আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

আমাদের চিকিৎসকরাও যদি এমন হতেন!

মুনীর উদ্দীন শামীম  

অনেকটা রথদেখা-কলাবেচার মতোই দাপ্তরিক কাজে গিয়ে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েছিলাম। এতে একদিকে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা, বিশেষ করে চিকিৎসকদের নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের একটি বিশ্বাস আরেকটু শক্ত হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের সামগ্রিক চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে আমার মনের ভেতরে দীর্ঘদিন জমে থাকা কিছু প্রশ্ন উল্টেপাল্টে দেখার নতুন আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ লেখায় আমি সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সচেষ্ট হবো। পেছনের কার্যকারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করবো। তবে কোন সাধারণীকরণ হিসেবে নয়; নিতান্ত ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার উপর ভর করে। যদিও প্রশ্নগুলি বুঝবার প্রয়াস হিসেবে প্রকাশিত কিছু গবেষণাধর্মী লেখার তথ্য-উপাত্তেরও সহযোগিতা নেয়া হবে।

প্রথমেই ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কথা বলি। সম্ভবত বেশিরভাগ পাঠকই আমার এ বিশ্বাসের সাথে একমত হবেন না। তারপরও ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বলছি, আমি সবসময় বিশ্বাস করে এসেছি যে, বাংলাদেশেও খুব ভালো মানের চিকিৎসক রয়েছেন। যারা চাইলে ভালো চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, আলো ঝলমল চকচকে রঙের বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় আমাদের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা অভিজ্ঞতায় ও দক্ষতায় তুলনামূলক ভালো। তাঁরা যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন সেটিও সামগ্রিক বিচারে বিলাসবহুল বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে নানা মাত্রিকতায় উত্তম।

আমি এও বিশ্বাস করি যে, আমাদের চিকিৎসাখাতে বিদ্যমান সম্পদ দিয়েই বহুগুণ বেশি মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব। আমার গলার স্বরজনিত একটি সমস্যা নিয়ে দেশে প্রথম বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখিয়েছিলাম। তারপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তৃতীয়বারের মতো দেখালাম ব্যাংককের একটি স্বনামখ্যাত হাসপাতালে। তিনটি হাসপাতালেরই পরীক্ষা ফলাফল প্রায় এক। ডাক্তারি পরামর্শও মোটামুটি এক। এ একই রকম ফলাফল ও চিকিৎসা-পরামর্শ আমাদের দেশের চিকিৎসকদের দক্ষতা নিয়ে আমার এতদিনকার বিশ্বাসকে আরেকটু শক্তিশালী করেছে। আমি

জোরালোভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশেই ভালো চিকিৎসা সম্ভব। এ সম্ভাবনার প্রতি শতভাগ আস্থাশীল থেকেই আমাদের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের নিয়ে বহু পুরনো প্রশ্নগুলিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মনের কোণে উঁকিঝুঁকি মারা প্রশ্নগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আমাদের হাসপাতালগুলিতে ভালো চিকিৎসক থাকলেও এখানকার চিকিৎসা নিয়ে এতে অভিযোগ-অনুযোগ কেন ওঠে? বিপুল সংখ্যক মানুষ কেন প্রতিবছর চিকিৎসা সেবা নিতে দেশের বাইরে যায়? এটি কি শুধু শ্রেণিগত বিষয়?কিছু মানুষের উদ্ধৃত্ত আছে, সামর্থ্য আছে বলেই কি যায় নাকি এর আরও নানা মাত্রিকতা আছে? আরও কার্যকারণ আছে?বিদেশের চিকিৎসা পরিষেবার সাথে আমাদের দেশের চিকিৎসা পরিষেবার সংখ্যা ও গুণগত দিক থেকে মৌলিক পার্থক্যটা কোথায়?

