প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শামীম সাঈদ | ২৭ এপ্রিল, ২০১৫
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেক মেয়র প্রার্থী। সবার কথা এখানে বলব না। চার জনকে নিয়ে কথা বলব। অনেকেই বলছেন, এই চার জনই তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থী, কাকে রেখে কাকে ভোট দিই।
আনিসুল হক, নাদের চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি ও আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি। কিন্তু, চারজনই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, তবে কেন চারজনই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত? ঐক্য নেই কেন? এই চারজন কি পরষ্পরের শত্রু। কি স্বার্থে তারা বিভাজিত? চার জনের আদর্শগত অমিল নিশ্চয়ই আছে।
আনিসুল হক ব্যবসায়ি, ব্যবসায় সহায়ক হবে বিবেচনায় ক্ষমতা কাঠামোয় ঢুকতে চান বলে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। একজন পুঁজিপতি সাধারণ মানুষের সেবা বা উন্নয়নের জন্য ক্ষমতায় যেতে চান, এটা মেনে নেবার মতো মতি অন্তত আমার নেই।
নাদের চৌধুরীও সুবিধাবাদ চিন্তা থেকেই ক্ষমতায় যেতে চান। সুবিধা কি মাত্রার ও কি ধরনের তাও অনুমেয়। তার জনসেবার কোনো উদ্দেশ্য নেই, বলা যায়। তা থাকলে তার জীবনের অতিবাহিত পঞ্চাশ বছরে তা দেখা যেত। বিগত সময়ে নাদের চৌধুরী মানুষের জন্য কি কি করেছেন? কিছু করে থাকলে তার সবটা আমার অজানা থাকার কথা নয়, কিছু অন্তত জানা উচিৎ ছিলো। কিন্তু আমি তো জানি না। আমি জানি না মানে কিছু করেন নি- বলা যাবে না। কিন্তু তিনি কিছু করেন নি- আমি তবে কোথা থেকে জানবো। আমার অজ্ঞতা? তিনি কি করতে চান, কবে থেকে চান, কাদেরকে সাথে নিয়ে চান, কি পদ্ধতিতে করতে চান? এই সব প্রশ্নের উত্তর যথাযথো না পেলে তার সুবিধাবাদিতা প্রকাশিত হতে পারে। ক্ষমতা কাঠামোর বাহিরে থেকে যখন কেউ জনসেবায় না-থাকেন, তিনি ক্ষমতায় গিয়ে করবেন-এই কথা বলা সুবিধাবাদিতার সাক্ষর হয়ে থাকে।
সাকি ও ক্বাফি দুজনে জনকল্যাণে কাজ করতে সচেষ্ট মনে হয়। কিন্তু, সাকির আত্মপ্রকাশ হঠাৎ, তার দলের রাজনৈতিক ইতিহাস অল্পদিনের, তিনি নিজেই প্রবর্তক। সকলে ধারণা করছেন সাকি বাম ঘরানার, কিন্তু বাম ঘরনা আসলে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করে না। কনফিউজিং শব্দ হলো বামপন্থা। তার আদর্শিক গুরু কে? তিনি কি কোনো প্রতিষ্ঠিত মতের অনুসারি, নাকি নতুন মতবাদ বা আদর্শবাদ প্রচার ও বাস্তবায়ন করতে চান? এটি এখনো সুস্পষ্ট নয়। সুতরাং তাকে চিনতে ও বুঝতে সময় নিতে হবে। উদ্ভবকালে সাকির মিডিয়া ঘেঁষা, পুঁজিপতিদের সাথে আঁতাতও কিছু লুকানো নেই, যদিও শ্রমিকদের নিয়ে ভালো খেলেছেন, কিন্তু তিনি তাদের মরা-বাঁচার সাথে কতটুকু আছেন, প্রশ্ন সাপেক্ষ। সাকির উদ্ভবে যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ স্পষ্ট হচ্ছে না, সুতরাং তার উদ্ভব যেমন আকস্মিক, পতনও আকস্মিক হতে পারে।
পরির্বতন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কেউ চাইলেও হয় না-চাইলেও হয়; কিন্তু কেউ যখন চান কোনো পরিবর্তন, তখন তা পরিকল্পিত হতে হয়, থাকতে হয় তার কর্মপদ্ধতি; শুধু ইচ্ছেতে কিছু হবে না। সাকির সে সক্ষমতা নেই। কেবল ঢাকা কেন্দ্রিক রাজনীতিতে সাকি টিকবে?
ক্বাফির কি তবে সে সক্ষমতা আছে? না, তারও নেই, কিন্তু ক্বাফির আদর্শিক অবস্থানটি সুস্পষ্ট। তার সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে ও সদিচ্ছা আছে। সাংগঠনিক স্ট্যাবিলিটি ক্বাফির শক্তি। ক্বাফির রাজনৈতিক দলের দীর্ঘ পরম্পরা আছে, গণমানুষের পাশে থাকার অঙ্গিকারে তারা বহু বছর ধরে দৃঢ়। ক্বাফির আদর্শগত ভিত্তি সুস্পষ্ট ও দৃঢ়। কিন্তু, তারা জিতবেন না, ধারণা করা যায়। তবু, তিনি বা তারা হারবেন বলে, যারা অপআদর্শের তাদেরকে ভোট দিতে হবে?
কেউ কেউ বলছেন যে, যিনি জিতবেন তাকেই ভোট দেওয়া উচিৎ, যে হারবে, জেনেও তাকে ভোট দিলে ভোট নষ্ট হয়। এই সিদ্ধান্তকে বোকা সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না (এই চারজনের মধ্যে।সমস্যাটি তাদের জন্য, যারা চারজনকেই পছন্দ করেন। যিনি আমার শত্রু, তিনি শক্তিতে এগিয়ে আছেন, তিনি লড়াইয়ে জিতে যাবেন; সুতরাং তার কাছে আত্মসমর্পণ করাই ভালো। এটা বোকা যুক্তি। এ ধারণাটাই মানুষের বড় শত্রু। এ ধারণা নিয়ে মানুষ আর ন্যায়ের পথে একাত্ম হতে পারবে বলে মনে হয় না। এ ধারণা ও মনোভাব পরাজয় স্বীকার করে নেয়ার সামিল। মানুষ কেন লড়াই মনস্ক নয়?
খুব হাস্যকর একটা কথা হলো এই যে, ধর্ষণ যখন অনিবার্য তখন তা উপভোগ করাই শ্রেয়। এটাই বোকা যুক্তি। উক্তিটি প্রচলিত পরাজিতদের একটি কৌতুক মাত্র, যারা জয়ী তারা পরাজিতদের মানসিকভাবে আরো নিগৃহিত ও ছোট করতে এটা প্রচার করে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য