প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ | ১৩ জুলাই, ২০১৬
সুন্দরবন বিনাশে সরকার আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো। ১২ জুলাই হোটেল সোনারগাঁও-এ বাংলাদেশের জনগণের অর্থে দামি খাদ্যদ্রব্য খেতে খেতে, সুন্দরবন ভক্ষণের উদ্দেশ্যে সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করেছে ভারতের হেভি ইলেকট্রিক কোম্পানির সাথে। একইসময়ে জাতীয় কমিটি এক জরুরী সভায় মিলিত হয়। সভায় বলা হয়, দেশি বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞ ও সংস্থার সতর্কবাণী, আপত্তি ও বিশ্লেষণ উপেক্ষা করে সরকারের সুন্দরবন ধ্বংস, ভূমিগ্রাস ও লুণ্ঠনের একগুঁয়েমি এখন উন্মাদনার পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুই-দেশের সুন্দরবন রক্ষায় দুই-দেশের মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ লড়াই জোরদার করতে হবে।
গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে তিনটি কোম্পানি দরপ্রস্তাব জমা দেয়। এরমধ্যে যৌথভাবে জাপানের মারুবিনি কর্পোরেশন ও ভারতের লারসেন এন্ড টুব্রো লিমিটেড এবং চীনের হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লি, ফ্রান্সের এএলএসটিওএম ও চীনের ইটিইআরএন। এছাড়া ভারতীয় কোম্পানি ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস্ লিমিটেড (ভেল) এককভাবে দরপ্রস্তাব জমা দেয়। দরপ্রস্তাবের সাথেই কোম্পানিগুলো কেন্দ্র স্থাপনের বিনিয়োগ কারা করবে তার নিশ্চয়তা নিয়ে এসেছিলো। চূড়ান্ত চুক্তি করার তিন মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক চুক্তি করতে হবে। অর্থনৈতিক চুক্তির ৪১ মাসের মধ্যে প্রথম ইউনিট এবং ৪৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আনতে হবে। এই হিসেবে কেন্দ্র স্থাপন শেষ হবে ২০১৯ সালের শেষে। রামপাল কেন্দ্রের ৭০ শতাংশ অর্থ ঋণ নেয়া হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী,এই কেন্দ্র স্থাপনে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এর ১৫ শতাংশ হিসাবে ৩০ কোটি ২১ লাখ ৮৪ হাজার ডলার দিতে হবে পিডিবিকে।
রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা পরিবেশবান্ধব হবে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে ইউনেস্কো ইতোমধ্যে রামপাল এলাকা পরিদর্শন করেছে। বাংলাদেশের একাধিক পরিবেশবিদ ও সংগঠন এই কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছে। তারা মনে করছেন, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে।
লাইক, প্রোফাইল, ট্যাবলেট, ক্লাউড। এই শব্দগুলো বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে বিশেষ অর্থ বহন করে। মাত্র এক দশক আগেও ইংরেজি ভাষার এমন কিছু শব্দের শুধুমাত্র একটি-ই অর্থ ছিলো। কিন্তু প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশেষ অর্থে ব্যবহার ও প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশের কারণে শব্দগুলো এখন দুই বা ততোধিক অর্থ বোঝায়। শব্দের সাধারণ অর্থ ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। অধিকাংশ শব্দের অর্থ প্রযুক্তিগত,যা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। জনপ্রিয় হয়েছে আরও একটি শব্দ। ‘ভাইরাল’। ফেসবুক জগতের অতি পরিচিত এই শব্দটির আভিধানিক অর্থ নেই। এক সময় এই শব্দটি দিয়ে বুঝানো হতো ভাইরাসে আক্রান্ত বা ভাইরাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিষয়। যদিও এটির বর্তমান অর্থ দাঁড়িয়েছে ইন্টারনেটে কোনো বিষয় দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া।
ইংরেজি মাসের ১৩ তারিখ আজ। ১৩ জুলাই। মে মাসের ১৩ তারিখ একটি সংবাদ আমাদের বিমূর্ত করেছিলো। বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত একটি সংবাদ ফেসবুকে ‘ভাইরাল’ হয়। ফলে এটির ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশ সর্বত্র। সেই সংবাদে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রতিবাদ মুখর হয়ে নানান কাণ্ড-কীর্তি শুরু করেন। সব কিছু যেন ঘটতে থাকে বিদ্যুৎ গতিতে। আমরা সেসব কাণ্ড-কীর্তি দেখেছি। মুহুর্মুহু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করেছি। আমাদের পর্যবেক্ষণ টিকে থাকলেও থেমে গেছে সেই ঘটনার প্রতিবাদ। মাত্র ২ মাসে অনেকেই বিষয়টি ভুলেও গেছেন। প্রতিযোগিতার এই যান্ত্রিক জীবনে একটি ঘটনাকে নিয়ে এতো ভাবনা-চিন্তা করার সময় কম জনের-ই আছে। তাই ঘটনার পরিবর্তন আসে। পরিবর্ধিত হয়ে আরও একটি ঘটনা জন্ম নেয়। ‘ফেসবুক’- এ সেটি ‘ভাইরাল’ হয়। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আবার থেমেও যায়। এ যেন এক অদ্ভুত খেলা। নিজের সংগে যুদ্ধ। বাস্তবতার সাথে সংগতি। পরাজয়ে পরিসমাপ্তি।
