প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
নাজমুল হাসান | ১৫ নভেম্বর, ২০১৬
দেশে বিবেককে নাড়া দেবার মতো অনেকগুলি নৃশংস ঘটনা পর পর ঘটে গেল। প্রতিনিয়তই ঘটে যাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলি না ঘটাই যেন অস্বাভাবিক হয়ে গেছে!
চরম আওয়ামীপন্থী লোকজনের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখলাম এসব ঘটনার মধ্যেও তারা ষড়যন্ত্রের উপাদান খুঁজছে। ঘটনাগুলির একপ্রকার বৈধতা দেবার চেষ্টা করছে। সরকারী প্রশাসন যন্ত্রও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। তাদের আশঙ্কা হয়ত মিথ্যেও নয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে, আবারও হতে পারে সেটি অমূলক কিছু তো নয়।
কিন্তু প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যে কথাটি প্রযোজ্য তা হচ্ছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগ যে সুদৃঢ় অবস্থানে রয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের লোকজনের সমর্থন ছাড়া কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে এহেন অপকর্ম করার পরেও বহাল তবিয়তে টিকে থাকতে পারে! প্রায় কোনো দুর্ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার কিছু হয় না, সর্বজনবিদিত অপরাধীরা আইনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে প্রকাশ্যে অপকর্ম করে বেড়ায়।
ধর্মাশ্রয়ী-ধর্মভিত্তিক, ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দলগুলি যা করে আওয়ামী লীগের এখনকার শাসনটা যেন সেভাবে চলছে। এটা কোনোভাবেই দলটির ঐতিহ্যের সাথে যায় না। জনগণের দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশিত নয়। একটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখতে হবে যে, সন্ত্রাস-দখলদারি, মিথ্যাচারিতা, ইতিহাস বিকৃতি করে বিএনপি, জাতীয় পার্টি এক সময়ে টিকে থাকলেও আওয়ামী লীগ টিকতে পারবে না। আওয়ামী লীগের কাছে জনমানুষের প্রত্যাশাটা ভিন্ন। আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও দলকে ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করে।
কিছু রাজনৈতিক পচন ক্ষমতার মোহে সঠিকভাবে অনুধাবন করা যায় না, যদিও তা সত্য। ক্ষেত্রবিশেষে আওয়ামী লীগও হয়ত সেরকম কিছু বিষয়কে অনুধাবন করতে পারছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে বিএনপিকে মানুষ যে কারণে প্রত্যাখ্যান করেছিল তেমন ঘটনাগুলি এ সময়েও আপাত প্রতিকারহীনভাবে ঘটে চলেছে যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। স্মরণ রাখা দরকার যে, দেশের সকল রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক বন্ধু আছে, আওয়ামী লীগের প্রকৃত কোন রাজনৈতিক বন্ধু নাই। আওয়ামী লীগ মূলত একা এবং একাই । আওয়ামী লীগ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে যায় তবে এ দেশ তার গুরুভার বহন করতে পারবে না। তখন দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ নিজেও তা সহ্য করতে পারবে না।
বিগত নির্বাচনে ভারতের কংগ্রেসের দিকে তাকালে মনেই হয়নি ঐতিহ্যবাহী এই দলটি নির্বাচনে এমন ধরাশায়ী হতে পারে। অথচ তা-ই হয়েছে। কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে দেখে এবং তার কাঙ্ক্ষিত প্রতিকার ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নীরবে ফুঁসছে। সঙ্গত কারণেই মনে হয়, আওয়ামী লীগের উচিৎ সাধারণ মানুষের মনের সে সব দ্রোহ বোঝার চেষ্টা করা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে তা নির্মূল করা। কঠোরভাবে দলের বেপরোয়া লোকজনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা এর মধ্যে অন্যতম।
দেশে কার্যত কোন বিরোধী দল না থাকায় এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির কার্যকর কোন প্রতিবাদী ভূমিকা না থাকায় জনমনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ দ্রোহ আকারে প্রকাশিত হতে পারছে না। তার মানে এই নয় যে, ক্ষোভ নেই, আওয়ামী লীগের সবকিছু তারা খুশী মনে মেনে নিচ্ছে। মোটেও তা নয়।
রাজনীতির মাঠে ভাল কাজ আর খারাপ কাজ কাটাকাটি হয় না। খারাপটা খারাপই থেকে যায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব যদি মনে করে থাকেন যে, এ আমলে অনেক ভাল কাজ করেছি বলে জনগণ খারাপটুকু ক্ষমা করে দেবে তবে সেটা খুবই বড় ভুল। কারণ আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে মানুষ ভালোটুকুই বরং পুরোপুরি ভুলে যাবে এবং শুধু খারাপটুকুই শুধু মনে রাখবে। বিএনপির কৃত অন্যায়গুলো মানুষ ঠিকই ভুলে গেছে কিন্তু অনেক পূর্বে করা আওয়ামী লীগের ছোট একটা ত্রুটিও মানুষ ভোলেনি। এটা কেন যেন আমাদের স্বাভাবিক হিউম্যান বিহেভিয়ার।
মানুষের মনের ভাষা পড়তে না পারলে হয় আওয়ামী লীগকে পড়ে যেতে হবে, নইলে নড়ে যেতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। নড়ে গেলেও ক্ষমতায় হয়ত থাকবে কিন্তু সেভাবে থাকাটা প্রত্যাশিত নয়। সুতরাং দলীয় অন্যায়কারীদের কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং সরকারী কাজে মানুষের হেনস্তা বন্ধ করুন।
জনদুর্ভোগ কমলে জনগণ তার মূল্যায়ন করবে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য