প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আরিফ জেবতিক | ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
নতুন মডেলের মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ফারদিন হুদা মুগ্ধ নামের এক বখাটে ছেলে তার বাবা মাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে! মাত্র এসএসসি পাশ করা এই ছেলেকে কিছুদিন আগেই তার বাপ ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন, ছেলে এখন নতুন মোটরসাইকেল কিনতে চেয়েছে, সেটা না পেয়ে মা-বাপকে পুড়িয়ে দিচ্ছে! রিয়েলি?
এখন আমি যদি খারাপ কিছু বলি তাহলে সবাই নির্ঘাত তেড়ে এসে বলবেন, 'একটা পরিবার পুড়ে মরতে বসেছে আর তুমি এসেছ আলুপোড়া খেতে।' ওয়েল, আলুপোড়া খাবার জন্য নয়, আপনি আমি নিজেরা যাতে পরবর্তী আগুনে পোড়ার শিকার না হন, এজন্যই লিখছি।
আমাদের দেশের কিছু কিছু মা-বাপের মতো অপত্য অন্ধ সন্তান স্নেহ বিশ্বের আর কোনো জাতির মাঝে আছে কী না আমার জানা নেই। কিছু কিছু মা-বাপ সুস্থ সন্তান জন্ম দেন ৯ মাসে আর বাকি জীবন সেই সন্তানকে পঙ্গু বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সন্তানদের হাতে অতিরিক্ত টাকা দেয়ার কুফলে আগুনে পুড়ে যাওয়া হয়তো একটি এক্সট্রিম ঘটনা, কিন্তু নজর বুলিয়ে দেখবেন আপনার আমার আশেপাশে ছোটখাটো ঘটনা খুব কম নয়।
বছর কয়েক আগে মোহাম্মদপুরের এক লোক পত্রিকার পাতায় আহাজারি করেছিলেন, কারণ তিনি ক্লাস এইটে উঠার পরে সন্তানকে 'ভিডিও গেম' খেলার জন্য দিনে ৮শ টাকা দিতেন। সেই সন্তান ভয়াবহ মাদকাসক্ত হয়ে এরকম খুনের ঘটনাই ঘটিয়েছিল। এখন যদি ক্লাস এইটের বাচ্চা দিনে ৮শ টাকা পায়, তাহলে তার কৃতকর্মের জন্য কি সেই সন্তানের জেল হওয়া উচিত নাকি মা-বাপের?
ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী একজনের মা ছিলেন খ্যাতনামা চিকিৎসক, মাথা চাপড়ে বলেছিলেন যে এসএসসি পাশ করার পরে ছেলেকে বাইক কিনে দেয়াটা ছিল তার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল।
আমরা অনেকেই হয়তো বলব যে আমাদের বাপু এত টাকা নাই যে এসএসসি পড়ুয়া ছেলেকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে বাইক কিনে দেব কি দিনে ৮শ টাকা হাতখরচ দেব। ঠিক আছে, এটা কিন্তু একটা পার্ট।
অন্য পার্টে আসি। আমরা কি আমাদের সন্তানদেরকে স্বনির্ভর করে বড় করছি?
বিদেশেও দেখেছি নিজের বাচ্চাকাচ্চাকে তাঁরা স্বনির্ভর করে গড়ে তুলে।
আমরা বাচ্চাদেরকে নিজেদের বিছানাটা ঠিক করতে শেখাই না। ৮ বছরের বাচ্চা কিন্তু দিব্যি নিজের বিছানা ঠিক করতে পারে, নিজের বই গুছিয়ে রাখতে পারে এমনকি রাতের খাবার পরে অন্তত নিজের এঁটো প্লেটটি রান্নাঘরে নিয়ে রেখে আসতে পারে।
বাসার বাইরে নানা ঝুঁকি আছে বলে সন্তানকে আগলে রাখি, সে ভালো কথা-কিন্তু ঘরের ভেতরে সন্তানকে তো অন্তত স্বনির্ভরতা কিছুটা শেখানো উচিত।
দ্বিতীয় বড় বিষয়টি হচ্ছে নিজের সন্তানকে শুরু থেকেই এই শিক্ষা দেয়া যে জীবন খুব কঠিন, এখানে চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না, অর্জন করে নিতে হয়। বাচ্চারা চাইলেই সব খেলনা কিনতে পারবে না, সেটার একটা রুটিন থাকা দরকার।
আপনার যতই টাকা পয়সা থাকুক সেটি আপনার, আপনার বাচ্চার জন্য সেটি অফুরন্ত করে রাখার কোনো দরকার নেই। প্রয়োজন আর বিলাসিতা এক জিনিস নয়।
ক্লাস টেনের বাচ্চা একটা বাইসাইকেল পেতে পারে অবশ্যই, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ৫ লক্ষ টাকার মোটরবাইক নয়।
স্কুল পড়ুয়া একটা বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য যদি মোবাইল ফোন কিনে দিতেই হয়, সেটি হওয়া উচিত একেবারেই সস্তা দামের চাইনিজ সেট, শুধু ফোন আর টেক্সট মেসেজ করা যায় এমন 'আনস্মার্ট' ফোন। সেই ফোনও বাসায় আপনার জিম্মায় থাকা দরকার।
-এগুলো সবই আমরা জানি।
কিন্তু আমরা মানি কি?
যদি না মানি, তাহলে নিজের সন্তানকে পঙ্গু কি বখাটে বানানোর দায়ভার কি আমাদের নিজেদের নয়?
নিজে দায়িত্বহীন আচরণ করে জাতির জন্য একটি অকাট আত্মবিশ্বাসহীন অকর্মা নাগরিক তৈরি করাটা কি ন্যায্য হয়?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য