প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রণেশ মৈত্র | ০২ নভেম্বর, ২০১৬
বিগত ২২ ও ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী, বহু ঐতিহ্যের অধিকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল যথেষ্ট সফলতার সাথে। সম্মেলনটি ছিল উৎসাহ যথেষ্ট উদ্দীপনায় ভরা, জাঁকজমকে পূর্ণ এবং সীমাহীন জৌলুষে চোখ ধাঁধানো। ঢাকাবাসীরা ব্যাপকভাবে এই সম্মেলন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন এবং স্বাভাবিক কারণেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সমূহ থেকে গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে, শহর-নগর-বন্দর থেকে আগত ঐ অসংখ্য নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা
যাঁরা সদলবলে বাস-ট্রাক ভাড়া করে এসে ঐ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরাও সম্মেলনের সাফল্যে শরীক হলেন। শুধুমাত্র তাঁরাই বা হবেন কেন-সমগ্র বিশ্বের নানা দেশ, মহাদেশ, উপমহাদেশের অন্তত: এগারটি দেশ থেকে পঞ্চাশ জনেরও অধিক আমন্ত্রিত অতিথি, দেশের নানা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ যাঁরা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিশাল এবং ঐতিহ্যবাহী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরাও তাঁদের প্রদত্ত শুভেচ্ছা ভাষণে সম্মেলনটির সাফল্যই শুধু কামনা করেন নি-দলটির নেতৃত্বের, মূলত: দলীয় সভাপতি ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য সমূহের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন - প্রশংসা করেছেন ঐ বিশাল জমায়েত সফলভাবে সংগঠিত করার জন্যেও।
বহু সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী এই দলটির জাতীয় সম্মেলন অবশ্যই দলের সকল নেতা, কর্মী ও সমর্থকের কাছে সর্বাধিক বড় একটি সাংগঠনিক উৎসব। তদুপরি দলটি আজ দীর্ঘ আট বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। সুতরাং এগুলি মিলিয়ে ভাবলে সম্মেলনের বহিরঙ্গ প্রকৃতই জাঁকজমকপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও আনন্দ-মুখরিত ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। কোন দুর্ঘটনা বিশৃঙ্খলার কোন খবর দু’দিন ব্যাপী এই বৃহৎ জাতীয় সম্মেলনে অন্ত:পক্ষে আমার চোখে পড়ে নি। কোন পত্র-পত্রিকায় আজও তেমন কোন খবর আমার চোখে পড়ে নি।
৫০,০০০ ডেলিগেট কাউন্সিলারের জন্য দু’দিনের খাবার বরাদ্দ ছিল এমন খবরও টেলিভিশনের কোন কোন চ্যানেলে দেখেছি। কিন্তু কোথাও দেখি নি তাই নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন হৈচৈ বা তার বিলি বণ্টন নিয়ে কোন প্রকার দ্বন্দ্ব সংঘাতের খবর। কিন্তু এই আনন্দ-মুখরতার পরিবেশ যাঁরা রচনা করলেন সেই নেতৃত্ব, শুভ বার্তা হিসেবে অনেকেই গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণেও নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাই। দেশের পত্র-পত্রিকা এমনও লিখতে শুরু করেছিল যে “কার্যত: বেগম খালেদা জিয়াই হবেন আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনের প্রধান অতিথি। বি.এন.পি‘র পক্ষ থেকেও খালেদা জিয়া সম্মেলনে যোগ দেবেন এমন সুস্পষ্ট আভাস দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু আমাদের জাতীয় রাজনীতিকে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনার পথে কোন অগ্রগতি সাধিত হতে পারলো না বি. এন. পি. চেয়ারপার্সন শেষ পর্যন্ত বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ সম্মেলনে যোগ দান না করায়। সম্ভবত: কোন নেপথ্য শক্তির ইঙ্গিতে তিনি এমন করেছেন। তবে ইঙ্গিতটি অশুভ এবং সবার জন্যেই অমঙ্গলকর।
