প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আজমিনা আফরিন তোড়া | ০৫ জানুয়ারী, ২০১৭
আজ ৫ জানুয়ারি। আজ এক মাস হল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মিলিতভাবে তাদের নৈতিক দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রশাসনের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিটি খুবই যৌক্তিক। বিগত কয়েক বছর ধরেই সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিভিন্ন ডিভাইস এর ব্যবহার, প্রক্সি হয়ে অন্য জনের পরীক্ষা দেয়া সহ নানারকম জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনও আমরা শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা খানিকটা গর্বের সাথেই বলতাম- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির কোন সুযোগ নেই। না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া যায়, না এখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পদ্ধতি পর্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ না, সেখানে শাবির ভর্তি কার্যক্রম এখানকার সাধারণ শিক্ষার্থী, ভর্তিচ্ছুকদের অভিভাবকসহ টং এর চায়ের মামাদের কাছে পর্যন্ত স্বচ্ছ ও বোধগম্য। কারণ ভর্তির সময়ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ডিজিটাল প্রজেক্টরের মাধ্যমে ভর্তি কক্ষের সকল তথ্য প্রদর্শিত হয়।
যেখানে পুরো ভর্তি পদ্ধতিটাকেই খুব স্বচ্ছ আর নিরপেক্ষ রাখার দীর্ঘদিনের সুপ্রচেষ্টা, সেখানে প্রশাসনের নাকের তলা দিয়ে কোন এক সুবিধাবাদী মহল এ বছর শাবির ভর্তি পরীক্ষায় এক বিশেষ ধরনের ক্যালকুলেটর ডিভাইস এর সাহায্যে পরীক্ষা হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উত্তর পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। এই বিশাল ঘটনায় স্বান্তনার বাণী হলো- পরীক্ষা শুরু হবার আগেই চক্রটির একাংশ ধরা পড়ে গিয়েছিলো। তাই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভেবেছিলাম, বোধ হয় আমাদের প্রাণের শিক্ষাঙ্গনে কম মেধাবী বা মেধাশূণ্য শিক্ষার্থীর স্থান হবে না!
কিন্তু হতাশার সাথেই খবর পেলাম, শাবিপ্রবির এ ইউনিটের প্রথম স্থান অধিকারী মেধাবী (!) ছাত্রধন নাকি জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছেন! অনুসন্ধানের সংক্ষিপ্তকরণে যা দাঁড়ায় তা হলো, ঐ ছাত্র বলতেই পারে না সে শাবির কোন ভবনে বসে পরীক্ষা দিয়েছে। এমনকি তার পরীক্ষার প্রবেশ পত্রের সাথে আসল চেহারা মেলে না! এমনকি পরীক্ষা হলে এই মেধাবী নিজের নামের যে স্বাক্ষর করেছেন, তাও নাকি ভর্তির সময় মেলানো সম্ভব হয় নি। অথচ এই মেধাবী স্বমেধায় নাকি এ ইউনিটের সব চাইতে আকাক্ষিত ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছে।
এ ঘটনায় সবাই নীরব। প্রশাসন ,ভর্তি কমিটির সকল সদস্য কি সহজেই না ব্যাপারগুলো এড়িয়ে গেলেন!
আমার মতে, সম্ভবত শাবিপ্রবির ছাত্র সমাজ খুবই পুরোনো ঘরানার। আরে, কি এমন হয়েছে? ভর্তি জালিয়াতিই তো হয়েছে! যার বাপের অর্থ আছে, তার অত শত পড়াশোনা না করলেও চলে! ভারী ভারী তত্ত্ব আর তথ্য না জানলে তাদের কিই বা ক্ষতি! হোক না তারা অর্থের বিনিময়ে ভর্তি! তাই বলে কি মাঠে নামতে হবে না কি? এমন ২/৪ জন টাকা দিয়ে ভর্তি হলে খুব একটা ক্ষতি হয় না!
কিন্তু সমস্যা হলো, শাবি ছাত্র সমাজ অতি আবেগী। এরা ক্যাম্পাসে পড়বে ৪ বছর কিন্তু বাকি জীবনের কোন মোড়েই তারা শাবিকে অপমানিত হতে দেবে না! তারা ভর্তির ফরমের মূল্য বাড়লে চিৎকার করে পথে নামবে। হল খালি করার নির্দেশ দিলেও বাড়ি গিয়ে শীতের পিঠা-পুলি না খেয়ে শীতের রাতে ঘন কুয়াশাকে অগ্রাহ্য করে সারা রাত জেগে আন্দোলন করবে ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার জন্য। প্রশাসনের মাথা ব্যথা না থাকলেও তারা এক হয়ে মাসব্যাপী অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে জালিয়াতির বিরুদ্ধে।
আগে খুব গর্বের সাথে বলতাম, আমি শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী। এখন বলতে কোথায় যেন সামান্য লজ্জা হয়! লজ্জা হয় এই ব্যর্থ প্রশাসনকে দেখে। এক মাস চলে গেল, অথচ প্রশাসন আমাদের একটা সঠিক তদন্তের রিপোর্ট পর্যন্ত দেখাতে পারল না! হালকার উপর ঝাপসা দিয়ে জালিয়াত চক্রের চুনোপুঁটি আলামিনকে সাময়িক বহিষ্কার করেই প্রশাসন ক্ষান্ত।
আবার অন্য কারণে অহংকারও করতে ইচ্ছে করে! শাবি ছাত্র সমাজ শুধু মাথা নিচু করে ক্লাসে যায় আসে না, তারা অন্যায় এর প্রতিবাদও করে! ক্লাস করে বের হয়েই উত্তাল মিছিলে অংশ নেয়।
সুখের কথা এই যে, জালিয়াত চক্রটির নিতান্তই চুনোপুঁটি ধাঁচের একটা ছেলে আলামিন ধরা পড়েছে। কিন্তু আমার মোটা মাথায় একটা ব্যাপার ঢোকে না, একজন ধরা পড়ার পরেও কিভাবে এতদিন পুরো চক্রটি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারে! যেখানে দেশের সর্বোচ্চ ইন্টেলিজেন্টসদের দিয়ে আন্তর্জাতিক শত্রু সহ অনেক জটিল জটিল কাজ করানো সম্ভব হচ্ছে, সেখানে একটা সামান্য জালিয়াত চক্রকে খুঁজে বের করা কতৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব মাত্র! রিমান্ডে নেয়া বলতে একটা ব্যাপার প্রচলিত আছে। কেন এই আলামিনকে রিমান্ডে নিয়ে মূল হোতাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে না, বড় জানতে ইচ্ছে করে। মূলত তারা কার অপরাধ আড়াল করতে চাইছে?
প্রশাসন মহোদয়, শাবি ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগকে বুঝুন। তারা আপনাদের বিপক্ষে নয়। তাদের এই অবস্থান আপনাদের ও ন্যায়ের পক্ষেই। তাদের আওয়াজ শুনুন। আমাদের অভিভাবক হিসেবে দাবি করেন নিজেদের। তবু দীর্ঘ এক মাস যাবৎ সন্তানদের হৃদয়ক্ষরণ আপনাদের স্পর্শ করছে না! সন্তানেরা এখনো পথ চেয়ে আছে ...
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য