আজ মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সিডনীতে ফাদার্স ডে: ডেভিড হালদার ‘ড্যাড নং ১’

রণেশ মৈত্র  

অতীতে তিনবার সিডনী এসেছি কিন্তু কোনবারই সেপ্টেম্বর ৪ তারিখে এমন আয়োজন দেখিনি। উপলক্ষ ফাদার্স ডে।

অস্ট্রেলিয়া জুড়ে দিনটি পালিত হয় পিতাদের পুত্র কন্যাদের নানাবিধ আয়োজনে। বহুবিধ উপায়ের সামগ্রী ও শ্রদ্ধা নিবেদিত হয় নিজ নিজ পিতার প্রতি তাঁদের সন্তানদের দ্বারা। এবারে, আমার কাছে অন্তত: মনে হয়েছে বেশ ব্যতিক্রমী আয়োজনে এই দিনটি পালিত হলো দেখে অনেকটা অভিভূত হয়েছি।

মনে মনে ভেবেছি বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতিতেও তো বাবা-মায়ের এমনতর শ্রদ্ধা-আন্তরিকতার সম্পর্কের সাক্ষাত পেয়ে থাকি আমরা ইতিহাসের পাতা উল্টালে। তবে উপহার সামগ্রী প্রদান এবং কোন নির্দিষ্ট দিনে “ফাদার্স ডে” জাতীয় দিবসের কোন হদিশ অবশ্য মেলে না।

এবার দিনটি শুরু হলো এইভাবে। অভ্যাস মাফিক সকাল সাতটার মধ্যে সহধর্মিণী পূরবী মৈত্র ও আমি দোতলার বেডরুমে ঘুম থেকে উঠে নীচের তলায় গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে দু’জন যথারীতি দুটি করে বিস্কুট ও এক পেয়ালা করে গরম চা খেলাম। খানিক পরে প্রাত: কৃতাদি সেরে আমি মর্নিং ওয়াক করে এসেই দেখি নাতনি ঈহিতা ও নাতি অনির্বাণ গভীর মনোযোগ সহকারে কিছু নাস্তা তৈরি করে নিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলাম হঠাৎ এমন? উপলক্ষটা কি? হেসে ঈহিতা জানালো, আজ ফাদার্স ডে তো তাই আমরা বাপির ব্রেকফাস্ট তৈরি করে বাপিকে দিতে যাব। তার আগে তোমাকে দিলাম।

প্লান করে নাস্তা করলাম, অত্যন্ত সুস্বাদু। খানিক পরে উপর থেকে বড় ছেলে প্রবীর ও পুত্রবধূ অপর্ণা নেমে এসে দিবসটি উপলক্ষে আমাকে প্রণাম করে মূল্যবান কিছু গিফট দিলো। প্রবীর দেখালো ঈহিতা ও অনির্বাণ তাকে যে উপহার সামগ্রী দিয়েছে সেগুলো। সেগুলিও বেশ দরকারি এবং সুন্দর গিফট। প্রবীর অত:পর জিজ্ঞেস করলো, সকালে নাশতা করেছি কি না-বললাম করেছি। ঈহিতা তো সর্বাগ্রে আমাকেই দিয়েছে। তখন প্রবীর জিজ্ঞেস করলো, চা খেয়েছো নাশতার পর? বললাম, না। প্রবীর গিয়ে কফি তৈরি করে আনলো -বেশ সুস্বাদু লাগল কফিটা।

অত:পর দেশে মীর কাশেমের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড এবং এ জাতীয় নানা খবর নিয়ে কথাবার্তা শেষ করতে করতে দুপুর এগিয়ে আসতেই প্রবীর বলে উঠলো বাবা আজ দুপুরে আমরা সবাই ডেভিড দার বাসায় যাব-ফাদার্স ডেতে আয়োজনে যোগ দিতে। ওখানেই দুপুরের খাবার নিমন্ত্রণ আমাদের সবার। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। ডেভিড দা "Dad No award" পেয়েছেন- তাঁকে সবাই অভিনন্দনও জানাব।

