আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মীর কাসেমের ফাঁসি: রক্তাক্ত জন্মের ঋণ শোধ বাংলাদেশের

ফরিদ আহমেদ  

গত শনিবার রাতে (০৩-০৯-২০১৬) একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এটা এই ধরনের অপরাধে ষষ্ঠ মৃত্যুদণ্ড। এর আগে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়।

২০১৩ সালের ১৬ মে মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২৬ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাসেম আলীকে ১৪টি ঘটনায় অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক কার্যক্রম শেষে  ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মীর কাসেমকে অভিযোগ ১, ৫, ৮ এবং ১৩ থেকে বেকসুর খালাস দেয়। অভিযোগ ২ এর জন্য তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযোগ ১১ এবং ১২ বাদে বাকি সবগুলোতে (অভিযোগ ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০ ও ১৪) ৭ বছর করে কারাদণ্ড হয় তার।

রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়।

একাত্তর সালে ঢাকায় আল-বদর বাহিনীর প্রধান নির্যাতন কেন্দ্র ছিল মোহাম্মদপুরের শারীরিক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট। আল-বদর বাহিনী মূলত এখানেই মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের ধরে এনে অত্যাচার-নির্যাতন চালাতো, নির্মমভাবে হত্যা করতো। ঢাকার মতো প্রায় প্রতিটা শহরেই আল-বদর বাহিনীর এরকম নির্যাতন কেন্দ্র ছিল। চট্টগ্রামের নির্যাতন কেন্দ্র ছিল একটা হোটেল। নাম হোটেল ডালিম। চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় এর অবস্থান।

ডালিম হোটেলের আলবদর ক্যাম্প ছিল সব অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু। সব আটক, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা এখানেই ঘটেছে। এই ডালিম হোটেলের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বে ছিল মীর কাসেম আলী। তার পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ডালিম হোটেল পরিচালিত হতো।

মীর কাসেম আলী তখন ছিল জামায়াত-এ-ইসলামির ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি। এই ইসলামি ছাত্র সংঘ হচ্ছে আজকের ইসলামি ছাত্র শিবিরের পূর্বসূরি। ইসলামি ছাত্র সংঘের কর্মীদের দিয়েই গড়ে তোলা হয় কুখ্যাত কিলিং গ্রুপ আল-বদর বাহিনী। এই বাহিনী গঠনের মূল হোতা ছিল মতিউর রহমান নিজামী। নিজামী তখন নিখিল পাকিস্তান ইসলামি ছাত্র সংঘের প্রেসিডেন্ট। মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের চিহ্নিত করে পাকিস্তান বাহিনীর সহায়তায় তাদের নিশ্চিহ্ন করাটাই ছিল আল-বদর বাহিনীর মূল কাজ।
চট্টগ্রাম শাখা ইসলামি ছাত্র সংঘের প্রেসিডেন্ট হিসাবে পদাধিকার বলে চট্টগাম শাখা আল-বদরেরও প্রধান কমান্ডার ছিল মীর কাসেম। তার নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধকালে ডালিম হোটেলে স্থাপিত হয় আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র। একাত্তরে চট্টগ্রামে এই ডালিম হোটেলকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতো সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ। ডালিম হোটেল মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিল হত্যাপুরী হিসেবে।

মুক্তিযুদ্ধকালে ঈদুল ফিতরের পরদিন মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে আটক করে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। ২৮ নভেম্বর মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদরের সদস্যরা তাকে দিনভর নির্যাতন করে। নির্মম অত্যাচারে জসিম মারা যান। পরে নিহত আরও পাঁচজনের সঙ্গে জসিমের মরদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয় চরম অবহেলায়। এটাই হচ্ছে অভিযোগ ১১।

আর অভিযোগ ১২ হচ্ছে এরকম। নভেম্বর মাসেরই কোনো একদিন হাজারী লেনের বাসা থেকে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে আটক করে আলবদর সদস্যরা। ওই সময় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হাজারী লেনের ২৫০ থেকে ৩০০ ঘরে আগুন দেওয়া হয়। পরে জাহাঙ্গীর আলমকে আলবদররা ছেড়ে দিলেও রঞ্জিত ও টুন্টুকে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন ও পরে হত্যা করা হয়।