বিদেশমুখী চিকিৎসা-পর্যটন ও কিছু পরিসংখ্যান:
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কী পরিমাণ মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান, তাতে কী পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে বিদেশে চলে যায়, এর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া দু:সাধ্য। তবে প্রকাশিত নানা গবেষণা, প্রতিবেদন, তথ্য-উপাত্ত থেকে মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া যায়। যার উপর ভিত্তি করে এটি অন্তত বলা যায় যে, দেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। প্রতিবছরই এটি বাড়ছে। সম্ভবত গাণিতিক হারে নয়; জ্যামিতিক হারে।এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৯৮৬-৮৭ অর্থ বছরে শুধু ভারতে চিকিৎসা বাবত বাংলাদেশীদের খরচ করা টাকার পরিমাণ ছিল ০.০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ০.৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (আলী, ওয়ার্ল্ড রিভিউ অব বিসিনেস রিচার্স, জুলাই ২০১২)। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের দাপ্তরিক হিসাব। প্রকৃত হিসাবটি আরও বড় হবে। কিন্তু এ দাপ্তরিক হিসাবটিই বিবেচনায় নিলে দেখা যায় যে ১৯৮৬ থেকে ২০০৮, এ বাইশ বছরে চিকিৎসা বাবত শুধু ভারতেই বাংলাদেশিদের ব্যয়কৃত অর্থবৃদ্ধির পরিমাণ ১২০০%। পল বি. কে ১৯৯৯ সালে পরিচালিত গবেষণায় দেখান যে, বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যান, তার ৭৫% ভাগই ভারতে যান। তারা গড়ে প্রায় একমাসের মতো অবস্থান করেন এবং প্রতিবছর ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরাই প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ করেন ( সোশ্যাল সাইন্স এন্ড মেডিসিন, সংখ্যা ৩৪৯, পৃষ্ঠা-৬৭৯-৬৮৯)।

চিকিৎসা-পর্যটন বিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধুমাত্র আসিয়ানভুক্ত দেশ থেকে মালয়েশিয়া প্রতিবছর ৩৬০,০০০ রোগী পেয়ে থাকে (২০০৭ সালে)। থাইল্যান্ডে বিদেশি রোগীর সংখ্যা মাত্র পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে (২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল- ৬৩০,০০০ থেকে ১৩৭৩০০০)। চিকিৎসা-পর্যটন খাতে থাইল্যান্ডের বছরে প্রবৃদ্ধির হার ১৬%। ২০১৫ সালের এক হিসেবে দেখা যায়, ঐ বছরেই শুধু বিদেশি  রোগী চিকিৎসা পরিষেবা খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল একশ বিলিয়ন বাথ। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং এর অব্যাহত বিকাশ সম্ভব হচ্ছে খরচ ও গুণগত মানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল এর কারণে। যা দেশটিকে চিকিৎসা-পর্যটনের অন্যতম ঠিকানায় পরিণত করেছে (ডেইলি স্টার, ৮ মার্চ ২০১৫)। মালয়েশিয়ান হেলথ কেয়ার ট্রাভেল এজেন্সির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাঁচ বছরে (২০১০-২০১৪) বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে চিকিৎসা সেবাগ্রহীতাদের প্রবৃদ্ধির হার ২০% বেড়েছে। প্রতিবছর এটি বাড়ছে। তারা এ প্রবৃদ্ধিতে আরও ১৫-২০% বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে (ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ২১ অক্টোবর, ২০১৫)। দেশটি যে শুধু অবকাশ যাপনের জায়গা নয়; একই সাথে ভালো চিকিৎসা পরিষেবা প্রাপ্তিরও জায়গা-এ বার্তা তারা পৌঁছে দিচ্ছে সবখানে। এটি ব্যাংককের ক্ষেত্রেও সত্যি। দেশটি যে শুধু অবকাশ যাপন কিংবা খোলাবাজারে যৌনতা বিকিকিনির স্থান নয় (যেমনটি অনেকেই ভাবি); তার চেয়ে বেশি কিছু, সেটি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত। দেশটি চিকিৎসা-পর্যটনকে অর্থনীতির অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে নীতিপ্রণেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণেই। নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারা ও সে নীতি বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারার কারণে।এ ক্ষেত্রে ভারত, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মধ্য একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়াও বিদ্যমান। এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এ দেশগুলিকে সেবার গুণগত মান ঠিক রেখে স্বল্পখরচ নিশ্চিত করতে হচ্ছে।  

