আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বিপ্লবী প্রীতিলতার আত্মাহুতি দিবস কবে?

ফরিদ আহমেদ  

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেছিল ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের কোনো একদিন রাতে। সেই আক্রমণের শেষে বিপ্লবীরা যখন ফিরে যাচ্ছিলো, পিছন থেকে আক্রান্ত হয় তারা। প্রীতিলতা আহত হন। বন্দি হবার পরিবর্তে নিজের কাছে রাখা সায়ানাইড ক্যাপসুল খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

বিপ্লবী প্রীতিলতার এই আত্মাহুতি দিবসটা আসলে ঠিক কবে? তেইশে সেপ্টেম্বর, নাকি চব্বিশে সেপ্টেম্বর?

আমি সবসময়ই জেনে এসেছি যে, প্রীতিলতার মৃত্যুদিবস চব্বিশে সেপ্টেম্বর। উইকি ঘাটতে গিয়ে বিস্ময়ে অবাক হয়ে দেখলাম যে, একাধিক জায়গায় ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দিন ও তাঁর মৃত্যুদিবস লেখা হয়েছে তেইশে সেপ্টেম্বর (Died : 23 September 1932 (aged 21) Chittagong, Bengal Presidency, British India (now in Bangladesh))।

ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ সম্পর্কে লেখা হয়েছে,

They decided to attack the club on 23 September 1932. The members of the group were given potassium cyanide and were told to swallow it if they were caught.

এটা হলে তাঁর আত্মাহুতি দিবস নিশ্চিতভাবেই তেইশে সেপ্টেম্বর হবার কথা। উইকি এই তথ্যের উৎস হিসাবে সোনিয়া আমিনের নাম উল্লেখ করে বাংলাপিডিয়ার রেফারেন্স দিয়েছে। বাংলাপিডিয়ার সেই লেখায় আবার কোনো রেফারেন্স দেওয়া নেই। সোনিয়া আমিন এই তথ্য কোথা থেকে পেয়েছেন, সেটা তিনি উল্লেখ করেননি।

প্রীতিলতার উপর আমার লেখা প্রবন্ধ "প্রীতিলতা: আঁধার পথে পাড়ি দেওয়া এক দুঃসাহসী নারী" সিলেটটুডেতে প্রকাশ হবার পরে Arup Michil নামে এক ভদ্রলোক কিছুটা অভিযোগ করেই সেখানে এই মন্তব্য করেছেন,

"European club attack took place on 23 September, and PritilataWaddadar sacrificed her life immediate after the attack on the same day. So, why do we get confused? Why 24 September?"

এই ভদ্রলোকের মন্তব্য থেকেই বোঝা যায় যে, প্রীতিলতার মৃত্যু দিবস সম্পর্কে বিভ্রান্তি রয়ে গিয়েছে কারো কারো মধ্যে। আমাদের দেশে ইতিহাসকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ইতিহাসের এইসব খুঁটিনাটি তথ্য যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়টা অনেক সময়ই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যথোপযুক্ত মনোযোগ পায় না।

যাইহোক, বিপ্লবী প্রীতিলতার আত্মাহুতি দিবসের বিষয়ে আমার কাছে যতটুকু তথ্য আছে, সেটাই এখানে ভাগাভাগি করছি সবার সাথে।

প্রীতিলতার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন কল্পনা দত্ত। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত, দুজনেই চট্টগ্রামের খাস্তগির গার্লস স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তের এক ক্লাস উপরে পড়তেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও দুজনের সম্পর্ক ছিলো বন্ধুর মতো।

মেধাবী ছাত্রী তিনি। ম্যাট্রিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেন। অত্যন্ত ভালো রেজাল্ট এটা, তবে স্কলারশিপের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রীতিলতার প্রবল ইচ্ছা ছিল কোলকাতায় পড়ার। কিন্তু, তার দরিদ্র পিতামাতার পক্ষে কোলকাতায় তাকে রেখে পড়ানোর সঙ্গতি তাঁদের ছিল না।