যা হোক একটি মধ্যবিত্ত প্রভাবিত এবং দেশের অন্যতম প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনের কাছে মানুষের প্রত্যাশা স্বাভাবিক ভাবেই ছিল অনেক। বিশেষ করে অগ্রসরমান, বৈষম্যপূর্ণ, শ্রেণী বিভক্ত দেশটির নানা মুখী সমস্যার ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা-ধর্মবিশ্বাস ও দারিদ্র্য অশিক্ষার নানা রূপে জর্জরিত মানুষের আকাঙ্ক্ষাও ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই বিপুল। এ কথা আরও সত্য এ কারণে যে এই দলটির নেতৃত্বেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল এবং জনগণের কাছে দলটির কমিটমেন্টও প্রচুর।
কিন্তু সম্ভবত: যেহেতু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলির সম্মেলনের যে ঐতিহ্য তা কালে এটা স্পষ্টত:ই প্রতিভাত হয়ে ওঠে যে দেশের অর্থনৈতিক ও অন্যবিধ নানামুখী বিষয় নিয়ে সেখানে আলোচনার জন্য কোন বিশেষজ্ঞ বা তাঁদের পর্যবেক্ষণ পত্র কাউন্সিলার/ডেলিগেটদের কাছে আলোচনার জন্য পেশ করা বা জানবার জন্যেও বিতরণ করা হয় না। তেমন কোন রেওয়াজও আমাদের দেশে আজও সৃষ্টি হয় নি-তাই আওয়ামী লীগের সদ্য-সমাপ্ত সম্মেলনে ও সেই ঐতিহ্য রেওয়াজেরও ব্যত্যয় ঘটে নি।
তা হলে সম্মেলনের কর্মসূচীতে কি কি থাকার কথা? সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যা যা থাকার কথা তা সবই ছিল এবং সেগুলি সাফল্যের সাথেই সমাপ্ত হয়েছে যেমন: জাতীয় সংগীতের সুর সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন, বেলুন ওড়ানো, পায়রা অবমুক্তি প্রভৃতির মাধ্যমে সভাপতি কর্তৃক সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা। অত:পর সকলে মঞ্চে আরোহণ করে সকল অতিথি ও আগত ডেলিগেট কাউন্সিলারদেরকে স্বাগত ভাষণ। অত:পর দেশী-বিদেশী অতিথিদের পক্ষ থেকে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছা ভাষণ। সর্বশেষ সভাপতির ভাষণ। অত:পর দেশী-বিদেশী অতিথিদের পক্ষ থেকে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছা ভাষণ। সর্বশেষ সভাপতির ভাষণ।
এই পর্বের মাধ্যমে ২৮ অক্টোবর ২০১৬ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের কর্মসূচীর সকল সমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় দিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে কাউন্সিল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো।
এই ক্ষেত্রে অন্য কিছু প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলে নেওয়া যায়। এই দিন যা নেহায়েতই হওয়ার কথা তা হলো সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ ও তা অনুমোদন, সংবিধান সংশোধনী খসড়া প্রস্তাব পেশ ও তা অনুমোদন, প্রতিনিধিদের আলোচনা বা নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ, পরিশেষে সাংগঠনিকভাবে অতীতের কার্যক্রম ও তার পর্যালোচনা করে আগামী দিনের কর্মসূচি পেশ ও অনুমোদন এবং সর্বশেষ নতুন নেতৃত্ব কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচন। এইগুলি অবশ্যই হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সময় তো ছিল মাত্র একদিন। আওয়ামী লীগের মত ক্ষমতাসীন, বৃহৎ দলের জাতীয় সম্মেলন কদাপি দুই দিনে যথাযথভাবে সম্পন্ন হতে পারে না- প্রয়োজন ছিল আরও অন্তত: পূরা দুটি দিনের।