এই দুই অপরাধে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল।

২.
২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে বেকসুর খালাস চেয়ে  আপিল করেন মীর কাসেমের আইনজীবীরা। আপিলে তার খালাসের  পক্ষে ১৮১টি  যুক্তি তুলে ধরা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি মীর কাসেমের পক্ষে প্রাথমিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন তার আইনজীবীরা। গত ৯, ১০, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি মীর কাসেমের আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ৮ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ৬ জনকে নির্যাতন করে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ অভিযোগ ৪ এবং ১২ থেকে মুক্তি দেয় মীর কাসেমকে। অন্য অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডকে বহাল রাখে। অভিযোগ ১১ এর ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ‘অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী যথোপযুক্ত’বলে মন্তব্য করে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, ট্রাইব্যুনালের যে রায় ছিল সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রায়ের পর মূল যে পার্থক্যটা হয়েছে, সেটা হচ্ছে অভিযোগ ১২ এর ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায়কে বাতিল করে দিয়ে সেই অভিযোগ থেকে মীর কাসেমকে মুক্তি দিয়েছে আপিল বিভাগ। সাক্ষীদের দুর্বল, অনির্ভরযোগ্য, পরস্পরবিরোধী এবং কাল্পনিক সাক্ষ্য, এটর্নি জেনারেলের উপস্থাপিত দলিলপত্রাদি শক্তিশালী না হওয়া এবং ট্রাইব্যুনাল আইনের ভুল ব্যাখ্যা করেছে, এই বিশ্লেষণে গিয়ে আপিল বিভাগ মীর কাসেমকে এই অভিযোগ থেকে পুরোপুরি মুক্ত করে দেয়। ৪৩ ধারার উপধারা ২ এ বলা আছে আইসিটি এক্টের ৩(২) অভিযুক্ত একজন ব্যক্তিকে তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্দোষ হিসাবে গণ্য করা হবে। এই আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে যখন কাউকে অভিযুক্ত করা হয়, তখন বাদীপক্ষ যতক্ষণ পর্যন্ত না সন্দেহাতীতভাবে তা প্রমাণ করতে সক্ষম হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে নির্দোষ হিসাবে ধরে নেওয়া হবে। ৫০ ধারায় বলা হয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বাদীপক্ষের উপর। যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে কোনো বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হয়, অভিযুক্ত সেই সন্দেহের সুযোগ পাবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আপিল ডিভিশন উল্লেখ করে যে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ ১২ প্রমাণ করতে বাদীপক্ষ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে ভুল এবং সংখ্যালঘিষ্ঠের মতামতকে সঠিক আখ্যা দিয়ে এই অভিযোগ থেকে অভিযুক্তকে মুক্ত করে দেয় আপিল ডিভিশন।

