প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬
“বাংলা আমার দীপ্ত স্লোগান ক্ষিপ্ত তীর ধনুক
আমি একবার দেখি বারবার দেখি, দেখি বাংলার মুখ”
একজন প্রান্তিক মানুষকে এ গান নাড়া দেওয়ার কথা না। এ ক্ষেত্রে তার রুচি আলাদা। জ্ঞানী, শিক্ষিত মানুষের কাছে প্রান্তিক মানুষের গানগুলো কখনও বাণিজ্য আবার কখনও সস্তা। যাই হোক এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের সাথে এ গানের সংশ্রব নেই। সংশ্রব থাকার দরকারও নাই। তারা আলাদা করে দেশপ্রেম ব্যাখ্যা করতে পারে না। কিন্তু বুঝে কি করতে হবে। তার প্রমাণ বৃটিশ থেকে বাংলাদেশ। কত শত বিপ্লব, ৫২, ৬৯, ৭১, ২০১৩।
সংস্কৃতি বেঁচে থাকে এ সব প্রান্তিক মানুষদের মধ্য দিয়েই। তারা কোন স্বীকৃতি ছাড়া যুগ যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্য রক্ষা করে চলেছে। আজকের আধুনিক যুগে আমরা কর্পোরেট কালচারে তাদের সারল্যকে বিলবোর্ডে উঠিয়ে, এলইডি বাক্সে ঢুকিয়ে নিজেরা যেমন রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিচ্ছি, তেমন নিজের স্থান করে নিচ্ছি জ্ঞানীগুণী হিসাবে। নিজেদের দীনতা ঢাকছি অন্যের মহত্বকে দীন বানিয়ে। আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতির উপরে সূক্ষ্ম কৌশলে আঘাতের পর আঘাত হয়েছে, যা এখনও চলমান। বরং বলা চলে স্বাধীনতার পর আমাদের গোঁড়ামি অনেক বেড়ে গেছে, ভেঙে গেছে নৈতিকতা। পাকিস্তানীরা, মৌলবাদীরা এদেশ থেকে একাডেমিকভাবে বিতাড়িত হলেও রয়ে গেছে বাংলাভাষী সেজে। এতে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। ৭৫ পরবর্তী থেকে তারা সূক্ষ্ম কৌশলে সব জায়গায় যেমন তাদের মতাদর্শের মানুষকে বসিয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করে অনেকটা তাদের দলে টেনে নিয়েছে। তারা সফলভাবে সাহিত্য, সংস্কৃতি ভাবনায় বিভ্রান্ত করতে পেরেছে। তাই আজ ২০১৬ সালে এসে তর্ক করতে হয়, যুদ্ধ করতে হয় বৈশাখ উদযাপন ‘বেদাত’ কিনা! লালনের গান বন্ধ করে দিতে হয় ইসলামি সংগঠনের হুমকিতে। এ থেকেই বোঝা যায় মৌলবাদী মানসিকতা সরল মানুষগুলোর ভেতর ভালোমতোই ঢুকেছে।
এদের বিভ্রান্তি তাড়ানোও খুব কঠিন কিছু না এখন। সময়ও অনুকূলে। কিন্তু আমরা কি করছি? আরও বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছি। সময় এবং প্রয়োজন অনেক সময় যোগ্যতা বা অযোগ্যতা ঠিক করে দেয়। আজকের সময়ের অযোগ্য কর্ণধারদের কারণে আমাদের আত্মিক উন্নয়নের বদলে ষড়যন্ত্রীদের অন্ধকার রাস্তার প্রসারণ এখনও চলছে।
এ হেতুতে বাংলা একাডেমিকে টানা যায়। বাংলা একাডেমি কি গত ক’বছরের তাদের যোগ্য কাজটি করতে পেরেছে। অনেক বছর নামে বেনামে পাকিস্তানীরা এ দেশ শাসন করেছে, নীতিনির্ধারণ নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০১৩ পর বাঙালির অনেক বিভ্রান্তি দূর হয়েছে। ৩/৪ বছর দেশে এক ধরনের ছায়া যুদ্ধ চলছিল। এখন সব স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির নিয়ন্ত্রণে। সব জায়গা পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতিতে, রুচিতে যে আবর্জনা, কালো মাকড়সা ঢুকেছে তা পরিষ্কার করা যেত সহজেই। বাঙালিয়ানা ফিরিয়ে আনতে সেটা জরুরিও। কিন্তু বাংলা একাডেমি মূলত অথর্ব হয়ে পড়েছে।
আমাদের এফ.ডি.সি মৃত। বর্তমানের বাংলা একাডেমির হর্তাকর্তাদের কারণে বাংলা একাডেমিও মৃত প্রায়। হয়তো শীঘ্রই মরে গিয়ে আমার অন্ধকার আরও বাড়াবে। সরকার, সরকারি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গত কয়েক বছর মৌলবাদীদের কারণে কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে সঙ্গত কারণে। এর ভেতরেই দেশ এগিয়েছে, মৌলবাদী চিহ্নিত হয়েছে, তাদের কণ্ঠ ধীরে ধীরে মলিন, বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কৌশল আর নত হওয়া এক নয়। বাংলা একাডেমি নত হয়েছে। বাংলা একাডেমি নত হয়েছে। বাংলা একাডেমি নত হয়েছে। বাংলা একাডেমির কাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ লজ্জা এ জাতির না। এ লজ্জা বাংলা একাডেমির। তবে আশার কথা তাদের লজ্জা নাই । তাদের শরীরে হাঁসের পালক। তারা মাছের মা!