যা হোক , সে প্রশ্ন সেখানে ওঠে নি। সম্মেলনের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই যে বিষয়টি আওয়ামী লীগের সকল স্তরে আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা হলো নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন। বাদ বাকী অপরাপর বিষয় সমূহ কারও কাছেই গুরুত্ব পেয়েছ-এমনটি দূরদেশ থেকে যতটা দেখেছি বা বুঝেছি তাঁতে তা আদৌ মনে হয় নি। মিডিয়াগুলিতে তাই প্রাধান্য পেয়েছিল নেতৃত্বে কে আসছেন কোথায় কোথায় পরিবর্তন সাধিত হতে চলেছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন অনুমান ভিত্তিক নানামুখী খবর।
সর্বাধিক আলোচিত পদটি ছিল সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকদের। সেখানে সাধারণ সম্পাদক পদে হঠাৎ করেই উঠে আসে ওবায়দুল কাদেরের নাম। কিন্তু পত্র-পত্রিকায় যা অনুমিত হতে থাকে তাতে বেশী গুরুত্ব পায় ধীর-স্থির,প্রাজ্ঞ, মিতবাক ও সৎ জননেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামটি যদিও তিনি পর পর দুটি টার্ম সাধারণ সম্পাদকের গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নিয়মিত অফিস করেন না কর্মীদের ও তৃণমূলের সংগঠনগুলির বা শাখাগুলির সাথে যোগাযোগ রাখেন না এমন একটি অভিযোগ অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে শুনা যেত আগে থেকেই। তবুও অনেকের মত আমারও ধারণা ছিল শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা ও সততা বিবেচনায় সৈয়দ আশরাফকেই আরও একটি টার্ম ঐ গুরুত্ব পদে নির্বাচিত করে রাখা হবে।
নির্বাচন অবশ্য হয় নি কোনদিনই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরা কোন পদে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পাননি-এবারও তাই হলো। নেত্রীর আশীর্বাদে পদগুলির বণ্টন হয়ে এবং এবার ঐ পদে রদবদল করে তরুণ এবং কর্মঠ ওবায়দুল কাদেরকেই সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আশা করা যায়, তৃণমূলকে তিনি উজ্জীবিত করতে পারবেন।
যুগ্ম - সম্পাদক পদে তাজ উদ্দিন তনয় অবশ্যই আসছেন এমন গুজবও বিস্তর ছিল। সর্বাধিক আলোচিত ছিলেন জয়। ঐ একই পদে। কিন্তু দুজনকেই আনা হয় নি। প্রকৃতপক্ষে কোন বিবেচনায় তা এখনও জানা যায় নি।
সম্মেলনের পর্যালোচনায় সংক্ষিপ্ত ভাবে এটুকু বলা যায় জাতীয় সম্মেলনটির বহিরঙ্গ অত্যন্ত সফল ও জাঁকজমকপূর্ণ - চাকচিক্যময় হয়েছে। কিন্তু আসে নি জনজীবনের সমস্যার কথা-জঙ্গি উদ্ভব, জামায়াত নিষিদ্ধ করণ, বাহাত্তর সংবিধানের পুনরুজ্জীবন, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বর্জন, নারী নির্যাতন সংখ্যালঘু নির্যাতন, আইনের শাসন প্রভৃতি জ্বলন্ত ইস্যুগুলি। কিন্তু আবহ গড়ে তোলা হয়েছিল আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষে তার উপযুক্ত কর্মকর্তা ও নেতৃত্ব নির্বাচন ও প্রস্তুতি গ্রহণ। কর্মীরা বাকীসব সরকারের হাতে/নেত্রীর হাতে রেখে ঐ একটি চিন্তাকে ধারণ করেই বাড়ী ফিরলেন। অনুষ্ঠিত হলো একটি নির্বাচনমুখি জাতীয় সম্মেলন।
তার পরও নেতৃত্বকে অভিনন্দন সকল দায়িত্ব সামনে তার তৎপর হবেন-এই প্রত্যাশা ।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য