আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ভোটারেরাই সভ্য নগরের স্থপতি

মাসকাওয়াথ আহসান  

নিরন্তর বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর পরেও আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টের উভয়দলের সক্রিয় নেতা-কর্মীরা যে পরমত সহিষ্ণুতা এবং বাক-সংযমের পরিচয় দিয়েছেন; এতে আবার নবজাগরণের স্বপ্নের উদ্ভাস ফুটে ওঠে।



রাজনৈতিক সংস্কৃতির শিষ্টতা আমার ক্ষুদ্র-পরিসরের বন্ধু বৃত্তে বিদ্যমান; এটা সুস্পষ্ট। ভূমি বাস্তবতার হামলা-বর্বরতা-অশিষ্ট আচরণ রয়ে গেছে; রয়ে গেছে প্রার্থীদের মাঝে ক্ষমতা-পেশী ও কালোটাকা প্রদর্শনের 'আদিপাপ'গুলো।



সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্থিতি আসবে ক্রমশ; আর কাজটা ধাপে ধাপেই হবে। পশ্চিমা গণতন্ত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটারদের প্রার্থী চয়নের আজকের সক্ষমতা আসতে শতবর্ষ লেগেছে। পুরো বাংলাদেশে এই বর্বরতা আর কালো টাকার নির্বাচনী জুয়াখেলা বন্ধ হতে সময় লাগবে। কারণ আমাদের নির্বাচন কমিশনটি ৪৪ বছর বয়সের একটি বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠান। এর মানসিক বয়স বাড়েনি। এই প্রতিষ্ঠান বড় দলের কালো-টাকা বিতরণরত ক্যাডারদের প্রত্যন্তে ধরে ছেড়ে দেয়। রাজধানীতে মিডিয়া ধরে দেয়।



আওয়ামী লীগের মিডিয়া হলে বিএনপি'র চোর ধরে দেয়; বিএনপির মিডিয়া হলে আওয়ামী লীগের চোর ধরে দেয়। আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এখনো ভোটের আগের কালোটাকার খেলা দেখাতে শেখেনি; শিখেছে প্রার্থীয় রাস্তা ঝাড়ু দেয়া দেখাতে আর আকাশ কুসুম পরিকল্পনা শোনাতে; যে পরী ডানা মেলে চলে গেলে থাকে কল্পনা। আর আমাদের ভোটারদের মাঝেদুটি বড় দলের কলাগাছকে নির্বাচিত করার প্রবণতা আত্মঘাতী এক আচরণ।



নির্বাচনের যে প্রার্থী তার সততা-প্রজ্ঞা-পরার্থে কাজ করে অমরতার আয়োজনের আকাঙ্ক্ষা আছে কীনা এসব ভেবে দেখার সংস্কৃতি অনুপস্থিত। যে প্রার্থীর বড় শো ডাউন; গাড়ীর বহরে হাত-নাড়া বড় তাকেই ভোট দিতে হবে যেন। এই যে বড় গাড়ী; বড় নেত্রীর সমর্থন, বড় বড় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি তার প্রতি মরণদায়ী আকর্ষণ আমাদের ভোটারদের।



আওয়ামী লীগের উপরে অভিমান করে বিএনপির কলাগাছকে বা বিএনপির উপর বিরক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের কলাগাছকে জিতিয়ে দেবার 'আলজাইমার'-'ডিমেনশিয়া' আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ যখন ভোটারদের মাঝে এক ধরণের জীবনচর্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে; সেখানে সভ্যতার আগমন সুদূর পরাহত। পশ্চিমে ১০০ বছরে যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি অর্জিত হয়েছে; তাতে আমাদের আরো লম্বা সময় লাগতে পারে।



এইসব রাজনীতি-নির্বাচন এগুলোর মূল পুঁজি তারুণ্যের আবেগ। এই আবেগ ব্যবহার করে গত কয়েকদিনের নির্বাচনপূর্ব বর্বর হামলায় আহত হয়েছে তরুণেরাই। প্রাক-বৃদ্ধরা টকশোতে শুধু কথা বলছে; বৃদ্ধারা কথা বলছেন সংবাদ সম্মেলনে। এটাই রাজনীতি ও যুদ্ধের আদি নিয়ম। তাই তারুণ্যের চিন্তা করা উচিত কেন সব রাজনৈতিক বা নির্বাচনী সংঘর্ষে তরুণেরাই আহত-নিহত হয়! আর কত কলুর বলদের মতো ক্ষমতার লোভের ফাঁদে নিমজ্জিত হবে তারা; অথবা সততা নিয়ে সত্যি কথাটা দলীয় ফোরামে বলার অধিকার কেন নেই তার! এ যেন মাফিয়ার অন্ধকার জগতে ঢুকে পড়া;যেখানে ঢোকা যায় কিন্তু বের হওয়া যায়না।



তাই একমাত্র ভরসার জায়গা এই অবরুদ্ধ তারুণ্যের কাছে অনুরোধ, অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে প্রাক-বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের চ্যালেঞ্জ করুন। কেন তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ডকে জাস্টিফাই করতে হবে আপনাকে। কেন সিনিয়র নেতাদের আদর্শিক জায়গাগুলো স্বচ্ছ হবেনা; কেন তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে না। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত দলীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। সেটা না এলে গণতান্ত্রিক সভ্যতার উদ্ভাস ঘটবে না। আর মেয়র নির্বাচন সেই অর্থে দলভিত্তিক নির্বাচন নয়; এখানে কেউ মনোনয়ন পত্র কোন দলের পক্ষে জমা দেননি। কাগজে কলমে প্রার্থীরা ব্যক্তি হিসেবে মেয়রপ্রার্থী। এখন নির্বাচন বিধি ভেঙ্গে কে কোন দলের সমর্থন পেলো! এগুলোতো ভোটারদের গ্রাহ্য হবার কারণ নেই।



যে মানুষগুলো মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন; এদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মনের স্বপ্নগ্রস্ত মানুষটিকে খুঁজে বের করুন; যার পাকস্থলীতে সততার ভাত; পরণে সততার কাপড়, অভিনয়ে নয় আচরণে একজন নিরহংকার বন্ধুমানুষ যিনি।



ঢাকা ছোট শহর; চট্টগ্রামও; খোঁজ খবর নিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ-সত-দূরদর্শী নগরসেবক এদের মাঝ থেকে নির্মোহভাবে খুঁজে বের করা খুব কঠিন হওয়া উচিত নয়। বিবেককে প্রশ্ন করুন; কাকে ভোট দেবেন; গুজবে কান না দিয়ে মন যাকে চাইছে তাকে নির্বাচিত করুন।



ভোটারেরাই সভ্য নগরের স্থপতি।

 

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