আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

অনেকেরই চেহারাই স্পষ্ট করলো নাসিরনগর

রণেশ মৈত্র  

ঘটনা নতুন কিছু নয়। বারংবার ঘটছে। এবারও ঘটেছে এবং নাসিরনগরেই এবারের শুরু যেমন নয়-তেমনই সেখানে এবারের শেষও নয়। যেন অনিঃশেষ যেন কদাপি শেষ হবার নয় এই কুৎসিত বর্বর অসভ্য সাম্প্রদায়িক আক্রমণ। সেই যে চল্লিশের দশকে ভারত-বিভক্তির আগে শুরু হলো- তা আজও ঘটছে এবং ঘটেই চলেছে তীব্র গতিতে অব্যাহতভাবে। সেদিন বলা হয়েছিল ভারত বিভক্তি করলে পাকিস্তান নামে মুসলিম প্রধান এলাকা রাষ্ট্র গঠন করলেই কেবল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান ঘটবে নতুবা নয়।

সরকারের উচ্চকণ্ঠ প্রচারণা-“বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ”। কথাটি প্রতি বছরই হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টানদের নানা ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলিতেই কর্তাব্যক্তিরা বারবার বলে থাকেন। একথা তো বহু পুরাতন কালের কথা-চল্লিশের দশকেরও আগের কথা। সেই কথার চর্বিতচর্বণ আর কতবার শুনতে হবে? বিশেষ করে আজ কয়েকটি দশক ধরে যখন চলেছে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা? যে সহিংসতা শুধুমাত্র একতরফাভাবেই ঘটছে এবং কোন দিনও যার বিচার হচ্ছে না? তবে কি এই সহিংস তার খবরগুলি মিথ্যা? নাসিরনগরের, হবিগঞ্জের ছাতকের, লালমনিরহাটের, ফরিদপুরের, যশোরের এবং সর্বশেষ নেত্রকোনার? সিরাজগঞ্জের ও ঝালকাঠির?

মিথ্যা কি প্রকাশিত অসংখ্য ছবিও? ক্যামেরাও কি সরকার বিরোধী যে সেগুলি মিথ্যা সব ছবি তুলে বেড়াচ্ছে? সাংবাদিকদেরকে তো ধমকেই দিলেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক। আবার তাঁর সায়ে সুর মিলিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিলেন “নাসিরনগরে কিছুই হয় নি। সব কিছুই স্বাভাবিক”। ব্যস, বাদবাকি লেখক-সাংবাদিক এবং ছোট বড় নানা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের, পূজা উদযাপন পরিষদ, নারী ঐক্য পরিষদ। এমনকি, লন্ডন ভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-সবাই মিথ্যাচার করেছেন সবাই মিথ্যাবাদী। জানিয়ে দেওয়া হলো প্রকারান্তরে।

এবারের ঘটনাবলী সীমিত থাকে নি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগরের মধ্যেই। নাসিরনগরের আগুন যেন নিমেষেই ছড়িয়ে, পড়লো সবখানে। আজ যখন নিবন্ধটি লিখছি সিডনী বসে তখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, নাসিরনগর সংলগ্ন হবিগঞ্জ জেলার একটি উপজেলাতেও ইসলাম ধর্মের নাম করে দিব্যি মিছিল করে ভাঙলো ঐ এলাকার কয়েকটি মন্দিরের প্রতিমা ও হিন্দুদের ঘরবাড়ি। তারপর প্রতিদিন ঘটতে থাকলো জেলা থেকে জেলান্তরে। নেত্রকোনা, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, নওগাঁ (মান্দা উপজেলা) যশোর, ফরিদপুর, গোপালপুর, বরিশাল প্রভৃতি জেলাতেও ঘটেছে মন্দির, মূর্তি ভাংচুর ও হিন্দুদের বাড়িঘরের ধ্বংস সাধন।

কিন্তু এবারের এই সহিংসতার ঘটনার বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আমার চোখে ধরা পড়েছে। ফেসবুকে মিথ্যা ছবি পোষ্ট করে নির্দোষ হিন্দু-বৌদ্ধদেরকে দায়ী করে একশ্রেণীর উগ্রপন্থী মুসলিমদেরকে সংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে উত্তেজিত করে এ জাতীয় ঘটনা ঘটানো তো এই নতুন নয়-এর আগেও ঘটেছে। ২০১২ সালে রামুতে, ২০১৪ সালে পাবনা জেলার বনগ্রামে এবং ২০১৬ সালে এটি। কিন্তু অন্যান্য বারের মত এলাকার নির্বাচিত সংসদ মন্ত্রী ঘটনার কথা শুনে তাকে মিথ্যে বলে দাবী করেন নি। সবচেয়ে বড় কথা হলো হিন্দুদেরকে উল্লেখ করে অতীতে কেউ প্রকাশ্যে “মালউনরা” বড্ড বাড়াবাড়ি করছে-এমন শুনালেন ঐ এলাকার সাংসদ ও মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক। ছায়েদুল হককে অতীতে এলাকার বাইরে কেউ চিনতেন না। কিন্তু এবার তাঁর ঐ উক্তির কারণে তিনি পত্রিকা-টিভিতে শিরোনাম হয়ে গেলেন-ব্যাপকভাবে তাঁর ছবিও প্রচারিত হওয়ায় দেশবাসী এবং আমরাও তাঁর চেহারার সাথে দিব্যি পরিচিত হয়ে গেলেন।

