আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ব্যালট পেপারই হোক প্রতিবাদের বুলেট

মাসকাওয়াথ আহসান  

মেয়র নির্বাচনে বিএনপি-আওয়ামী লীগকে না বলুন; আপনার ব্যালটটি একটি বুলেট হতে পারে

ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় পুরো দক্ষিণ এশিয়া জঙ্গীবাদের ঝুঁকির মুখে থাকায় বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আপাততঃ ক্ষমতায় থাকা নিরাপদ। এর পাশাপাশি সুসরকার ও সুশাসনের দাবীতে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মত বড় দুটি রাজনৈতিক দলকে চ্যালেঞ্জ করাও জরুরী;ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্যই এটা প্রয়োজন। জনগণেরও প্রয়োজন আছে ভোট দিতে শেখার।

ভোট দিতে না শিখলে সারাদিন অদক্ষ-অযোগ্য নেতাদের গালিগালাজ আমৃত্যু নিয়তি হবে। জনমানুষ নিজেই তার ভোগান্তির জন্য দায়ী। কারণ তারা ভোট দেবার সময় এই দ্বি-দলীয় ফাঁদের বাইরে যেতে পারে না।আওয়ামী লীগের নিরংকুশ ক্ষমতা খর্ব করা ও বিএনপি-র সন্ত্রাসী শক্তিকে মিইয়ে দিতে আপনার ব্যালটটি একটি বুলেট হতে পারে। বড় দলের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থীদের ভোট দেবার এই 'যেই লাউ সেই কদু' সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা জরুরী।

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দিতে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের এই নির্বাচনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভোট দেয়া সময়ের দাবী।বছরের একটা দিন দলদাস না হলে পেটের ভাত হজম হবে না তাতো নয়। আবদ্ধ চিন্তার অচলায়তন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে গেলে এই দুই-দলীয় পিংপং খেলা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। মেয়র নির্বাচনে রাজনীতির থিয়েটারের 'অভিনেতা'নয়;একজন মানুষকে ভোট দিন; যে আপনারই লোক।

আওয়ামী লীগ, এতোবছরে বিএনপির মেয়রেরা ঢাকা-চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত এমন কিছু করে দেখায়নি; যার জন্য তারা ভোটের দাবীদার হতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বসবাস অনুপোযোগী শহর ঢাকার মেয়র  করে বিজ্ঞাপন আর টাকায় মুখ ঢেকে দেয়া মৌসুমী 'রাজনীতিক'দের ভোট দিলে ঢাকা মেঘে ঢাকা তারা হয়ে রয়ে যাবে। আমরা নাগরিক দাবী করি নিজেদের অথচ ভোট দেবার সময় গোবরডাঙ্গার দবির বা শেয়ালপুরের ছাবেদের মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলে; ঢাকার নিয়তি অপরিবর্তনীয় থাকবে।

দিল্লীর আম আদমী পার্টি নিয়ে রগড় করে দবির-ছাবেদেরা; গোটা ভারত যখন অপরাজনীতির ফাঁদে অসহায়; দিল্লীর সচেতন মানুষ তখন প্রধান দুই দল বিজেপি-কংগ্রেসকে দিল্লীছাড়া করেছে আম আদমীকে ভোট দিয়ে। দবির-ছাবেদের এই রগড়ের দাঁতের মাজন বেচা অপকৌশলে তারা ঢাকা নগরীকে গোবরডাঙ্গা বা শেয়ালপুর করে রাখতে চায়। যে কোন দেশের রাজধানীরমানুষের সচেতনতা ঐ দেশের সামগ্রিক শিক্ষা-সংস্কৃতিরছবি স্পষ্ট করে। ঢাকা নতুন দিল্লীর চেয়ে সচেতনতায় ও সাংস্কৃতিক আলোকায়নে পিছিয়ে আছে এবং থাকবে; যদি এই দ্বিদলীয় শেকল ভাঙ্গার গান গাইতে ব্যর্থ হয় নগরবাসী; সেই তিক্ত সত্যটি আরো একবার প্রমাণিত হবে।

