আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

একজন শ্যামল কান্তি ভক্ত, অথবা বিপর্যস্ত সুশাসনের মুখচ্ছবি

মুনীর উদ্দীন শামীম  

গুলশান ট্রাজেডি-উত্তর বাংলাদেশে আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কথা। আমাদের স্মৃতি থেকে প্রায় মুছে গিয়েছিল তাঁর মুখাবয়ব। আর সব ভুলে যাওয়া ঘটনার মতোই আমরা ভুলে গিয়েছিলাম নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের ঘটনা। আমরা সম্ভবত ভুলে যেতে বসেছিলাম একজন আইন প্রণেতা সেলিম ওসমানের নিজহাতে আইন তুলে নেয়ার সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম উদাহরণ। আমরা ভুলে গিয়েছিলাম রাজনীতিবিদ, আমলা-মন্ত্রী, শিক্ষক-সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, পথচারী, সাধারণ মানুষসহ গোটা বাংলাদেশের সম্মিলিতভাবে বিব্রত হওয়ার ঘটনা।

সম্ভবত এটা ঘটনা-দুর্ঘটনার কাল। আর ক্রমাগত ঘটনা-দুর্ঘটনার কালে আমরা কতইবা মনে রাখতে পারি। আমাদের স্মৃতি আর কতটুকু বিস্তৃত-গভীর হতে পারে। বরং সবকিছুই ত্বরিতগতিতে ভুলে যাওয়া, স্মৃতি থেকে মুছে দেয়াই যেন একালের স্বীকৃত রীতি,আমাদের দিনযাপনের একটি স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্য প্রবণতা। আমাদের এ নিরন্তর ভুলে যাওয়ার প্রবণতা আবার রাষ্ট্র-রাজনীতির জন্য অসুখের নয়; সুখের কারণই বটে। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত ভুলে যাই বলেই সম্ভাব্য জবাবদিহি থেকে নিরাপদ থাকে রাষ্ট্র, সরকার, গণ-পরিষেবার দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ, পুলিশ, প্রশাসন, আমলা আর রাজনীতিবিদগণ। তাঁরা শুধু নিরাপদ থাকেন না, আমাদের ভুলোমনের প্রতি শতভাগ আস্থাশীল থেকে তাঁরা দিনকে রাত, আর রাতকে দিন বানাবার সফল কসরতও করেন, সময়ে-অসময়ে।

সেরকম একটি কসরতের সাম্প্রতিক উদাহরণ- নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের উপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নের উপর পুলিশের তৈরি তদন্ত প্রতিবেদন। যা ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত প্রত্যাখ্যান করেছেন। শুধু প্রত্যাখ্যানই করেননি, একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন। তবে উচ্চ আদালতের আগেই সাধারণ মানুষ এ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ প্রতিবেদন নিয়ে নানা ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা বলেছেন। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। যদিও সাধারণ মানুষের এসব ক্ষোভ-অসন্তোষ-বিস্ময় প্রকাশ করা-না-করার বিষয়টি রাষ্ট্র-রাজনীতি-প্রশাসন এর কাছে তেমন একটা বিবেচ্য বিষয় বলে মনে হয় না। তবে এটাও সত্য যে, এ তদন্ত প্রতিবেদনের নামে 'প্রশাসনিক গল্পগাঁথা’-ই আবার চাঙ্গা করে তুলেছে আমাদের ঘুমন্ত স্মৃতিশক্তি। জেগে ওঠা এ স্মৃতিশক্তির ওপর ভর করে আমরা এখন নিশ্চয়ই মনে করতে পারবো, মনে করতে পারছি, ১৩ মে ২০১৬-এর সে কলঙ্কময় ঘটনা। যা একজন প্রধান শিক্ষককে ভয়-শঙ্কায়, নিরাপত্তাহীনতা আর অনিশ্চয়তায় জড়োসড়ো করে তুলেছিল।

আমরা এখন নিশ্চয়ই মনে করতে পারছি, হাসপাতালে কান্না ভারাক্রান্ত শ্যামল কান্তির অসহায় মুখ, হাউমাউ করে কাঁদতে থাকা একজন শিক্ষকের মুখাবয়ব। যা দেখে আমাদের প্রায় সবার মনে হয়েছিল, আসলে একজন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত নন, অপমানে, দু:খে, উৎকণ্ঠায়, অনিশ্চয়তায় কাঁদছে গোটা বাংলাদেশ। এবং সমগ্র বাংলাদেশ সমস্বরে কেঁদেছিল বলেই, প্রতিবাদে জেগে উঠেছিল বলেই- সেসময় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাবোর্ড এর কর্মকর্তাগণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তড়িৎ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

