আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ফেসবুক সন্ত্রাসীদের অঙ্গুলি হেলনে চলছে!

তসলিমা নাসরিন  

ওয়াও! ফেসবুক ভেরিফাইড!

দু’দিন আগে আমাকে এই আইডিতে লগইন করতে দিত না ফেসবুক। বলতো তোমার অ্যাকাউন্ট ডিসেবেল্ড। আর আজ কিনা ভেরিফাইড! না চাইতেই ভেরিফাইড। দু’দিন আগে ঝাঁটা মেরে বের করেছে ফেসবুক থেকে, আর আজ সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে মণ্ডা মিঠাই খেতে দিচ্ছে। সবই মিডিয়ার কল্যাণে। মিডিয়াকে ফোর্থ এস্টেট বলা হয়, আমি তো ফার্ষ্ট এস্টেট বলি। ফেসবুকের বন্ধুরাও অবশ্য যথেষ্ট প্রতিবাদ করেছে।



প্রথম প্রতিবাদটা আমিই করেছিলাম টুইটারে। বলেছিলাম, 'স্টুপিড ইসলামিস্টরা রিপোর্ট করেছে বলে স্টুপিড ফেসবুক আমার আইডি ডিসেবল করে দিয়েছে'। ব্যস, মিডিয়ার চোখে পড়লো টুইট। অমনি ফোনের পর ফোন। ইন্টারভিউএর জন্য ছেঁকে ধরলো। চিরকাল আমি মিডিয়াকে তাড়িয়েছি। কিন্তু ইদানীং খুব ক্রাইসিসের সময় মিডিয়াকে আগের মতো তাড়াই না। কারণ আমার বা গুটিকয় আমাদের কোনও ক্ষমতা নেই লক্ষ জনের কাছে পৌঁছোনো। কিন্তু আমাদের ওপর যে নির্যাতন হয়, তা মানুষকে জানানো দরকার। এসব তো ইতিহাস। ইতিহাস আমরা একা একা্ জানলেই চলবে?



ফেসবুক ফিরে পেয়েছি। প্রতিবাদ কাজে লেগেছে।
আমার প্রতিবাদটা পড়ুন।

‘গত পরশু আমার ফেসবুক আইডি ভ্যানিশ করে দিয়েছে ফেসবুক কর্তারা। এই জঘন্য ব্যবহার নতুন নয়, এর আগেও একই কাণ্ড করেছে ফেসবুক। আইডি আর ফেরত দেয়নি। আইডি ভ্যানিশ করা মানে পেজ টেজ সহ পারসোনাল একাউন্ট গায়েব করে দেওয়া। আর একাউন্টের সঙ্গে যে সব ইমেইল বা মোবাইল ফোন জড়িত থাকে, সেগুলোকেও কালো তালিকাভুক্ত করে দেওয়া। ওই ইমেইল বা মোবাইল নতুন করে ফেসবুক একাউন্ট খুলতে আর ব্যবহার করা যায় না। যত ইমেইল আছে আমার, যত মোবাইল আছে, সবই ফেসবুক দ্বারা কালো তালিকাভুক্ত।



আমাকে আমার নামে একাউন্ট খুলতে দেয়না ফেসবুক। তাই গতবার নামটা উল্টে, তসলিমা নাসরিনের জায়গায় নাসরিন তসলিমা লিখে আমাকে একাউন্ট খুলতে হয়েছিল। আমার নামটি কিন্তু অন্যদের ব্যবহার করতে দিচ্ছে ফেসবিক। এই নামে অন্যদের একাউন্ট খুলতে সুবিধে করে দিচ্ছে। একবার গুনে দেখেছিলাম তসলিমা নাসরিন নামে অন্তত একহাজার ফেক একাউন্ট আছে ফেসবুকে।



যতবারই আমি ফেসবুকে একাউন্ট খুলেছি বা পেইজ শুরু করেছি, জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সবের বিরুদ্ধে ধর্মান্ধ নারীবিরোধী সন্ত্রাসী জল্লাদরা ফেসবুকে রিপোর্ট করেছে। ফেসবুক পলিসি অত্যন্ত খারাপ একটা পলিসি। আমার শত্রুরা অনেকে মিলে রিপোর্ট করলেই আমি বাতিল হয়ে যাবো, ফেসবুক কর্তারা বিচার করবে না কে ভালো কে মন্দ।



ফেসবুক কর্তারা আমার বাংলা স্ট্যাটাসগুলো অনুবাদ করে দেখবে না কী লিখি আমি? যারা আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে, তারা ফেসবুক কী কারণে ব্যবহার করে? ফেসবুককে তারা ধর্মীয় সন্ত্রাস ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে, ফেসবুককে তারা নারীবিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করছে। ফেসবুক কোন পক্ষ নেবে, সমাজকে ধ্বংস করার কাজে যারা ফেসবুক ব্যবহার করে? নাকি সমাজকে নির্মাণ করার কাজে যারা ফেসবুক ব্যবহার করে?