দূরদেশে এসে এ জাতীয় নিমন্ত্রণ অত্যন্ত আনন্দদায়ক। প্রবীর অনেকের সাথে দেখা আলাপ পরিচয়ের দুর্লভ সুযোগ-সবাই মিলে নানাপদের খাওয়া-দাওয়া এই আনন্দকে মধুরতর করে তোলেন। তাই যথারীতি কাপড়-চোপড় পরে রেডি হয়ে নিলাম। যথাসময়ে আমরা ছয়জনই অর্থাৎ পূরবী, অর্পনা, ঈহিতা, অনির্বাণ, প্রবীর ও আমি পৌঁছে গেলাম ডেভিডের বাসায়। মিলিত হলাম তার নিকটজনদের সাথে।

ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে ডেভিড ও তার পরিবারের সবাই খৃষ্টান। পূরা নাম ডেভিড হালদার ও তাঁর স্ত্রীর নাম নমিতা হালদার। দুজনেই সমাজকর্মী। বছরের বেশীর ভাগ সময় উভয়েই থাকেন বাংলাদেশে - ঢাকার অদূরে যেখানে H.E.L.P নামক একটি এন,জিও তাঁরা পরিচালনা করেন।

আবার যখনই সিডনীতে আসেন এখানে তাঁদের কমিউনিটির সেবামূলক কাজে অংশ গ্রহণ করেন। বিশ্রাম নেই তাঁদের। উভয়েই অত্যন্ত অমায়িক, বন্ধু-বৎসল এবং বলা যায় শিশু ও মানব প্রেমী। নিজেদের দুটি পুত্র সন্তান তারাও সাবালক। নাম নাথান ও মার্ক। উভয়ের কাছে ডেভিড একজন আদর্শ বাবা এবং তাদের বিবেচনায় তাদের বাবা একজন অতুলনীয় বাবা। আবার যে এন,জি,ও-র তিনি প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ঢাকার অদূরে সাভারে এলে তার কার্যক্রম সেখানে শত শত হতদরিদ্র শিশুকে লালন পালন এবং থাকা-খাওয়া, লেখাপড়া, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রভৃতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করে তাদেরকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজে লিপ্ত রয়েছেন ডেভিড।

সেই ডেভিড হালদার বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুরের অন্তর্গত গোপালগঞ্জের সন্তান। তাঁরা ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়া চলে আসেন উচ্চতর লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে। দেশে থাকাকালে মিশনারি কাজে লিপ্ত হয়ে তিনি দরিদ্র সন্তানদের দু:খ কষ্টে ব্যথিত বোধ করেন এবং নানা ভাবে তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা দিতে ব্রতী হন। ১৯৯০ সালে স্কয়ারের চেয়ারম্যান ও তিনি H.E.L.P প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে দরিদ্র সন্তানদের থাকা, খাওয়া চিকিৎসা, শিক্ষা দানের তথা সেখানে ঐ অবহেলিত শিশু সন্তানদের প্রতি এতকাল ধরে পিতৃসূলভ স্নেহ প্রীতি, ভালবাসা প্রদানের গৌরবোজ্জ্বল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ অস্ট্রেলিয়ান ফাদার্স ডে কাউন্সিলর এবং চিলড্রেন্স্ চ্যারিটি শেফার্ড সেক্টরের পক্ষ থেকে এবার মাত্র কয়েকদিন আসে তাঁকে “ড্যাড নাম্বার ওয়ান” এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

H.E.L.P অর্থাৎ health Education, Leadership Program নামক এই এস,জি, ও টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী এবং ডাইরেক্টর ডেভিড হালদার। তবে এই জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানটিকে তার যাত্রা শুরুর লগ্নে স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী সাভারে জামি কিনে দিয়ে স্থায়ী দালান-কোঠা নির্মাণে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন।

প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৪৫০ জন ছেলে মেয়ে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় শিক্ষা (দশম শ্রেণী পর্যন্ত) খাওয়া, চিকিৎসা, সেবা এবং আত্মকর্ম সংস্থানের উপযোগী হয়ে উঠার জন্য তাদেরকে নানাবিধ হাতের কাজের প্রশিক্ষণ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রভৃতিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এগুলির সার্বক্ষণিক পরিচালনায় থাকেন ডেভিড হালদার। উভয়ের অপরিসীম সেবা ও পর্যবেক্ষণে প্রতিষ্ঠানটি অসাধারণ একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছে। শিশুরাও মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার বিপুল সুযোগ পেয়েছে।

সংক্ষেপে এটাই হলো তাঁর 'Dad No 1' এওয়ার্ডে ভূষিত হওয়ার পটভূমি।

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