আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

প্রধানমন্ত্রীর রামপাল বিষয়ক প্রেস কনফারেন্স: একটি পর্যবেক্ষণ

মাসকাওয়াথ আহসান  

রামপাল বিষয়ক প্রেস কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন সে বক্তব্যের যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিলো। পৃথিবীর যে কোন নীতি নির্ধারক তার একটি উন্নয়ন পদক্ষেপকে এভাবেই যৌক্তিকতা দিতে চেষ্টা করবেন।

কিন্তু যে সিনিয়র সাংবাদিকেরা প্রেস কনফারেন্সে প্রশ্ন করেছেন; তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে কৃতবিদ্য সাংবাদিক হওয়া সত্ত্বেও; এই প্রেস কনফারেন্সে প্রশ্ন করার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেননি বলে মনে হয়েছে। আর এটি ছিলো পরিবেশ, জ্বালানী ও উন্নয়ন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে প্রশ্ন করবার জন্য পরিবেশ সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকাই যথার্থ হতো। পৃথিবীর সব দেশেই তো তা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি সংবাদ সম্মেলনে শুধু মিডিয়ার সম্পাদক বা মালিক সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন বা তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আমন্ত্রণ জানানো হবে; এটা অত্যন্ত পশ্চাৎপদ চিন্তা।

নীতি নির্ধারণী প্রেস কনফারেন্সে বিষয় অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক প্রেরণের বিষয়টি প্রতিটি মিডিয়া প্রধানের পেশাদার কর্তব্যের মাঝে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে "আমন্ত্রণ জানানোর" ক্ষেত্রের এই ভুলটি সংশোধন করে দেয়া মিডিয়ার আমন্ত্রিত সিনিয়র সাংবাদিকদের দায়িত্ব ছিলো। কারণ তারা সবাই পৃথিবীর নানাদেশে সাংবাদিকতা কর্মশালায় এবং সাংবাদিক সম্মিলনীতে অংশ নিয়েছেন। তারা জানেন অন্যান্য দেশে বিষয় বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকেরা এক একটি প্রেস কনফারেন্সে যান। বৈশ্বিক মিডিয়া সংস্কৃতির খবর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যদি পৌঁছে না থাকে; তাহলে তা জানানোর কাজটা দেশের সিনিয়র সাংবাদিকদের।

প্রেস কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী সিনিয়র সাংবাদিকেরা প্রস্তুতিহীন সাংবাদিকতায় একরকম আত্মাহুতি দিলেন এই রামপাল বিষয়ক প্রেস কনফারেন্সে। অথচ তাদের অনেকেই অনুজপ্রতিমদের নিয়মিত বলে থাকেন, প্রেস কনফারেন্সে যাবার আগে প্রস্তুতি নিয়ে যেও।

এই প্রেস কনফারেন্স দেখে এটাকে তৈলব্রতের আসর বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকদের সতত বিনয়ী হতে হয়; এটা সাংবাদিকতার শিষ্টাচারের অংশ। একটু প্রস্তুতি থাকলে বিনয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করতে পারতেন সিনিয়র সাংবাদিকেরা; তাহলে বিনয়ের অনুবাদ তৈলব্রত হিসেবে দৃশ্যমান হতোনা।

এখানে আরেকটি প্রশ্ন রয়েছে; প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর চেয়েছিলো কীনা যে কেবল অপ্রস্তুত সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করবেন; প্রস্তুত সাংবাদিকরা আমন্ত্রণ পাবেন না বা প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন না! বিষয়টা এরকম হলে তা ক্ষমতাসীন সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অনুপস্থিতির সূচক হিসেবে বিবেচিত হবে।

যে সিনিয়র সাংবাদিকেরা অপ্রস্তুত সাংবাদিকতা করে সমালোচিত হলেন; তাদের সাংবাদিকতা পেশাদারিত্ব পুনর্ভাবনার সুযোগ রয়ে গেছে। সিনিয়র সাংবাদিকেরা আমাদের চোখের সামনে অনেক কঠিন সময় পাড়ি দিয়েছেন; সুতরাং তারাই এটা স্পষ্টভাবে পরিমাপ করতে পারবেন বাংলাদেশে বর্তমানে মিডিয়ার স্বাধীনতা ঠিক কতটুকু!

