আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

তাহমিদ-হাসনাতের ঘৃণ্য ধূর্ততা আর নব্য রাজাকারদের আস্ফালন

শারমিন শামস্  

অবাক হয়ে চারিদিক দেখছি। কী আশ্চর্য আমরা! কত অন্ধনির্লজ্জ। গুলশান হামলায় হাসনাতের সম্পৃক্ততার অনেক প্রমাণ অনেক আগে থেকেই পেয়ে যাচ্ছিলাম সংবাদ মাধ্যমে। কোরিয়ান ভদ্রলোকের ভিডিও বিষয়টিকে আরো খোলাসা করে দিয়েছে। সন্দেহ ছিল তাহমিদের বিষয়টা নিয়ে। কেন? কারণ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতীত অনেক কর্মকাণ্ড আমাদের তাদের প্রতি সহজে আস্থা এনে দেয় না। তারা নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে তদন্তের নামে। কিন্তু আজ? আজ যখন ছাদের ওপরে তাহমিদ হাসিব খানের স্থির ছবিগুলো স্পষ্ট করে দিয়েছে জঙ্গি হামলায় তার সম্পৃক্ততা, গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, তাহমিদের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে, শেফ মিরাজের জবানবন্দি নিশ্চিত করছে, তাহমিদ ছিল জঙ্গিদেরই একজন,  তখনো কীভাবে ফ্রি তাহমিদের মত একটি পেইজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সদর্প ভঙ্গিতে তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে, আমি জানি না!

সারা দেশের মানুষ আজ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সবাই এই ভয়ংকর কুৎসিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু একাত্তরে যেমন কিছু রাজাকার, আলবদরের দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল, গোপনে পাকিস্তানকে জিইরে রাখার স্বপ্ন যেমন অনেকের ভিতরে লালিত ছিল ২৫শে মার্চ এর গণহত্যার পরও, ঠিক সেরকম এ যুগেও আছে নব্য রাজাকারের দল, যারা মনে প্রাণে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের সমর্থক, কিন্তু সাহস আর সুযোগের অভাবে সক্রিয় নয়, কিন্তু তারা প্রাণপণে চায় তাহমিদ কিংবা হাসনাতের বিজয়।

যে পাঁচ জঙ্গি গুলশান হামলায় ২২ জন মানুষকে জবাই করে হত্যা করেছে, তারপর যৌথবাহিনীর অপারেশনে মরেছে, তাদের প্রতি ঘৃণা জানাবার কোন ভাষা আমাদের নাই। কিন্তু আজ উপলব্ধি করছি, এই হাসনাত করীম, তার স্ত্রী সন্তান এবং তাহমিদ হাসিব খান এই পাঁচ জন জঙ্গির চেয়ে আরো বাড়তি কয়েক মাত্রা বেশি ঘৃণ্য। এরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, ২২টা লাশের পাশে বসে ভাত তরকারি রান্না করিয়ে খেয়েছে, তারপর তাদের দলের পাঁচজনকে রেখে ভোরের আলোয় ভালোমানুষ সেজে বের হয়ে গেছে।

হাসনাত করীম কীভাবে দুই সন্তানসহ এরকম একটি কাজে অংশ নিতে পারলো, এটা ভেবে আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তাদের ঘুম হারাম হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি, এই বিবেক, এই আত্মা, এই রুচি তারা বিসর্জন দিতে পেরেছে বলেই গুলশান হামলার মত একটি নারকীয় হামলার পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের যোগ্যতা তারা অর্জন করেছে। আমাদের সাথে তারা তুলনীয় নয়। আমাদের সন্তানদের সাথেও তাদের সন্তানরা তুলনীয় নয়। এরা হত্যাযজ্ঞের পাশে সারারাত কাটিয়েও স্থির শান্ত, ভাত মাছ খাবার মত সুস্থ ছেলেমেয়ে দুটি। আমাদের সন্তানরা, ঈশ্বর না করুন, এ ধরণের পরিস্থিতিতে পরলে নির্ঘাত অসুস্থ হয়ে পড়ত, তার বুকের ভিতরে গভীর ক্ষত নিয়ে বড় হত। তাই এদের সন্তানদের নিয়েও চিন্তা করার কিছু নেই। বৃক্ষ যেমন, ফলও তাই।

হাসনাতের হিজাবী স্ত্রী তার সুরা বলতে পারার যে কাহিনী গলাবাজি করে মিডিয়াতে প্রচার করেছিল, তাই তো আজ প্রমাণ করে, কতটা হীন আর জঘন্য মানসিকতার ধারক সেই মহিলা। বসের স্ত্রী হিসেবে সম্মান আর ভক্তিশ্রদ্ধা সে পেয়েছিল, সেই কথাটি বুঝতে না পারার মত মগজ কি সে বহন করে না? হাসনাতের মত ধূর্ত একটি লোকের স্ত্রীর সেই মগজ নাই, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তাহলে, উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে যে গল্প সে তার হিজাব আর সুরা পড়া নিয়ে তৈরি করেছে,  সেই গল্পের উদ্দেশ্য শুধু নিজেদের নিষ্পাপ হিসেবে প্রমাণ করাই নয়, বরং মৃত ইশরাত আখন্দ আর অবিন্তাকে অসম্মান আর দোষী হিসেবে প্রমাণের আরেকটি অপচেষ্টা। তারা বুঝাতে চেয়েছে, মুসলিম হয়েও ইশরাত, অবিন্তা সুরা জানতো না বা হিজাব করতো না, এটি তাদের অপরাধ। আর তিনি হিজাবের আড়ালে রক্তমাখা চিংড়ি ভোনা খেতে পারেন বলেই তিনি মহীয়সী।


আমার ঘৃণা জানানোর ভাষা নেই আর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাহমিদ বা হাসনাতের সম্পৃক্ততার কথা বললে যে নিভৃত রাজাকারের দল হা হা করতে করতে ছুটে আসছে, গোয়েন্দাগিরি না করার পরামর্শ দিচ্ছে, তাদের উদ্দেশে শুধু এটুকুই বলা যায়, গোয়েন্দাগিরি গোয়েন্দারাই করেছে। যেহেতু আপনারা চাইছেন তারাই সেটা করুক, তার অর্থ আপনারা আস্থা রাখছেন প্রকৃত দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দাদের ওপর। তাহলে, গোয়েন্দারা যখন তাহমিদের সক্রিয় সম্পৃক্ততার কথা জানাচ্ছেন, তখন কেন গলাবাজি থামছে না আপনাদের? নাকি ঘরে ঘরে এরকম আরো অনেক তাহমিদ তৈরি হয়ে বসে আছে, যে নিব্রাস, রোহান, মোবাশ্বেরের চেয়েও ধূর্ত আর জঘন্য?

আমাদের আরো বেশি সতর্ক হবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

শারমিন শামস্, লেখক, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