পুঁতিগন্ধময় বৈষম্যের সমাজকে যারা বদলাতে চায়, মানুষকে যারা সমতা, সমানাধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলে, যারা মানুষকে ভালো কাজের জন্য প্রেরণা দেয়, পুরুষতান্ত্রিক রক্ষণশীল গণ্ডমূর্খরা যাদের বিপক্ষে লাফায়, তাদের কোনও অধিকার নেই ফেসবুকে থাকার?



ফেসবুক তবে কি শুধু অজাতশত্রুকেই চায়!যার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার কেউ নেই, যার লেখা সবারই সক্কলেরই পছন্দ হবে? ছিঃ ফেসবুক ছিঃ। আজ সারা পৃথিবীর মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে।এটি কোনও ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান নয়। আজ এই প্রতিষ্ঠানের আচার ব্যবহার সস্তা রোবোটের মতো।



ফেসবুকে যত একাউন্ট আছে তসলিমা নাসরিন নামে, সব ফেক, সব নকল। এইসব ফেক একাউন্ট যারা বানিয়েছে, তারা মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্যই বানিয়েছে। মানুষ মনে করছে ওই একাউন্টগুলো বোধহয় আমার। আর তারা আমার কথা বলে তাদের নিজের কথা গেলাচ্ছে নিরীহ পাঠকদের।



ফেসবুক কর্তাদের আমি অনেক বলেছি ওই ফেক একাউন্টগুলো বন্ধ করার জন্য। ফেসবুক বন্ধ করেনি। আমার রিপোর্টের কোনও মূল্য নেই। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের রিপোর্টে কোনও ফল পাওয়া যায় না। অরগানাইজড মৌলবাদী শক্তিই জিতে যায় ফেসবুকের এই অদ্ভুত পলিসিতে। ফেসবুক আমার নামে তৈরা করা ফেক একাউন্ট বন্ধ করতে নয়, বরং আমার আসল একাউন্ট বন্ধ করার জন্য উদগ্রীব। এর কারণ একটিই, আমার বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার কমপ্লেইন যায়।



দুই বাংলায় সরকার আমার উপস্থিতি নিষিদ্ধ করেছে, আমার বই নিষিদ্ধ করেছে, পত্র পত্রিকা আমার লেখা নিষিদ্ধ করেছে, প্রকাশকরা আমার বই প্রকাশ বন্ধ করেছে, সেকারণে ফেসবুকই ছিল ভরসা। ফেসবুকেই নিষেধাজ্ঞা আর সেন্সরশীপের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছি। ফেসবুকেই আমার সমস্ত মত আমি প্রকাশ করছিলাম।



আমার ফেসবুকের বন্ধু এবং অনুসারীদের প্রায় সবাই ছিল বাঙালি। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি। তারা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে পড়ছিল আমার লেখা। দ্রুত অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছিল। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল আমার ফেসবুকের লেখাগুলো। যারা আমার লেখা পড়ার সুযোগ পায় না, ফেসবুকের মাধ্যমে তারা সেই সুযোগটা পেয়েছিল।



পৃথিবীতে আর কোনও লেখক এত ব্যানিং আর এত সেন্সরশিপের শিকার নয়। এক আমিই। আমারই প্রবেশ নিষেধ সবখানে। এখন, শেষ আশ্রয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও কি আমার প্রবেশ নিষেধ? চিরকালের জন্য?



মৌলবাদী অপশক্তি সমাজটাকে দখল করে নিচ্ছে, কে দেশের ভেতর থাকবে, কে বেরিয়ে যাবে, কে বেঁচে থাকবে, কাকে মরতে হবে এই সিদ্ধান্ত তো এরা নিচ্ছেই। এই মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা ফেসবুকেও খুব অ্যাকটিভ। অরগানাইজড। মনে হচ্ছে এরা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে ফেসবুক। এরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কে ফেসবুকে থাকবে, কে থাকবে না।



ফেসবুক কর্তাদের বুদ্ধিসুদ্ধি বলে কিছু নেই। এটুকু বোঝার ক্ষমতা নেই যে তারা সন্ত্রাসীদের অঙ্গুলি হেলনে চলছে’।

তসলিমা নাসরিন, লেখক ও কলামনিস্ট।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