প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ১৮ অক্টোবর, ২০১৬
মিডিয়া খুবই ব্যস্ত উন্নয়নের পেঁজা তুলোর মেঘের আকাশে ভাসতে। গত পরশু চীনের প্রেসিডেন্ট তো আজ বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মহানগর দাপাচ্ছেন “বাংলাদেশ উন্নয়নের জাদুবাস্তবতা” স্বচক্ষে দেখতে।
পুরবাসী সন্ত্রস্ত; কখন কোন রাজপথে হাতির পা পড়ে। ছোট-খাট প্রজাদের সরে যেতে হয় দ্রুত; উন্নয়ন পর্যটকদের এন্টোরাজের জন্য পথ করে দিতে।
এরমধ্যে সেই বাগেরহাটের কোন সে মোল্লাহাটে সোবহান মোল্লা নামে ২০১৬-র এক মোল্লা ১৯৭১ সালের মোল্লার মত সংখ্যালঘু পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে; তলোয়ার দেখিয়ে পুরো পরিবারের মস্তক নামিয়ে দেবার হুমকি দিয়ে দিনের পর দিন সংখ্যালঘু পরিবারের একজন নারীকে ধর্ষণ করেছে। সে নারীর স্বামীর শিরশ্ছেদের লক্ষ্যে উদ্যত সোবহান মোল্লার তরবারি; স্বামীকে বাঁচাতে সে নির্যাতিতা নারী এগিয়ে গেলে এক কোপে তার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তবুও নিস্তার নেই। আহত নারীকে হাসপাতালে নিতে দেয়নি। পরে প্রতিবেশীরা জানতে পেরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বাগেরহাটের স্থানীয় সাংবাদিকেরা উন্নয়নের নিরাপদ অথবা ভীতির তন্দ্রায়। তবুও জনকণ্ঠে ছোট একটি প্রতিবেদন ছাপা হওয়ায়; ছোটখাটো মানুষের উপায়হীন জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক অবর্ণনীয় কষ্টের খরখরে বাস্তবতাটি উঠে আসে।
বাগেরহাটের মোল্লাহাটের চুনখোলা ইউনিয়নের শোলাবাড়িয়া গ্রামের একটি সংখ্যালঘু পরিবারের এই মর্মন্তুদ ট্র্যাজেডি ভিডিও করার কাউকে পাওয়া যায়নি; ফলে সে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েনি। ফলে নেটিজেন ও অনলাইন একটিভিস্টদের অলক্ষ্যে রয়ে গেছে এই ঘটনাটি। আর মূলধারার মিডিয়া উন্নয়নের স্তব-সংকীর্তনে শশব্যস্ত। তাক লাগিয়ে দেয়া উন্নয়নের দুরন্ত সহিসেরা কথার খই ফোটাচ্ছেন মিডিয়ার কথার দোকানে।
তবুও গত বৃহস্পতিবার রাতে নির্যাতিতার স্বামী মোল্লাহাট থানায় সোবহান মোল্লার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। মোল্লাহাট থানার ওসি'র একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য; তিনি ক্ষমতা কাঠামোর পিরামিডের প্রান্তের একজন মানুষ হয়েও মামলাটি নেবার সাহস করেছেন। আশা করা যায় বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন মানবতার পক্ষে সক্রিয় হবেন। কারণ এইভাবে দিনের পর দিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘটতে থাকা অনাচারের ইতি টানা না গেলে; সমস্ত শরীরের রক্ত মুখে তুলে দুধে-আলতায় উন্নয়নাভ রাজধানীর জৌলুস দেখিয়ে আদৌ কী কোন সামষ্টিক অর্জন সম্ভব!
আমাদের প্রত্যাশা বিচার বিভাগ, আইন প্রণেতা জনপ্রতিনিধি, নির্বাহী বিভাগ বুঝতে চেষ্টা করবে রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের গোড়ায় এইসব হাজার বছরের নিপীড়ক সোবহান মোল্লাদের তরবারি চালিত হলে; স্তম্ভের ওপর দিকটায় উন্নয়নের কারুকাজ করে লাভ হবে না। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়া উন্নয়নের ফ্যাশান প্যারেডে, ক্ষমতা কাঠামোর নৈকট্যের আফিমে বুঁদ হয়ে থাকলে; শীঘ্রই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছোটখাটো মানুষের জীবনে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে।
ঠিক আর কতজন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান-আদিবাসী নির্যাতিত হলে রাষ্ট্রের সোনালী কারুকাজের জাদু-স্তম্ভগুলোর ঘুম ভাঙ্গবে!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য