ব্লগার, লেখক অভিজিৎ রায়ের খুনের স্থানে মুক্তচিন্তা ভাস্কর্য হচ্ছে, হচ্ছে অভিজিৎ চত্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে। অভিজিৎ একজন লেখক ছিলেন। তিনি মেলা উপলক্ষে দেশে এসেছিলেন। মেলার সামনেই খুন হলেন। কিন্তু বাংলা একাডেমি একটা শব্দও করলো না, যেন কোথাও কিছু ঘটেই নি। খুন হলেন প্রথিতযশা প্রকাশক, সজ্জন ফয়সাল আরেফিন দীপন। বাংলা একাডেমি কোন এবারও কোর শব্দ করলো না। বাংলা একাডেমি, বই মেলার মূল শক্তি তো লেখক এবং প্রকাশকরা। তাই না? সেই লেখক-প্রকাশক খুন হওয়ার পরও বাংলা একাডেমির কোন শব্দই নাই। বাহ। পুরাই মাছের মা।
শ্রাবণ প্রকাশনী বন্ধ নিয়ে বাংলা একাডেমি আবার আলোচনায়। এ প্রতিষ্ঠানের মতো অন্য কোন প্রতিষ্ঠান এমন আলোচনায় আসছে না। কখন হে ফেস, কখনও লিট ফেস, কখন ব্যাংক উৎসবে একাডেমি ভাড়া, কখনও প্রবাসী লেখক পুরস্কার নিয়ে ন্যক্কারজনক স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা চলছে, চলছেই। শ্রাবণ প্রকাশনীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে। অবশ্যই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে। শ্রাবণ থেকে কি সদ্য কোন বই বের হয়েছে যাতে মৌলবাদীর উগ্র হয়ে উঠতে পারে? বা শ্রাবণ প্রকাশনী বন্ধ করা কি উগ্রবাদী, মৌলবাদীদের দাবী ছিল না। তাহলে?
তাহলে কিছুই না। কারণ গত মেলার পর টকশোতে একাডেমির তথা কর্মকর্তাদের সমালোচনা করা। এতে নাকি বাংলা একাডেমির স্বার্থহানী হয়েছে?!! আর এ কারণেই নিষিদ্ধ। আবার নিষিদ্ধের বিষয়টি সু-কৌশলে গোপন রাখা হয়েছে সরকারি কোন নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করেই। সরকারিভাবে কোন সিদ্ধান্ত হলে সেটা জানানো আইন। কিন্তু বাংলা একাডেমি শ্রাবণ প্রকাশনীকে জানায় নি। অসততা, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বইমেলার স্টল বরাদ্দের আবেদন করতে গেলে শ্রাবণ জানতে পারে তারা দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ। পরিচালনা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে । কারণ টকশোতে বাংলা একাডেমি সমালোচনা করেছিলেন শ্রাবণের সত্ত্বাধিকারী রবিন আহসান ভাই।
১) নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন চিঠি মারফত জানানো হল না?
২) বাংলা একাডেমির সমালোচনা করা যাবে না - এটা কবে আইন হয়?
৩) পরিচালনা পরিষদের সদস্য সেলিনা হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুর এরা এমন কোন সিদ্ধান্তের কথা জানেন না। কেন?
আমরা পুলিশের সমালোচনা করি। এখন পুলিশ যদি আমাদের দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে- পুলিশ বাহিনীর স্বার্থহানীর দোহাই দিয়ে?!! শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা, সমালোচনার ঝড় উঠে। শিক্ষামন্ত্রী কি সমালোচনাকারীদের দুই বছরের জন্য শিক্ষায় নিষিদ্ধ করেছেন কাউকে? ব্যক্তিগত আক্রোশের প্রকাশ দেখে আমি হতভম্ব। কত ছোট মনের মানুষ হলে বাংলা একাডেমির ডিজি, কর্মকর্তারা এমন কাজ করতে পারে?
বাঙালি বড় মনের জাতি। বাঙালি মেরুদণ্ডওয়ালা জাতি। তাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, কালচার, ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে, সংগ্রহ, প্রচার, প্রসার ঘটাতে গেলে বড় মনের আর শক্ত মেরুদণ্ডের কাউকে লাগবে। শ্রাবণ প্রকাশনী বন্ধ সম্বন্ধে পরিচিত এক দিদি বললেন যে - মৌলবাদীরা মেলা জ্বালিয়ে দিতে পারে। প্রশ্ন তবে, এখন কি মৌলবাদীরা তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্বালিয়ে দিবে?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য