প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ | ০৭ অক্টোবর, ২০১৬
লাইক, প্রোফাইল, ট্যাবলেট, ক্লাউড এই শব্দগুলো বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিশেষ অর্থ বহন করে। মাত্র এক দশক আগেও ইংরেজি ভাষার এমন কিছু শব্দের শুধুমাত্র একটিই অর্থ ছিল। কিন্তু প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশেষ অর্থে ব্যবহার ও প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশের কারণে শব্দগুলো এখন দুই অর্থ বোঝায়। শব্দের সাধারণ অর্থ ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। আর আরেকটি অর্থ প্রযুক্তিগত,যা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। জনপ্রিয় হয়েছে আর একটি শব্দ। ভাইরাল। ফেসবুক জগতের অতি পরিচিত এই শব্দটির আভিধানিক অর্থ নেই। আগের অর্থ : ভাইরাসে আক্রান্ত বা ভাইরাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিষয়। বর্তমান অর্থ : ইন্টারনেটে কোনো বিষয় দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া।
ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীর চাপাতি কোপে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে ৫ অক্টোবর (বুধবার) স্কয়ার হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নারী নেত্রী। হাসপাতাল থেকে ফিরে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজের ফেসবুক একটি পোস্ট করেন সাংসদ সাবিনা আক্তার তুহিন। তার সঙ্গে আছেন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অপু উকিলসহ আরেকজন নারী।
সেলফিতে দেখা যায়, গায়ে আইসিউইউ গাউন পরে আছেন নারী নেত্রীরা। পেছনে নাকে-মুখে নল লাগানো অবস্থায় অচেতনভাবে খাদিজা আক্তার। আইসিইউ এর মতো স্পর্শকাতর জায়গায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এক নারীর পাশে সরকার দলীয় নারী নেত্রীদের এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস ৩ অক্টোবর (সোমবার) পরীক্ষা দিতে তিনি এমসি কলেজে যান। কলেজ ক্যাম্পাসেই তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাবি ছাত্র বদরুল ইসলাম। বদরুল শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। ঘটনার পর তাকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। ৫ অক্টোবর (বুধবার) এ ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বদরুল। মাথা-হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য কোপের জখম নিয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে খাদিজা আক্তার।
সেলফি’র প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “এই তিন জনের সাথে পেশাগত কারণে অনেক দিনের পরিচয়। নিজ দলের দুর্দিনে মাঠের পরিচিত মুখ। কিন্তু আইসিইউ-তে যাওয়া,সেলফি তোলা ইত্যাদি করে নিজেকে কোনখানে নিলেন? খাদিজা কি প্রচার পাবার হাতিয়ার? দেখা হলে জানতে চাইব”।
একই পেস্টে এক নারী নেত্রীর কমেন্ট, “এদেরই একজন আমার বন্ধু যে এখানে না থাকলেও নীচে ছিলো। এই চারজন হচ্ছে বান্ধবী। পুরোপুরি কমনসেন্সের সমস্যাজনিত ব্যাপার। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী বিষয়টা ছিলো, সে যেহেতু এইরকম রোগী দেখতে পারেনা বলে উপড়ে যায়নি তাই ছবি তুলে নিয়ে যেতে বলেছিলো। তাছাড়া আপনি জানেন, পিএম এর কাছে দেখানোর একটা ব্যাপার থেকে যায়। হাহাহহাহহাহা ধরা খাইছে মগজবিহীন এমপি সেটা নিজের ওয়ালে আপ করে দিয়েছে”।
সাংবাদিক এবং নারীনেত্রী দু’জনকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি (তাদের সম্মান রক্ষার্থে নাম প্রকাশ থেকে বিরত থাকছি)। সাংবাদিকতা পেশায় তার পরিচিতি যেটুকু আছে, সেটুকু নিজের ঢোল নিজে পিটিয়ে অর্জিত। একটি অনলাইন পত্রিকায় কর্মরত তিনি। মাসিক যা আয়, ব্যয় তার কয়েক গুণ। সাংবাদিকতা পেশা সম্পর্কে অজ্ঞানকর জ্ঞানের পরিধি আলোচনার ঊর্ধ্বে। তবুও তিনি বাংলাদেশের ‘বিরাট-বিশাল’ একজন সাংবাদিক। আর নারী নেত্রী এখন একটি কর্পোরেট হাউজে কর্মরত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যতক্ষণ তিনি জেগে থাকেন, তার ফেসবুকও সচল থাকে। ভাগ্যের জোরে তিনি সেদিন অপর নেত্রীদের সাথে হাসপাতালে যাননি। গেলে তারও সেলফি ফেসবুকের দেয়ালে ভেসে উঠতো। যে হাসি এখন অক্ষরে প্রকাশ পাচ্ছে, সেটি প্রচার পেতো তার সেলফিতে।
