আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ডাইরেক্ট ভাইঙ্গা দিমু: কে কারে ডাইরেক্ট ভেঙ্গে দিতে চান?

কাজল দাস  

অনেকের মতো, আমি ও মনে করি, রবির যে বিজ্ঞাপন রুবেলকে দিয়ে করানো হয়েছে,'এরপর আর কেউ বাঁচাইতে পারবো না, ডা্ইরেক্ট ভাইঙ্গে দিমু''। সেটা অগ্রহণযোগ্য, বাতিলযোগ্য এবং নির্মাতার অপরিণামদর্শীতা শাস্তিযোগ্য।

কী কারণে সেটা আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য হতে পারে:

১) হোয়াট এ্যা টেক্সট ইন এ্যা কনটেক্সট বিচারে:
মিডিয়া স্টাডিতে এইটা খুব আলোচ্য একটা জিনিস যে, কোন পরিস্তিতিতে আপনি আপনার একটা বক্তব্য দিচ্ছেন। যেমন একটা উদাহরণ দেই-ধরেন একজন নির্মাতা একটা মদের দোকানের বিজ্ঞাপন দেখালো সেখানে দেয়ালে সে একটা নারীর অর্ধ নগ্ন ছবি তিনি ফোকাস করেছেন, এর মানে হল মদের দোকান তার কনটেক্সট কিন্তু টেক্সট হল এখানে মদ বিক্রি হয় সেই সাথে এখানে বিনোদন ও আছে নারীকে দিয়ে। বারে যা হয় আর কি। কনটেক্সটে যে টেক্সট দেয়া হল সেইটা কি মেসেজ তৈরি করে সেইটা গুরুত্বপূর্ণ। রুবেলের এখানে কনটেক্সট আর টেক্সট কি? এখানে কনটেক্সট হল ইন্টারনেটের গতি টেক্সট হল বোলিং। এইটার মেসেজ বিজ্ঞাপনী ভাষা হতে পারে। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে- তার একটা ক্ষোভ মেশানো বক্তব্য আছে-সেইটা সবাই শুনেছেন-‘ এরপর আর কেউ বাঁচাইতে পারবো না, ডা্ইরেক্ট ভাইঙ্গে দিমু’ । এই ধরনের একটা বক্তব্য সমাজে কি মনস্তাত্বিক মেসেজ সেইটা সবার বুঝার কথা। কিছুদিন আগে যার নামে একটা নির্যাতনের মামলা ছিল তাকে দিয়ে এই ধরনের বিজ্ঞাপন শুধু বিজ্ঞাপন না তাকে মরাল জাস্টিফিকেশন দেয়া আর যে ক্ষোভ প্রদর্শন সেটা তার এক ধরনের অবদমিত প্রতিশোধ। বিজ্ঞাপন তার এই অবদমিত ক্ষোভকে মরালি জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছে, এই জন্য এইটা একটা গ্রহনযোগ্য বিষয়।ব্যাক্তি ক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারে তবে এটাকে সামাজিকভাবে জাস্টিফাই করা ভুল।

২)লজিক অফ ডমিনেশন অর সাবজুগেশন এ্যাণ্ড সোশালাইজেশন অফ সেক্স রোল অপজিশন:
এইটা এই সমাজে ধর্ষিতাকে দেখার সামাজিক বিচার। হ্যাপী/রুবেল এইটা এখানে একটু বাদ দেন। তার আগে বিচার করেন আমরা কোন নারীকে ধর্ষিতা হবার পর কতটুকু মর্যাদা দেই। কিংবা কেউ সম্পর্কজনিত সন্দেহভাজন হলে তার প্রতি কি মনোভাব পোষন করি।কোন প্রকার বাচ বিচার ছাড়া সহজ ভাষায় বলে দেই, মেয়েরা যতসব নষ্টের মূল। কিছুদিন আগের পহেলা বৈশাখে এই ঘটনার পর অনেক বয়স্ক মানুষের সাথে তরুনরা এইটা নারীর প্রতি চিরকালীন মণোভাব দিয়ে জায়েজ করেছেন। এই যে জায়েজীকরণ, এইটা হল নারীর উপর পুরুষের ডমিনেশন বা সাবজুগেশন বা অধস্তনতার যুক্তি যোগায়। রুবেল এখানে বিজ্ঞাপনের ভাষায় হ্যাপীর উপর লজিক অফ সাবজুগেশনের সেই সনাতনী প্রকাশই দেখিয়েছে। সে ভাঙ্গতে চায় বা ভেঙ্গে দিবে? আসলে সে কি ভাঙ্গতে চায়, অন্য যা কিছুই বিজ্ঞাপন বুঝাতে চেষ্টা করুক না কেন পাবলিক এই ব্যাক্তির ও তার উপর রিলেভেন্ট ঘটনা দিয়েই এইটার মানে খুঁজবে। এইটা শোনার পর দর্শক সবার আগে তার মাথায় কি ভাববে , দ্যাট ইজ দ্যা ফ্যাক্ট। দিস ইজ দ্যা সাইকোলজিকাল মেসেজ অফ এ্যাড। অন্য যা অর্থ থাকুক না কেন এই বিজ্ঞাপনের মেসেজ তাকে ঘিরেই অর্থ তৈরি করবে।