কল্পনা দত্ত উল্লেখ করেছেন যে, এ কারণে তার এবং রানী (প্রীতিলতার ডাকনাম) দুজনেরই মন খুব খারাপ ছিল। রানী ছাত্রী হিসাবে খারাপ ছিল না, তবে অংকে কাঁচা ছিল। অংকের কারণেই স্কলারশিপ পাওয়া হয় না তার। ঢাকার ইডেন কলেজে আই,এ তে ভর্তি হয় সে। কল্পনা দত্ত তখনও স্কুলে পড়ে। প্রীতিলতার চেয়ে বছর দুয়েকের ছোট ছিল কল্পনা। পরের বছর ম্যাট্রিক পাশ করে কল্পনা চলে যায় কোলকাতায় চলে পড়তে। দুই বান্ধবীর সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটে। ছুটি ছাটাতে বাড়িতে এলে অবশ্য দেখা হতো পরস্পরের সাথে। তাঁদের দুজনের মধ্যে শুধুমাত্র এই সামাজিক এবং আন্তরিক সম্পর্কই ছিলো না, দুজনেই ছিলেন একই বিপ্লবী সংগঠনের গোপন সদস্য।

ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে প্রীতিলতার সাথে কল্পনা দত্তেরও সহযোদ্ধা হিসাবে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি এই অপারেশনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান।এই কল্পনা দত্তই তাঁর নিজের লেখা বই Chittagong Armoury Raiders Reminiscences - তে় ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দিনক্ষণ কত ছিল তা জানাতে গিয়ে লিখেছেন,

“24th September, 1932, was one such Saturday. The music, laughter and revelry came to a dead stop suddenly about 9 o’clock in the night. Instead there was the sound of bombs exploding and shots being fired. Those inside tried to get out by the windows, but then rushed back again in panic. Within a quarter of an hour, it was all over – there was silence. Only the wounded groaned in pain and fear.” (pp- 50-51)

আমি গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেছি, ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের চব্বিশ তারিখ সত্যি সত্যিই শনিবার ছিল।

এ ছাড়া এই বইতে আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন:

“On the morning of the 25th of September the D.I.B. Inspector came to see me. He started off at once, “God, we saved you in the nick of time!” A little later, another official came and said, “It is our great, good fortune to have saved a girl like you from death.”Whatwere they driving at?–the suspense made me crazy with impatience. The D.I.B Inspector came out with it finally. “Preeti died yesterday,” he said, “she raided pahartali club and then took potassium cyanide. Thank God, we arrested you – or you would have gone the same way. Preeti was dressed exactly as you were.” (pp-51-52)

কল্পনা দত্তের এই বক্তব্যের পরে আর কোনো সন্দেহই থাকে না যে, ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হয়েছিল চব্বিশ তারিখ রাতে এবং সেই রাতেই প্রীতিলতা আত্মাহুতি দেন।

পূর্ণেন্দু দস্তিদারও তাঁর বই "বীরকন্যা প্রীতিলতা"-তে কল্পনা দত্তের মতোই একই কথা বলছেন।

“ওই সিদ্ধান্তের পরে কিছুদিনের মধ্যে আক্রমণের ব্যবস্থা নিখুঁত করার জন্য প্রত্যক্ষভাবে সব কিছু নিজে তদারক করার উদ্দেশ্যে তিনি কাট্টলী গ্রামে চলে আসেন। তাঁর নির্দেশে প্রীতিলতাকেও গোপনে সেখানে আনানো হয়। মাস্টারদা তাকে জানিয়ে দিলেন, ১৯৩২ –এর ২৪শে সেপ্টেম্বর রাত্রিতে পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হবে এবং তার নেতৃত্বভার তাকেই গ্রহণ করতে হবে।" (পৃ: ৬৩)

উইকির কোনো এডমিন এই লেখাটা দেখার পরে, এই ভুল তথ্যটা সংশোধন করার ব্যবস্থা নেবেন, সেই আশা রইলো।

বিপ্লবী প্রীতিলতা ২৩ সেপ্টেম্বরে মারা যাননি, তিনি মারা গিয়েছিলেন ২৪ সেপ্টেম্বর। এর সমর্থনে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণই রয়েছে।

ফরিদ আহমেদ, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