আর নবীন সাংবাদিকদের শাশ্বত সত্যটি জানা জরুরি যে, মিডিয়ার স্বাধীনতা কোন সরকারই প্লেটে করে দিয়ে যায় না; ওটা অর্জন করতে হয়। এই সতত স্বাধীনতার লড়াইটিই মিডিয়ার ইতিহাস। রাষ্ট্রের সংসদ, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগের কাছ থেকে জনগণের স্বার্থ উদ্ধার করে দেয়ার কাজটাই মিডিয়ার।

সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের নানা রাজনৈতিক দল, আমলা, নানা পেশার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হয়। কিন্তু সেই সম্পর্কে "নট সো ফার, নট সো নিয়ার" সোনালী সূত্রটি মেনে চলা খুবই জরুরি। কারো কাছ থেকে কোন উপহার না নেয়া, কারো বাসায় বা প্রেস কনফারেন্সে গিয়ে পরিবেশিত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে পরিমিতি সাংবাদিক তথা মিডিয়ার ব্যক্তিত্ব গঠন করে। গোটা পৃথিবীর সাংবাদিকেরা এরকম ছোট ছোট শিষ্টাচার অনুসরণের মাধ্যমে মিডিয়ার মেরুদণ্ডটি ধরে রাখেন। একজন সাংবাদিককে অবশ্যই মেরুদণ্ডী প্রাণী হতে হয়। কেঁচো মনোভাবাপন্ন মানুষের এ পেশায় আসা মানে সারাজীবন একটি অসম্মানজনক জীবন কাটিয়ে মৃত্যুতেই বিস্মৃত হওয়া।

সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে একটি সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত হওয়া এবং এ জীবনকে উদযাপনের সূক্ষ্মরুচিবোধ লালন করা। ক্ষমতা কাঠামো শেষ পর্যন্ত সৎ সাংবাদিককেই শ্রদ্ধা করে; সাধারণ মানুষও ভালোবাসে সতত সত্য উচ্চারণে ঋজু সাংবাদিকদের। পৃথিবীর খ্যাতিমান সাংবাদিকেরা সবাই সাদাসিধে জীবন যাপন করেছেন; আজো করেন। অন্যান্য পেশার মতো সাংবাদিকতাতেও যে অসততার বুলবুলি-আখড়াই চলে এটা অনস্বীকার্য। এই মানুষগুলো পৃথিবীতে আসেই এর পরিবেশ দূষণ ঘটাতে। এরা হয়তোবা জগতে ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝানোর গবেষণাগারের মন্দ গিনিপিগ।

বাংলাদেশের মিডিয়ার আগামী খুবই আলোকসম্ভবা। অপেক্ষাকৃত পেশাদার ও সুরুচিপূর্ণ একটি প্রজন্ম এখন মিডিয়ায় কাজ করে। মিডিয়া মালিকদের অপেশাদারিত্বের কারণে পেশা নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকদের কারো কারো অপেশাদারিত্বের কারণে পেশা সন্তোষ লাভ ও সৃজনশীলতা বিকাশ নিয়মিত বিঘ্নিত হয়। মেধাবীদের সঙ্গে মিডিওকারদের লড়াই অনগ্রসর সমাজগুলোতে একটু বেশীই থাকে। কিন্তু সমাজ যেখানে প্রতিদিন অগ্রসর হচ্ছে; সাধারণ মানুষ যেখানে প্রতিদিন সচেতন হচ্ছে, মিডিয়া যেখানে প্রতিদিন পেশাদারিত্ব প্রমাণে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি; সেখানে মেধাবী সাংবাদিক ছাড়া এ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত টেকা যাবে না; এটা কমনসেন্স।

উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির এই যুগে; ওয়েব মিডিয়া কানেক্টেড অবিভাজিত পৃথিবীতে "গ্যাটিস" দিয়ে কাজ চালিয়ে নেবার যুগটি অতিক্রান্ত প্রায়।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