প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ড. শাখাওয়াৎ নয়ন | ২৮ অক্টোবর, ২০১৬
অনেকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রে নামের বানান ভুল বিষয়ক একটি জোকস শুনেছিলাম। সনদপত্রে এক ছাত্রের নাম লেখা হয়েছে: শ্রী হরিবাল পাল। উক্ত ছাত্র যথারীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বরাবর দরখাস্ত করলো। তার দরখাস্তের ভাষা ছিল নিম্নরূপ: “হুজুরের নিকট আমার আকুল আবেদন এই যে, তিনি যেন হরিবাল এর ‘বাল’ কাটিয়া ‘লাল’ করিয়া, ‘পাল’ তুলিয়া ‘মাল’ করিয়া দিতে আজ্ঞা হন। কারণ আমার নাম: হরিলাল মাল।”
এখন যদি উক্ত ছাত্র বহুদিন পর তার অভিজ্ঞতার কথা ফেইসবুকে কিংবা কোনো পত্র-পত্রিকায় শেয়ার করেন; তাহলে কি তার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা দিয়ে হেনস্তা করতে হবে? চাকুরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে? মানসিক ডাক্তারের কাছে প্রেরণ করতে হবে? কেন? উক্ত ছাত্র কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময় কোথাও কোনো মুচলেকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিল যে, কোনো দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয়ে কোনো খারাপ কথা বলতে পারবে না?
এক সময় গির্জার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যেত না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি গির্জা? গির্জার পাদ্রীদের কোনো ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধেই তখন মুখ খোলা যেত না। কারণ ব্লাসফেমি। ব্লাসফেমির শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাই মৃত্যুভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারতো না।
আজকের বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়েও কি কেউ মুখ খুলতে পারবে না? ফরাসী বিপ্লব ঘটে যাবার পর রেনেসাঁর ধাক্কায় যখন রাষ্ট্র ব্যবস্থা খ্রিস্টান মৌলবাদীদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে সক্ষম হলো। মানুষ তখন বাক-স্বাধীনতার স্বাদ পেল।
গির্জার স্বৈরাচারী ক্ষমতা উবে গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্রের মুখ না হয় আজকে বন্ধ করে দেয়া গেল; কিন্তু কতকাল আর বন্ধ করে রাখা যাবে? এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে অপরাজেয় বাংলার ভাস্কর্যের চোখে কালো কাপড় বেধে দেয়া হয়েছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তো বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আজ কেন একজন ব্যক্তির বাক-স্বাধীনতা থাকবে না?
এসব কথা কেন বলছি? সম্প্রতি এক (তথাকথিত) মেধাবী যিনি বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। তার নাম সুশান্ত পাল। যদিও বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষাকে আমি কোনোভাবেই মেধা যাচাই প্রক্রিয়া বলে মনে করি না। কারণ বিসিএস পরীক্ষা একটি বারোয়ারী ধরনের পরীক্ষা; এই পরীক্ষায় সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যম মানের ছাত্ররা ভালো করে। কোনো বিভাগের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এই পরীক্ষায় খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। কারণ পরীক্ষার ধরনটাই এমন যেখানে শুধু ‘জ্যাক অফ অল ট্রেড মাস্টার অফ নান’রা ভালো করবে। সেকারণেই হয়তো কোনো সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এখনো সেরকম কোনো বুদ্ধিজীবী হয়নি। আর হবেই বা কিভাবে? সারাক্ষণ ‘স্যার’ ‘স্যার’ করতে করতেই জীবন শেষ।
যাই হোক, সুশান্ত পালের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নানা রকম কটূক্তি করেছেন। যা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। এতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজ্জত রক্ষাকারীরা তার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা পর্যন্ত করে ফেলেছেন। ইতিমধ্যে সুশান্ত পালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির বিধানও হয়ে গেছে। দ্রুত আইনের চেয়েও দ্রুত ব্যবস্থা! কিন্তু সুশান্ত পালের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা এত খারাপ লাগলো কেন? সবই কি মিথ্যা? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কোনো ধরনের অপকর্ম হয় না? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি র্যাগিং হয় না? টিএসসি’তে কি বাধনকে শ্লীলতাহানি করা হয়নি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কি ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ ওঠেনি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কি অস্ত্র, গোলা-বারুদ পাওয়া যায়নি?
কবি আল-মাহমুদ তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ডাকাতদের গ্রাম’ বলেছেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজ্জত কোথায় ছিল? নাকি সুশান্ত হিন্দু বলে কারো কারো উৎসাহ একটু বেশি? হিন্দু সুশান্তের শাস্তি হয়ে গেল ওভার নাইট; কিন্তু হিন্দু শিশুকন্যা ‘পুজা’র ধর্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলাই নিতে চায়নি। একই তো দেশ,তাই না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক আর হার্ভাড ইউনিভার্সিটি হোক;কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই কারো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা/মতামত প্রকাশ করার অধিকার হরণ করতে পারে না। এসব কি হচ্ছে? ক্ষমতার দাপট দেখানো হচ্ছে,তাই না? আমি সুশান্ত পালকে চিনতাম না। কয়েকদিনের ফেইসবুকীয় ঝড়ে তার কথা জেনেছি। একজন সুশান্ত পাল তার খারাপ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন;দেশে তো আরো হাজার হাজার ‘হরিদাস পাল’ আছেন; যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। তারা কেন তাদের ভালো ভালো অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করছেন না?
সুশান্ত পাল তো লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন,তাকে কি ক্ষমা করা যেত না? লঘুপাপে গুরু শাস্তি হয়ে গেল না? পরমত সহিষ্ণুতা কোথায়? একজন কেন, একশো জন সুশান্ত পালও যদি তাদের খারাপ অভিজ্ঞতার কথা বলে,তারপরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই থাকবে।
এতদিন বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতির দাপট দেখেছি; এখন ঢাবি অনুভূতি দেখছি। হোয়াট ইজ নেক্সট?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য