প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রণেশ মৈত্র | ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
কৃষ্ণা রাণী সরকারকে অভিনন্দন। উষ্ণ অভিনন্দন ‘কৃষ্ণা বাহিনী’ আখ্যায় আখ্যায়িত বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব ১৬ মহিলা। ফুটবল দলের প্রতিটি সদস্যের প্রতি। অভিনন্দন তাদের প্রশিক্ষকদেরকেও। এ. এফ. সি চ্যাম্পিয়নশিপ নামে খ্যাত আন্তর্জাতিক ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের (২০১৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য) বাছাইপর্বে বীরের মত খেলে তারা পাঁচ পাঁচটি বিদেশী টিমকে অনায়াসে পরাজিত করে সাকুল্যে ২৬টি গোল করে এক অভাবিত এবং গৌরবময় বিজয় বয়ে এনেছে আমাদের জন্যে- বাংলাদেশের জন্য। এ আনন্দ রাখার জায়গা সত্যিই খুঁজে পাই না। এই বিজয়ের পর ঐ টিমটি ছাড়পত্র পেয়ে গেল চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।
এ.এফ.সি চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের এই সদ্য-প্রস্ফুটিত তরুণীদের টিমটি খেলবে কাদের সাথে তা ভাবতেই ভাল লাগে যে ১৬ বছরের কম বয়সী আমাদের এই মেয়েরা দিব্যি ছাড়পত্র দুষ্প্রাপ্য সুযোগ আদায় করে নিলো জায়লিষ্ট-তুল্য প্রতিদ্বন্দ্বী জাপান, চীন অস্ট্রেলিয়া, সাউথ কোরিয়ার মত ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির সমবয়সী মেয়েদের টিমের সাথে প্রতিযোগিতা করার। এ এক বিপুল ও নির্মল, আনন্দের খবরই বটে। তাই বলি, ব্রাভো কৃষ্ণাবাহিনী, বাংলাদেশ তোমাদের পাশে থাকবে। তোমাদের সকল নৈপুণ্য সকল সামর্থ্যের প্রতিফলন ঘটুক আগামী দিনের ঐ প্রতিযোগিতা সমূহে। বিজয় অবশ্যই অর্জিত হবে এমন ভরসা রাখি গভীরভাবে।
প্রশিক্ষণ এবং ফেডারেশন কর্মকর্তাদের প্রতি আবেদন রইল আসন্ন এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত এই অনূর্ধ্ব ১৬ দলটির উপযুক্ত প্রশিক্ষণে যেন বিন্দুমাত্র ত্রুটি না হয় এবং খেলোয়াড়দের প্রাপ্য কোন সুযোগ - সুবিধা থেকে তাদের কেউ কোন ন্যুনতম বঞ্চনার শিকারে পরতে না হয়। এবারে আমি আরও একটি কিশোর -কিশোরী বাহিনীর স্মরণে যাদেরকে আমি নতুন প্রেরণার উৎস বলে মনে করি। গভীর বেদনাদায়ক এক মৃত্যু অকস্মাৎ ছিনিয়ে নিলো রিশা নামক ঢাকার লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম বর্ষের সম্পূর্ণ নিরপরাধ ছাত্রীর প্রাণকে। জানলাম একটি দুর্বৃত্ত তার পিছু লেগেছিল বেশ কিছুদিন যাবত এবং সেই তাকে জানোয়ারের মত নির্মমভাবে আক্রমণ করে হত্যা করেছে। ঐ দুর্বৃত্ত রিশাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সকল পত্রিকায়, টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন পত্রিকাগুলিতে এবং সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম দিনের পর দিন তার ছবি প্রকাশিত হওয়ায় দুর্বৃত্তটি দিনাজপুরের এক উপজেলা শহর থেকে গ্রেফতার হয়। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, দুর্বৃত্তটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রদত্ত তার জবানবন্দীতে সে যে অপরাধী তার অকপট স্বীকারোক্তি করেছে।