চিকিৎসা-পর্যটন বিশ্বায়নের কালে একটি দ্রুত বিকাশমান জনপ্রিয় প্রত্যয়। সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক সেবাখাত। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া চিকিৎসা পর্যটনকে বিদেশি অর্থাপোর্জনের অন্যতম পথ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ভারত পরপর দু’টি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় চিকিৎসা পর্যটনকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচনা করেছে। শুধু তাই নয়; ভারত যাতে চিকিৎসা-পর্যটনের অন্যতম গন্তব্যস্থলে পরিণত হয় সে জন্য স্বল্পখরচে বিশ্বমানের উন্নতসেবার বিষয়টি সরকারের পরিকল্পনায় গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়েছে।মালয়েশিয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চিকিৎসা পর্যটন সেবা চালু করেছে। যার নাম মালয়েশিয়ান হেলথ কেয়ার ট্রাভেল এজেন্সি। এ সংস্থাটি বিভিন্ন দেশে তাদের চিকিৎসা-পর্যটনের উন্নয়ন ও প্রসারের কাজ করে। শুধু তাই নয়, এ সংস্থাটি চিকিৎসা সেবার মানদণ্ড ঠিক করে বলে দিয়েছে, কোন হাসপাতালগুলি আন্তর্জাতিক রোগীদের পরিষেবা দিতে পারবে, আর কোনগুলি পারবে না (ফাইনেন্সিয়াল এক্সপ্রেস, ২১ অক্টোবর, ২০১৫)। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমরূপতাগুলিও তারা তাদের চিকিৎসা পর্যটন প্রসার ও বাজারজাতকরণের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করছে। আমরা আমাদের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পর্যটন সম্ভাবনাকে যেখানে কাজে লাগাতে পারিনি, সেখানে তারা কমমূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যপর্যটন পরিষেবা চালু করেছে।

চিকিৎসা পরিষেবা-ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার একটি তুলনামূলক চিত্র:
এবার আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার একটি তুলনামূলক চিত্র দিয়ে লেখার শুরুতেই তোলা প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো। ব্যাংককের অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করি। এ প্রথম বিদেশের মাটিতে কোনো বিদেশি ডাক্তারের পরামর্শ সেবা নেয়া। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটিকে একটি তুলনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ইচ্ছা শুরু থেকেই কাজ করেছে। বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে ডাক্তার-সাক্ষাতের সময় নেয়া। প্রমাণ হিসেবে শুধু ই-মেইলের একটি প্রিন্টকপি সম্বল। সেটি ঠিক  আছে কি না, তা নিয়েই সংশয় ছিল। নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগে যাবার নির্দেশনা ছিল। আমি গেছি ৪৫ মিনিট আগে। মূল ফটকেই একজন অভ্যর্থনা জানালেন। খুব আন্তরিকতার সাথে। স্থানীয় ঐতিহ্য ও রীতি অনুযায়ী। সাথে থাকা ই-মেইল বার্তাটি দেখাতেই কোথায়, কোন ফ্লোরে, কীভাবে যেতে হবে- তাও দেখিয়ে দিলেন। প্রথম সেবাগ্রহীতা হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে গেলাম। দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে ধারণা করছিলাম, নাম নিবন্ধন করতেই পকেটের টাকা গুনতে হবে।

আমার ধারণা ভুল হলো। কোনো টাকাপয়সা লাগলো না। বরং খুব আন্তরিকতার সাথে নাম নিবন্ধনে দু’জন সহযোগিতা করলেন। ডাক্তার দেখাবার সময় আমার অনুবাদক লাগবে কি না জানতে চাইলেন। আমি ’না’ বলাতে আমাকে আবার মনে করিয়ে দিলেন যে, সেবাটি হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেয়া হয়। উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সাথে রোগীর যোগাযোগ ও কথোপকথনে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়। পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতায় আমার অভিভূত হওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। আমার আগের জনের অসুস্থতা একটু জটিল হওয়ায় নির্ধারিত সময় থেকে একটু বেশি লাগছিল। আমার সময় ছিল সকাল দশটা। দশটা বাজার সাথে সাথে আমার কাছে এসে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চাইলেন, একটু সময় দেয়ার অনুরোধ করলেন। যা বাংলাদেশে কখনও দেখিনি। সরকারি, বেসরকারি, কোনো হাসপাতালেই না। সামান্য দেরির কারণে আমার কাছে যখন ডাক্তারের সহকারী বারবার ক্ষমা চাইছিলেন, তখন ওখানে বসেই আমার মনে পড়ছিল দেশের কথা, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের কথা।

