প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
নাজমুল হাসান | ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত শহিদ বুদ্ধিজীবী কোষে বুদ্ধিজীবীদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা এরকম-
বুদ্ধিজীবী অর্থ লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, সকল পর্যায়ের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি, বেসরকারি কর্মচারী, চলচ্চিত্র ও নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি।
বাংলাপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা ১১১১ জন। এর মধ্যে আছেন, শিক্ষাবিদ - ৯৯১ জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ২১, সাংবাদিক - ১৩, চিকিৎসক - ৪৯, আইনজীবী – ৪২, অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী) – ১৬।
যে সূক্ষ্ম মতামতগুলি প্রচারের মাধ্যমে শহিদ বুদ্ধিজীবী-দিবসসহ স্বাধীনতার মহান অর্জনগুলিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে তার কয়েকটার কিছু কিছু উল্লেখ করা হল।
আমরা শহিদ বুদ্ধিজীবী বলতে জানি হাতে গোনা মাত্র কয়েকজনের কথা। আলোচিত সংখ্যাটা হয়ত ১০/১৫ জনের মত। কারণ এই কয়েকজনকেই সব সময়ে আলোচনার শীর্ষে রাখা হয়, কেন? শীর্ষ আলোচিত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, দুয়েকজন সাংবাদিক ও চিকিৎসক। এই কয়েকজনের বাইরে বাকীদের নিয়ে কেন আলোচনা করা হয় না? তারা কেন হারিয়ে যাচ্ছে তার উত্তর খুঁজতে হবে। তাহলে অনেক ভয়ঙ্কর তথ্য উদঘাটিত হতে পারে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনী নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বর্বরতম গণহত্যা ও বর্ণনাতীত নিষ্ঠুর নির্যাতন শুরু করে। ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মানুষ শহর ছেড়ে যেতে শুরু করে। শহর প্রায় জনশূন্য হয়ে যায়। ২৬শে মার্চ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের দুদিন আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাজে প্রতিষ্ঠিত যে মানুষগুলি ঢাকা শহরে অবস্থান করছিলেন এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারী সুযোগ-সুবিধা পর্যন্ত নিচ্ছিলেন, তারা স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করলে এটা কিভাবে সম্ভব? শহিদ বুদ্ধিজীবীদের এ অবস্থানের বিষয়টি নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে নানা পরস্পর বিরোধী ও বিতর্কিত মতামত।
শহিদ বুদ্ধিজীবীদের শহরে থাকার বিষয়টি নিয়ে অপ-প্রচার করা হচ্ছে এভাবে- কোন তকমার বলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত এ মানুষগুলি ঢাকা শহরে অবস্থান করছিলেন? বলা হচ্ছে- যুদ্ধে বাংলাদেশ পরাজিত হয়ে পাকিস্তান জিতে গেলে কারা ঢাকার রাজপথে পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে মিছিলের অগ্রভাগে থাকত! এ কথাটির দ্বারা তারা সরাসরি আমাদের মহান বুদ্ধিজীবীদের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।
১১১১ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীকে বিভিন্ন সময়ে হত্যা করা হয়েছে, তাহলে একেবারে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের দুদিন আগে, ১৪ই ডিসেম্বরে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে সেই দিনটাকেই কেন শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে? এ নিয়েও ছড়ানো হচ্ছে নানান বিভ্রান্তিকর প্রচারণা। এ প্রচারণার মূল বক্তব্যগুলি এরকম-
এই দিনটাকে শহিদ বুদ্ধিজীবী-দিবস হিসেবে পালনের জন্য নির্ধারণ করায় ঐ দিন যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদের কারও কারও প্রো-পাকিস্তানি ভূমিকাকে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের ভূমিকা প্রো-পাকিস্তানি না হলে তারা কি করে মুক্তিযুদ্ধে না গিয়ে এতদিন পর্যন্ত ঢাকায় বহাল তবিয়তে অবস্থান করছিলেন? জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য এটা খুবই ভয়ঙ্কর অপ-প্রচারণা।
যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের ভূমিকা ছিল ঢাকায় অবস্থানকারী বুদ্ধিজীবীদের চেয়ে অনেক বেশি, ঘটা করে শহিদ বুদ্ধিজীবী-দিবস পালন করে সে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকাকে অনেকটা ছোট করে এদের ঘরে বসে থাকা ভূমিকাকে বড় করে দেখান হচ্ছে। এটিও একটি ভয়ঙ্কর অপ-প্রচারণা।
বুদ্ধিজীবী বলে যারা পরিচিত, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঘরে বসে তাদের আয়েসি খাওয়া-দাওয়ার যে বর্ণনা পাওয়া যায়, যেমন: কফি, জেলি, মাখন, তাতে মনে হয় না তারা নিজেদের বাইরে দেশের স্বাধীনতা নিয়ে ভাবতেন। তখন এ ধরনের খাবার খেতো পাকিস্তানপন্থীরা, যারা দেশ নিয়ে ভাবত কারা নয়। সুতরাং এদের ভূমিকা অবশ্যই বিতর্কিত ছিল। কী সাংঘাতিক অপপ্রচার।
এ প্রচারণাগুলি দেখে মনে হয়, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লিখি তাদের তাত্ত্বিক লড়াইটা আরও জোরদার ভাবে চালিয়ে যেতে হবে।
"শহিদ বুদ্ধিজীবী-দিবস" নামটির মধ্যে হত্যাকারীদের আড়াল করা হয়েছে। নামটি "বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস" হলে ভালো হয়। নিহত বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
জয় বাংলা।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য