২০১২ সালে একটি রোগ দেশের চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছিলো। রোগটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলেও, রোগটিকে শনাক্ত করা যাচ্ছিলো না। একই বছরের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সেই রোগ সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশিত হয়। রোগটিকে ‘মগজ-খেকো এ্যামিবা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত সেই খবরে উল্লেখ করা করা হয়,
অবশেষে এই রোগের কারণ খুঁজে পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। জীববিজ্ঞানের ভাষায় আসলে এটি একটি ‘মগজ-খেকো এ্যামিবা’। এটি একটি এককোষী মুক্তজীবী প্রাণী। ‘নাইজেলরিয়া ফাওয়ারি’ নামের এ এ্যামিবা দূষিত পানির মাধ্যমে ছড়ায়। পানির মাধ্যমে নাক দিয়ে এ এ্যামিবা মস্তিষ্কে ঢুকে যায় এবং স্নায়ু ধ্বংস করে ফেলে। নদী, পুকুর, হ্রদ ও ঝর্ণার পানি যেখানে হালকা গরম, সেখানে এ ধরনের এ্যামিবা বাস করে। গত ৬ মাসে ‘মগজ-খেকো’ এ্যামিবার শিকার হয়ে পাকিস্তানের করাচীতে ১০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে রোগ নির্ণয়ের এই সুখবরটি দেয়া হয়।
এ এ্যামিবা মস্তিষ্কে ঢুকে পড়লে মারাত্মক কোন উপসর্গ দেখা যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণ থাকে হালকা মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা, জ্বর ও পেটব্যথা। পাকিস্তানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা মুসা খান বলেন, পাকিস্তানের অধিকাংশ চিকিৎসা কেন্দ্রকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে মুসা খান বলেন, পানি যেন মানুষের নাকের বেশি গভীরে প্রবেশ করতে না পারে, এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। দূষিত পানিতে সাঁতার কাটা বা গোসল করার সময় এ ধরনের এ্যামিবা মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে।
২০১৫ সালের ৩১ মে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে নায়েগলেরিয়া ফাউলরি বা মস্তিষ্কখাদক এ্যামিবায় (এককোষী অণুজীব) আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। ২২ বছর বয়সী মোহাম্মাদ মুয়াল্লেম নামের ওই যুবক শনিবার করাচীর সিভিল হাসপাতালে মারা যায়। মুয়াল্লেম ওরাঙ্গি শহরের বাসিন্দা। এ নিয়ে চলতি বছর সিন্ধু প্রদেশে প্রাণঘাতী এই রোগটিতে ৬ জনের মৃত্যু হলো। এছাড়া আরও একজন রোগী ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। বিগত ৩ বছরে পাকিস্তানে এই রোগে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর মারা গেছে ১৪ জন।
প্রবাসী শিক্ষক ও সাংবাদিক আলী রিয়াজ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “কেবল শারীরিকভাবে আক্রমণই সহিংসতা নয়, ভাষাও সহিংসতার একটা প্রকাশ - আপনার ভাষাও চিহ্নিত করে আপনি সহিংস কি না। আপনার আশে পাশে, ফেসবুকে, পত্রিকার পাতায়, খুব সাজানো অনুষ্ঠানে কে কী বলছেন সেটা দেখুন তা হলেই বুঝতে পারবেন কোথা থেকে সমাজে অসহিষ্ণুতা, উগ্রপন্থা এবং সহিংসতা বাড়ছে - তখন আর আপনাকে প্রশ্ন করতে হবে না - 'কি করে সম্ভব?'”
ফেসবুক অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে। এনেছে বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় নতুনত্ব। যে শুধুমাত্র ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত তাকে বলা হয় ‘ফেন্ধু’। নিজের ছবি নিজে তোলা হচ্ছে ‘সেলফি’। এই শব্দ গুলো প্রচার এবং প্রসার পেয়েছে ফেসবুকের কল্যাণে। সামাজিক অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকও কী কোন ভাইরাসে আক্রান্ত?
পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। যে ধারণার ভয়াবহতা আমাদের আতংকিত করে। তীব্রভাবে শঙ্কিত করে।
আধুনিক প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে, ‘কোটি কোটি বছর আগে আদিম সমুদ্রের পানিতে প্রোটোপ্লাজমের উদ্ভব হতে থাকে। তা থেকে এ্যামিবা সৃষ্টি হয়। সমুদ্রের এই এ্যামিবা থেকে প্রাণীজগতের বিকাশ ঘটে। এক কথায় বলতে গেলে সমুদ্র অর্থাৎ পানি থেকেই জীবনের সূত্রপাত। প্রাণের সূত্রপাত’।
শত কোটি বছর আগের সৃষ্ট প্রাণীকুলে, আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে যা ঘটছে এগুলো কিসের ইঙ্গিত? মানুষ মানুষকে কুপিয়ে, জবাই করে মারছে। সেটা দেখে কেউ কেউ মজা পাচ্ছে। কেউ বা উচ্চশব্দে হাসছেও। আমাদের বিবেক-বুদ্ধি-মানবতা কোথায়? আমাদের মনুষ্যত্ব বোধটুকু কী কোন অজানা এ্যামিবার শিকার?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য