কর্মজীবনের প্রায় পুরো সময় একই বিদ্যালয়ে কাটিয়ে দেয়া একজন শিক্ষকের বেআইনি বরখাস্তের আদেশ বাতিল করেছিলেন। যে আদেশটি তৈরি হয়েছিল অসুস্থ রাজনৈতিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের গাণিতিক হিসেব আর রসায়নের অনৈতিক সমন্বয়ে। সরকারি পর্যায় থেকে প্রতিক্রিয়া দেখে তখন ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ঐ বেআইনি বরখাস্তের আদেশ দানকারী বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিও বাতিল করেছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী, সাহিত্যকর্মী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ প্রায় সবাই তখন স্বপ্রণোদিতভাবে কান ধরে উঠবস করে, সে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে প্রতিবাদের এক ভিন্নমাত্রা তৈরি করেছিলেন।

সে কান ধরে উঠ-বস করা শাস্তি নয়; পরিণত করেছিলেন প্রতিবাদের ভাষায়। সবাই সম্মিলিতভাবে এ ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশ আইন লঙ্ঘনকারী আইন প্রণেতার পক্ষে নয়; একজন নিপীড়িত শিক্ষকের পাশেই ছিল, আছে এবং থাকবে। সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ এমনকি সাংসদ সেলিম ওসমানের জাতীয় পার্টির নেতারাও প্রতিবাদ করেছিলেন, বিব্রত হয়েছিলেন। সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের দায় জাতীয় পার্টি নেবেনা-দলের পক্ষ থেকে এমন বিবৃতিও দেয়া হয়েছিল।

তাৎক্ষণিক সেসব ব্যবস্থা, প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়া দেখে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরাও আশাবাদী হয়েছিলাম। আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম, এবার বুঝি অপরাধের বিচার হবে। শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাড় পাবে না অপরাধী। রাজনৈতিক ক্ষমতার আস্ফালন ন্যায়বিচারের কাছে নতজানু হবে। রাজনৈতিক পেশীশক্তি ধরাশায়ী হবে রাষ্ট্রীয় সুশাসনের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের কাছে। অপরাজনীতির রসায়নের যথার্থ হিসাবনিকাশ হবে আইনের শাসনের পরীক্ষাগারে।

গুলশান হলি আর্টিজানের ঘটনায় গোটা জাতি যখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, শোলাকিয়ার ঘটনায় যখন স্তম্ভিত, আবার কোথায় কখন কী ঘটে- সে ভাবনায় উৎকণ্ঠিত, ঠিক সে সময় আমরা খবর পেলাম যে, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত নিজ পদে ফিরে এসেছেন। চিকিৎসা শেষে যোগদান করেছেন তাঁর দীর্ঘজীবনের পরিচিত কর্মস্থলে, ফিরে এসেছেন তাঁর সহকর্মী ও স্নেহভাজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে। গত ১০ জুলাই ২০১৬-এ তাঁর ফিরে আসার সংবাদ খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের সবার মধ্যে নব-আনন্দ ও স্বস্তির উন্মেষ ঘটিয়েছিল।

শিক্ষক শ্যামল কান্তি সুবিচার পাবেন, শিক্ষা ও শিক্ষকের প্রতি আমাদের সামাজিক শ্রদ্ধাবোধের যে দীর্ঘ ঐতিহ্য বিদ্যমান, তা নতুনভাবে বলিয়ান হবে-এ রকম আশাবাদ আমাদের মাঝে আরও গভীর, আরও সুবিস্তৃত হয়েছিল। জনাব শ্যামল কান্তির ফিরে আসাতে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। সে প্রতিক্রিয়ায় কেউ কেউ বলেছিলেন, যাক, ভীষণ রকম মন খারাপের দিনে অন্তত একটা ভালো সংবাদ শোনা গেল। আমরাও আশায় বুক বেঁধে ছিলাম এই ভেবে যে, শ্যামল কান্তির স্বীয় পদে ফিরে আসায় ন্যায়বিচারের প্রাথমিক ধাপ পূর্ণ হয়েছে; এবার পুরোপুরি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পালা। আর সে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থেই রাষ্ট্র চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কার্যকর সব ব্যবস্থা করবে।

