প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
সুশান্ত দাস গুপ্ত | ১০ আগস্ট, ২০১৬
উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা একটি সংগঠন করেছে, শিশুদের স্কুলের জন্য বা দুর্যোগে সহায়তার জন্য রাস্তায় একটি ফুল বিক্রি করছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায়; এ ধরণের ফান্ড কালেকশন ছাড়াও মূলত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহযোগিতায় সমাজসেবা করছে, এতে আপত্তি কেন আসবে এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। তাদের স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে মাদকসেবীর ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তাদের স্বেচ্ছাসেবীরাই করে থাকে। কিন্তু নন প্রফিট ভলান্টিয়ার অর্গানাইজেশন হিসেবে এর আর্থিক হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তেমন নেই বলে অনেকে মনে করেন। জাগো ফাউন্ডেশনের আরও কয়েকটি প্রোজেক্ট শুরু করা হয়েছে। সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে গ্রামীণ বা ব্র্যাকের মতো অনেক সংগঠনই কাজ করছে। কিন্তু, জাগো ফাউন্ডেশন নিয়ে অভিযোগের মূল কারণ এর পিছনে থাকা লোকেদের রাজনৈতিক অভিসন্ধি।
২০০৭ সালে ১/১১ এর পর ড. ইউনূস যখন দল গঠনের ঘোষণা দেয় তখন জনগণ সাড়া না দিলেও তার পক্ষে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার আবেদন করে করভী রাখসান্দ ধ্রুব নামের এক তরুণ। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলিস্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং ড. ইউনূসের আশীর্বাদে করভী প্রতিষ্ঠা করে জাগো ফাউন্ডেশন। ইউনূসের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়ায় জাগোর কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়ে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে তার পক্ষে ইউনূস সেন্টারের নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালায় করভী ও তার সহকর্মীরা। ২০১১ সালে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামাতের নিযুক্ত লবিস্ট ফার্মের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে শুরু করে জাগো। জাগোর স্বেচ্ছাসেবীদের একটি অংশ সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালিয়ে আসছে। অন্যদিকে ইউনূসের সুপারিশে জাগোকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও প্রমোট করা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
নন প্রফিট নামে চললেও জাগো মূলত একটি সামাজিক ব্যবসা। তাই গ্রামীণের পর সফল একটি প্রতিষ্ঠান জাগো ফাউন্ডেশন। জাগোর আর্থিক প্রতিবেদনে ( http://jaago.com.bd/about/audits-reports/ ) দেখা যায় নীট সম্পদ ২০১১ সালে ৩৭ লাখ টাকা, পরবর্তী বছর ৬০ লাখ, ক্রমান্বয়ে ১.৫ কোটি এবং সর্বশেষ ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। চক্রবৃদ্ধি হারে জাগোর আয়ের রহস্যটি অনৈতিক। জাগো ফাউন্ডেশনকে ব্যবহার করা হচ্ছে কর ফাঁকি দেয়ার সিঁড়ি হিসেবে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।
যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার আয়করের ২৫% কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে অনুদান হিসেবে দিতে পারে। এ ২৫%কে ম্যানিপুলেট করা হয়। যেমন: মি. এক্স-এর প্রদেয় কর ১০ কোটি টাকা হলে সে ২.৫ কোটি টাকা অনুদান দিতে পারে। মি. এক্স স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ১ কোটি টাকা অনুদান দিয়ে অফিশিয়ালি হিসাব দেখায় ২.৫ কোটি টাকা। এখানে সে ১.৫ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিতে পারছে। অন্যদিকে নন প্রফিট সংগঠন হিসেবে জাগো ১ কোটি টাকা পেলেও ২.৫ কোটি টাকার অডিট রিপোর্ট সাবমিট করতে কোনও সমস্যাই হয় না। এ অনিয়ম বিবেক সংশ্লিষ্ট তাই বন্ধের তেমন সুযোগ নেই।