৩.
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গত ১৯ জুন ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মীর কাসেম আলী। মোট ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়। যদিও রিভিউ পিটিশন অভিযোগ ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ এবং ১৪-র জন্য করা হয়, কিন্তু আবেদনকারীর কৌঁসুলি পরিষ্কার করে বলে দেন যে, অভিযোগ ১১ ছাড়া বাকিগুলো নিয়ে তারা রিভিউ এর জন্য জোর দিচ্ছে না। যদিও এর মানে এই না যে, তাঁরা এই সব অভিযোগের রায় এবং দণ্ডাজ্ঞা তাঁরা মেনে নিয়েছেন। তার যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু এই আদালত অভিযোগ ১১ এর ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে, সেখানে অন্য অভিযোগ নিয়ে যুক্তিতর্ক করে আদালতের সময় নষ্ট করার কোনো অর্থ নেই যদি অভিযোগ ১১ এর এই রায় এবং দণ্ডাজ্ঞা বহাল থাকে। কাজেই, তিনি অভিযোগ ১১ এর ক্ষেত্রেই তিনি তার যুক্তিতর্ক সীমাবদ্ধ রাখবেন বলে তিনি জানান। আগেই উল্লেখ করেছি, অভিযোগ ১১ হচ্ছে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা জসিম হত্যা বিষয়ে। বাদীপক্ষ এই অভিযোগ প্রমাণ করতে গিয়ে সাক্ষী ১ সৈয়দ মোঃ ইমরান, সাক্ষী ২ মোঃ সানাউল্লাহ চৌধুরী, সাক্ষী ৩ নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সাক্ষী ১৬ জাহাঙ্গীর চৌধুরী, সাক্ষী ১৭ হাসিনা খাতুন, সাক্ষী ১৮ এস, এম, জামাল উদ্দিন, সাক্ষী ১৯ এস, এম, সানোয়ার উদ্দিন, সাক্ষী ২০ লুৎফর রহমান ফারুক এবং সাক্ষী ২৪ নুরুল ইসলামের উপর নির্ভর করেছেন।

অভিযুক্ত আবেদনকারী মীর কাসেম আলীর বিজ্ঞ কৌঁসুলি দাবি করেন যে, এইসব সাক্ষীরা জসিম হত্যায় অভিযুক্তের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে সাক্ষীরা নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। রিভিউ পিটিশনে যদিও সাক্ষীদের বিষয়ে অভিযোগ করার সুযোগ থাকে না, তারপরেও আদালত অভিযুক্তের আইনজীবীকে সাক্ষী এবং সাক্ষ্যের বিরুদ্ধে তার অভিযোগনামা পেশ করার সুযোগ করে দেয়।

তার দ্বিতীয় বক্তব্য ছিল, যদি ধরেও নেই যে আবেদনকারী আল-বদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন এবং ডালিম হোটেল থেকে তিনি তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন, তা সত্ত্বেও তাকে মূল আসামী হিসাবে চিত্রায়িত করে আইনের ত্রুটি করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে,  ট্রাইব্যুনাল থাকে সহযোগী হিসাবে বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, কিন্তু এই আদালত তাকে অভিযোগের প্রধান আসামী হিসাবে গণ্য করে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এ কারণে এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের শাস্তি এই আদালত বহাল রেখে মৌলিক একটা ত্রুটি ঘটিয়েছে।

তার শেষ বক্তব্য ছিল, আসামী মানবতা বিরুদ্ধ অপরাধে সংশ্লিষ্ট ছিল সেটা ধরে নিলেও,  জসিম হত্যায় দেওয়া তার বিরুদ্ধে রায়কে কোনোভাবেই গ্রহণ করা যায় না এজন্য যে জসিম হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার বিরুদ্ধে কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। এছাড়া আসামীর সামাজিক এবং রাজনৈতিক মর্যাদা, বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান তৈরি করে জাতির প্রতি তিনি যে অবদান রেখেছেন, সেগুলোকে বিবেচনায় রেখে তার শাস্তিকে লঘু করা যেতে পারে।

৪.
আসামী পক্ষের এই রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁদের উল্লেখিত বিষয়গুলোকে গভীরভাবে বিবেচনা করে আদালতও একটা বক্তব্য দেয়। আদালত তার বক্তব্যে বলে, বিজ্ঞ কৌঁসুলি যে সব পয়েন্ট এখানে তুলেছেন, সেগুলো এই মামলার আপিলের সময়ও তোলা হয়েছিল। এই আদালত দুই বাদী এবং বিবাদী দুই পক্ষেরই প্রমাণগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে, ‘আসামী ইসলামি ছাত্র সংঘ এবং ঘাতক বাহিনী আল-বদরের একজন অত্যন্ত শক্তিশালী কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ক্যাডার ফোর্স রাখা অত্যন্ত শক্তিশালী একটা রাজনৈতিক দল জামায়াত-এ-ইসলামিরও একজন কেন্দ্রীয় নেতা তিনি।’

