আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

পরিবার কিংবা সাংগঠনিক পরিচয় নস্যি!

এমদাদুল হক তুহিন  

কোন কোন ঘটনায় পরিচয় কিংবা সাংগঠনিক পরিচয়ই প্রাধান্য পায়। এই যেমন তাহমিদের পরিচয়। বদরুলের পরিচয়। কিংবা বলা যেতে পারে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসনাত করিমের কথাও।

বদরুল যেমন প্রকাশ্যে কুপিয়েছে খাদিজাকে, তেমনি গুলশানের জঙ্গি হামলার ঘটনায় তাহমিদ ও হাসনাতের জড়িত থাকার একাধিক প্রমাণ প্রকাশ্য। তবু তাহমিদরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। ছাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় হাসনাত! তবে কী অদূর ভবিষ্যতে বদরুলও ছাড়া পাবে না! মুক্তি মেলবে না বদরুলের?

আপাত মুক্তি না মেললেও অদূর ভবিষ্যতে শঙ্কা থেকেই যায়। বলা হতে পারে, বদরুলের বিপক্ষে কোন সাক্ষী নেই। নেই কোন প্রমাণ। যেমন প্রমাণ নেই তাহমিদের। ঠিক যেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি হাসনাতের। এমনভাবে যতদিন প্রমাণ নামক অন্ধকারের বিনিময় যজ্ঞে বিঘ্নিত হবে ন্যায় বিচার; ততদিন এই দেশে চাপাতির কোপ চলবে। দ্বিতীয় কোন গুলশানের ক্ষত সৃষ্টি হবে না তারই বা গ্যারান্টি কোথায়? ২২ জন দেশি-বিদেশির স্থলে ২২২ জন বিদেশী হত্যা হবে না তারই নিশ্চয়তা কী?

সিলেট। প্রায়ই উত্তাল হয়ে উঠছে। একাধিক ব্লগারের উপর এখানেই হামলা হয়েছে। সর্বশেষ হামলার স্বীকার খাদিজা আক্তার নার্গিস। নরপিশাচদের মতো একই কায়দায় তাকে আক্রমণ করেছে এক ছাত্রলীগ নেতা। এ ঘটনায় বদরুল নামের ওই অপরাধীর সাংগঠনিক পরিচয়ই মুখ্য হয়ে উঠেছে। প্রাধান্য পেয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। এর পেছনের কারণ হিসেবে হিসেবে আমাদের সমাজই দায়ী। এই দেশে, এই বাংলায়; এখনও লাঠিয়াল বাহিনীর পরিচয়ই মুখ্য। আর্থিক পরিচয়ই মুখ্য। রাজনৈতিক পদবীই মূল। এর পেছনে আমাদের মানসিক এবং ট্র্যাডিশনাল বৈকল্যই দায়ী।

ঘটনা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশবাসীকে বলতে পারি, কে, কোন দল করে, আমি সেটা দেখি না। দেখবও না। যে অপরাধী সে অপরাধীই। অপরাধীর বিচর হবেই।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু এ ঘটনা বাদেও একাধিক ঘটনায় ছাত্রলীগকে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। তাদের গায়ে একটি কলঙ্ক তিলক লেগেই আছে। আর এ ঘটনার মূল হোতা বদরুল ছাত্রলীগেরই। অথচ সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ ভুল বিবৃতি দিয়ে নতুন করে মারাত্মক একটি ভুল করলো।

নিছক প্রেমঘটিত কোন ঘটনায় সংগঠন জড়িত থাকে না। আর এ ঘটনায় বদরুল একাই সম্পৃক্ত। অতএব এখানে ছাত্রলীগকে না টানাই উপযুক্ত ছিল। নিছক প্রেমঘটিত ঘটনায় প্রত্যাখ্যানের জেরে একটি মানুষকে কুপিয়ে মারবে যে মানুষ- সে আমার ভাই হতে পারে না, সে আমার বন্ধু নয়। সে আমার সংগঠনের কেউ-ই নয়। সে আমার সমাজের কেউ নয়। সে আমার রাষ্ট্রের নয়। সে ভিন্ন কোন গ্রহের। সে ভিন্ন কোন জগতের। সে এক নিকৃষ্ট দানব। এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক।