নিবন্ধটি লিখতে বসে খবর পেলাম সিরাজগঞ্জে ও ঝালকাঠিতে কালী মন্দিরে ভাঙচুর ও হামলা হলো। এ দুটিই হলো সর্বশেষ সংযোজন। আগুন নেভা দুয়ের কথা-তা বরং ছড়িয়ে পড়ছে দিগ্বিদিকে।

অত্যন্ত বিলম্বে হলেও সম্ভবত: উপরের নির্দেশ নাসিরনগরে দু’দিন হলো ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার অভিযান শুরু করা হয়েছে এযাবৎ সেখানে মোট গ্রেফতারকৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩। অপরপক্ষে হবিগঞ্জেও আরও ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবরে জানা গেল। এই গ্রেফতার অভিযানকে উপেক্ষা করেই নতুন নতুন জেলায় মন্দির ভাঙ্গার - মূর্তিভাঙ্গার অভিযান প্রসারিত হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

এবারের বৈশিষ্ট্য নাসিরনগর যখন হামলা হয় দত্তপাড়ায় যখন প্রথম দিন হামলা হয় খবর পেয়ে তখনই ১০/১২ জন ঐ এলাকার মুসলিম যুবক হামলাকারীদের ঠেকানোর জন্য সেখানে ছুটে যায়। তারা হামলাকারীদের বাধা দিলে কয়েকজন আহতও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হামলাকারীদের সংখ্যাধিক্যের কাছে তাঁদের প্রতিরোধ প্রচেষ্টা সফল হতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ফলে অন্তত: একটি হিন্দু পরিবারের বাড়ী লুটপাটের কবল থেকে রক্ষা পায় - যদিও তাদেও মন্দির ও মূর্তি হামলাকারীরা ভেঙ্গে দিয়েছিল।

অনুমান করা যায়, হামলাটা যদি অত অকস্মাৎ না হতো এবং যদি ঐ যুবকেরা আগে এ বিষয়ে জানতে পারতো হয়তো বা তারা দলবল গুছিয়ে এসে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে পারত। যা হোক ঐ যুবকেরা দেশবাসীর কাছে অভিনন্দন যোগ্য-আমিও দূর থেকে ঐ মুসলিম যুবকদেরকে অভিনন্দন জানাই। আশা করি তারা ধর্মীয় মৌলবাদীদের এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিবাদে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকবে। শক্তিও বৃদ্ধি করবেন। কিন্তু প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল এমন মারাত্মক ঘটনা শুরুতেই প্রতিরোধ করার। তা না করে ইউ.এন.ও অনুমতি দিলেন দু’দুটি সমাবেশের এবং সেখানে তিনি ওসি আওয়ামী লীগের নেতারা উত্তেজক বক্তৃতা দিয়ে সরাসরি ধর্মান্ধ হাজার হাজার মানুষকে উত্তেজিত করেন। আর এর পেছনে ক্রিয়াশীল ছিলেন ঐ এলাকার মন্ত্রী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ অত্যন্ত প্রকাশ্যেই। নেপথ্যে জামায়াত-হেফাজত।

ঘটনাক্রম পর্যালোচনায় পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক সরকারী প্রশাসনকে দিয়ে কাজগুলি করিয়েছেন এবং তাই অভিযোগ শুনার নাম ঘটনার ৩/৪ দিন পর এসে স্থানীয় ডাক-বাংলোতে বসে “মালাউনের বাচ্চাদের বাড়াবাড়ি” দেখতে পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি প্রশাসনের কাজেও অর্থাৎ ইউ.এন. ও এবং ওসির কাজে কোন গাফিলতি খুঁজে পান নি। যেমন ঢাকায় বসে পান নি খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।

যে কথাটি এখানে প্রাসঙ্গিক তা হলো ইতোপূর্বে আমেরিকায় এক সম্বর্ধনা সভায় তৎকালীন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী হজ্ব সম্পর্কে বিতর্কিত এক মন্তব্য দেওয়ায় তাঁর মন্ত্রিত্ব, সংসদ-সদস্যপদ, দলীয় সদস্যপদ সবই গেল ফৌজদারি মামলাও হলো তাঁর বিরুদ্ধে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার ফলে। জেলও খাটলেন কিছুদিন।