সাক্ষী ২, ৩, ১৬, ১৭ এবং ২০ এর সাক্ষ্য অখণ্ডনীয়। সেই সব সাক্ষ্য থেকে সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, অভিযুক্ত চট্টগ্রামে আল-বদর বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছেন। ডালিম হোটেলের নিয়ন্ত্রণ আল-বদর বাহিনী নিয়েছিল। সেটা আল-বদর বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হতো। অভিযুক্ত সেই বাহিনীর কমান্ডার ছিলো। ডালিম হোটেলের  সব সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা, কৌশল, হামলা, বন্দিকরণ, অত্যাচারের মাত্রা এবং পদ্ধতি, এবং লাশগুলোকে গুম করার সব সিদ্ধান্ত অভিযুক্ত একাই নিতো। ডালিম হোটেলে ধৃত তরুণ মুক্তিযোদ্ধা জসিম এবং আরো চার-পাঁচজন নিরীহ ব্যক্তিকে ডালিম হোটেলের ছাদে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়। তারপর তার লাশ ছাদ থেকে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। সাক্ষী ২ এবং ১৬ তাঁদের জানালা থেকে জসিমের নিথর দেহ নদীতে ছুড়ে দেবার সময় অভিযুক্তকে ডালিম হোটেলে দেখেছে।

ট্রাইব্যুনালের অভিযোগে আসামীকে সহযোগী দেখানো হয়েছিল কিন্তু এই আদালত তাকে প্রধান আসামীবানিয়েছে, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত বলে, বাদীপক্ষ যখন অভিযোগ আনে, তখন অভিযুক্তকে সহযোগী হিসাবে বর্ণনা করেছিল। এটা বাদীপক্ষের ভুল। কিন্তু এই ভুল তথ্য, প্রমাণের ভিত্তিতে যদি দেখা যায় যে, তিনি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছেন, তবে তাকে  প্রধান আসামী হিসাবে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাবক হিসাবে কাজ করতো না। আসামীর উপস্থিতিতেই বাদীপক্ষের সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তঁর আইনজীবীরা সাক্ষীদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পাল্টা জেরাও করেছেন। সেই সাক্ষীরা তার উপস্থিতিতেই তাকে প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এই আদালত সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে দেখেছে যে, আবেদনকারী সরাসরি অত্যাচার এবং নির্যাতনে অংশ নিয়েছেন। তিনি সুপিরিয়র কমান্ডার হিসাবে কাজ করেছেন এবং নির্দেশ দেবার ক্ষমতা এবং আল-বদরের উপর নিয়ন্ত্রণও ছিলো। তিনি জসিম হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। কাজেই, কোনো সন্দেহ নেই যে, তিনিই এই হত্যা মামলার প্রধান আসামী।

আদালত আরো উল্লেখ করে যে, আদালতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এটাই দেখা যে অভিযুক্ত ন্যায়বিচার পাচ্ছেন। কী জন্য তার বিচার হচ্ছে সেটা তিনি জানেন কিনা, তার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত মূল তথ্য প্রমাণ এবং যুক্তি তাকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা এবং তাকে  নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করতে অবাধ এবং পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কিনা। যদি কোনো অভিযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে লড়েন, তবে এই উপসংহারে আসা যায় যে, অভিযুক্ত সন্তুষ্ট এবং যে জন্য তার বিচার হচ্ছে সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞাত। ন্যায়বিচার কোথাও ব্যাহত হচ্ছে কিনা সেটাও আদালতের দেখার কথা। এই ক্ষেত্রে তথ্য-প্রমাণাদি যাচাই-বাছাই এবং বাদী সাক্ষীদের জেরা এবং পাল্টা জেরা, বিবাদিপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেখে সন্তুষ্ট। অভিযুক্তকে প্রধান আসামী হিসাবে অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের কোনো ক্ষুণ্ণতা হয় নি বলেই আদালত মনে করে।