গত ১৩ মে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যাণদীতে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে শারীরিক নির্যাতন ও স্থানীয় জাপা (এ) দলীয় এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করে। কিন্তু এমপি সংবাদ সম্মেলন করে সে দাবি নাকচ করেন। তিনি বলেন,শিক্ষককে নয়,নাস্তিককে শাস্তি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে উচ্চ আদালত থেকে রুলও জারি করা হয়। ওই ঘটনার পরপরই প্রধান শিক্ষককে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে ধরিয়ে দেয়া হয় চাকরিচ্যুতির নোটিশ। সেখান থেকে ৭ দিন পর ২০ মে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফারড করা হয়।
এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মকে অবমাননার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় না। ১৯ মে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ওই শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন,মাউশি’র প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই শিক্ষককে বরখাস্তের আদেশ অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে। ওই আদেশ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ এজেন্ডা বহির্ভূতভাবে ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করেছিল। স্কুল কমিটিও বাতিল করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, আপাতত নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে স্কুল পর্ষদ পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।
উচ্চ আদালতের জারিকৃত রুলের জবাবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত তা দায়সারা উল্লেখ করে পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তার জন্য আদালত আগামী ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করেন। গত ৯ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কড়া পুলিশ প্রহরায় শ্যামল কান্তি ভক্তকে নগরীর নগর খানপুর এলাকার ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসে।
২ মাস পর স্বপদে নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন শ্যামল কান্তি ভক্ত। গত ১০ জুলাই সকাল ৯টায় নগরীর খানপুর এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে পুলিশ প্রহরায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিনি তার স্কুলে যোগদান করেন। দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর তিনি বিভিন্ন ক্লাস রুম ঘুরে দেখেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে প্রধান শিক্ষককে বরণ করে। শ্যামল কান্তি ভক্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্কুলে আবার যোগদান করায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এমনিভাবে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। যখন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়, তখন আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছিলো। স্কুল-হাসপাতাল-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্র সবাই প্রতিবাদী। হাজার নয়, লাখ লাখ মানুষ কানে ধরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে। প্রকাশ্যে নিজের দু’কান ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছে। কেউ নিজের ইচ্ছায়, কেউ কেউ অন্যের প্ররোচনায় আবার কেউ বা ভাইরাসের ভাইরালে। নিজের কান ধরার মাহাত্ম্য আমরা অনেকেই বুঝতে সক্ষম হইনি। কিন্তু তাতে কী? অবস্থা এমন হয়েছিলো, যেন একটা কান ধরার প্রতিযোগিতা। কান ধরার ছবি ফেসবুকে আপ করার প্রতিযোগিতা। ঘটনা এতোটা-ই বিস্তার লাভ করে যে, ফেসবুকের গণ্ডি পেরিয়ে, সেসব ছবি ঠাঁই পেয়েছে জাতীয় দৈনিকে। ঠাঁই পেয়েছে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে। অনলাইন পত্রিকায়।
শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের লাঞ্ছনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে বিপাকে পড়েন রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. জাহীদুর রহমান। গত ১৮ মে তিনি কলেজের সামনে অন্য সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে মানববন্ধনে অংশ নেন। এর পর কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে ৩০ মে’র মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। তাকেও চাকরিচ্যুত করা হবে বলে গুজব উঠে। এমন আরও বেশ কিছু দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়,ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। বহু সাংবাদিকও রোষানলে শিকার হয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেকের দিন কাটছে সেলিম ওসমানের দেয়া হুমকির আতংকে।
শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের লাঞ্ছনার প্রতিবাদের প্রধান দাবী ছিলো, সাংসদ সেলিম ওসমানকে ক্ষমা চাইতে হবে। আরও দাবী ছিলো, সাংসদ সেলিম ওসমানকে শাস্তি দিতে হবে। তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবীও উঠে। তার শাস্তির মাধ্যমে এক দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবী ছিলো। যাতে, অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে কেউ কোন শিক্ষককে অপমান করার ধৃষ্ঠতা দেখাতে না পারে। প্রতিটি শিক্ষকের মর্যাদা বা সম্মান অটুট রাখার দাবী। লাঞ্ছিত শিক্ষকের উন্নত চিকিৎসার দাবী। তার পরিবারের নিরাপত্তা দেয়ার দাবী। তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবী। আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতার দাবী।