এখন মন্ত্রী ছায়েদুল হক হিন্দুদেরকে “মালাউনের বাচ্চা” বলে এবং তার লোকজনদের দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করে অতগুলি মন্দির ও মূর্তি ও হিন্দুদের বাড়িঘর প্রকাশ্যে ভাংচুর ও লুটপাট করার ফলে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মন্ত্রী ছায়েদুল হক ইউ.এন.ও ওসিকে গ্রেফতার ও স্বস্ব পদ থেকে অপসারণ কেন বিলম্ব ঘটছে তা বোঝা দুষ্কর।

আরও বুঝা দুষ্কর যে রসরাজ নামক দরিদ্র অশিক্ষিত জেলের নামে মিথ্যা একাউন্ট খুলে তাতে কাবা-শরীফের ছবির উপর এক দেব মূর্তি স্থাপনের অভিযোগে মারধর করে এক মামলা দিয়ে রিমান্ডে রাখা হলো অথচ পাবনা জেলার চাটমোহরের এক স্কুল শিক্ষক ফেইসবুকে হিন্দু দেবীদের সম্পর্কে অশ্লীল পোষ্ট দেওয়া স্বত্বেও তাকে ধরার কয়েকঘন্টা পরই থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শিক্ষক শিক্ষিত তিনি যেমন ঐ কাজ স্বয়ং করেন নি বলে দাবী করেছেন তেমনি রসরাজও তা একই দাবী করেছিল। অশিক্ষিত হওয়া এবং ঐ কাজ যে করে নি তার স্বত্বেও তাকে কেন আটকে রাখা হলো অথচ চাটমোহরের শিক্ষককে ছেড়ে দেওয়া হলো তাও বুঝা দুষ্কর । তবে একথা তো ঠিক কর্তৃপক্ষ এই দুটি ঘটনার বুঝিয়েই দিচ্ছেন যে আইনে যাই লেখা থাকুক, তার প্রয়োগ হবে ভিন্নভাবে। মুসলিমদের প্রতি একভাবে -হিন্দু-বৌদ্ধ ও খৃষ্টানদের প্রতি ভিন্নভাবে। এই দু:খজনক অভিজ্ঞতা দশকের পর দশক ধরেই বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলিকে অর্জন করতে হচ্ছে। এবারে কি তার অবসর হবে?

হ্যাঁ , কিছু তো হয়েছেই। মন্ত্রী ছায়েদুল হককে পরিস্থিতির চাপে সংবাদ সম্মেলন ডেকে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে অনেক সময় পার করে হলেও পুলিশ দু’দুটি মামলা দায়ের করতে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে এবং এযাবৎ ৫৩ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে ঐ দুটি মামলার আসামী করা হয়েছে মাত্র ২৫০ জনকে। অথচ কয়েকশ লোক ছুটে এসে হামলা চালিয়েছিল।

উপজেলা আওয়ামী লীগ স্থানীয় তিনজন আওয়ামী লীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে (কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনও মামলা নয় কেন?) নাসিরনগরের ইউ.এস.ও মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী এবং ও.সি কে প্রত্যাহার করা হয়েছে-যদিও স্বয়ং মন্ত্রী ছায়েদুল হক স্পষ্টভাবে দফায় দফায় বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসনের কোন ক্রুটি নেই। মন্ত্রী কোন অপরাধ খুঁজে পান নি দু’দুটি সমাবেশ অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া এবং সেখানে ইউ.এন.ও ওসি. ও আওয়ামীলীগ নেতাদের বক্তৃতা দেওয়ার মধ্যে। তিনি আজও ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও বাড়িঘরগুলি স্বচক্ষে দেখতে যাননি (মাত্র দু’একটা ছাড়া)। আরও বিস্ময়কর যে, মন্ত্রী মহোদয়ের লোকদের দাপটে স্থানীয় কোন আইনজীবী রসরাজের পক্ষে আদালতে মামলা নিতে পারেননি।

আরও বিস্ময়কর, যে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রসরাজের পক্ষে কোন রূপ কোন আইনজীবীকে বলতেও দেননি একতরফা পুলিশের বা প্রসিকিউশনের কথা শুনেই রসরাজের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করে দিলেন। এই ম্যাজিস্ট্রেট কোন যোগ্যতায় বিচারিক দায়িত্ব পালন করছেন তাও আর এক বিস্ময় কারণ এক্ষেত্রে দেখি তিনি স্পষ্টতই পক্ষপাতিত্ব করে বসলেন। সুতরাং এই ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন।