আমি ঢাকায় ব্যক্তিগত চেম্বারে যে নাককানগলা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছিলাম, তিনি একটি চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক। শুধু চিকিৎসক নন, শিক্ষার্থী পড়ান। চিকিৎসক তৈরিও করেন। আমার এক বছর চিকিৎসা নেয়ার সময় আমি তাঁকে কখনও যথাসময়ে চেম্বারে উপস্থিত হতে দেখিনি। প্রতিদিন রোগীদের উপস্থিতির পর তাঁকে ফোনে জানানো হয়। তারপর তিনি রওয়ানা দেন। দেরির জন্য রোগীদের কাছে তিনি বিনীত হয়েছেন, ক্ষমা চেয়েছেন- এমন উদাহরণ মনে পড়ে না। তাঁর চেম্বারে একদিন তিনঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে (বসার জায়গা ছিল না) আমাকে ফেরত আসতে হয়েছে। কারণ, তিনি বলেছিলেন, তাঁর পক্ষে সেদিন রোগী দেখা সম্ভব না। অথচ তিনি নিজেই আমার সাথে দিনক্ষণ ঠিক করেছিলেন। শুধু তিনি নন, এটা মোটাদাগে আমাদের প্রায় সব ডাক্তার সম্পর্কে সত্য। এমনকি শিশু বিশেষজ্ঞদেরও দেখেছি, চেম্বারে শিশুদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় বসিয়ে রাখতে। গাইনী বিশেষজ্ঞদের দেখেছি, সন্তানসম্ভবা নারীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতে। রোগীদের দীর্ঘসময় বসিয়ে রাখা এখানে চিকিৎসা-পরিষেবার অবিচ্ছেদ্য এক সংস্কৃতি। আমরাও যেন সে সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। অভ্যস্ত হতে বাধ্য হচ্ছি।

আমি যখন ব্যাংককে ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করলাম, তিনি থাই রীতিতেই আমাকে স্বাগত: জানালেন। তারপর আমার কাছ থেকে শুনতে শুরু করলেন। প্রায় আধঘণ্টা ধরে শুধু আমার কাছ থেকে শুনলেন। নানা প্রশ্নের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করলেন, সমস্যার শুরু, এর ক্রমবিকাশ এবং উঠানামা। আমার এ ছাড়া আর কোন শারীরিক সমস্যা আছে কি না- তাও বিস্তারিত জানলেন। লিপিবদ্ধ করলেন।যে পরীক্ষাগুলি (খুব বেশি পরীক্ষা করাননি), করালেন, তার কারণ, পরীক্ষা করালে তার কী প্রভাব, কতক্ষণ ধরে পড়তে পারে- তাও ব্যাখ্যা করলেন। তারপর জানতে চাইলেন- পরীক্ষাগুলির জন্য আমার সম্মতি আছে কি না। পরীক্ষা শেষে ফলাফল নিয়ে আলাপ করলেন খুব বিস্তারিতভাবে। আমার সমস্যাটি কী কারণে হয়েছে সেটিরও সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিলেন। করণীয় সম্পর্কেও পরামর্শ দিলেন। প্রতিটি পরীক্ষার আগে আমি সে মানুষটি কি না, সংশ্লিষ্ট সবাই তা বাড়াবার নিশ্চিত হতে চেয়েছেন। আমার নামের বানান ঠিক আছে কি না, আমার নাম ঠিকভাবে লেখা হয়েছে কি না, তাও নিশ্চিত হয়েছেন। একই সময়ে আমার কয়েকজন সহকর্মী ব্যাংককের অন্য একটি হাসপাতালে গিয়েছেন। তারাও সেবার ব্যাপারে পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে ফিরেছেন। এসে বলেছেন, ঐ হাসপাতালে বাংলাদেশ সেকশন নামে একটি আলাদা সেকশন রাখা হয়েছে।