আবার ভাইঙ্গা দিমু, এই ভেঙ্গে দেয়া ভাষায় সমাজে কারা প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে প্রতিনিধিত্ব করে পুরুষ বা পিতৃতন্ত্র। সমাজে নারীরা চিরকাল ব্যাপী গড়ে দিয়েছে আর পুরুষেরা ভেঙ্গেছে। গড়তে হবে এইজন্য নারী ঘরে আর ভাঙ্গতে হবে এইজন্য পুরুষ বাহিরে। নারীরা কি গড়ে, ওরা আসলে সন্তান বিয়ায়, বাগান করে, আদর-যতন করে, প্রিয়াসী হয়, ক্লান্তি দূর করে, নমনীয় হয়। আর পুরুষেরা ভাঙ্গে পাহাড়, পাড়ি দেয় নদী-সমুদ্র, উড়ায় উড়োজাহাজ, তারা ভেঙ্গে দিতে যুদ্ধ করে, তারা সাহসী, অদম্য, নির্ভীক, কাঠিন্যশালী ইত্যাদি। এই যে অপোজিশন এইটা সামাজিকীকরনের সেক্স রোল। সেক্সের উপরে ভিত্তি করে আমরা শিশুকে ছেলে বা মেয়ে বানাচ্ছি। তার ভুমিকা নির্ধারিত করে দিচ্ছি। ফলে ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষমতা রুবেলদেরই আছে, তাই মেসেজ দিয়ে সে কারে ভাঙ্গছে, সেইটা অবশ্যই বুঝা যায়।

৩) ভাষা বা শব্দের অর্থ এবং ব্যবহার:
শব্দ বা ভাষা শুধু তো আর প্রকাশ না। এইটা এর বাইরের ও কিছু । যেমন ভাইঙ্গা দিমু। এইটা একটা ক্ষমতার প্রকাশ। কিছুদিন আগের অভিযুক্ত একজন এখন ভাইঙ্গা দিচ্ছেন মানে উনি ক্ষমতা প্রকাশ করছেন। এবং ভাষার তীব্রতা ক্ষমতার তীব্রতার ও নির্দেশক। যে ক্ষোভে তিনি ভাঙ্গছেন, সেই ক্ষোভে তিনি বিজ্ঞাপনের বাইরে ও অনেক কিছু ভাঙ্গতে চাচ্ছেন। এইটা বুঝে নিতে হবে আপনাকে শব্দ দিয়ে সেজন্য, শব্দ বা ভাষার ব্যবহার এখানে রাজনৈতিক। সেজন্য এই ভাষা অভিযুক্ত।

আবার আমাদের অঞ্চলে অনেক শব্দের স্থানিক কিছু মানে আছে। আমরা যখন সামাজিক অর্থে বৃহত ব্যাপৃত করার জন্য কিছু নির্মান করি তখন পারতপক্ষে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কমন ভাষা ব্যবহার করি, যাকে ভাষা বিজ্ঞানে লিংগুয়া প্যারোল বা সবার জন্য সাধারনীকরন ভাষা বলা হয়। যেমন ইংরেজি ভাষা। সব দেশের মানূষের কমন ভাষা সেই অর্থে সেইটা একটা ফ্রাংকা। আমাদের সাধু ভাষার ব্যাপারটা ও কাছাকাছি। সবার বুঝার জন্য বলেই এইটা সাধু হয়ে উঠেছে। আঞ্চলিক ভাষা এখানে স্থানিক যাকে লিংগুয়া প্যারোল বলে। বিজ্ঞাপনের ভাষা ‘আসুক;ভাইঙ্গা দিমু’, এই ব্যাক্য সারাদেশে কোন ফ্রাংকার বা সাধারনী ভাষা তৈরি করবে না। এইটা প্যারোল বা স্থানিক আকারে মেনিং দেবে। যেমন- ডাইরেক্ট ভাইঙ্গা দিমু শোনার পর আমাদের সিলেটে একজন বলে উঠবে ‘রুবেল ভাইঙ্গা দিছে গো’, সে এইভাবে মনে হয় হ্যাপীরে ও ভাইঙ্গা দিছে’ ।এই মন্তব্য দেশের আরো অঞ্চল থেকেই আসবে ।

আমদের সমাজে যারা অপরাধী তারা সবাই সাধারনভাবে হীরো হয়ে যান। এখানে আদালত ও প্রশাসনে কোন ন্যায় বিচার না থাকায় এই হিরোরা সব ক্ষেত্রেই পুরুস্কৃত হন। রুবেল ও আমাদের সামাজিক মিডিয়ার হিরো। তার খেলোয়ারি দক্ষতায় সে অসামান্য হওয়ায়, অপরাধের বিচার সেখানে নগন্য। সে অপরাধী সেই বিচার ও নগন্য। সে অপরাধী নাকি অপরাধী না সেইটা প্রমান হবার বিষয় ও নগন্য। যখন এই অবস্থা তখন এই ধরনের বিজ্ঞাপন আমদেরকে স্বাভাবিকভাবে ভিন্ন মেসেজ প্রদান করে। এই ভিন্ন মেসেজ সবার স্বার্থে বর্জনীয়।

 

কাজল দাস, অনলাইন এক্টিভিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