এখনও খাদিজার অবস্থার উন্নতি হয়নি। বদরুলের মা বিশ্বাস করতে পারছেন না তার ছেলে এমনভাবে কোন মানুষকে কোপাতে পারে। তার ছোট ভাই জানিয়েছে, তারা কোন আইনি সহায়তার জন্য তার পাশে দাঁড়াবে না। তার চাচা জানিয়েছে, বদরুল সামাজিকভাবে তাদের অনেক ছোট করেছে। তার চাচা আরও বলেন, গরুকে কোরবানির সময়ও মানুষ এভাবে কোপায় না। একটি স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষকতায় জড়িত ছিল অর্থনীতির এই ছাত্র। সেই বিদ্যালয় থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

আইসিইউতে খাদিজার চিকিৎসা চলছে, বিচার হচ্ছে বদরুলের। সামাজিকভাবে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে সবাই। ধিক্কার জানাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। এখানে পরিবার কিংবা সাংগঠনিক পরিচয় নস্যি। এঘটনায় পরিচয় যতোটা মুখ্য হয়ে উঠেছে, ততোটাই পরিচয় অস্বীকার করা হয়েছে। যেমন করেছে ছাত্রলীগ পরোক্ষভাবে তেমনটিই করেছে তার পরিবার।

গুলশানের সেই ভয়াবহ ট্রাজেডি বাংলাদেশকে নতুন করে জঙ্গি রাষ্ট্রের তকমা উপহার দেয়। সরকার নড়েচড়ে বসে। বের হয়ে আসে শুধু মাদ্রাসার ছাত্রই জঙ্গি নয়, নামীদামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও জড়িয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকদের কপালে ভাঁজ পড়ে। ফ্রি থিংকাররা চিন্তায় বসেন- কোন পন্থায়, ঠিক কী কারণে হতাশ তরুণ প্রজন্ম যোগ দিচ্ছে জঙ্গিদলে। বহুমাত্রিক কারণ বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এও বের হয়ে আসে পারিবারিক ঐতিহ্য কিছুটা হলেও দায়ী।

হ্যাঁ, পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা এই কারণেই বলছি; কেবল প্রতিপত্তির কারণে তাহমিদ ছাড়া পেয়ে গেল। তাহমিদ হাসিব খান একজন শিল্পপতির ছেলে। তার বাবা আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার। ঢাকার নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া ছাড়াও পড়েছে ইউনিভার্সটি অব টরেন্টোতে।

তাই, একাধিক ভিডিও ফুটেজে অনুরূপ সন্ত্রাসীর মতো পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে থাকার পরও আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ পায়নি! রাষ্ট্রের জন্য তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমন স্পর্শকাতর ঘটনায়ও অবলীলায় মুক্তি পাচ্ছে কোন সন্ত্রাসী। রাষ্ট্রের সচেতন মহল যেখানে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করছে, ভার্চুয়াল জগতে বয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদ; সেখানেও নিরব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বলাবাহুল্য, বলা হচ্ছে এ ঘটনায় মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। একই ঘটনায় ছাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় আছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম। ব্লগার হত্যা থেকে শুরু করে গত কয়েকবছরে গ্রেফতার হওয়া অধিকাংশ ঘটনায় মূল হোতারা কোন না কোনভাবে ছাড় পেয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে গুলশানের ঘটনায়ও অভিযোগ এলো। অনুমেয় যে, সরকার যে ক্ষতের কথা বলেছিল, সে ক্ষত আসলে প্রকৃতপক্ষে আইনশৃঙ্খলায়।

খাদিজা আক্তারের উপর হামলায় যেমন ছাত্রলীগ কিংবা তার পরিবার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পরিচয় অস্বীকার করলেও- তাহমিদ ও হাসনাতের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। বরং অন্ধকারে চলেছে টাকার খেলা। জড়িত নয় এমনটি প্রমাণ করা হচ্ছে বহির্বিশ্ব থেকে। পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে বিশেষ প্রতিবেদন। শঙ্কা এখানেই- এখানে পারিবারিক পরিচয় মুখ্য হয়ে উঠেছে। বাঁচানোর চেষ্টায় জয়ী হয়েছে অর্থশক্তি। যেখানে পরিবার কিংবা সাংগঠনিক পরিচয় নস্যি নয়; বরং এ এক ঢামাঢোল।

এমদাদুল হক তুহিন, ব্লগার, কবি ও সংবাদকর্মী। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