উল্লেখ করার মতো আরও একটি বিষয় হলো, এ প্রতিটি রোগীর সাক্ষাতের জন্য কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা প্রতি ঘণ্টায় কতজন রোগী দেখেন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা দিনে গড়ে ৮০-২০০ পর্যন্ত রোগী দেখে থাকেন। বাংলাদেশে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন, যিনি মাসে এক থেকে দেড় কোটি টাকা শুধু রোগী দেখা বাবত আয় করেন (ওয়ার্ল্ড রিভিউ অব বিজনেস রিসার্চ, সংখ্যা-২, জুলাই ২০১২, পৃষ্ঠা-৫০-৭০)।আগেই উল্লেখ করেছিলাম, থাইল্যান্ড আর বাংলাদেশে একটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে যে পরীক্ষা করিয়েছিলাম, সবক’টি পরীক্ষার ফলাফল প্রায় কাছাকাছি, বা একই রকম। যা আমাকে বাংলাদেশের চিকিৎসা-পরিষেবা সম্পর্কে ভীষণ রকমভাবে আশান্বিত করেছে। একই সাথে তুলনামূলক পার্থক্যটাও চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে। তা হলে দু’দেশের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? আমার পর্যবেক্ষণ বলে, পার্থক্যটা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার নয়; প্রধানত চিকিৎসকদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির। আমাদের দেশে রোগী-চিকিৎসক সম্পর্ক অনেকটা মক্কেল-মুরুব্বির পদ-সোপানমূলক সম্পর্কের মতো। কি সরকারি আর কি বেসরকারি, প্রায় সবখানেই প্রকাশিত আচরণে মনে হয়, চিকিৎসকরা দয়া করছেন। চিকিৎসা মানে যে শুধু রোগী দেখা নয়, রোগীর আস্থা অর্জন, রোগীর প্রতি সংবেদনশীলতা, সেটি খুব ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশে দেখা যায় না। বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলিতে প্রথমেই ভিজিট ফি পরিশোধ করতে হয়। আমি জরুরি বিভাগেও দেখেছি, টাকা পরিশোধের রিসিট ছাড়া চিকিৎসা শুরু করা হয় না। মনে হয় জীবন নয়, টাকাটাই মুখ্য। অথচ ওখানে আমার সকল পরীক্ষানিরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে একবারও আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করেনি, আমি ফি পরিশোধ করেছি কি না। আগে রোগী দেখেছেন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলি করিয়েছেন। তারপর সবশেষে গৃহীত সেবার মূল্য পরিশোধের বিষয়টি এসেছে।

আমার একান্ত পর্যবেক্ষণ নির্ভর অনুসিদ্ধান্ত হচ্ছে- দেশ থেকে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিবছর বিদেশে যায়, চিকিৎসার জন্য, তার অন্যতম কারণ দেশের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা। আর এ আস্থাহীনতাটি তৈরি হয়েছে নানা কারণে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- চিকিৎসকরা রোগীর প্রতি যথেষ্ট পরিমাণ সংবেদনশীল নন, তাঁদের মধ্যে রোগী-বান্ধব আচরণের অভাব রয়েছে। তার সাথে যুক্ত আছে জবাবদিহি ও সুশাসনের সংকট। বাজার অর্থনীতির নামে চিকিৎসা পরিষেবাকে নৈতিকতাশূন্য পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। মুনাফার দেবতার হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে গোটা চিকিৎসাব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক রোগীর বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবার কারণ হিসেবে অন্য একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যয়বহুল, এ ব্যয় প্রতিদিন বাড়ছে, এ ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত, যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া যায় না। একই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই, ঔষধপত্রের অভাব, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স ও চিকিৎসকের অপর্যাপ্ততা, এবং কিছু কিছু চিকিৎসার অপ্রতুলতা। এ ছাড়া হাসপাতালগুলিতে প্রায়শ এমনসব দায়িত্বহীন ঘটনা ঘটে, যার ফলে রোগীরা পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।

অন্যদিকে- রোগীরা সেসব দেশে যান সেখানে চিকিৎসার গুণগত মান নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। হাসপাতালে গিয়ে বসে থাকতে হয় না, ডাক্তার দেরিতে আসেন না, স্বল্পখরচ, চিকিৎসক ও নার্সরা আন্তরিক, দায়িত্বশীল, পরীক্ষানিরীক্ষার উপর নির্ভর করা যায়। এটি বহু পুরনো অভিযোগ যে, বাংলাদেশের চিকিৎসকরা অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে থাকেন। এটাও অজানা নয় যে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে চিকিৎসকরা কমিশন(৫০-৬০% পর্যন্ত) পেয়ে থাকেন, যেটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও অনৈতিক। বিল পরিশোধে অপারগতার জন্য মৃত ব্যক্তির লাশ আটকে রাখার ঘটনাও এখানে ঘটে। ডাক্তাররা চেম্বারে রোগী বসিয়ে রেখে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সাথে কমিশন নিয়ে কথা বলার দৃশ্যতো এখানে নিত্যনৈমিত্তিক।স্বাস্থ্য-সুশাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা কীভাবে একটি দেশের টাকা বিদেশে চলে যেতে ভূমিকা রাখে এবং অপরদিকে অন্য একটি দেশের জন্য বিদেশি অর্থ-উপার্জনের পথ উন্মুক্ত করে দেয় উপরিউক্ত পরিসংখ্যানটি তার অন্যতম উদাহরণ।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চিকিৎসা পর্যটন ধারণার বিকাশের সূচনায় বাংলাদেশের শুধু অবস্থা সম্পন্ন ব্যক্তি বা পরিবারগুলি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতেন। কিন্তু আজকাল মানুষজন তাদের সঞ্চয় খরচ করে প্রতিবেশী দেশ বা আশপাশের দেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যাচ্ছেন। প্রত্যাশা একটাই, অপেক্ষাকৃত গুণগত মানের চিকিৎসা সেবা নেয়া। বিশেষ পরিস্থিতিতে অনেকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করেও বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। হাসপাতাল, চিকিৎসক, পরীক্ষানিরীক্ষা, সেবা-সবকিছুর গুণগত মান বিবেচনায় নিয়েই তারা যাচ্ছেন ( ডেইলি স্টার, ৮ মার্চ, ২০১৫)। তার মানে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়াটা শুধু শ্রেণির প্রশ্ন দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে না। যারা অবস্থা সম্পন্ন শুধু তারাই যাচ্ছেন না। বিত্তের বিচারে তলানিতে অবস্থানকারীরাও যাচ্ছেন।অথচ সঠিক পরিকল্পনা করা গেলে, আস্থাহীনতার সংকট দূরকরা গেলে, দেশের প্রধান বিভাগীয় শহরগুলিতেই অনেক সুচিকিৎসা দেয়া সম্ভব। যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষদের আয় ও সঞ্চয় অবচয়রোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