ঘটনা ঘটার প্রায় দু’মাস পর গত ৭ আগস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয় তাতে আবারও স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাধারণ মানুষ। প্রকাশ করেন তাঁদের ক্ষোভের কথা। পত্রিকার সুবাদে আমরা জানতে পারি, যে ঘটনায় সারা বাংলাদেশে তোলপাড় হয়েছিল, যে ঘটনার ভিডিও সারাবিশ্বের বাংলাভাষীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল, যে  ঘটনাটি সবক’টি টিভি চ্যানেলে বারবার দেখানো হয়েছে, সে ঘটনায় পুলিশ কোনো অপরাধী খুঁজে পাননি। তাহলে আমরা বলতেই পারি, গণমাধ্যমে যেসব ছবি ও ভিডিও প্রচার হয়েছে, তা তৈরি হয়েছে সাহিত্যের কোনো পরাবাস্তব বা যাদুবাস্তবতা নির্ভর কাহিনী থেকে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়- শ্যামল কান্তি ভক্ত সহ ওই প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ও সাংসদ সেলিম ওসমান-দু’জনই পরিস্থিতির শিকার। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় কারও বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় নি (দ্রষ্টব্য-প্রথম আলো, ১১ আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা-১৭)।

এ তদন্ত প্রতিবেদনকে সত্য মানলে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিলের আদেশকে অন্যায়, বড় অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করতে হয়। আরও হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে, তদন্ত প্রতিবেদনটি ঘটনা যে ঘটেছে-তা অস্বীকার করেনি, শুধু ঘটনার ঘটক এবং অনুঘটকদের খুঁজে পায়নি।

অপরাধবিজ্ঞানে বহুল প্রতিষ্ঠিত একটি তত্ত্ব আছে। এ তত্ত্ব অনুযায়ী একটি অপরাধ সংঘটিত হতে হলে কমপক্ষে তিনটি উপাদানের উপস্থিতি থাকা আবশ্যক, যেগুলির একটির অনুপস্থিতিতেও কোন অপরাধ সংঘটিত হতে পারে না। উপাদানগুলি হচ্ছে- অপরাধ সংঘটনের স্থান, অপরাধী এবং অপরাধের শিকার।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন প্রথম ও তৃতীয়টি খুঁজে পেলেও দ্বিতীয়টি অর্থাৎ কোন অপরাধী খুঁজে পায়নি। এ খুঁজে না পাওয়ার মাধ্যমে অপরাধবিজ্ঞানের বহুল প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বটিও কিন্তু পাল্টে গেল। বিদ্যাজগতে এরকম সৃজনশীল অবদানের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি বিশেষ পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হওয়ারও দাবি রাখে!

আমরা যদি এখন ১৩ মে ২০১৬ ও এর পরবর্তী কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ মনে করার চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের যে ঘটনাগুলির কথা মনে পড়বে, যে ঘটনাগুলি নিশ্চিতভাবে অপরাধের মধ্যে পড়ে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

এক- একজন বয়োজ্যেষ্ঠ প্রধান শিক্ষককে জনসম্মুখে কান ধরে ওঠ-বস করতে বাধ্য করা এবং রাষ্ট্রের স্বীকৃত বিচারিক প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া।

দুই- এ রকম ন্যক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে জেগে ওঠা জোর প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ঘটনাটির সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার চেষ্টা, এ ক্ষেত্রে ধর্মের অপব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক উস্কানি প্রদান।

তিন- রাজনৈতিক ক্ষমতার ব্যবহার করে পরিচালনা বোর্ড দিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে তাঁর পদ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা। এবং

চার- শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক জনমত তৈরির অপচেষ্টা হিসেবে স্থানীয় হেফাজতে ইসলামকে মাঠে নামানো এবং শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্মের অবমাননা করেছেন এ মর্মে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মিথ্যা বিবৃতি আদায় ও তা প্রচার করা।