কিন্তু ওবায়দুল নামক ঐ দুর্বৃত্তটি কি শুধুমাত্র সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত ছবির কারণেই ধরা পড়লো? না, এর পেছনে ঐ স্কুলের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আপোষহীন ভাবে তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ সাজা প্রদানের দাবীতে দিনের পর দিন যে মানববন্ধন সমাবেশ প্রভৃতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গড়ে তুলে দেশব্যাপী ও তেমন আন্দোলন গড়ে তুলতে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছিল যার চাপে স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীও এসে একদিন ঐ মানববন্ধনে অংশীদার হয়ে দাঁড়িয়ে যান দাবীর প্রতি সহমর্মিতা ও সংহতি উত্থাপনের জন্য । তারই ফলে পুলিশ কথা দিতে বাধ্য হয় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই অপরাধীকে গ্রেফতার করা হবে বলে। কিন্তু এতেও কুলাচ্ছিল না। পালিয়ে থাকা ঐ হিংস্র দানবকে একজন হোটেল বয় চিনে ফেলে তাকে জাড়িয়ে ধরে এবং পুলিশে হস্তান্তর করে। এভাবেই গ্রেফতার হয় ঐ মনুষ্যরুপী জানোয়ার। এই গ্রেফতার ঐ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের লিটল ছেলেমেয়েদের সুগভীর ঐক্য এবং আপোষহীন আন্দোলনের বিজয়। স্যালিউট জানাই ঐ আন্দোলন মুখর সকল ছাত্র-ছাত্রীকে ও অভিভাবক মণ্ডলীকে। ছোট ছোট এই আন্দোলনগুলি একদিন পরিণত হবে ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তার গ্যারান্টিতে - এমন ভরসা নিশ্চিত ভাবেই করা যায়। আশা করবো দুর্বৃত্তটির সর্বোচ্চ শাস্তিবিধানের মাধ্যমে ঐ ছেলেমেয়েদের চূড়ান্ত ও গৌরব জনক বিজয় সূচিত হবে।
তবে ধিক্কার ও ঘৃণাও জানাই তাঁদেরকে যাঁরা শিক্ষকতার উচ্চ আসনে বসে থেকে আহত ছাত্রী রিশাকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য স্কুলে অনেকগুলি গাড়ি বসে থাকা স্বত্বেও একটি গাড়িতে করে তাকে প্রাণে বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, এটা পুলিশ কেস - পুলিশ এসে যা হয় করবে। অথচ তখন পর্যন্ত তো কেউ কোন কেসই কেউ দায়ের করে নি থানায়। কোন শিক্ষকই না কি রিশাকে হাসপাতালে পাঠানোর ন্যুনতম উদ্যোগ গ্রহণ না করায় অবশেষে তার সহপাঠীরা তাকে রিকশায় করে যখন হাসপাতালে নিয়ে পৌঁছায় ততক্ষণে বিস্তর রক্তক্ষরণের কারণে রিশা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। অথচ সময়মত আনলে হয়তো তাকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হতো। জানি না শিক্ষক হয়ে এমন নিষ্ঠুরতা কি করে দেখাতে পারলেন তাঁরা এমন ব্যবহার তো চরম শত্রুর সাথেও মানুষ করে না।
যা হোক, পুনর্বার প্রাণ ঢালা অভিনন্দন জানাই ঐ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে-আন্দোলনের মাধ্যমে এতদূর অগ্রসর হওয়ার জন্যে।
অত:পর আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি যাদের একটি মাত্র দাবী ‘হল চাই’ অর্থাৎ আবাসিক ব্যবস্থা চাই। এমন একটি দাবী নিয়ে এই সভ্যযুগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হয় - লেখাপড়া বর্জন করে ক্লাস বর্জন করে মিছিল-সমাবেশ-মানববন্ধন করতে হয় তা সম্ভবত: বাংলাদেশেই ঘটে থাকে। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হওয়া মাত্র কেন তাদের সিট বরাদ্দ করা হবে না বা কেন তাদের জন্য আগে থেকেই হল নির্মাণ করা হবে না, তা রীতিমত বিস্ময়কর।
কোন রকম হিংসাত্মক/ধ্বংসাত্মক পথে না গিয়ে আন্দোলনটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হওয়ায় বিশেষভাবে আনন্দিত ও গর্বিত বোধ করেছি তবে ঐ আন্দোলনে ইতোমধ্যেই তাদের বিজয় সূচিত হয়েছে। পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে নতুন ক্যাম্পাস ও হল নির্মাণের। অভিনন্দন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী শিক্ষার্থী তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে। দেশের সকল ন্যায্য দাবীতে আগামীতে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে দেশটাকে সকল কলুষ থেকে মুক্ত করার জন্য দৃঢ়ভাবে এমন ভরসা রাখতে চাই।