এসব দাবীর একটিও পূরণ হয়নি। সাধারণ মানুষের দাবী পূরণে সরকার আগ্রহ দেখায়নি। সরকার হয়তো জানে, এসব ঝড় ক্ষণস্থায়ী। কয়েকদিন পর দাবী থাকবে না। কোন প্রকার ‘দাওয়া’ ছাড়াই এসব আন্দোলন ‘হাওয়া’ হয়ে যাবে। থেমে যাবে প্রতিবাদ। ভুলে যাবে প্রতিবাদের হেতু। এমন কি কার জন্যে এই প্রতিবাদ, সেই মানুষটিও দৃষ্টির অগোচরে চলে যাবে। স্মৃতি থাকবে। যেটি সহজে আর ‘ভাইরাল’ হবে না। সেই স্মৃতি মন্থরও করা হবে না।
ভাইরাস একটি ল্যাটিন শব্দ। যার অর্থ বিষ। একসময় রোগ সৃষ্টিকারী যে কোন বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হতো। এখন ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়। উদ্ভিদ ও প্রাণির বহু রোগ সৃষ্টির কারণ হচ্ছে ভাইরাস। ভাইরাস থেকে এসেছে ‘ভাইরাল’ শব্দটি।
তীব্র লাঞ্ছনার যন্ত্রণা সহ্য করে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত এখন বেঁচে আছেন। সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরায় রয়েছেন। তার মানসিক অবস্থা অনুমান করার ধৃষ্ঠতা আমাদের নেই। আমরা দেখলাম, একজন শিক্ষককে চূড়ান্ত পর্যায়ে লাঞ্ছনার পরও অপরাধীর কোন শাস্তি হলো না। বরং তাকে চাকরিচ্যুতি করা হয়। সেটা আবার ফিরিয়েও দেয়া হয়। এই মারপ্যাঁচের কোন ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই। আমরা জানি না শিক্ষামন্ত্রী কিভাবে একটি বেসরকারি স্কুলের পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দেন। ফিরিয়ে দেন চাকরিচ্যুত প্রধান শিক্ষকের চাকরি। এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। বরং এই বিশেষ প্রক্রিয়া সমাদৃত হয়েছে। যারা কান ধরে নানান ধরণের কাণ্ড-কীর্তি করছিলেন তারা খুশি হয়েছেন। নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। তৃপ্তি পেয়েছেন। একেবারে শান্ত হয়ে গেছেন!
এটা কিসের সান্ত্বনা? এটি কী প্রকৃত অর্থেই জয়? আন্দোলনের দাবী গুলো কি বাস্তবায়ন হয়েছে? কেউ কী একটিবার নিজের বিবেককে এই প্রশ্ন গুলো করেছেন? একেকটা ঘটনা এভাবেই ধামাচাপা পড়ে ফসিল হয়ে রয়েছে এদেশে। যেগুলো আর কোনদিন আলোর মুখ দেখবে না। আমরা দেখবো অপরাধীদের বুক ফোলানো গর্বের হাসি। বিদ্রূপের দৃষ্টি। বহাল তবিয়তে তারা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। এটাই যেন রীতি।
বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশে। সম্প্রতি নেচার জিওসায়েন্স জার্নাল-এর এক প্রতিবেদনে এখনই বাংলাদেশকে সতর্কতার পরামর্শ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এখনই বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে এমন কথা বলা না গেলেও দু’টি গতিশীল ভূ-গাঠনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চেপে বসতে থাকায় সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে। তেমন ভূমিকম্প ঘটলে তা এ অঞ্চলের ১৪ কোটি মানুষ বিপদে পড়বে। গবেষক দলের প্রধান নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মাইকেল স্টেকলার টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, ওই ধরনের ভূমিকম্প কবে ঘটতে পারে, সে পূর্বাভাস আরো গবেষণা না করে দেয়া সম্ভব নয়। ভারতের পূর্ব অংশ ও বাংলাদেশের যে অঞ্চল সম্ভাব্য সেই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন,তার ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বসবাস। রয়টার্সের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে,বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও অন্যতম দরিদ্র এই অঞ্চলে এ ধরনের একটি ভূমিকম্প মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তেমন কোনো ভূমিকম্প হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভবন, ভারী শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে বলে গবেষকরা আশঙ্কা করছেন।
সার্বিক দিকে বিপর্যস্ত আমরা। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপরদিকে মানব সৃষ্ট দুর্ভোগ। শারীরিক এবং মানসিক বিপর্যয়ের যৌথ সমন্বয়। বিপর্যয়ের সমন্বয় থাকলেও আমাদের মতানৈক্যের সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। আমরা যেন এক নাম না জানা এক ভাইরাসে আক্রান্ত। এই ভাইরাস আমাদের বিবেক-বুদ্ধি, ধৈর্য্য-শক্তি, চিন্তা-চেতনাসহ আরও অনেক কিছু শেষ করে দিচ্ছে। আমাদের করে তুলছে হিংস্র ও বর্বরতা। নিমর্মতার এক বিশ্রী পরিবেশে আমরা ক্রমশ নিঃশব্দে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। পরাজিত হচ্ছি। এই পরাজয় আমাদের মনস্তাত্ত্বিক। যেটা বারবার ‘ভাইরাল’ হয়ে ঘুরছে। ধীরে ধীরে আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য