ইউ.এন. ও এবং ওসি’র প্রত্যাহার বস্তুত: কোন শাস্তি নয়। তাঁদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ তা গুরুতর। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ তা গুরুতর। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে এবং বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগের তিনজনের ও আরও যাদের প্রকাশ্য বা নেপথ্য ভূমিকা রয়েছে হেফাজত-আহলে সুন্নত ওয়ালা প্রভৃতিকে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা বাঞ্ছনীয়।

আবারও মন্ত্রী ছায়েদুল হকের কথা বলি। তিনি“মালাউনের বাচ্চা” বলেছেন কি বলেন নি, সাংবাদিকেরা তা তৎক্ষণাৎ প্রমাণ করতে পারেন নি কারণ তাঁর কথা রেকর্ড বা অনুষ্ঠানটির ভিডিও করার বুদ্ধি বা সুযোগ তাঁদের তখন কারও মাথায় আসে নি। কিন্তু টিভি চ্যানেল গুলো তো তাঁর কণ্ঠ এবং ঐ কথাগুলি শুনালো বলে মনে পড়ে। সেগুলির সন্ধান করা হোক।

তদুপরি তিনি দফায় দফায় সাফাই গাইছেন স্থানীয় প্রশাসনের যদিও কর্তৃপক্ষ Convinced হয়েই দুজনকে প্রত্যাহার করেছেন। তাই তাঁর (Complicity with the perpetrators) অর্থাৎ প্রত্যক্ষ অপরাধীদের সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ সাজল তো দিব্যি বুঝাই যায়। তাই তাঁকেও শুধুমাত্র পদচ্যুত করা নয়-তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতারও করা উচিত।

সরকার এগুলি করলে এবং সকল অপরাধীকে গ্রেফতার করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে জরুরী ভিত্তিতে বিচার করলে এবং কঠোর শাস্তি সকলকে দিলে সকল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মনে হারিয়ে ফেলা আস্থার অনেকটা উদ্ধার হতে পারে। সরকার যদিও সংখ্যালঘু বা হিন্দু বিতাড়ণ বা দেশত্যাগ নয় স্বদেশেই তারা হেসে খেলে, নিরাপদে থাকুক-এটা আন্তরিকভাবে চান-তবে তাঁদেরকে উপরে বর্ণিত ব্যবস্থাগুলি নিতে আবেদন জানাব। কথায় নয় কাজে যেটা প্রকাশের এই সুযোগ আশা করি সরকার হারাবেন না।

আর কতদিন ভাঙ্গ মূর্তি, ভাঙ্গ মন্দির ও বাড়িঘর দেখতে হবে? অবিলম্বে সেগুলি নির্মাণে এবং সকল ক্ষয়ক্ষতি বাবদ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দানে বা ওগুলি সব ভাল ভাবে সরকারী ব্যয়ে নির্মাণের জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

পুরুষ-শূন্য হয়ে আছে গ্রামগুলি। কতই না আতংক। মহিলারা কখনও এ বাড়ি-কখনও সে বাড়ী থাকছেন যেন ঠিকানাহীন রিফিউজির দল। বস্তুত: তো “মালাউন” বানানো হয়েছে এবং হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। এ এক দুঃসহ যাতনা যার কবল থেকে সকলকে রক্ষা করা দরকার-কথা বার্তায় , কাজে-কর্মে, প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে, সংবিধানে, পুলিশে আদারতে সর্বত্র সকল মানুষের সম অধিকারে স্বীকৃতি এবং তা যথার্থভাবে পালনের মধ্যে দিয়ে। আর হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সকল ভাই-বোনকে বলছি এ যাতনা সকল অসাম্প্রদায়িক শক্তির বুকে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। সকল ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি সক্রিয় ভাবে এগিয়েও এসেছে। এবারে শপথ নিন-মাতৃভূমি ছাড়বো না কো-বাংলাদেশ ছাড়বো না। দরকার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে নিষ্ঠাবান কোটি কোটি মানুষ সম-অধিকার, অসাম্প্রদায়িকতা ও প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা পুন: প্রতিষ্ঠায় লাখে লাখে রাস্তায় নামবেন। সকল ক্ষতচিহ্নের অবসান সূচিত করতে এগিয়ে আসবেন। তাঁদেরকে ভাল ভাবে চিনতে হবে-তাঁদের সাথে পরিপূর্ণ সহযোগিতার হাতও বাড়াতে হবে।

কেউই মালাউন নই-সংখ্যালঘুও নই।
জয় হোক ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের।
অবসানর হোক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার।
ফিরিয়ে আনবো বাহাত্তরের মূল সংবিধান

আবারও বলি, অবিলম্বে এই ঘটনা বলীর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত কোন বিচারকের নেতৃত্বে করার ব্যবস্থা করা হোক।

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