চিকিৎসার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাওয়া থেকে রেহায় পাবে। আমাদের মন্ত্রী, আমলা, রাজনীতিবিদ, বড়বড় শিল্পউদ্যোক্তরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান না। অভিযোগ আছে বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরাও তাঁদের মালিকানাধীন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন না। বেশির ভাগ সময় বিদেশে যান।  এ বিপ্রতীপ আচরণ না পাল্টালে চিকিৎসা পরিষেবার মান ও পরিস্থিতি পাল্টাবে না। ক্রমাগত নিম্নঅভিমুখী চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে চিকিৎসাখাতে বিদ্যমান সুশাসন পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতির সম্পর্কটাই নিবিড়। অতএব সে সম্পর্কটাই পাল্টানো দরকার। সবার আগে।

তবু স্বপ্ন দেখি
একটি ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই এখন। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রস্রাবের জটিলতা নিয়ে গিয়েছিলাম একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে। ডা. সাজিদ নামে একজন ইউরোলোজিস্ট এর কাছে। তিনি সেসময়কার পিজি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক। আমার সমস্যার কথা শুনতে শুনতে যখন জানলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকি, আমি তখনও শিক্ষার্থী, তখন তিনি আমার কাছ থেকে কোনো ফি নিলেন না। আমি জোর করেও সেদিন তাঁকে ভিজিট দিতে পারি নি। শুধু তাই নয়; সে সময় আমার সার্জারির দরকার হয়েছিল। তিনি সেটি নিজ ক্লিনিকে না করে পিজি হাসপাতালে অপারেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আমি ভরসা পাচ্ছিলাম না দেখে আমাকে বলেছিলেন, ক্লিনিকে তো শুধু আমি একা অপারেশন করবো, আর পিজিতে আমার সাথে আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সহকর্মী থাকবেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে দালাল দিয়ে অনেক রোগীকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা আমরা প্রতিদিনই শুনি। তার বিপরীতে এটি একটি অনন্য উদাহরণ, যেখানে নিজ ক্লিনিক থেকে রোগীকে সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়েছেন, স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য।আমার বিশ্বাস এ রকম ইতিবাচক অভিজ্ঞতা আরও অনেকেরই আছে।অনেক ভালো উদাহরণ আছে। সে উদাহরণগুলিকে মূল প্রবণতা বানানো গেলে, মূলধারায় আনা গেলে, সর্বোপরি চিকিৎসাখাতে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে, বিশ্বমানের চিকিৎসা পরিষেবা দেয়া বাংলাদেশেই সম্ভব।

বাংলাদেশের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সে স্বপ্নটা আমরা আবারও দেখতে পারি। চিকিৎসার পণ্যায়ন নয়; একটি মানবিক দায়িত্বশীল পরিষেবা হিসেবেই বিকশিত হোক আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা। আমাদের ডাক্তাররা হয়ে উঠুক রোগী-বান্ধব, মানবিক চিকিৎসক।

মুনীর উদ্দীন শামীম, গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী; সুশাসন বিষয়ক একটি কারিগরি প্রকল্পে কর্মরত।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