৫.
যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষশক্তি হিসাবে আমরা সবাই খুশি এতে। দেশ রাজাকারমুক্ত হচ্ছে, কলঙ্কের দাগ মুছছে একটু একটু করে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজাকারেরা যে সমস্ত অপরাধ করেছে তার বিচার দেরিতে হলেও হচ্ছে, এটাই আনন্দের বিষয় আমাদের জন্য। সেই সাথে তৃপ্তিকরও। কিন্তু, এই খুশি, আনন্দ এবং তৃপ্তি ছাড়িয়েও আরো কিছু কাজ বাকি আছে আমাদের সকলেরই।

প্রথমেই দেখা যাক, জামায়াতের রাজনীতিতে মীর কাসেমের গুরুত্বটা ঠিক কোন জায়গায় ছিল। আমরা শুনেছি মীর কাসেম প্রচুর পরিমাণে টাকার মালিক। ট্রাইব্যুনালের রায় পাল্টানোর জন্য দেশি এবং বিদেশি লবিয়িস্টদের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে মীর কাসেম অকাতরে। আসুন দেখি, তার টাকার উৎস কোথায় এবং কোন কারণে সে জামায়াতের জন্য এতখানি গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৭১ সালে মীর কাসেম জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘের সাথে যুক্ত ছিল। ষাটের দশকের শেষের দিকে চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিল সে। একাত্তর সালের শেষের দিকে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামি ছাত্র সংঘেরও সাধারণ সম্পাদক হয় মীর কাসেম। আল-বদর বাহিনী মূলত গড়ে উঠেছিল ইসলামি ছাত্র সংঘের কর্মীদের দিয়ে। ইসলামি ছাত্র সংঘের নেতা হিসাবে মীর কাসেম পদাধিকার বলে চট্টগ্রামে আল-বদর বাহিনীরও কমান্ডার ছিল।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার সাথে সাথেই এই আল-বদর ঘাতক পালিয়ে সৌদি আরব চলে যায়। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর আরো অনেক পলাতক রাজাকারের সাথে সেও দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে এসেই শুরু করে ইসলামি ছাত্র সংঘের পুনর্গঠনের কাজ। একাত্তর এর আগের সেই কুখ্যাত নাম থেকে কিছুটা সরিয়ে নিয়ে এর নামকরণ করা হয় ইসলামি ছাত্র শিবির। এর প্রথম সভাপতি হয় মীর কাসেম।

কিন্তু, এটাই মীর কাসেমের প্রধান কাজ না জামায়াতের জন্য। মীর কাসেম ব্যবসা বাণিজ্য ভালো বুঝতো। বিদেশ থেকে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সেই সময় জামায়াতের জন্য প্রচুর পরিমাণে পেট্রো ডলার আসতো। এগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল মীর কাসেম। তার হাত দিয়েই বিলিবণ্টন হতো সব টাকা পয়সার। এই সব টাকার বেশ খানিকটা অংশ মীর কাসেম ব্যবহার করে নানারকম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে। আশির দশক থেকে শুরু হয় এই কাজ। ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, কেয়ারি লিমিটেড, ফুয়াদ আল খতিব, রাবিতা আলম আল ইসলামি, দিগন্ত মিডিয়ার মত সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সাথে জড়িত ছিল সে। এই রাবিতা আলম আল ইসলামির মাধ্যমেই জামায়াত আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে গড়ে তোলে গোপন ট্রেনিং সেন্টার। সেখানে শিবিরের ছেলেদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ দখলের লক্ষ্যে। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং ব্যবস্থাপনার সাথে নিজেকে সংযুক্ত করে মীর কাসেম নিজেকে জামায়াতের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সে কারণেই জামায়াতের রাজনীতিতে ছিল তার ব্যাপক প্রভাব এবং বিপুল কদর।

