আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

‘হারা’ খাদক ও হকার উচ্ছেদ

নাজমুল হাসান  

আমরা কি জানি যে, দেশের কোন ফুটপাতই মূলত হকারদের দখলে নয়, সবই পাওয়ার এলিটদের দখলে! অধিকাংশ ক্ষেত্রে হকাররা শুধুমাত্র পেটের দায়ে দখলদারদের কর্মচারী হিসেবে রাস্তায় পণ্য বিক্রি করে!

অনুল্লেখযোগ্য যে সকল ক্ষেত্রে হকার নিজেই তার পণ্যের মালিক সে সকল-ক্ষেত্রেই তাকে হারা-খোরদেরকে মাসোহারা, সপ্তাহারা, দিনোহারা, ঘণ্টাহারা দিয়ে ফুটপাতে টিকে থাকতে হয়। কোন প্রকার হারা না দিয়ে কোন হকারের পক্ষে পাঁচ মিনিটের জন্যও ফুটপাতে পণ্য সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব। তার সব পণ্য লুট করে নেওয়া হবে।

যারা এই হারা ব্যবস্থা চালু করে, তা টিকিয়ে রেখে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের হারা খেয়ে যাচ্ছে তারা হচ্ছে ফুটপাতের প্রকৃত দখলদার। এ তালিকায় কারা আছে সেটা জানার জন্য বুদ্ধিমান হবার দরকার পড়ে না, নির্বোধেরাও জানে।

জনবহুল নয়, এমন রাস্তার পাশের বিশাল অব্যবহৃত খালি যায়গাগুলোতে স্পর্শকাতর জাতীয় দিবসগুলি পালন করতে হলেও 'হারা' লাগে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য 'হারা'-খাদকদের বিশাল আকারের 'হারা' দিয়ে পূর্ব অনুমোদন নিয়ে তারপরে অনুষ্ঠান করতে হয়।

ধানমণ্ডি লেকের ধারে একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, নববর্ষ ইত্যাদি জাতীয় দিবস উদযাপনের জন্য নিবেদিত সংস্কৃতিমনা আয়োজকরা এটা হাড়ে হাড়ে জানেন। টাকার অঙ্কের উপরে ভিত্তি করে হারা-খাদকরা রশি টাঙিয়ে জাতীয় দিবস আয়োজকদেরকে লেকের পাড়ের উপযুক্ত স্থান এবং কতটুকু স্থান ব্যবহার করতে পারবেন তার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়।

স্থানীয় হারা-খাদকদের এসব দিনগুলিতে কয়েক লক্ষ টাকা আয় হয়। জাতীয় দিবসের চেতনা ওখানে তাদের দ্বারা প্রকাশ্যে উপুর্যুপুরি ধর্ষিত হয়। তারাই আবার চেতনার আড়তে গিয়ে এসব আয়োজনের চেতনা বিক্রি করে আরেকধাপ চেতনার শিখরে ওঠে। তার এলাকায় এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের কৃতিত্ব সে একাই নেয় এবং বহুত খরচ-খরচা ও মেহনত হয়েছে সেটা প্রচার করে নিজের সামনে এগোনোর রাস্তা পরিষ্কার করে।

আমাদের স্বাভাবিক অভিজ্ঞতাটা হচ্ছে, কিছুক্ষণের জন্য রাস্তার পাশে বৈধভাবে গাড়ি বা বাইক পার্কিং করলেও জরিমানা গুণতে হয়, সেখানে ব্যস্ত রাস্তার উপরে, পাশে এবং ফুটপাথে কী করে স্থায়ীভাবে শত শত দোকান বসতে পারে?

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের গুলিস্তান হল সংলগ্ন রাস্তার প্রায় পুরোটাই বেদখলে। রাঘব বোয়ালরা পিছনে না থাকলে এটা কেমন করে বেদখলে রাখা সম্ভব? এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে সারা দেশব্যাপী ফুটপাথের আসল দখলদার কারা সেটা বুঝতে তিল পরিমাণও অসুবিধা হবার কথা নয়।

ফুটপাথ হাঁটা-চলার জন্য এবং হাঁটা-চলার জন্যই সম্পূর্ণ অবাধ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। অবৈধভাবে ফুটপাথ দখল করে বাণিজ্য করা হবে এবং তা ছাড়তে বললে শর্ত আরোপ করা হবে, এটা কোন কথা হতে পারে না! এতো রীতিমত আদিখ্যেতা।

অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে ফুটপাথকে চলনক্ষম করার এ ন্যায্য বিষয়টির মধ্যে যারা অমানবিকতার গন্ধ পাচ্ছেন বা মানব অধিকার লঙ্ঘনের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন, তাদের এ অনুভূতির প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা। তাদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, ফুটপাত বেদখল হবার মত অন্যায্য কাজ দিনের পর দিন দেখার পরেও আপনারা কেন নিশ্চুপ ছিলেন? ফুটপাথে অবাধে চলাচল করাটা কি মানুষের অধিকার নয়? সে অধিকারকে কেন প্রতিষ্ঠা করছেন না? বেদখল করা তো কোন অধিকার হতে পারে না!

অধিকার প্রতিষ্ঠাকারীদের যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে বলব আপনারা দখলদারির মূল হোতাদেরকে চাপ দিয়ে তাদেরকে দিয়ে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। সে জন্য প্রয়োজনে সরকারের সহযোগিতা নিন। মূল দখলদারদের অবৈধ দখলদারির বিস্তারিত প্রতিবেদনসহ নাম-পরিচয় প্রকাশ করুন। তারা এসব হকারদের কাছ থেকেই কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। তাদের টাকার অভাব নাই।

দুনিয়ার সকল ফুটপাতই মূলত মানুষ চলাচলের জন্য, বাংলাদেশের ফুটপাতও শর্তহীনভাবে মানুষের অবাধ চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। অন্য কোন সমস্যা থাকলে তার যৌক্তিক সমাধানকল্পে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত হতেই পারে, কোনোভাবেই ফুটপাত দখল সংক্রান্ত কোন শর্ত এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

কিছু মানবতার বুলির পিছনে ইনভেস্টমেন্ট আছে। এখানে বোধ হয় হারা-খাদকদের ইনভেস্টমেন্টটা সে বুলি আওড়াচ্ছে।

নাজমুল হাসান, লেখক, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