনার আমল-নামায়ই বা কি লেখা হবে?! এবার কি কোরানকে অস্বীকার করবেন?

এখানে আরও উল্লেখ্য যে কোন নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের কথা বলা হয় নাই বলা হয়েছে সমগ্র মানবজাতির কথা। কারণ যে যেই ধর্মাবলম্বী হোক না কেন,আল্লাহ ঘোষণা করেছেন সবই তার সৃষ্টি। কোন ইসলামের দোহাই দিয়ে এসব নিরীহ হত্যাকাণ্ড হলো?

এবার দেখেন মুসলিম অধ্যুষিত দেশে অমুসলিমদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোরান ও হাদিসে কি আছে: যে মুসলিম ব্যক্তি মুসলমান রাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন অমুসলিমকে হত্যা করবে সে জান্নাত তো দুরে থাক তার সুগন্ধও পাবেনা যদিও জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বছর সমপরিমাণ দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়”। (সহীহ বূখারী সংখ্যা-৩,হাদিস নং-২৯৯৫)।

এ বিষয়ে সুরা তওবাতে স্পষ্ট পথ দেখানো আছে- তোমাদের কাছে বিপদে পড়ে কোন প্রতিমা পূজারীও যদি আশ্রয় চায় তাকে আশ্রয় দিও, তাকে আল্লাহর কালাম শুনিও। তারপর সে আল্লাহর কালাম অস্বীকার করলেও বিপদ কেটে গেলে তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিও।–সূরা তওবা: ৬

পবিত্র কোরানে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিষয়ে আরও বলা আছে : অন্য ধর্মাবলম্বীরা যাদের উপাসনা করে তোমরা তাদের উপাসক সম্বদ্ধে কটু কথা বলো না, কারণ এর ফলে তারা আল্লাহ সম্বদ্ধেও কটু কথা বলতে পারে। - সূরা আনাম: ১০৮।
সেই জায়গায় আপনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের রক্ষা তো পরের কথা মুসলমান পর্যন্ত মারছেন। আপনি, আপনারা কোন কোরান অনুসরণ করছেন?

নিরপরাধ মানুষ হত্যার সাথে রাসুল্লাহ (সা:) তুলনা করেছেন শিরকের। মহানবী (সা:) শিরকের পরপরই বলেছেন নিরপরাধ মানুষ হত্যার বিষয়ে।

মানুষ হত্যার বিষয়ে এক হাদিসে আছে : দুনিয়া ধ্বংসের চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণ্যতম কাজ হলো মানুষ হত্যা করা। (তিরমিজি শরিফ)

কিন্তু আপনি ইসলামের নামে মানুষ হত্যা সমর্থন করছেন, অমুসলিম হত্যা করছেন, মুসলমান হত্যা করছেন। গুলশানে নৃশংস ভাবে খুন করা ঐ মানুষগুলার অপরাধ কি ছিল?! ঈদগাহে হত্যা করতে চাওয়া মানুষগুলোর অপরাধ কি??

আপনি কি? আপনি কে? আপনার শেষ জবাব কার কাছে? আপনার ধর্মগ্রন্থের প্রণেতা কে? ইসলামের আইন অনুযায়ী আপনি ভয়ংকর রকম পাপী। আপনি উপরোক্ত আয়াত, হাদিস অস্বীকার করা মানে কোরান এবং হাদিসকে অস্বীকার করা।

হাদিস অনুযায়ী হাশরের বিচার সভায় প্রথম বিচার শুরু হবে যারা অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করেছে তাদের। - বূখারী : ৬৩৫৭

সুরা নিসার ৯৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ স্পষ্টতই ঘোষণা করেছেন যে স্বেচ্ছায় নিরীহ/ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করবে সে আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত।

যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন ইমানদারকে হত্যা করবে,তার শাস্তি জাহান্নাম সে চিরকাল সেখানেই থাকবে৷ আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য কঠোর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন৷" । সূরা নিসা :৯৩

ধর্মের নামে যারা নিরপরাধ মানুষ মারলো, মারছে তারা আল্লাহ কর্তৃক অভিশপ্ত। তাদের জন্য আল্লাহ কঠোরতর শাস্তির ব্যবস্থা কোরানের মাধ্যমেই ঘোষণা করেছেন।

যারা নিজ হাতে খুন করেন নি কিন্তু এই অনাচারকে সমর্থন করছেন তাদের শাস্তি সম্বন্ধে জানি না। কিন্তু সাধারণ জ্ঞান বলে তারাও কম বেশি অভিশপ্ত। আজ এত চোখের পানি ঝরতো না, আজ এত আতংক ছড়াতো না ধর্মের বিষয়ে যদি আপনি সচেতন হতেন। যদি আপনি সচেতন করতেন। অবশ্য ইসলামের বেস ধরে আপনি যদি অন্য কোন দর্শনে, বিধানে গোপনে নিজের কেবলা নির্দিষ্ট করেন তবে অন্য কথা।

রাসুল্লাহ (সা:) হুশিয়ার করে বলেছেন : কোন মুসলমান যদি কোন অমুসলিমের উপর অত্যাচার করে, অন্যায় অপমান করে, অমুসলিমের সম্পদ কেড়ে নেয় তবে শেষ বিচারের দিন আমি মোহাম্মদ সেই অমুসলমানের পক্ষে সাক্ষ্য দিব। - আবু দাউদ

পূজার মণ্ডপ ভাঙছেন বা সমর্থন করছেন। তৈরি থাকুন বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) রোজ হাশরের দিন আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। আল্লাহ স্পষ্টতই মোহাম্মদকে তার প্রিয় বন্ধু হিসাবে ঘোষণা করেছেন। আপনা অবস্থা কি হবে ভাবুন। মসজিদে দান, হুজুরের মুখে মিষ্টি পান সেই দিন কোন কাজেই আসবে না। মোহাম্মদ (সা:) এর বাইরে আল্লাহতালা আর কোন সুপারিশ শুনবেন না। আর কেউ করবেও না আপনার জন্য সুপারিশ। অমুসলিমের উপর আপনি ধর্মের নামে তো অত্যাচার করেছেনই বিনা কারণে এখন মুসলমানও মেরেছেন।

ভাবেন শেষ জবাব কার কাছে দিবেন।

জহিরুল হক বাপি, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