জাগো জয়েন্ট স্টকে সোসাইটি হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে, কিন্তু অডিট রিপোর্টে এটি কেনো নিজেকে কোম্পানি হিসেবে দাবী করে? তাহলে এই অডিট রিপোর্টটি প্রশ্নের জন্ম দেয়। আপনি দেখবেন গতানুগতিক অডিট রিপোর্টের উপর এটি ছাপানো হয়েছে। এই এন্যুয়াল একাউন্টস কোন সময়ই জয়েন্ট স্টকে জমা দেওয়া হয় নাই। এটা শুধু লোক দেখানো একটি অডিট রিপোর্ট; এর কোন অফিসিয়াল ভিত্তিও নাই।
একটা ব্যাপার আমি আগেও কিছুটা উল্লেখ করেছিলাম। আবারো লিখছি। জাগো ফাউন্ডেশন দেশের বাইরে থেকে অনুদান গ্রহণ করে আসছে। এই ব্যাপারে অনুসন্ধানে বিষয়টি আরো নিশ্চিত হয়েছি আমরা। দেশের বাইরে থেকে অনুদানের ক্ষেত্রে এনজিও ব্যুরোর রেজিস্ট্রেশন অবশ্যই লাগবে। কিন্তু জাগো বাংলাদেশের আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেআইনিভাবে বিদেশ থেকে অর্থ গ্রহণ করছে।
সম্প্রতি গুলশান জঙ্গি হামলার অভিযুক্ত আসামী তাহমিদ খানের মুক্তি চেয়েছে জাগো ফাউন্ডেশন। জানা গেছে, তাহমিদের পিতা শাহরিয়ার খান অনলাইন প্রচারণার জন্য জাগো ফাউন্ডেশনকে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়েছে। এমন স্পর্শকাতর, বিতর্কিত ও ঘৃণ্য কাজের পক্ষে টাকার জন্য এডভোকেসি করা সংগঠন আর কত নীচে নামতে পারে? অনেকের ধারণা জাগো ফাউন্ডেশনে স্বেচ্ছাসেবীর আড়ালে জঙ্গিরা স্থান নিয়েছে। কারণ যারা সরকারের তীব্র সমালোচনায় মুখর ছিল সেই সংগঠন সরকারের নেতা বা মন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। নেতা বা মন্ত্রী ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এর মাধ্যমে জাগো নিরাপত্তা বাহিনী বা প্রশাসনকে পরোক্ষভাবে ম্যাসেজ দিচ্ছে যে তাদের স্বেচ্ছাসেবীরা সন্দেহ ও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে।
সরকার পতনের আন্দোলন সৃষ্টিতে ব্যর্থ হওয়ায় মার্কিন লবিস্ট ফার্মের উদ্যোগে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ড. ইউনূস, মীর কাসেম, প্রথম আলোর সাংবাদিক মতিউর রহমানের বড় ভাইসহ কয়েকজন সুশীল। দুটি লক্ষ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একটি হচ্ছে কয়েকজনকে বাছাই করে তাদেরকে পাবলিক ফিগার হিসেবে প্রোমোট করা।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের মতো ঘটনা ঘটানো। এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব হলে কিংবা নির্বাচন হলে প্রোমোটেড পাবলিক ফিগারদের ব্যবহার করা হবে জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য। করভী কর্তৃক অনেক তরুনকে স্বেচ্ছাসেবী নিযুক্ত করতে পারায় তার ভাবমূর্তি সৃষ্টিতে মার্কিন অনুদান, আমন্ত্রণ ও পুরস্কার ইত্যাদির সুপারিশ করা হয়। সমাজসেবার নামে সারাদেশে তরুণদের নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা সম্পন্ন হলে এদের ব্যবহার করা হবে সরকার পতনের নিয়ামক হিসেবে।
ড. ইউনুস নিজেই ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম দৃষ্টান্ত। যে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা হয়েছে আওয়ামী লীগের সহায়তায় সেই ইউনুস আওয়ামী লীগ বিরোধিতায় আদাজল খেয়ে নেমেছে এবং তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। জাগো ফাউন্ডেশন নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ক্ষোভের কারণ এজন্যই যৌক্তিক এবং যথার্থ।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য