শ্রদ্ধাভাজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার,

ঢাকার মেয়র নির্বাচন আপনার জন্য একটি এসিড টেস্ট। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না; উপন্যাসে ও উপকথায় আপনার নামটি উচ্চারিত হবে দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার সমতল ক্ষেত্র দিতে আপনি ব্যর্থ হয়েছেন। খোলাচোখে দুটি বড় দলের প্রার্থীর বিজ্ঞাপনে এবং জনসংযোগে; প্রচারণার জন্য বেঁধে দেয়া টাকা-পয়সা খরচের সীমারেখা লংঘিত হয়েছে।

আপনার যথেষ্ট লোকবল নেই তা মনিটর করার। গোপনে বড় লোক প্রার্থীরা ভোট কেনার জন্য কী পরিমাণ টাকা খরচ করছে তা ধরার মতো কোন মেকানিজম চারযুগেরও বেশী সময়ে গড়ে তুলতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এ খুব ঝুঁকিপূর্ণ যুগ। এখন প্রতিটি মানুষই একজন নাগরিক সাংবাদিক। কোনো ভোট কেন্দ্রে কো্নো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার ছবি-ভিডিওআপলোড হয়ে যাবে ফেসবুকে।

মূলধারার মিডিয়ারও একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে। কাজেই সর্বোচ্চ হুঁশিয়ারী অবলম্বন করা উচিত হবে নির্বাচন কমিশনের। আপনার ওপর সবার চোখ। আপনি আপনার এই সাংবিধানিক পদটির মর্যাদা রক্ষায় আজ নির্বাচন কমিশনের সার্বভৌমত্ব প্রমাণ করতে পারবেন এই প্রত্যাশা রইলো। রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডীর দুই বছর পূর্তির পরপরই আমরা চাইনা কোন রকিব প্লাজা ট্র্যাজেডি ঘটুক। ইউ আর বিইংওয়াচড।

প্রিয় প্রজাতন্ত্রের জনসেবকবৃন্দ,

আপনারা যারা মেয়র নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন; তাদের নিশ্চয়ই পিএটিসি প্রশিক্ষণ শেষে উচ্চারিত শপথবাক্যের ঋজু সত্যগুলোর কথা মনে আছে; যেখানে আপনারা জনমানুষের সেবার অঙ্গীকার করেছিলেন। আজ আপনাদের কাঁধে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার এসিড টেস্ট। আপনারা আপনাদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ; নির্বাচনে যে কোন রকমের কারচুপি; পেশী শক্তি প্রতিরোধের ব্যাপারে।প্রতিটি কেন্দ্রে প্রত্যেক প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা যেন নির্ভয়ে কাজ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করার দায় আপনাদের।

কোন ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাবার পথে যেন বাধাগ্রস্ত না হয়; তা দেখার দায় আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর। ব্যালট বাক্সে আগেই যেন সিল মারা ব্যালট পেপার বোঝাই না থাকে সেটাও দেখে নেবার দায়িত্ব প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের।নতুন প্রজন্মের জনসেবকরা ত্রুটিপূর্ণ এই নির্বাচনী ব্যবস্থাটিকে মেরামতে ঋজুতা দেখাবেন সেটাই প্রত্যাশিত। সততার জয় অনিবার্য।

ঢাকার প্রিয় নারীসমাজ,

২০০১ সালেরনির্বাচনের পর বিএনপি সনাতন ধর্মের নারী সমাজের সম্ভ্রম হানি করেছে। এইনববর্ষে নারীর সম্ভ্রমহানি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার দায়িত্বজ্ঞানহীন পুলিশ। তাই অনুগ্রহ করে মেয়র নির্বাচনে বিএনপি-আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নিঃগৃহীত বান্ধবী-বোন-কন্যার অপমানকে অগ্রাহ্য করবেন না।

আপনার পছন্দের অন্য যে কোন যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিন।একান্ত প্রত্যাশা নারী সমাজ নারীর সম্ভ্রমহানি ও সম্মানহানি ঠেকাতে ব্যর্থ বড় দুটি দলকে না বলবেন। 'ব্যালট পেপারটিই হোক আপনার প্রতিবাদের বুলেট'।ধাক্কা না দিলে কখনোই সরানো যাবেনা  না বর্বরতার এই জগদ্দল পাথর।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