বিষয়টি এমন নয় যে, এগুলি যারা করেছেন, তারা সেসময় পর্দার অন্তরালে থেকেছেন। গোপনে গোপনে করেছেন। বরং পরিস্থিতি তার শতভাগ বিপরীত। ঘটনার কুশীলবরা প্রকাশ্যেই তাদের তৎপরতা চালিয়েছেন। ধমক দিয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন। সেটি গণমাধ্যমে প্রচারও হয়েছে। তাহলে তদন্তকারী দল আইনের দৃষ্টিতে আমলে নেয়ার মতো যে কোন উপাদানই খুঁজে পেলেন না, সে মর্মে প্রতিবেদনও দাখিল করলেন, তার পেছনের কারণ কি, তদন্তকারী দল কি নিজ থেকে এটা করেছেন, নাকি রাজনৈতিক- প্রশাসনিক নির্দেশনা ছিল এটি করবার জন্য- এ প্রশ্নগুলো করা এবং তার উত্তর খুঁজে পাওয়া খুবই জরুরি।

শুধু আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের স্বার্থেই নয়; একই সাথে রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ বিভাগের ইমেজের স্বার্থেই এটা জরুরি। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পুলিশ ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ার অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বিচার সম্পাদনে পুলিশের ভূমিকার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে জেলা পর্যায়ের একটি কর্মশালায় একজন জেলা জজের দেয়া বক্তব্যের কথা উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছেন, বিচার প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত রান্নার কাজটি করেন বিচারক, কিন্তু রান্নার কাজটি কতখানি ভাল হবে তা নির্ভর করে সরবরাহকৃত মশলার পরিমাণ ও তার গুণগত মানের উপর। আর এ মশলা সরবরাহের কাজটি করেন পুলিশ।

শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ওপর নিপীড়নের ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়ায় যে নিম্নমানের মশলা সরবরাহ করা হয়েছে, ভালো রান্নার সম্ভাবনাকে সীমিত করে দেয়ার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে, তা তদন্ত প্রতিবেদনটি উচ্চ আদালত কর্তৃক 'অগ্রহণযোগ্য’ ঘোষণা ও বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা থেকেই প্রমাণিত। তাহলে এ নিম্নমানের মশলা সরবরাহের কার্যকরণ কি? কার স্বার্থ ও নির্দেশনায় এমন মশলা উৎপাদন ও সরবরাহের দায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজের কাঁধে  নিলেন?

এটা বলা দরকার যে, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পুলিশ শুধু ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়; দেশের সকল সঙ্কটে পুলিশ বাহিনীর রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সম্প্রতি হলি আর্টিজানের ঘটনায় প্রথম প্রতিরোধে পুলিশের সদস্যরাই এগিয়ে গিয়েছেন; জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। শোলাকিয়ার ঘটনায়ও পুলিশকে জীবন দিতে হয়েছে। এটি আমাদের অন্যতম রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। সুতরাং অগ্রহণযোগ্য, হাস্যকর প্রতিবেদন দিয়ে যারা রাষ্ট্রের এ রকম গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর ইমেজকে নতুন আস্থাহীনতার সঙ্কটে ফেলে দেয় তাদেরকেও আইনি প্রক্রিয়ায় আনা জরুরি।

রাষ্ট্র কিংবা সরকার সংশ্লিষ্ট কেউ এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেয়নি, এ রকম নির্দেশনা দিতে পারে না- এ রকম ইতিবাচক বিশ্বাস রেখেই উপরোক্ত দাবিটি করছি। একই সাথে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আবারও আশায় বুক বাঁধতে চাই। বিশ্বাস করতে চাই- শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ন্যায় বিচার পাবেন।

একজন শিক্ষকের, একজন নাগরিকের, একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলে নিরপেক্ষ ও দরকারি কর্তব্যটি পালন করবেন। আর যদি তাতে বিচ্যুতি ঘটে, তবে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বিপর্যস্ত সুশাসনের আরও এক মুখচ্ছবি হয়েই রয়ে যাবেন আমাদের ন্যায় বিচার ও সুশাসন-আকাঙ্ক্ষার পথচলায়। সেটি না হওয়াই হবে আমাদের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য গৌরবগাঁথা। সে গৌরবগাঁথাই রচিত হোক।

মুনীর উদ্দীন শামীম, গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী; সুশাসন বিষয়ক একটি কারিগরি প্রকল্পে কর্মরত।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