আমাদের তরুণদেরকে নিয়ে আমাদের আরও একটি অহংকার তাদের ক্রিকেট পারফরম্যান্সের জন্য। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের তরুণেরা ক্রিকেটের মাধ্যমে দেশের লাল সবুজ পতাকা ও বাংলাদেশে নতুন করে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে এ কথা মানতেই হবে। সব কিছুরই উঠতি পড়তি থাকে। হয়তো বা ক্রিকেটেও মাঝে মধ্যে তেমন আস্থার সম্মুখীন হই। কিন্তু সব ছাপিয়েই ক্রিকেট বাংলাদেশের অন্যতম গৌরব অন্যতম অহংকার। সামনে আসছে আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড।
আশা করি টাইগাররা ঐ ম্যাচগুলিতে নতুন করে জ্বলে উঠবে দেশের মুখ রক্ষাই শুধু নয় নতুন বিজয় নতুন গৌরব বয়ে আনবে। তারুণ্যের জয়ের ধারা অব্যাহত গতিতে অগ্রসর হতে থাকবে।
ফিরে তাকাই শাহবাগে। হঠাৎ বাংলাদেশে তারুণ্য যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও সাজা নিয়ে জ্বলে উঠেছিল শাহবাগ ময়দানে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে বিচার কালে সেই থেকে নানা উঠতি পড়তি সহ ডাঃ ইমরান এইচ সরকার ও বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে উচ্চকণ্ঠ থাকায় আমরা গর্বিত। যদিও মানতেই হবে গণজাগরণ মঞ্চের সেই জোয়ার আজ আর তার প্রথম ফুঁসে ওঠার দিনগুলির পর্যায়ে নেই। তা তাদেরকে থাকতে দেওয়া হয় নি। ক্ষমতাসীন মহল , অবাক কা-, তারুণ্যের নবজাগরণকে ভালো চোখে দেখতে পারলেন না।
শুধু তাই নয় তাঁরা তাঁদের সমর্থক ছাত্রলীগকে ঐ গণজাগরণ মঞ্চ থেকে প্রত্যাহার করে নিলেন। তাতে কি সরকারের আদৌ কোন লাভ হয়েছে? বরং জামায়াত ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম সহ রাজনীতির অঙ্গনে কুৎসিত চেহারা নিয়ে বিচরণশীল ঐ অপশক্তিগুলির বিরুদ্ধে সরকার যদি সত্যই নিষ্ঠার সাথে লড়াই যেতে চাইতেন - নির্ঘাত তাঁরা সঙ্গে যেতেন গণজাগরণ মঞ্চকে সমগ্রভাবে তঁদের পাশে। সরকার ও জনগণ উভয়েরই লাভ হতো তাতে। ক্ষতি হতো অপশক্তিগুলির। যা হোক, সরকারের অনুগত শক্তিকে প্রত্যাহার করে নেওয়া স্বত্বেও গণজাগরণ মঞ্চ তার পথ চলা অব্যাহত রেখেছে এবং এখন তারা যদি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার মত আজকের পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করা, প্রকৃতই একটি ধর্ম নিরপেক্ষ , কার্যকর গণতান্ত্রিক দেশ ও শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন উপযোগী সর্বসম্মত কর্মসূচি কোন একটা জাতীয় যুব সম্মেলন আহ্বান করে সেখান থেকে সমশ্বরে উচ্চ কণ্ঠে তুলে ধরতে পারে-নতুন নতুন শক্তি তাদের সাথে হাত মিলিয়ে নির্ঘাত একটি অপরাজেয় শক্তিতে পরিণত হতে পারে এবং জনগণকে নতুনভাবে জাগ্রত ও ঐক্যবদ্ধ করে ভাষা আন্দোলন বা ১৯৫৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের মত একটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে - পারে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটি প্রগতিশীলতার টগবগে ধারার সূচনা করতে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় তা বস্তুত: সম্ভব।
তারুণ্যের সেই দুর্দমনীয় শক্তি আবারও জ্বলে উঠুক দেশ ব্যাপী। তারাই জাতির ভরসাস্থল আজও।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য