আজ মীর কাসেম আর নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তার প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। মীর কাসেম না থাকলেও এগুলো সক্রিয় থাকবে। সেই ব্যবস্থা মীর কাসেম নিজেই করে গিয়েছে। এগুলোর দেওয়া দুধ খেয়েই বেঁচে আছে এবং থাকবে বর্তমানের এবং ভবিষ্যতের জামায়াত-শিবিরেরা। এগুলো দিয়েই পুষ্ট হবে ভবিষ্যৎ রাজাকার ছানারা, তারপর সেই পুষ্ট শরীরের শক্ত হাতে আমাদের জন্য ছুরি তুলে নেবে। সে কারণেই বলছি, এই কাজটা বন্ধ করতে হলে জামায়াতের অর্থ উপার্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। ব্যাপক প্রচার এবং প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে সেগুলোকে জনগণের মনে কালো তালিকা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলতে হবে। এগুলোকে দুর্বল করে দিলেই জামায়াত-শিবিরের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। যতই মুখে বলুক না কেন, জামায়াত-শিবির আদর্শের রাজনীতি করে, পয়সা পকেটে না আসলে ঐ আদর্শ কেউ পুছেও দেখবে না।

ধাঁড়ি রাজাকারদের মধ্যে অনেকগুলোই পূর্ণচন্দ্রের দেশে চলে গেছে এর মধ্যেই, এখন সময় এসেছে বাচ্চা রাজাকারগুলোকেও অর্ধচন্দ্র দেবার।

৬.
মীর কাসেমের আপিলের রায় খারিজের সংবাদ যখন আমি পেলাম, কাকতালীয়ভাবে ঠিক তখন আমি তার গুরু যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর রায়ের অনুবাদ কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এদের রায়গুলো অনুবাদ করতে গিয়ে টের পেয়েছি কী পৈশাচিক, কী বীভৎস, কী রকম হিংস্র এবং পাষণ্ড লোক এরা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, সেই অপরাধ হয়তো মাফ করে দেওয়া যায়, কিন্তু, মুক্তিযোদ্ধাদের উপর, সাধারণ মানুষের উপর এরা হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো অসংখ্য মানবতা বিরোধী কার্যকলাপ করেছে, সেগুলোর কোনো মাফ হয় না।

স্বাধীনতা অর্জনের পঁয়তাল্লিশ বছর পরে হলেও, এদের যে বিচার হচ্ছে, সাজা হচ্ছে, সেজন্য অগুনতি মানুষের মতো আমিও খুশি, তবে এই খুশি প্রতিশোধস্পৃহাজনিত কারণে নয়। মানবসভ্যতাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে গেলে অপরাধীর সাজা দিতে হয়, নইলে ভবিষ্যতে একই ধরনের অপরাধ আবার ঘটার সম্ভাবনা থাকে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া যাবে এই নিশ্চিত ভাবনা থেকে। প্রতিটা সভ্য সমাজ অপরাধের বিচার করে এই মানসিকতা থেকেই। আমরাও তাই করছি। বিচারটা আগে করতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু পরে করেছি বলেও কোনো ভুল হয় নি। অপরাধের বিচার করে সাজা অপরাধীর মৃত্যুর পরেও দেওয়া যায়। অপরাধী এখানে মুখ্য নয়, অপরাধটার বিচার করাটাই আসল কাজ।

একটা দেশের জন্মের সময়ে যারা একে মেরে ফেলার জন্য অস্ত্র তুলে আস্ফালন করেছিল, আজ তারা হাত জোড় করে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে, এটা দেখার চেয়ে সুখকর আর কিছু নেই।

রক্তাক্ত জন্মের স্মৃতি নিয়ে যে দেশ উঠে এসেছে ধ্বংসস্তূপ পেরিয়ে, সাফল্যের শীর্ষবিন্দুতে সেই দেশ একদিন যাবেই। আর কার কতটুকু বিশ্বাস আছে জানি না, তবে আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, আজ হোক কাল হোক, একশো কিংবা পাঁচশো বছর পরে হোক, এই দেশটা একদিন সকল দেশের সেরা দেশে পরিণত হবে। নিজের জন্মের জন্য এতো রক্তদান, এতো প্রাণপাত, এতো আত্মত্যাগ আর কোনো দেশ যে করে নাই পৃথিবীতে।

ফরিদ আহমেদ, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